1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের কার্যকর পরিকাঠামোর খোঁজ চলছে

১ জুলাই ২০১১

বিশ্বজুড়ে বিকল্প জ্বালানি ব্যবহারের প্রবণতা বেড়েই চলেছে৷ তবে শুধু উৎপাদন নয়, সুলভ মূল্যে গ্রাহকের কাছে সেই জ্বালানি পৌঁছে দেওয়ার চ্যালেঞ্জও রয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয় স্তরেই শুরু হচ্ছে ভাবনা-চিন্তা৷

https://p.dw.com/p/11n7F
ছবি: Greencubator

জার্মানিতে বৈপ্লবিক পরিবর্তন

জাপানের ফুকুশিমা পরমাণু কেন্দ্রে দুর্ঘটনার পর জার্মানি ২০২২ সাল পর্যন্ত ধাপে ধাপে সব পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্র বন্ধ করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ ফলে ঘাটতি মেটাতে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর চাপ আচমকা আরও বেড়ে গেছে৷ কিন্তু বিষয়টি শুধু বিদ্যুৎ উৎপাদনের মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই৷ কেবল আদর্শগত চাপ নয় – বাজার অর্থনীতির কাঠামোর মধ্যে বিকল্প জ্বালানি কীভাবে গ্রাহকের কাছে পৌঁছানো যায় সেই বিষয়টিও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ অর্থাৎ জ্বালানির ক্ষেত্রে সক্রিয় সব প্রতিষ্ঠানই যাতে অত্যন্ত ‘স্বাভাবিকভাবে' মুনাফা করতে পারে, ভবিষ্যতে অন্যান্য উৎসের মতো বিকল্প জ্বালানিও যাতে লাভজনক ও আকর্ষণীয় হয়ে ওঠে এবং অন্যান্য দেশও যাতে এই মডেল অনুসরণ করতে পারে, সেই পথেই এগোনোর চেষ্টা করছে জার্মানি৷ বিজ্ঞানের ৩০ জন ছাত্রছাত্রী সম্প্রতি বার্লিনে দুই সপ্তাহ ধরে বিকল্প জ্বালানির সঙ্গে যুক্ত প্রতিটি ক্ষেত্র সম্পর্কে আলোচনা করে কিছু সার্বিক মডেল তৈরি করেছেন৷ ২০৩০ সালের মধ্যে জার্মানিতে জ্বালানির ক্ষেত্রে আমূল পরিবর্তনের লক্ষ্যমাত্রা স্থির করেছেন তাঁরা৷ ভবিষ্যতের এই বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ছিলেন জ্বালানি ক্ষেত্রে সক্রিয় বেশ কয়েকজন বিশেষজ্ঞ৷ এই কর্মশালা আয়োজন করেছে বেসরকারি এক গ্যাস কোম্পানি৷ সংস্থার প্রতিনিধি ক্লাউস হাশকার মনে করেন, ভবিষ্যতে নিরাপদে জ্বালানির সরবরাহের ক্ষেত্রে মূলমন্ত্র হবে বিকেন্দ্রীকরণ৷ অর্থাৎ স্থানীয় চাহিদা মেটাতে স্থানীয় স্তরেই জ্বালানি উৎপাদন করা হবে৷ বিশেষ করে দক্ষিণ অ্যামেরিকা, আফ্রিকা ও এশিয়ায় এই প্রবণতা বেশি দেখা যাবে৷

ভবিষ্যতের দিশা

বার্লিনের প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে ৫টি দলে বিভক্ত হয়ে অংশগ্রহণকারীরা নানারকম প্রকল্পের মডেল গড়ে তুলেছেন৷ তাঁদের মধ্যে ইঞ্জিনিয়ার, গণিতজ্ঞ ও অর্থনীতিবিদ সহ নানা ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞরা ছিলেন৷ উদ্দেশ্য একই – আর তা হলো, কীভাবে জ্বালানি উৎপাদন, সংরক্ষণ ও সরবরাহ করা যেতে পারে৷ সৌরশক্তি, বায়ুশক্তি ও বায়ো গ্যাস উৎপাদনের আলাদা সময় সত্ত্বেও কীভাবে এই তিন উৎসের মধ্যে এমনভাবে সমন্বয় করা সম্ভব, যাতে শুধু এই সব উৎস থেকে নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ সম্ভব হয় – তা নিয়েও তাঁরা ভাবনা-চিন্তা করেছেন৷ বিদ্যুৎ সরবরাহের জন্য বর্তমানে যে নেটওয়ার্ক চালু আছে, তাতে অপচয় কম হয় না৷ ফলে একইসঙ্গে এই নেটওয়ার্কের কার্যকারিতা বাড়ানোর বিষয়েও আলোচনা করেছেন বিশেষজ্ঞরা৷ অধ্যাপক ফ্রাঙ্ক বেয়ারেন্ট এবিষয়ে বললেন, ‘‘জার্মানি গোটা বিশ্বের কার্বন নির্গমনের প্রায় ৩ শতাংশের জন্য দায়ী৷ ফলে আমরা নির্গমনের মাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে কমিয়ে আনলেও তেমন কোনো পরিবর্তনের আশা করা যাবে না৷ এটাই একমাত্র লক্ষ্যমাত্রা হতে পারে না৷ কিন্তু আমি চাই, জার্মান সংস্থাগুলি বিজ্ঞানীদের সঙ্গে হাত মিলিয়ে এমন প্রযুক্তি বা সমাধানসূত্র তৈরি করুক, যা গোটা বিশ্বে কাজে লাগানো যেতে পারে৷ এক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিয়ে প্রতিযোগিতার বাজারেও জার্মান সংস্থাগুলি সবার আগে থাকতে পারে৷''

Kernenergie Deutschland Ausstieg Debatte
জার্মানিতে সৌর বিদ্যুতের পাশাপাশি বায়ু চালিত বিদ্যুৎ উৎপাদনও হচ্ছেছবি: AP


বাস্তবসম্মত উদ্যোগ

বার্লিনের এই কর্মশালায় যারা অংশগ্রহণ করেছেন, তাঁরা শুধু আলোচনার টেবিল নয় – যাকে বলে মাঠে নেমেও কিছু কাজ করেছেন৷ তারা বিদ্যুৎ সরবরাহের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান ও পরিকাঠামো পরিদর্শন করে বর্তমান পরিস্থিতি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা অর্জন করেছেন৷ এঁদেরই একজন মাটিয়াস কিমেল৷ তিনি ডোমিনিক্যান রিপাব্লিকে জ্বালানির ক্ষেত্রে পরিবর্তনের এক ‘রোডম্যাপ' গড়ার কাজেও জড়িত ছিলেন৷ তিনি বললেন, ‘‘উত্তর থেকে দক্ষিণ গোলার্ধে প্রযুক্তির হস্তান্তরের বেশ প্রয়োজন রয়েছে৷ অর্থাৎ উত্তরের দেশগুলি দক্ষিণের অপেক্ষাকৃত কম উন্নত দেশগুলিকে জ্বালানির ব্যবহারের ক্ষেত্রে পরিবর্তন আনতে সাহায্য করবে৷ একইসঙ্গে দক্ষিণের দেশগুলিকে নিজেদের মধ্যেও সহযোগিতা বাড়াতে হবে, যাতে তারা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে একে অপরের অভিজ্ঞতা কাজে লাগাতে পারে৷''

উন্নয়নশীল বিশ্বের জন্য সমাধানসূত্র

উন্নয়নশীল দেশগুলিতে বিকল্প জ্বালানির ব্যবহার বাড়ানোর লক্ষ্যে যেসব উদ্যোগ চলছে, তার সঙ্গে জড়িত কর্মশালায় উপস্থিত অনেক অংশগ্রহণকারী৷ এসব দেশে গিয়ে হাতেনাতে কাজের অভিজ্ঞতা অর্জন করেছেন অনেকেই৷ যেমন আফ্রিকার ঘানায় এক সফল সামাজিক প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়েছে, যা জাতিসংঘের পুরস্কারও পেয়েছে৷ সেদেশের উত্তরে অনুর্বর জমিতে কৃষকদের সঙ্গে কাজ করছে এই প্রতিষ্ঠান৷ বহুকাল ধরে কৃত্রিম সার ব্যবহারের ফলে সেই জমির উৎপাদনশীলতা কমে গিয়েছিল৷ এবার সেই জমিতে জৈব বর্জ্য পদার্থ ফেলে ধীরে ধীরে উর্বরতা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলছে৷ প্রথমদিকে কোনো সুফল পাওয়া না গেলেও ইউরোপীয় প্রযুক্তি কাজে লাগিয়ে জৈব সার তৈরির প্রক্রিয়া শুরু করা হয়৷ আশেপাশের গ্রাম থেকেই সেই বর্জ্য সংগ্রহ করে সার তৈরি করে আবার সুলভে চাষিদের কাছেই সেই সার বিক্রি করা হয়৷ এর ফলে স্থানীয় অর্থনীতিরও ব্যাপক উন্নতি হয়েছে৷ সেইসঙ্গে জমিও আবার উর্বর হয়ে উঠছে৷ সবার জন্যই ফায়দা এনে দিয়েছে এমন এক সহযোগিতার কাঠামো৷ বার্লিনে এমন আরও সফল মডেল সৃষ্টি করার চেষ্টা করেছেন কর্মশালার অংশগ্রহণকারীরা৷

প্রতিবেদন: সঞ্জীব বর্মন

সম্পাদনা: সুপ্রিয় বন্দ্যোপাধ্যায়

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য