1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশের জন্য প্রাণবাজি রেখে লড়েছেন কাঁকন বিবি

৬ জুলাই ২০১১

ত্রিপুরায় জন্ম হলেও বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নিজের প্রাণ বাজি রেখে লড়াই করেছেন কাঁকন বিবি৷ স্বামী-সংসার উপেক্ষা করে অস্ত্র হাতে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন পাক সেনাদের উপর, ভিখারির ছদ্মবেশে করেছেন গোয়েন্দাগিরি৷

https://p.dw.com/p/11pgo
A Bangladeshi girl has her head covered with national flag as she holds a rose during Independence day celebrations in Dhaka, Bangladesh, Thursday, March 26, 2009. Bangladeshis celebrated 38 years of independence Thursday amid tight security as tens of thousands of people visited a national memorial outside the capital to mark the independence from Pakistan in which millions of people died. (AP Photo/Pavel Rahman)
‘আমাদের তোমাদের ভুলবো না...’ছবি: AP

কাঁকন বিবির জীবন ইতিহাস বড় বিচিত্র৷ সবুজ অরণ্য আর পাহাড়-টিলা ঘেরা ত্রিপুরায় জন্ম তাঁর৷ বাবার নাম যিশো এবং মার নাম মিলি৷ পাহাড়ি অরণ্যে প্রকৃতির প্রতিকূলতার সাথে সংগ্রাম করে বড় হন কাঁকন৷ ষোল-সতের বছর বয়সে শাহেদ আলী নামের এক মুসলমান তরুণের সাথে পরিচয় ঘটে তাঁর৷ পরে মুসলমান হয়ে নিজের নাম রাখেন নূরজাহান বেগম৷ বিয়ে করেন শাহেদকে৷ স্বামীর সাথে চলে আসেন সুনামগঞ্জে৷

পাঁচ-ছয় বছর না পেরোতেই শুরু হয় স্বাধীনতা যুদ্ধ৷ স্বামী শাহেদের অনুমতি না পেলেও দেশের স্বার্থে লড়াই করে বাঁচতে চান কাঁকন৷ ঘর-সংসার ছেড়ে যুদ্ধে যোগ দেন৷ প্রথমদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের গুলির বাক্স, খাবার, ওষুধ-পত্র বহন ও পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করেন৷ কিন্তু এর মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না কাঁকন বিবির লড়াই৷ পরে তিনি নানা ছদ্মবেশে পাক সেনাদের অবস্থান ও আক্রমণ পরিকল্পনার তথ্য সংগ্রহ করতেন৷ এমনকি বীরপ্রতীক তারামন বিবির মত তিনিও ভিখারির ছদ্মবেশে পাক সেনাদের শিবিরে এবং তাদের কাছাকাছি অবস্থানে হাজির হতেন৷ সেসব তথ্য যথাসময়ে মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দিতেন এই অকুতোভয় নারী৷ কিন্তু শেষ পর্যন্ত একদিন পাক সেনাদের সন্দেহের কবলে পড়ে যান তিনি৷ পাক সেনারা তাঁকে আটক করে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে নানা নির্যাতন চালায় মুক্তিযোদ্ধাদের তথ্য পাওয়ার আশায়৷ অথচ সকল নির্যাতন মুখ বুঁজে সহ্য করেন কাঁকন৷

একদিন সুযোগ বুঝে পাক শিবির থেকে পালিয়ে আসেন এই ভাগ্যবতী নারী৷ সোজা চলে আসেন মুক্তিযোদ্ধাদের শিবিরে৷ ঐ অঞ্চলের সেক্টর কমান্ডার মীর শওকত আলী সেখানে তাঁকে রান্নার কাজ করতে বলেন৷ ১৯৭১ সালের আগস্ট পর্যন্ত রান্নাবান্নার কাজ করেন তিনি৷ এরপর মুক্তিযোদ্ধাদের সাথে অভিযানে যোগ দিতে থাকেন৷ মুক্তিযুদ্ধের চল্লিশ বছর পর বেশ বৃদ্ধ এবং অসুস্থ হয়ে পড়েছেন সেসময়ের সাহসী তরুণী কাঁকন বিবি৷ স্মৃতি থেকে অনেক কিছুই গেছে হারিয়ে৷ ফলে এখন আর সবকথা ঠিকমতো স্মরণ করে গুছিয়ে বলতে পারেন না তিনি৷ ডয়চে ভেলের সাথে টেলিফোন আলাপে ভাঙা ভাঙা বাক্যে বললেন কয়েকটি কথা৷

Sheikh Mujibur Rahman (March 17, 1920 – August 15, 1975) was a Bengali politician and the founding leader of the People's Republic of Bangladesh, generally considered in the country as the father of the Bengali nation. Sheikh Mujibur Rahman, People's Republic of Bangladesh, Awami League, Mujib Declaration: Content partner of DW, bdnews24.com shared these photos for online use only.
বিখ্যাত সেই ভাষণ দিচ্ছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানছবি: bdnews24

মুক্তিযুদ্ধে কাঁকন বিবির সাহসী কর্মকাণ্ডের কথা বেশ অনেকদিন অজানা ছিল৷ দেশ স্বাধীন হলেও মুক্তিযোদ্ধা কাঁকন বিবিকে সেই আগের মতোই ভিক্ষা করে জীবন চালাতে হতো৷ তবে বিগত দশকে নারী প্রগতি সংঘ এবং দৈনিক মুক্তকণ্ঠের বরাতে শেষ পর্যন্ত তাঁর অসীম সাহসিকতার পরিচয় জানতে পারে এই জাতি৷ লেখা হয় তাঁর সম্মুখ যুদ্ধসহ পুরুষ যোদ্ধাদের সাথে নানা অভিযানে অংশ নেওয়ার ঘটনা৷ সেখান থেকে জানা গেছে, সুনামগঞ্জ-সিলেট সড়কে জাউয়া বাজারে সেতু উড়িয়ে দেওয়া এবং পাক সেনাদের উপর ঝাঁপিয়ে পড়ার অভিযানে ছিলেন কাঁকন৷ এমনই প্রায় বিশটি অভিযানে অংশ নেন তিনি৷ এগুলোর মধ্যে পনেরোটিই ছিল পাক সেনাদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ৷ এগুলোর মধ্যে অপারেশন মহব্বতপুর, কান্দিগাঁও, টেংবাটিনা, বেটিগাঁও, নূরপুর, দোয়ারা বাজার, টেবলাই এবং পূর্ববাজারের অভিযান উল্লেখযোগ্য৷

কাঁকন বিবির কর্মকাণ্ড এবং বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে ডয়চে ভেলেকে জানান তাঁর জামাতা রফিক মিয়া৷ তিনি বললেন, ‘‘পাক সেনারা যেভাবে বাংলাদেশের নারীদের ধরে নিয়ে গিয়ে তাদের উপর নির্মম নির্যাতন চালাতো সেসব কিছুই তাঁকে যুদ্ধে যাওয়ার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি অনুপ্রাণিত করেছে৷ প্রথম দিকে মুক্তিযোদ্ধারা এবং পাক সেনারা কেউই তাঁকে বিশ্বাস করতো না৷ পরে অবশ্য তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে নিজের সাহসী কাজের মাধ্যমে প্রমাণ করেন যে, তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্যই ছদ্মবেশ ধারণ করে ভিখারি বেশে তথ্য সংগ্রহ করতেন৷ কিন্তু স্বাধীনতার পরও সাহসী এই মুক্তিযোদ্ধার জীবনের অধিকাংশ দিন কেটেছে কষ্টের মধ্য দিয়ে৷ অবশ্য পরে দৈনিক জনকণ্ঠ এবং জনতা ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারি সহযোগিতার ফলে কিছুটা ভালোভাবে জীবন যাপন করতে পারছেন একাত্তরের এই সাহসী যোদ্ধা৷''

প্রতিবেদন: হোসাইন আব্দুল হাই

সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান