1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌মমতা এবার দেবীরূপে

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা
৬ অক্টোবর ২০১৬

পশ্চিমবঙ্গের মফস্বল শহর চাকদহে এবার দুর্গাপুজোয় দেবীরূপে পূজিত হবেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি৷ মূর্তি বানানো হয়েছে তাঁর৷ সেই নিয়ে বেশ কিছু মানুষের ভ্রূকুঞ্চনও দেখা যাচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/2QvEm
দেবীরূপে মমতা বন্দোপাধ্যায়
ছবি: S. Bandopadhyay

এবারে তৃণমূল কংগ্রেসের ২১ জুলাইয়ের শহিদ দিবসের সমাবেশে ভাষণ দিতে উঠে দলের প্রাক্তন সাংসদ কবীর সুমন বলেছিলেন, অনেক বছর পর এই রাজ্যে মমতা ব্যানার্জির নামে মন্দির হবে৷ দেবীরূপে পূজিত হবেন মমতা৷ সেই কথাটি কতটা আলঙ্কারিক অর্থে কবীর সুমন বলেছিলেন জানা নেই, কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের নদীয়া জেলার চাকদহ শহরের মানুষ সম্ভবত সেটিকে বড় আক্ষরিক অর্থে নিয়ে নিয়েছেন, কারণ, কাজটা ভবিষ্যতের ভরসায় ফেলে না রেখে তাঁরা এখনই চিন্তাটিকে বাস্তবায়িত করেছেন৷ চাকদহের একটি দুর্গাপুজোয় এবার দশভুজা দুর্গার বদলে তৈরি হয়েছে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির মূর্তি৷

মমতা অবশ্য এখানে দশভুজা নন, দ্বিভুজা৷ হাতজোড় করে নমস্কার করছেন তিনি৷ পরনে ‘মার্কামারা' নীল পাড় সাদা শাড়ি এবং পায়ে হাওয়াই চপ্পল, যে বেশে মমতাকে দেখতে সবাই অভ্যস্ত৷ ফাইবার গ্লাসের তৈরি মূর্তিটি মুখ-চোখের আদলে অবিকল মমতা, ভুল করার কোনো সুযোগই নেই৷ এই মমতা দাঁড়িয়ে আছেন পশ্চিমবঙ্গের একটি মানচিত্রের সামনে, যে মানচিত্রে জেলাগুলি পরিষ্কারভাবে সীমানা নির্দিষ্ট করা এবং নামাঙ্কিত৷ মমতা-মূর্তির পিছনে অবশ্য আছে দুর্গার আদলেই দশটি হাত৷ সেই দশ হাত নির্দিষ্ট করছে বর্তমান রাজ্য সরকারের দশটি জনমুখী এবং জনপ্রিয় প্রকল্পকে৷

ভাবনার দিক দিয়ে যদিও এই মূর্তি কল্পনার সঙ্গে দুর্গাপুজোর মূল চিন্তার কোনো বিরোধ না-ও দেখতে পেতে পারেন অনেকে৷ বিশেষ করে যাঁরা মমতার গুণমুগ্ধ, তাঁরা বলছেন, দুর্গাপুজো করাই হয় জীবনে সুখ, শান্তি, সমৃদ্ধির আশায়৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী রাজ্যের জনজীবনে সেই আশার প্রতীক৷ উন্নততর জীবনের যে নিরন্তর প্রচেষ্টা মানুষের, তারই দিকনির্দেশক৷ কাজেই সেই অসাধারণ রমণীকে যদি দেবীজ্ঞানে পুজো করা হয়, তাতে অসুবিধে কীসের!

অন্যদিকে যাঁরা দুর্গাপুজোকে প্রাথমিকভাবে ধর্মাচরণ ভাবেন, তাঁরা আহত হচ্ছেন৷ তাঁরা বলছেন, আরাধ্য দেবীমূর্তির ধারণাকে বড় বেশি লঘু করে দিচ্ছে এই ভাবনা৷ একটা সময় ছিল, যখন হিন্দি ছবির নায়িকাদের মুখের আদলে তৈরি করা হতো দেবীর মুখ৷ এ ব্যাপারে রীতিমতো এগিয়ে ছিলেন হেমামালিনী৷ তার পরে একটা সময় এসেছিল, যখন পেরেক, সাবান, চিনেবাদাম, ইত্যাদি নানা বিচিত্র উপকরণ দিয়ে প্রতিমা তৈরির হুজুগ উঠেছিল৷ সেই ক্ষেত্রে ভক্তির যে ঘাটতি নজরে পড়ত, ধর্মভাবের চেয়ে যেমন বড় হয়ে উঠত চমক লাগিয়ে হাততালি কুড়ানোর চটুলতা, এক্ষেত্রেও সেই একই প্রবণতা চোখে লাগছে৷ যাঁরা মমতার ভক্ত, সত্যিই তাঁকে দেবী মনে করেন, তাঁরা বরং মমতা ব্যানার্জির কাজ এগিয়ে নিয়ে যেতে সহায়তা করতে পারতেন৷ সেটা শ্রদ্ধা জানানোর অনেক ভালো উপায় হতো৷

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা প্রতিনিধি
শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা প্রতিনিধিছবি: privat

আরও একটা তর্ক উঠছে৷ এই দল বলছে, বাঙালি চরিত্রগতভাবে এমনিতেই বড় ‘পৌত্তলিক'৷ সব কিছুকেই তারা আরাধ্য বানিয়ে ফেলে৷ মূর্তি গড়ে, বেদীর ওপর স্থাপন করে পুজোআচ্চা শুরু করে৷ এভাবেই মূর্তি হয়ে গেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, অথচ তাঁর লেখা কেউ পড়ে না৷ রবীন্দ্রনাথের ধ্যান–ধারণা, তাঁর ভাবাদর্শ আটকা পড়ে গেছে বইয়ের তাকে সাজানো রবীন্দ্র রচনাবলীর দুই মলাটের মধ্যে৷ মূর্তি হয়ে গেছেন মহাত্মা গান্ধী, অথচ বাতিল হয়ে গেছে তাঁর অহিংসার আদর্শ৷ বরেণ্য দেশনেতা থেকে চিত্রপরিচালক, সবাই এভাবেই পাথুরে মূর্তি হয়ে গেছেন, যাঁদের জীবন থেকে কোনো শিক্ষাই বাঙালি নেয়নি৷ মমতা ব্যানার্জির সততা, তাঁর লড়াই, তাঁর সোজাসাপ্টা কথা, সাদাসিধে জীবনও কি শেষে মূর্তিপুজোর বিষয় হয়ে যাবে?‌

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান