1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সীমান্ত হত্যা, চোরাচালান, বাস্তবতা

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৬

ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর হাতে বাংলাদেশের নাগরিক হত্যা কমার কোনো লক্ষণ নেই৷ গত তিন বছরের পরিসংখ্যান বলছে, সীমান্ত হত্যা বাড়ছে৷ অথচ ভারতের শীর্ষ পর্যায় থেকে এই হত্যা শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/1HvcZ
Indien Bangladesch Fahne Flagge
ছবি: Getty Images/G. Crouch

গরু চোরাচালানের কারণে সীমান্ত হত্যা হচ্ছে – এই তত্ত্বটিও আর টিকেছে না৷ কারণ ভারত থেকে বাংলাদেশে গরু চোরাচালান প্রায় বন্ধ হয়ে গেলেও, সীমান্ত হত্যা বন্ধ হয়নি৷

‘কমেছে গরু পাচার, বেড়েছে সীমান্ত হত্যা' – গত ১ ডিসেম্বর খবরটি দেয় ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস৷ খবরে বলা হয়, ‘গত বছরের এপ্রিল মাসে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং বাংলাদেশে ভারত থেকে গরু পাচার বন্ধের নির্দেশ দেয়ার পর, সাত মাসে গরু চোরাচালান শতকরা ৭০ ভাগ কমে গেছে৷ কিন্তু বিপরীতে সীমান্ত হত্যা না কমে বরং বেড়েছে৷ রাজনাথ সিং-এর ঘোষণার পর ২০১৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ভারতীয় সীমান্ত রক্ষী বাহিনী (বিএসএফ)-এর গুলিতে ২৪ জন গরু পাচারকারী নিহত হয়েছেন৷ আগের বছর, ২০১৪ সালে সীমান্তে হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছিলেন ১০ বাংলাদেশি৷'

নূর খান সীমান্ত

২০১১ সালে বিএসএফ ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) পাচারকারী ও অবৈধপথে সীমান্ত পার হওয়া মানুষদের ক্ষেত্রে প্রাণঘাতি অস্ত্র ব্যবহার না করার চুক্তি স্বাক্ষর করে৷ এ চুক্তির পরবর্তী কয়েকবছর সীমান্ত হত্যা কমে আসলেও, এখন আবার তা বাড়ছে৷ গত তিন বছরের পরিসংখ্যানও বলছে সে'কথাই৷

বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) হিসেবে, গত তিন বছরে বিএসএফ-এর হাতে সীমান্তে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বেড়েছে৷ এই হত্যাকাণ্ডগুলি ঘটছে গোলাগুলি ও নির্যাতনের কারণে৷ তাদের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৩ সালে মোট ২৭ জন বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ সদস্যরা৷ এদের মধ্যে ১২ জনকে গুলি করে এবং ১৪ জনকে নির্যাতন চালিয়ে হত্যা করা হয়৷ বাকি একজনকে কীভাবে হত্যা করা হয়েছিল, তা জানা যায়নি৷

এরপর ২০১৪ সালে হত্যা করা হয়েছে ৩৩ জন বাংলাদেশিকে৷ এরমধ্যে গুলি ও নির্যাতনে সমান সংখ্যক বাংলাদেশিকে হত্যা করা হয়৷ গত বছরে হত্যা করা হয়েছে ৪২ জনকে, আহত হয়েছেন ৬৮ জন৷ এছাড়া বিএসএফ ধরে নিয়ে গেছে ৫৯ জনকে৷ গত তিন বছরে সীমান্তে বাংলাদেশি হত্যায় ২০১৫ সাল শীর্ষে অবস্থান করছে৷ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে বিএসএফ হত্যা করেছে তিনজন বাংলাদেশিকে৷

তবে আরো একটি চিত্র আছে৷ আর তা হলো, বাংলাদেশ-ভারত সীমেন্ত বিএসএফ শুধু বাংলাদেশিদেরই হত্যা করছে না, তাদের হাতে সীমান্ত এলাকায় ভারতের বাঙালিরাও নিহত হচ্ছেন৷ ভারতের মানবাধিকার সংগঠন বাংলার মানবাধিকার সুরক্ষা মঞ্চ (মাসুম)-এর প্রধান কিরীটি রায় জানান, ‘‘ভারতীয় নগরিকরাও বিএসএফ-এর হাতে নিহত হচ্ছেন৷ গত এক বছরে বাংলাদেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সীমান্তে যে ২৫ জন ভারতীয় নাগরিক নিহত হয়েছেন, তারা বাঙালি৷ পুরো সীমান্তের হিসাব করলে এই সংখ্যা আরো অনেক বেশি হবে৷''

