1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিবেক যখন রাজনীতি চালিত

আশীষ চক্রবর্ত্তী৮ আগস্ট ২০১৫

সিংহ হত্যা নিয়ে বিশ্বজুড়ে তোলপাড়৷ সিংহের শিকারিকে ‘কাপুরুষ' বলে দুয়ো দিচ্ছে সবাই৷ বাংলাদেশে এমনটা হলে কী হতো? স্বাধীনতার আগে ও পরে ‘কাপুরুষ' কি কম দেখছে বাংলাদেশ? ক'জনের বিচারের দাবি ওঠে? বিচার হয় ক'জনের?

https://p.dw.com/p/1GBQp
Symbolbild Kindesmissbrauch
ছবি: picture alliance / ZB

বেশির ভাগ ক্ষেত্রে কাপুরুষরাই বুক ফুলিয়ে বেড়ান, যেন তারাই ‘বনের রাজা সিংহ'৷ মারাঠি সেই প্রবাদের মতো আসলে ‘বিড়াল' অন্ধ বলেই ‘ইঁদুর' হয়েও তারা মহাবীর৷ বিড়ালের কাজ ইঁদুরকে বাগে পেলে খপ করে ধরে তা দিয়ে আহার সারা৷ সেই বিড়াল যদি অন্ধ হয়, ইঁদুর তো নেচে বেড়াবেই৷ রাষ্ট্রে আইন কার্যকর রাখার দায়িত্ব সরকার এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থার৷ সরকার এবং ওই সংস্থাগুলো যদি ‘অন্ধ' হয়, অপরাধীর আস্ফালন তো বাড়বেই৷ অপরাধী সিংহ হত্যার দায়ে অভিযুক্ত হলেই কী আর তার মাথায় মানুষ হত্যার দায় থাকলেই কী!

অবশ্য বিচার আদায়ে জনসচেতনতা এবং সংবাদমাধ্যমের ভূমিকাও খুব গুরুত্বপূর্ণ৷ রাজন হত্যার ঘটনাটিই মনে করুন৷ সংবাদমাধ্যমে একটু দেরিতে এলেও তাতে সবার যতটা টনক নড়েছে, জনগণের আবেগতাড়িত সক্রিয়তা অভিযুক্তদের গ্রেপ্তারে যেমন তরিৎ ভূমিকা রেখেছে, তা তো অভূতপূর্ব৷

কিন্তু সব হত্যাকাণ্ডের বেলায় কি এমন হয়? বঙ্গবন্ধু হত্যা আর একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে দণ্ডিত আসামি, নারায়ণগঞ্জের ‘সেভেন মার্ডার'সহ গত ৪৪ বছরের অসংখ্য মামলার আসামিদের অনেকেই কীভাবে তাহলে দেশে-বিদেশে সুখে-শান্তিতে থাকেন? চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীরও তো কেউ ধরিয়ে দিচ্ছে না?

বড় বড় মামলার আসামিদের কথাই বলছি কেন! রাজন তো ১২ বছর বয়সি এক অভাগা কিশোর, যাকে ‘চোর' সাজিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে মৃত্যুর দিকে ঠেলে দেয়া তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করেছে বিকৃত মানসিকতার নৃশংস হত্যাকারীরা৷ রাজনের প্রসঙ্গে বড়দের মামলার কথা না বলে বরং কয়েকজন অভাগা কিশোরের কথাই বলি৷ রাজনের পর কত শিশুর অস্বাভাবিক মৃত্যুর খবর মিডিয়ায় এসেছে? কয়টি খবর মনযোগ কেড়েছে? এই লেখা যখন লিখছি, তখনই দেশের জনপ্রিয় একটি দৈনিকে দেখলাম, ঢাকা মেডিকেলের সামনে ‘সুটকেস থেকে শিশুর লাশ উদ্ধার'-এর খবর ৷ এই শিশুর মৃত্যুর কারণ, কোন বাবা-মায়ের কোল খালি হলো – এ সব কি আদৌ জানা যাবে? বিচারের দাবিতে একটা মিছিলও হবে?

পৃথিবীর সব মানুষের রক্তের রং এক৷ প্রতিটি প্রাণহানিতে প্রিয়জনের যন্ত্রণা এক৷ সব শিশু হত্যার বেলায় কি আমরা এসব মনে রাখি? রাজনকে যখন হত্যা করা হয়, হতদরিদ্র পরিবারের খেটে খাওয়া ছেলেটির বয়স তখন ১২৷ ৪০ বছর আগে রাজধানীর বুকে, সাংবিধানিকভাবে দেশের সবচেয়ে ক্ষমতাধর ব্যক্তির বাসস্থানে হত্যা করা হয়েছিল আরেক কিশোরকে৷ নাম রাসেল৷ তার বয়স ছিল মাত্র ১১৷ বাবার নাম শেখ মুজিবুর রহমান – এছাড়া রাসেলের কোনো অপরাধ ছিল না৷

এ পৃথিবীর যে কোনো প্রান্তের যে কোনো শিশুহত্যাই অপরাধ৷ তবে বাবা-মা, ধর্ম, জাতি বা বর্ণ পরিচয় শিশু-বুড়ো কারো জন্যই অপরাধ হতে পারেনা৷ অথচ সত্যি কথা হলো, শেখ রাসেল নামের এক শিশুকে শুধু বাবার নাম শেখ মুজিবুর রহমান বলেই হত্যা করা হয়েছিল৷ শেখ মুজিবুর রহমানের দল ছাড়া অন্য কোনো দল ওই শিশুহত্যার বিচারের দাবিতে একটুও সোচ্চার হয়নি৷ বড়দের বিচার তো বটেই, এমনকি শিশুহত্যার বিচারের প্রশ্নেও বাংলাদেশের রাজনীতিবিদ ও অন্যান্য পেশাজীবীদের বিবেক এভাবেই সদা দলীয় রাজনীতি চালিত৷

Deutsche Welle DW Arun Chowdhury
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

যেখানে দলীয় রাজনীতির সরাসরি কোনো প্রভাব নেই সেখানে বিবেক হয়ে পড়ে অর্থ, অস্ত্র বা মিডিয়া চালিত৷ নিহতের পরিবারের অর্থ, অস্ত্র বা অন্যকিছুর জোর থাকলে বিচার হতে পারে, না থাকলে বিচার আদায় করতে পারে শুধু মিডিয়া কিংবা জনতার মিডিয়া চালিত বিবেক৷ যে হত্যাকাণ্ডের খবর সংবাদমাধ্যম গুরুত্ব দিয়ে, সবাই মিলে প্রকাশ করে, সেই হত্যার বিচার বেশির ভাগ ক্ষেত্রে হয়৷ ১২ বছর বয়সি রাজন হত্যার বিচারও তাই আশা করা যায় হবে৷

কিন্তু যে দেশে ১১ বছরের শিশু রাসেল হত্যার অভিযোগে থানায় ডায়েরি করতে ২১ বছর লেগেছিল, সেই দেশে ১২ বছরের রাজন হত্যার বিচার হলেও, ১৩ বছর বছর বয়সি ‘সেসিল'-এর কী হতো? হ্যাঁ, সেসিল যদি জিম্বাবোয়েতে না মরে বাংলাদেশে ওভাবে মরতো? কেউ হয়ত জানতেই পারতো না ওর মৃত্যুর খবর৷ জানলেও হত্যাকারীর হয়ত কিছু হতো না৷

কয়েকদিন আগে চট্টগ্রামে ‘পোষা হরিণ' গুলি করে মারার দৃশ্য ভিডিও করে ফেসবুকে পোস্ট করেছিলেন এক অস্ট্রেলিয়া প্রবাসি বাংলাদেশি ৷ লোকটির নাম মইনুদ্দিন৷ নিরীহ পশুর সঙ্গে বিকৃত বর্বরতা দেখানোর ঘটনায় তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধছে দেখেই মইনুদ্দিন অস্ট্রেলিয়া পালিয়ে যান৷ পত্রিকার খবর পড়ে অন্তত তা-ই মনে হয়েছে৷

হরিণশিশু গুলি করে মারা মইনুদ্দিনের শাস্তি নিশ্চিত করার জন্য এখন কোনো তৎপরতা নেই৷ এই মইনুদ্দিনও কি মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত যুদ্ধাপরাধী চৌধুরি মইনুদ্দিনের মতোই বিদেশে গিয়ে বেঁচে গেলেন? এমনটি হওয়া খুবই সম্ভব৷ মিডিয়া না জাগালে তো এমন ক্ষেত্রে খুব বেশি লোকের বিবেক জাগেনা৷ হরিণ বা সিংহ হত্যার জন্য এ দেশে কে আর বিচার চাইবে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য