1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে গান করতেন সুর যোদ্ধা শাহীন

২১ মে ২০১১

সুর-সংগীত প্রতিটি জাতির অবিচ্ছেদ্য অংশ৷ তাই জাতির যে কোন ক্রান্তিকাল কিংবা সুখ-সমৃদ্ধির সাথে সাংস্কৃতিক অঙ্গনও ওতপ্রোতভাবে জড়িত৷ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধেও সশস্ত্র যোদ্ধাদের পাশে থেকে লড়াইকে বেগবান করেছেন সুর যোদ্ধারা৷

https://p.dw.com/p/11KnI
সংগ্রামী শিল্পী শাহীন সামাদছবি: Harun Ur Rashid Swapan

১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে যেসব সংগ্রামী নারী শিল্পী প্রাণের ভয় না করে বরং দেশের বিভিন্ন প্রান্তে ঘুরে ঘুরে সংগ্রামী তেজোদ্দীপ্ত সংগীত পরিবেশন করেছেন তাঁদেরই একজন শিল্পী শাহীন সামাদ৷ কয়েক দশক ধরে আপন ঐতিহ্যে মুখর করে রেখেছেন গানের ভুবন৷ সেই সময়ের চলচ্চিত্র ‘মুক্তির গান' এ তাঁর উপস্থিতি প্রশংসা কুড়িয়েছে সর্বত্র৷

১৯৫২ সালের ২৭ ডিসেম্বর কুষ্টিয়ায় জন্ম শিল্পী শাহীন সামাদের৷ বাবা শামসুল হুদা এবং মা শামসুন্নাহার রহিমা খাতুন৷ ছোটকাল থেকেই গানের প্রতি তাঁর প্রবল ঝোঁক৷ নিজেকে শিল্পী হিসেবে গড়ে তুলতে চেষ্টার কোন অন্ত ছিল না তাঁর৷ একইসাথে ছোট থেকেই তাঁর মধ্যে গড়ে ওঠে দেশপ্রেম এবং মুক্তির চেতনা৷ তাই শুধুমাত্র মুক্তিযুদ্ধের সময়ই নয়, বরং ঊনসত্তরের গণঅভ্যুত্থানের সময় থেকেই নানা আয়োজন উপলক্ষ্যে দেশাত্ববোধক গান গেয়ে মানুষের মাঝে সংগ্রামী ও মুক্তির চেতনাকে জাগিয়ে তুলেছেন শাহীন এবং তাঁর সঙ্গীরা৷

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চ পাক বাহিনী দেশজুড়ে নির্যাতন ও হত্যাযজ্ঞ শুরু করলে ঘরে বসে মরতে চাননি শাহীন৷ তাই সারাক্ষণ ভেবেছেন জাতির এই দুর্যোগে কীভাবে বীরত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেন তিনি৷ এক পর্যায়ে সুযোগ বুঝে ১৬ এপ্রিল মৃত্যু ঝুঁকি নিয়ে বাসা থেকে বেরিয়ে পড়েন৷ কুমিল্লা হয়ে ভারতের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করেন৷ বাসে, ট্রেনে, গাড়িতে পাক সেনারা সেসময় অনুসন্ধান চালিয়ে যাচ্ছে৷ পাক সেনাদের হাতে ধরা পড়া এড়াতে বোরখা পরে নেন শাহীন৷

Bangladesch Ermordete Intellektuelle
১৯৭১ সালের অগণিত বীর শহীদের প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীনতাছবি: Dhaka National Archives

ভারত যাওয়ার সময় তাঁর পাক সেনাদের সম্মুখে পড়ার রোমাঞ্চকর ঘটনা তুলে ধরলেন শাহীন ডয়চে ভেলের কাছে৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা বাসে যাচ্ছিলাম৷ চান্দিনার কাছে হঠাৎ পাক সেনারা আমাদের বাস থেকে নামিয়ে সবকিছু তল্লাশি চালালো৷ তবে সেখানে আর আমাদের তেমন কিছু বলল না৷ কিন্তু বাস থেকে নেমে আমরা যখন রিক্সা নিয়ে সীমান্তের দিকে যাচ্ছি, এমন সময় দূর থেকে একটা ট্রাক আসতে দেখলাম৷ সেটা আমাদের পাশে এসে দাঁড়ালো৷ তিন জন পাক সেনা নামল৷ আমাদের কাছে এসে জিজ্ঞেস করল, তোমরা কে? কোথায় যাচ্ছ? আমার সঙ্গীরা বলল, শ্বশুর বাড়ি৷ একথা শোনার পর বেশ কিছুক্ষণ আমাদের দিকে তাকিয়ে থেকে একজন বলল, ছোড় দো৷ সেই দফা আমরা প্রাণে বেঁচে গেলেও সেই ভয়ংকর মুহূর্তটি এখনও আমাকে আতঙ্কিত করে তোলে৷ এছাড়া অত্যন্ত কষ্টের কথা হচ্ছে যে, আমাদের যে রিক্সাওয়ালা পারাপার করেছিল তাকেও দেশের জন্য প্রাণ দিতে হয়েছে৷ সে তো শুধু আমাদেরকেই নয়, ঐ পথে অসংখ্য মুক্তিযোদ্ধাকে সহযোগিতা করেছে সেই রিক্সাওয়ালা৷ কিন্তু রাজাকারদের মাধ্যমে তার এসব কাজের কথা জানার পর তাকে মেরে ফেলে পাক সেনারা৷''

কলকাতায় পৌঁছে বাংলাদেশ মুক্তি সংগ্রামী শিল্পী সংস্থার সাথে কাজ শুরু করেন শাহীন৷ সংস্থাটিতে প্রথম মাত্র ১৭ জন কাজ শুরু করলেও এর সদস্য বেড়ে শেষে দাঁড়িয়েছিল ১১৭ জনে৷ সংস্থার শিল্পীরা ছোট ছোট দলে ভাগ হয়ে বিভিন্ন অঞ্চলে পরিবেশন করতেন উদ্দীপনামূলক গান৷ সেসব দিনের কষ্টের কথা জানালেন শাহীন, ‘‘ভাঙা ট্রাকে করে প্রত্যন্ত অঞ্চলে ঘুরে ঘুরে গান করতাম আমরা৷ দিনের পর দিন নিজেদের নাওয়া, খাওয়া, পোশাক-আশাক কিংবা ঘুমানোর কোন ঠিক ছিল না৷ এমনকি একবার টানা ১০-১২ দিন শাক-ভাত খেয়ে কাটাতে হয়েছে৷ ‘রূপান্তরের গান' শিরোনামে সাজানো হয়েছিল মুক্তি ও সংগ্রামী চেতনার গানগুলো৷ এগুলোর মধ্যে ছিল কাজী নজরুল ইসলামের শিকল পরা ছল, কারার ঐ লৌহ কপাট, একি অপরূপ রূপে মা তোমায়, ও ভাই খাঁটি সোনার চেয়ে খাঁটি এবং রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের একবার তোরা মা বলিয়া ডাক, যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক, ঐ পোহাইল তিমির রাতি৷ এছাড়া গণ সংগীতের মধ্যে ছিল এসো মুক্তি রণের সাথী, জনতার সংগ্রাম, ফুল খেলবার দিন নয় অদ্য, বিপ্লব এলো রক্তে রাঙা, শোনেন শোনেন ভাই সবে, মানুষ হ মানুষ হ ইত্যাদি৷''

মুক্তিকামী শিল্পীরা শুধু সুর সংগীতের মাধ্যমে উৎসাহ-উদ্দীপনাই যোগাতেন না, তাঁরা ভারত এবং বাংলাদেশের নানা প্রান্তে এসব গান গেয়ে অর্থ সংগ্রহ করতেন মুক্তিযুদ্ধে কাজে লাগানোর জন্য৷ এসব টাকা দিয়ে ওষুধ-পত্র, কাপড়-কম্বল, হাড়ি-পাতিলসহ প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি কিনে মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে এবং শরণার্থীদের মাঝে সরবরাহ করতেন৷ তাদের এসব কাজের ক্ষেত্রে তৎকালীন ভারত সরকার এবং সেদেশের মানুষদের অপরিসীম সহযোগিতার কথা কৃতজ্ঞতার সাথে স্বীকার করেন শাহীন সামাদ৷

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য