শরিয়া আইন সম্পর্কে ডয়চে ভেলের ফেসবুক বন্ধু জুয়েল ইব্রাহিম তার বক্তব্য জানিয়েছেনএভাবে, ‘‘শরিয়া বা ইসলামী অনুশাসন মানুষকে ধ্বংসের পথে যেতে দেয় না৷ সৃষ্টিকর্তা আমাদের সেরা জীব হিসেবে নির্বাচন করেছেন বলে আমাদেরকে দিয়েছেন উন্নত মস্তিষ্ক, মেধা ও মনন, যাতে আমরা প্রাণীদের চেয়ে সভ্য জীবন গড়ে তুলি কিম্বা পালন করি৷ লিভ টুগেদার আর অবৈবাহিক যৌনাচার কেবল প্রাণীদের বেলায় খাটে, বিবেকবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষের বেলায় তা সমীচীন নয়৷''
পাঠক জুয়েল ইব্রাহিমের মন্তব্যের তীব্র প্রতিবাদ করে এসআই মাসুম খান তার নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরেছেন এভাবে, ‘‘আমি পাঁচ মাস ছিলাম ইন্দোনেশিয়ায়৷ পৃথিবীর সবচাইতে যাযাবর দেশ ইন্দোনেশিয়া, যেখানে নারীদের কোনো সম্মান করা হয়না৷ বিবাহের আগে তারা ২থেকে ৩ মাস এক সাথে থাকে৷ ভালো লাগলে বিয়ে, না হয় আরেক জন৷''
তবে মুহাম্মদ আরিফ হুদা রুবেল কিন্তু বাংলাদেশে শরিয়া আইন চালু হওয়ার পক্ষে মত দিয়েছেন৷ ফেসবুক পাতায় তিনি লিখেছেন, ‘‘বাংলাদেশের জন্য শরিয়া আইন খুবই জরুরি৷'' তাঁর মতে, ‘‘বাংলাদেশের ছেলে-মেয়ে সবগুলা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে৷'' পাঠক জুমান খানও আরিফ হুদাকে সমর্থন করেছেন৷
-
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
যেভাবে শুরু
ইন্দোনেশিয়ার সুমাত্রা দ্বীপে অবস্থিত আচেহ প্রদেশে এখনো শরিয়া আইন চালু আছে৷ ঐ অঞ্চলে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলন থামানোর লক্ষ্যে সরকার ২০০১ সালে ঐ প্রদেশের জন্য ‘বিশেষ স্বায়ত্তশাসন’এর ব্যবস্থা করার পরই ইসলামি শরিয়া আইন বাস্তবায়ন শুরু হয়৷ এরপর ২০০৫ সালে শান্তিচুক্তি সই হওয়ার পর আইনের প্রয়োগ আরও জোরালো হয়৷
-
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
যেসব অপরাধে শাস্তি দেয়া হয়
জুয়া খেলা, অ্যালকোহল পান করা, সমকামিতা, বিয়েবহির্ভূত সম্পর্ক স্থাপন ইত্যাদি নানা কারণে অপরাধীদের শাস্তি দেয়া হয়ে থাকে৷ শাস্তি হিসেবে সাধারণত বেত্রাঘাত করা হয়৷ অপরাধের ধরণ বিবেচনায় নিয়ে বেত্রাঘাতের পরিমাণ ঠিক করা হয়৷
-
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
অবিবাহিতদের মধ্যে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক
সোমবার (১৩ অক্টোবর) আচেহ প্রদেশের রাজধানী বান্দা আচেহ’র একটি মসজিদ প্রাঙ্গণে শরিয়া আইন না মানার কারণে ১৩ জনকে শাস্তি দেয়া হয়৷ এর মধ্যে ২১ থেকে ৩০ বছর বয়সি ছয় জোড়া তরুণ-তরুণীও ছিল৷ তাঁদের অপরাধ, বিয়ে না করেই ঘনিষ্ঠ হয়েছেন৷ শরিয়া আইন বলছে, বিয়ে না করে ছেলে-মেয়েদের একে অপরকে ছোঁয়া, চুমু দেয়া, জড়িয়ে ধরা অপরাধ৷
-
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
নিভৃত স্থানে একসঙ্গে সময় কাটানো
ছয় জোড়া যুগল ছাড়াও সোমবার আরেক ব্যক্তিকে শাস্তি দেয়ার কারণ, তাকে গোপন স্থানে বিপরীত লিঙ্গের একজনের সঙ্গে এমনভাবে সময় কাটাতে দেখা গেছে যা হয়ত ব্যভিচার পর্যন্তও গড়াতে পারত৷
