1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

আইসক্রিম

১৬ জুন ২০১২

আইসক্রিম ছাড়া কি গ্রীষ্মকাল কল্পনা করা যায়? অথচ অনেকেই দুধে অ্যালার্জি থাকার কারণে এর স্বাদ গ্রহণ করতে পারেন না৷ তাই এবার তারাও যাতে লোভনীয় এই খাদ্যটি থেকে বঞ্চিত না হন, সে জন্য চলছে নানা রকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা৷

https://p.dw.com/p/15GJB
Titel: Bildbeschreibung: Eis wird im Iran teuerer. Stichwörter: Iran, Wirtschaft, Eis Quelle: Ferez.ir Lizenz: Frei
ছবি: Ferez.ir

জার্মানিতে প্রায় এক কোটির মত মানুষের রয়েছে দুধে অ্যালার্জি৷ তার মানে দুধের প্রোটিন বা শর্করা হজম হয় না তাদের৷ বিকল্প হিসাবে এতদিন তাদের সয়াবিনের দিকে হাত বাড়াতে হতো৷ সন্তুষ্ট থাকতে হতো সয়াবিন থেকে প্রস্তুত খাদ্যদ্রব্যই৷ সম্প্রতি আরেক ধরনের উদ্ভিদ বিশেষ করে ফুলের দিকে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয়েছে গবেষকদের৷ এটির নাম লিউপিন৷ জীবজন্তুর খাদ্য ও সার হিসাবে ব্যবহৃত হতো এতদিন উদ্ভিদ৷

লিউপিন থেকে প্রোটিন

জার্মানির ফ্রাউয়েনহোফার ইন্সটিটিউটের গবেষকরা পরীক্ষা নিরীক্ষা করে বের করেছেন, লিউপিন থেকে বিশেষ পদ্ধতির মাধ্যমে এক ধরনের প্রোটিন বের করা যায়, যা ল্যাকটোস, গ্লুটেন ও কোলেস্টেরল মু্ক্ত৷ এই দিকটিতে দৃষ্টি আকৃষ্ট হয় আইসক্রিমপ্রেমীদেরও৷ আর তাই গড়ে তোলা হয় ছোট এক আইসক্রিম প্রস্তুত কারখানা ‘প্রোলিউপিন'৷ এই কারখানার উৎপাদনের দায়িত্বে রয়েছেন গেয়ারহার্ড ক্লোট৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘আমি আইসক্রিমের জগৎ থেকে এসেছি৷ আইসক্রিম তৈরি করা শিখেছি৷ আমার স্ত্রী ও মেয়ে দুধ সহ্য করতে পারতো না৷ মেয়ে বলতো, বাবা তুমি কি এমন কোনো আইসক্রিম তৈরি করতে পারো না, যাতে দুধ থাকবে না?''

গেয়ারহার্ড ক্লোট দুধের প্রোটিন ও শর্করার বিকল্প খোঁজার চেষ্টা করতে থাকেন এবং বিকল্প হিসেবে নজরে পড়ে তাঁর সয়াবিন৷ ক্লোট বলেন, ‘‘কিন্তু সয়াবিন আমার মনঃপূত হয়নি৷ এটা একটা আমদানি করা পণ্য৷ মাঝে মাঝে এই উদ্ভিদকে জিনের দিক দিয়ে আমূল পরিবর্তন করে ফেলা হয়৷ অনেক সময় ধরাই যায় না, কোনটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় আর কোনটাই বা জিন পরিবর্তন করে উত্পাদিত৷ জনগণও এক্ষেত্রে বেশ খুঁতখুঁতে৷ তাই আমরা দেশীয় কোনো উদ্ভিদের খোঁজ করতে থাকলাম৷ অবশেষে দৃষ্টি আকৃষ্ট করলো লিউপিন নামে ফুলটি৷''

এক যুগ আগের কথা এটা৷ আজ গেয়ারহার্ড ক্লোট ব্রান্ডেনবুর্গ রাজ্যে প্রোলিউপিন নামের কারখানায় কর্মব্যস্ত এক মানুষ৷ নীল রঙের মিষ্টি লিউপিনের বীজ থেকে প্রোটিনের নির্যাস প্রস্তুতের কাজ দেখাশোনা করেন তিনি৷

প্রাচীন কালেও ব্যবহৃত হতো খাদ্য হিসাবে

দক্ষিণ অ্যামেরিকার ইনকা সভ্যতাতেও লিউপিনের বীজ রোদে শুকিয়ে খাওয়া হত৷ রোমানরা সার হিসাবে ব্যবহার করতো এই উদ্ভিদকে৷ ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলিতে লিউপিনের বীজ দিয়ে স্ন্যাকস তৈরি করা হয় এখনও৷ জার্মানিতে এই উদ্ভিদটিকে এতদিন বিশেষ করে পশুখাদ্য হিসাবে কাজে লাগানো হতো৷ নব্বইয়ের দশকের শেষের দিকে মানুষের খাদ্য হিসাবেও দৃষ্টি আকর্ষণ করে লিউপিন৷ বিশেষ করে নীল রঙের মিষ্টি লিউপিন, যাতে তিতকুটে ভাবটা তেমন থাকেনা৷

বছর খানেক আগে লিউপিন থেকে তৈরি প্রথম আইসক্রিম বাজারে আসে৷ সম্পূর্ণভাবে উদ্ভিদ থেকে তৈরি, ল্যাকটোস ও কোলেস্টেরোলমুক্ত৷ শর্করা ও তেলের ভাগও কম৷ ভোক্তারা এই আইসক্রিম সাদরে গ্রহণ করেছেন, জানান, প্রোলিউপিনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাট্রিন পেটারসেন৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘লোকজনের প্রতিক্রিয়ায় আমরা তা বুঝতে পারি৷ অসংখ্য চিঠিপত্রে ভোক্তারা আমাদের জানায়, এই ধরনের একটা ভোজ্যপণ্যের প্রয়োজন ছিল অনেক আগেই৷ কেননা জার্মানির প্রায় ১৫ থেকে ২০ শতাংশ মানুষ দুধের ল্যাকটোস হজম করতে পারে না৷ তাই এই জাতীয় খাদ্যের গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে৷''

তবে স্বাদ ও গন্ধে এই আইসক্রিম অবিকল দুধের আইসক্রিমের মত হলেই চেষ্টা সার্থক বলা যায়৷ গেয়ারহার্ড ক্লোট এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘লিউপিনের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল, এই উদ্ভিদে বিষাক্ত পদার্থ অনেক কম থাকে৷ অন্যদিকে প্রচুর অর্থ ব্যয় করে সয়াবিন থেকে বহু বিষাক্ত পদার্থ বের করতে হয়৷ এক্ষেত্রে আরেকটি ইতিবাচক দিক হল, লিউপিনে অত্যন্ত পুষ্টিকর প্রোটিন পাওয়া যায়৷

সয়াবিনের প্রোটিনের চেয়ে ভাল

সয়াবিনের প্রোটিনের চেয়ে লিউপিন প্রোটিন দিয়ে সহজে কাজ করা যায়৷ ক্লোট জানান, আইসক্রিম অত্যন্ত জটিল পদ্ধতিতে তৈরি এক খাদ্যদ্রব্য৷ তৈলাক্ত পদার্থ, পানি, বায়ু এসবের মিশ্রণ থেকে আইসক্রিমের মণ্ড তৈরি করতে হয়৷ লিউপিন থেকে আমরা অন্যান্য খাদ্যদ্রব্য তৈরির কথাও ভাবছি৷

কাট্রিন পেটারসেন বলেন, ‘‘আমরা পুডিং, দই ইত্যাদি খাদ্যদ্রব্য তৈরির চিন্তা ভাবনাও করছি৷ আশা করা যায় ২০১৫ সালের শেষ নাগাদ লিউপিন থেকে বেশ কয়েক ধরনের খাদ্যদ্রব্য বাজারে আসবে৷''

নীল রঙের মিষ্টি লিউপিন সয়াবিনের বিকল্প হতে অবশ্য আরো অনেকটা পথ যেতে হবে৷ গেয়ারহার্ড ক্লোট'এর মতে, প্রথম পদক্ষেপটা নেয়া হয়েছে৷ তাঁর ভাষায়, ‘‘খাদ্য উত্পাদন শিল্পে উদ্ভিদজাত প্রোটিনের চাহিদা দিন দিন বেড়েই চলেছে৷ বিশেষ করে সয়াবিন দিয়েই এই চাহিদা পূরণ করছে মানুষ৷ এক্ষেত্রে আমরা বলতে পারি, তোমাদের সয়াবিন নিতে হবে না৷ আমরা লিউপিন থেকে এর চেয়েও ভাল কিছু দিতে পারি৷''

প্রতিবেদন: রায়হানা বেগম

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য