এরসঙ্গে আরেকটি তুলনামূলক চিত্র বেশ অবাক হওয়ার মতো৷ তা হলো – তিন বছরে বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে মোট ১০২ জন বাংলাদেশি নাগরিক নিহত হলেও, একই সময়ে পাকিস্তান-ভারত সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে ৪৬ জন পাকিস্তানি নাগরিক নিহত হয়৷ নিহত পাকিস্তানি নগারিকদের বড় একটি অংশ সামরিক এবং আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য৷ তবে বাংলাদেশের নিহত নাগরিকরা সবাই নিরস্ত্র সাধারণ মানুষ৷

সীমান্তে বাংলাদেশি ফেলানী হত্যার সরকারি কৌঁসুলি আব্রাহাম লিংকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই পরিসংখ্যানই বলে দিচ্ছে যে, সীমান্তে বিএসএফ বাংলাদেশি নাগরিকদের সঙ্গে শত্রু রাষ্ট্রের চেয়েও খারাপ আচরণ করছে৷''

আসক-এর পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এতদিন গরু চোরাচালানকে সীমান্ত হত্যার কারণ হিসেবে বলা হতো৷ কিন্তু এখন তো গরু চোরাচালান বলতে গেলে শূন্যের কোঠায়৷ তারপরও সীমান্তে বিএসএফ-এর হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যা বাড়ছে৷ আসলে সীমান্ত হত্যার পিছনে আসল কারণ হলো ভারতের মনোভাব৷ ভারত কাশ্মিরসহ পাকিস্তান সীমান্তে নিয়োজিত বিএসএফ সদস্যদের এখনো ঘুরিয়ে-ফিরিয়ে বাংলাদেশ সীমান্তে নিয়োগ করে৷ তাদের অধিকাংশই বাংলা ভাষাভাষী নয়৷ তাদের মনোভাব যুদ্ধংদেহী৷ ফলে পরিস্থিতির কোনো উন্নতি হচ্ছে না৷''

আব্রাহাম লিংকন

বিএসএফ-এর দেওয়া তথ্য অনুসারে, ভারত থেকে ২০১৩ সালে ২২ লাখ গরু বাংলাদেশে পাচার হয়৷ ২০১৪ সালে তা কমে দাঁড়ায় ১৮ লাখে৷ আর ২০১৫ সালে পাচার হওয়া গরুর সংখ্যা সাড়ে চার লাখ৷

আব্রাহাম লিংকন বলেন, ‘‘আসলে গরু চোরাচালান নয়, মূল বিষয় হলো মানসিকতা৷ মানসিকতার পরিবর্তন না হলে সীমান্ত হত্যা কমবে না৷ সীমান্তে দুই দেশের মানুষেরই কিছু সাধারণ বিষয় আছে৷ তাই সীমান্ত হাটগুলো সত্যিকার অর্থে কার্যকর করতে হবে৷ তাছাড়া সীমান্তে চোরাচালান বন্ধে বাংলাদেশকেও সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে৷ ভারতকে বুঝতে হবে যে, সীমান্ত হত্যা সীমান্তে জঙ্গি তৎপরতা উসকে দিতে পারে, যা দু'দেশের জন্যই অকল্যাণকর৷''

আব্রাহাম লিংকনের কথায়, ‘‘মানবাধিকার কী – সেটা সীমান্তরক্ষীদের বুঝতে হবে৷ কিন্তু তারা শুধুই যুদ্ধ বোঝেন৷''

আর নূর খানের কথায়, ‘‘দু'দেশের শীর্ষ পর্যায়ে সীমন্ত হত্যা নিয়ে আরো বৈঠক হওয়া প্রয়োজন৷ দুই দেশের মানুষের কল্যাণের জন্য সত্যিকার অর্থেই সীমান্ত হত্যাকাণ্ড শূন্যের কোঠায় নামিয়ে আনতে হবে৷''

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে ৪,০৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে, যা পৃথিবীর পঞ্চম বৃহত্তম স্থল সীমান্ত৷ বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা এবং মিজোরাম রাজ্যের সীমান্ত রয়েছে৷ শুধু পশ্চিমবঙ্গের সাঙ্গেই ২,২১৭ কিমি. সীমান্ত আছে বাংলাদেশের৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য