1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বিশ্ব অর্থনীতিতে ভারসাম্য আনতে জি টোয়েন্টি সম্মেলনে জোর আলোচনা

১১ নভেম্বর ২০১০

দক্ষিণ কোরিয়ার রাজধানী সৌলে বৃহস্পতিবার বিশ্বের অন্যতম ধনী ও শক্তিশালী রাষ্ট্রগুলোর একজোট হয়ে সৃষ্টি করা জি টোয়েন্টি' এর দুই দিন ব্যাপী শীর্ষ সম্মেলন শুরু হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/Q6FC
ম্যার্কেল ও ওবামাছবি: AP

এ সম্মেলনে ধনী দেশগুলোর শীর্ষ কর্তাব্যক্তিরা বাণিজ্য এবং মুদ্রা সংক্রান্ত কূট কচালের সমাধান খুঁজতে রীতিমতো বাগযুদ্ধই শুরু করেছেন৷

শীর্ষ নেতারা বিশ্ব অর্থনীতির স্থিতিশীলতা এবং ভারসাম্য রক্ষাকল্পে একটি অর্থপূর্ণ সমাধানের জোর প্রচেষ্টা চালাচ্ছেন৷ আয়ারল্যান্ডের সাম্প্রতিক সংকট থেকে শুরু করে চীনের মুদ্রামান কমিয়ে রফতানি বাণিজ্যে সুবিধা নেওয়ার কৌশল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক ষাট হাজার কোটি ডলারের সরকারি বন্ড কিনে নেওয়ার ফলে ডলারের মান কমানোর বিষয়টির পাশাপাশি সার্বিকভাবে ঋণদাতা এবং গ্রহীতা দেশগুলোর বাণিজ্যে যে অসাম্য এবং বিশ্বের বাণিজ্য ও মুদ্রার বাজারে যে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি হয়েছে আজকের সম্মেলনে বিভিন্ন নেতারা তাদের নিজ নিজ অবস্থান থেকে সংকট সমাধানের লক্ষ্যে একটি অভিন্ন রূপরেখা তৈরির আলোচনাই করছেন৷

কিভাবে বিশ্বে অর্থনৈতিক ভারসাম্যের একটি ব্যবস্থা চালু করা যায় সেই লক্ষ্যেই এখনো পর্যন্ত নেতারা কথা চালিয়ে যাচ্ছেন৷ জার্মানির চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, ‘বাণিজ্য ঘাটতি এবং উদ্বৃত্তের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব খাটানো আর তার ওপর নিয়ন্ত্রণ রাখার বিষয়টি না অর্থনৈতিকভাবে যৌক্তিক না রাজনৈতিকভাবে যথার্থ৷ সম্মেলনের পরিবেশে ধনী রাষ্ট্রগুলোর কারো কারো সাবধানী পা ফেলার এই অর্থনৈতিক ‘রক্ষণশীলতা'র বিষয়টি নিয়ে এক ধরণের চাপা উত্তেজনা রয়েছে৷ অ্যাঙ্গেলা ম্যার্কেল বলেছেন, ‘আমাদের যে কোন মূল্যে এই রক্ষণশীলতা ভেঙে বেরিয়ে আসতে হবে৷'

G20 Angela Merkel Seoul NO FLASH
অ্যামেরিকার চাপে রপ্তানি কমানোর সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন ওবামাছবি: AP

এদিকে রফতানিতে রীতিমতো কুবের বনে যাওয়া চীন আর জার্মানির সঙ্গে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র যেন শিংয়ে শিং ঠেকিয়ে বাণিজ্যে নগদ আর বাকি'র হিসাব মেলাতে ব্যস্ত৷ উল্লেখ্য, এবারের জি টোয়েন্টি সম্মেলনটি শুরুর আগেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা বিশ্বে অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতা দূর করতে আহ্বান জানিয়েছিলেন৷ পাশাপাশি তিনি আরো জানিয়েছিলেন বর্তমান বিশ্বের অর্থনৈতিক বাস্তবতার পরিবর্তন ঘটানোর দায়িত্বটি কেবল একা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই নয়৷

বিশ্ব অর্থনীতির আগামী সময়টিতে ভারসাম্য আনা এবং এর সামর্থ্যকে শক্তপোক্ত করতে বিশ্ব নেতারা সম্মেলনে কথা বলছেন ঠিকই, কিন্তু যেখানে প্রতিযোগিতার বিষয়টি রয়েছে সেই একই মঞ্চে একটি অভিন্ন রূপরেখা তৈরির কাজটি যে আদৌ সহজ নয় সেটি তাদের বিভিন্ন মন্তব্যে ফুটে উঠেছে৷

জি টোয়েন্টি সম্মেলনে ব্রাজিলের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট লুলা ডা সিলভা বলেছেন,‘বিশ্ব অর্থনীতি দেউলিয়াত্বের পথেই পা বাড়িয়েছে৷ এর কোন সমাধান নেই যতক্ষণ না ধনী দেশগুলো এর সমাধানে এগিয়ে আসে৷ তিনি বলেন, ভোক্তা চাহিদা না বাড়িয়ে মন্দা কাটানোর মূলমন্ত্র হিসেবে কেবল রফতানিতে মনোযোগী হলে বিশ্ব অর্থনীতির দেউলিয়াত্ব কেউই ঠেকাতে পারবে না৷'

জাপানের প্রধানমন্ত্রী নাওটো কান বলেছেন, মন্দার ক্ষত সারাতে প্রতিযোগিতামূলকভাবে মুদ্রা মান কমানোর এই প্রবণতাটিই বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বিপদজনক৷

অবশ্য জানা গেছে যে রূপরেখা বা অভিন্ন কাঠামো করার কথা যেটি আগামি ২০১৩ সাল থেকে ২০১৯ সালের মধ্যেই হয়ে যাওয়ার কথা৷ সার্বিকভাবে আজকের আলোচনায় বাণিজ্যে ভারসাম্য, ভোক্তা চাহিদা এবং মুদ্রা বাজার এই তিনটি মূল বিষয়েই আলোকপাত করেছেন বিশ্ব নেতারা৷ মোদ্দা কথা, যাকে ‘গ্লোবাল গ্রোথ' বলা হয়, তার বৃদ্ধি কমে যাওয়ার ভীতি আর বাস্তবতার নীরিখে সেটির আস্তিনের ভাঁজটি ভেঙে যাওয়ায় তা পরিপাটি করতেই যেন সম্মেলনে ইস্ত্রি গরম করছেন নেতারা৷ উদ্দেশ্য- নিজের অবস্থানটি যতদূর সম্ভব ঠিক রেখে বিশ্ব অর্থনীতিতে খানিক ভারসাম্য আনা৷

প্রতিবেদন: হুমায়ূন রেজা
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক