1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বড়লোক’ পাইলটদের নিয়ে সমস্যা

২০ ডিসেম্বর ২০১৬

শুধু জার্মানি নয়, ইউরোপের সবচেয়ে বড় এয়ারলাইন আপাতত তাদের কাঠামো বদলে আরো প্রতিযোগিতামূলক হবার চেষ্টা করছে৷ মূল অন্তরায় হলো পাইলটদের সংগঠন ককপিট ও কেবিন ক্রু-দের সংগঠন ইউএফও৷

https://p.dw.com/p/2USej
প্রতীকী ছবি
ছবি: picture alliance/dpa/B. Roessler

মনে রাখতে হবে, লুফৎহানসা বলতে তাদের বাজেট বা সস্তা টিকিটের এয়ারলাইন ইউরোউইংস-কেও বোঝায়৷ এছাড়া থাকছে লুফৎহানসা গোষ্ঠীর অন্যান্য ‘ক্যারিয়ার', যেমন সুইস বা অস্ট্রিয়ান এয়ারলাইনস, সেই সঙ্গে এয়ার ডলোমিটি ও ব্রাসেলস এয়ারলাইনস৷

লুফৎহানসাকে বলা হয় জার্মানির ‘ফ্ল্যাগ ক্যারিয়ার', অর্থাৎ ‘জাতীয়' বিমান পরিবহণ সংস্থা, যার দিন কিন্তু গেছে বা যেতে বসেছে৷ যে আমলে বিমানে চড়া ও ওড়াটা ওপরমহলের মানুষদের জন্য রাখা ছিল, সে আমলে বৈমানিক ও বিমানকর্মীরা সরকারি চাকুরের মতো পারিশ্রমিক, চাকুরির নিরাপত্তা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেছেন৷ কিন্তু আজ প্লেনে চড়া জলভাত হয়ে গেছে, আপামর জনতা প্লেনে চড়ছেন৷ কাজেই এটা রায়ানএয়ার বা ইজিজেটের মতো ‘নো ফ্রিলস' এয়ারলাইনসের যুগ৷ অন্যদিকে লুফৎহানসার নিজের রাজত্বে ভাগ বসাতে আসছে এমিরেটস বা ইতিহাদ-এর মতো মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইন, কেননা তারাও সম্প্রসারণ করছে অভূতপূর্ব হারে৷ অর্থাৎ লুফৎহানসার আজ খরচ না কমিয়ে এবং ‘রিস্ট্রাকচারিং' না করে অর্থাৎ কর্মপদ্ধতি না বদলে উপায় নেই৷

বাদ সেধেছেন পাইলটরা৷ তাদের ছোট্ট ‘শ্রমিক সংগঠন' ককপিট ২০১৪ সালের এপ্রিল মাস থেকে মাইনে ও অবসরভাতা নিয়ে লুফৎহানসার ম্যানেজমেন্টের সঙ্গে কাজিয়া চালাচ্ছে৷ গত নভেম্বর মাসের শেষে ককপিটের ছ'দিনের ধর্মঘটে লুফৎহানসাকে ৪,৪৬০টি উড়াল বাতিল করতে হয়, বিভ্রাটে পড়েন ৫ লাখ ২৫ হাজারের বেশি যাত্রী৷ ২০১৪ সালের এপ্রিল যাবৎ ককপিট প্রায় ১৫ বার ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে৷ প্রতিদিনের ধর্মঘটে লুফৎহানসার এক থেকে দেড় কোটি ইউরো লোকসান হয়, যা অবশ্য এত বড় একটা কোম্পানির পক্ষে ‘পিনাটস' ছাড়া আর কিছু নয়৷

মাত্র গত বুধবার (৭ই নভেম্বর, ২০১৬) লুফৎহানসা জানিয়েছে যে, মাইনে বাড়ালে পাইলটদের কাজের সময় বাড়ানোর দাবি কোম্পানি আর তুলছে না, কিন্তু বাকি অফার একই থাকছে: পাইলটদের মাইনে দু'টি ইনস্টলমেন্টে ৪ দশমিক ৮ শতাংশ বাড়ানো হবে, সেই সঙ্গে এককালীন গ্র্যাচুইটি হিসেবে প্রায় দু'মাসের মাইনে৷ ককপিট কিন্তু চায় ২০১২ সাল থেকে পাঁচ বছরের জন্য প্রতিবছর ৩ দশমিক ৭ শতাংশ, অর্থাৎ এক ধাক্কায় প্রায় ২০ শতাংশ মাইনে বৃদ্ধি৷

সেই সঙ্গে রয়েছে পাইলটদের অবসরগ্রহণের শর্ত নিয়ে বিরোধ৷ লুফৎহানসার পাইলটরা ৫৫ বছর বয়সে অবসর গ্রহণ করতে পারেন তাদের শেষ মাইনের ৬০ শতাংশ অবসরভাতা নিয়ে৷ একজন লুফৎহানসা পাইলট প্রায় ৬,০০০ ইউরোর মাসমাইনে থেকে শুরু করে মাসিক প্রায় ২১,০০০ ইউরোয় তাঁর কর্মজীবন শেষ করেন৷ কোম্পানি চায় পাইলটদের অবসরগ্রহণের শর্তাবলী বদলাতে৷ পাইলটদের অপরাপর দুশ্চিন্তার মধ্যে আছে: লুফৎহানসা নতুন বা ইউরোউইংসের পাইলটদের কম মাইনে দিতে চায়, এমনকি নাকি ৪০ শতাংশ কম৷ মোট কথা, পাইলটরা তাদের অতীত গৌরব ও ‘স্ট্যাটাস' কোনোমতেই ক্ষুণ্ণ হতে দিতে চান না৷

অরুণ শঙ্কর চৌধুরী
অরুণ শঙ্কর চৌধুরী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

বিরোধটা শুধু দুমুখি নয়, কেননা কেবিন ক্রুদেরও দাবিদাওয়া আছে, পাইলটরা ধর্মঘট না করলে তারা ধর্মঘট করে থাকেন৷ ফল অবশ্য একই হয়: লুফৎহানসার বিমান আকাশে না উঠে মাটিতেই থাকে৷ বিমানকর্মীদের সংগঠন উফো-র সঙ্গে ম্যানেজমেন্টের একাধিকবার আপোশ হয়েছে৷ আপাতত কেবিন ক্রু-রা পাইলটদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাচ্ছেন, কেননা পাইলটদের আরো সুযোগসুবিধা দিলে কেবিন ক্রু-র ভাগ্যে আরো কম পড়তে পারে, বলে তাদের আশঙ্কা৷ মনে রাখা দরকার, লুফৎহানসার একজন সিনিয়ার পার্সার মাসে প্রায় ৭,০০০ ইউরো রোজগার করে থাকেন

মোট কথা, লুফৎহানসার বাজেটের ২০ শতাংশ যায় কর্মীদের মাইনে দিতে, যেখানে মধ্যপ্রাচ্যের এয়ারলাইনগুলির এই খাতে ১২ শতাংশের বেশি খরচা হয় না; রায়ানএয়ারের মতো এয়ারলাইনগুলিতে কর্মীদের মাইনে বাজেটের ১০ শতাংশ ছাড়ায় না৷ ওদিকে ৪,৬০০ জন পাইলটের মাইনে দিতে লুফৎহানসার প্রায় একই পরিমাণ অর্থ ব্যয় হয়, যতটা যায় ১৭,০০০ ফ্লাইট অ্যাটেন্ড্যান্টদের মাইনে দিতে: হরেদরে প্রায় ৯০ কোটি ইউরো৷ অথচ লুফৎহানসা ম্যানেজমেন্টের স্বপ্ন হলো, বছরে ১০০ কোটি ইউরো খরচ কমানো৷

ওদিকে আবার এমিরেটস-এর মতো কিছু এয়ারলাইন নাকি জার্মানিতে ক্রু রিক্রুট করতে শুরু করেছে!

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য