-
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
হাসিঠাট্টায় মগ্ন দর্শক
বেতের আঘাতে ব্যথা পেয়ে একজন তরুণী যখন চিৎকার করে কাঁদছিল তখন চারদিকে দাঁড়িয়ে জনতা সেটি উপভোগ করছিল৷
-
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
ডেপুটি মেয়রের আশা
আচেহ’র ডেপুটি মেয়র জয়নাল আরিফিনের আশা, এই ধরণের শাস্তির ব্যবস্থা করার কারণে ভবিষ্যতে নাগরিকরা শরিয়া আইন ভাঙার মতো কাজে জড়াবে না৷
-
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
নারীদের সংখ্যা বৃদ্ধি
সাম্প্রতিক সময়ে আচেহ’তে শাস্তি দেয়া বেড়েছে৷ আগের চেয়ে এখন বেশি সংখ্যক নারীকে এই আইনের আওতায় শাস্তি দেয়া হচ্ছে৷
-
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
মানবাধিকার কর্মীদের প্রশংসা
না, শরিয়া আইন বাস্তবায়নের জন্য প্রশংসা নয়, বরং বেশ সমালোচনার মুখে পড়েছে আচেহ প্রদেশ কর্তৃপক্ষ৷ তবে সম্প্রতি এক সিদ্ধান্তের কারণে মানবাধিকার কর্মীরা আচেহর প্রশংসা করেছে৷ সেটি হচ্ছে, চাকরিরত নারী কর্মীদের জন্য মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয়মাস করা হয়েছে৷ ইন্দোনেশিয়ার যে-কোনো প্রদেশের চেয়ে এটি বেশি, কোনো কোনো ক্ষেত্রে দ্বিগুন৷
-
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
জুয়া খেলার শাস্তি
২০১২ সালের ৫ অক্টোবরের এই ছবিতে জুয়া খেলার দায়ে এক ব্যক্তিকে শাস্তি পেতে দেখা যাচ্ছে৷ সেদিন মোট তিনজনকে এই অপরাধে শাস্তি দেয়া হয়৷
-
ইন্দোনেশিয়ার যেখানে শরিয়া আইন চালু আছে
যে কারণে এই শাস্তি
২০১১ সালের ডিসেম্বরে ‘পাংক’ সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়ে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ৷ তারপর তাদের এই শাস্তি দেয়া হয়৷ এরপর তাদের জন্য ১০ দিনের একটি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির ব্যবস্থা করা হয়৷ সেখানে তাদের মানসিক ও আধ্যাত্মিক শিক্ষা দেয়া হয়৷
লেখক: জাহিদুল হক
তবে পাঠক তনয় ভুইয়া বলছেন, ‘‘ইন্দোনেশিয়াতে শতভাগ মুসলিম আর ঐখানে এই ধরণের আইন চালু করা সম্ভব, কিন্তু আমাদের দেশে শতভাগ মুসলিম না, তাই এই ধরণের আইন চালু করা অসম্ভব৷''
অন্যদিকে পাঠক আবদুল্লাহ বলছেন পুরো ভিন্ন কথা৷ তাঁর মতে ,‘‘যে দেশের ছেলেরা বুড়া হলেও বেকার থাকে, সে দেশের ছেলে-মেয়েরা কী করবে, টাকার অভাবে বিয়ে করতে পারেনা৷ তাই দেশে শরিয়া আইন করতে গেলে সব আইন ঠিক করতে হবে৷''
আর সালেক মোহাম্মদ বলছেন,‘‘ ইন্দোনেশিয়াতে কোন আইন বা কী হচ্ছে তা আমাদের বিচার্য বিষয় না৷''
তবে ফকরুল রুবেল ও তাওহিদ কিন্তু বাংলাদেশে শরিয়া আইন চান৷ তারা মনে করেন, ‘‘শরিয়া আইন বাংলাদেশের জন্য খুবই জরুরি৷''
আর বাংলাদেশে শরিয়া আইন চালু সময়ের দাবি বলে মনে করেন ফরিদ আকন্দ৷
সংকলন: নুরুননাহার সাত্তার
সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী