1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাম্প্রদায়িকতার ঠাঁই নেই যেখানে

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়, কলকাতা২৫ জুলাই ২০১৬

পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর দলের এবং রাজ্য সরকারের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী অবস্থানকে নিশ্চিত করে দিলেন৷ কট্টরহিন্দু্ত্ববাদী রাজনীতিকে পশ্চিমবঙ্গে রাজনৈতিকভাবে প্রতিহত করা হবে বলে জানান তিনি৷

https://p.dw.com/p/1JVJB
Westbengalen Netaji Subhash Chandra Bose
ছবি: DW/P. M. Tewari

তৃণমূল কংগ্রেসের ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ মূলত শহিদ স্মরণের অনুষ্ঠান৷ ১৯৯৩ সালে যুব কংগ্রেসের বিক্ষোভ মিছিলের ওপর পুলিশের গুলি চালানোয় ১৩ জন কংগ্রেস কর্মীর মৃত্যু হয়৷ সেই সময় থেকে, এবং ১৯৯৮ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তৃণমূল কংগ্রেস তৈরি করার পর এই দিনটি ‘শহিদ দিবস' হিসেবে পালিত হয়৷ এই বছর, পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে তৃণমূল কংগ্রেসের বিপুল জয় এবং দ্বিতীয়বার রাজ্যে ক্ষমতায় ফেরা উপলক্ষে এই দিনটি ‘বিজয় দিবস' হিসেবে পালনেরও ডাক দেওয়া হয়েছিল৷ প্রত্যাশা ছিল, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় তাঁর সরকারের ভবিষ্যৎ কর্মসূচির ইঙ্গিত দেওয়ার পাশাপাশি, কিছু প্রশাসনিক বক্তব্যও রাখবেন৷ বিশেষ করে সম্প্রতি রাজ্যে আবাসন ও নির্মাণ শিল্পে সিন্ডিকেট চক্র এবং তোলাবাজির বিরুদ্ধে তিনি যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, সেই নিয়ে আরও সুস্পষ্ট কিছু নির্দেশ থাকবে৷ সেই সঙ্গে থাকবে রাজনৈতিক বক্তব্যও, যেমনটা থাকে৷

হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে স্পষ্ট বার্তা দিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়

কিন্তু কার্যত দলীয় রাজনৈতিক সমাবেশের এই মঞ্চকে তৃণমূল নেত্রী বেছে নিলেন হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির বিরোধী, সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী এক স্পষ্ট বার্তা দেওয়ার জন্য৷ এবারে পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনে বিরোধী বামফ্রন্ট এবং বিজেপি প্রায় নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে, বিশেষ করে বামেরা৷ যাঁকে তারা এবার বিরোধী রাজনৈতিক জোটের মুখ হিসেবে তুলে ধরেছিল, গত বিধানসভায় বিরোধী দলনেতা সেই সূর্যকান্ত মিশ্র নিজেই এবার জিততে পারেননি৷ ঠিক যে দুর্দশা হয়েছিল প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্যের, ২০১১ সালের পালাবদলের ভোটে৷ রাজনৈতিকভাবে এমন অপ্রাসঙ্গিক এবং বাতিল হয়ে যাওয়া বিরোধী বাম-কং জোট সম্পর্কে মমতা যে বেশি কথা খরচা করবেন না, সেটাও প্রত্যাশিত ছিল৷ বাকি থাকে বিজেপি, যাদের ক্ষমতা পশ্চিমবঙ্গে গুরুত্বহীন হয়েও হতে পারে না, কারণ কেন্দ্রে ক্ষমতায় বিজেপি সরকার৷ সেই বিজেপির মোকাবিলা করতে গিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কিন্তু হাতুড়িটা মারলেন একেবারে মাথায়!‌ যে হিন্দুত্ববাদী ভাবনাকে বিজেপি সুকৌশলে সারা দেশে ছড়িয়ে দিতে চাইছে, তার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন৷

কেউ ছাগলের মাংস খায়, কেউ গরুর – তাতে অন্যের কী?

এবং মমতার বিরুদ্ধতা লোকের কাছে পৌঁছাল একেবারে সোজাসাপ্টা ভাষায়, যে ভাষাটা সাধারণ মানুষ, এমনকি নিরক্ষর মানুষও বুঝতে পারে৷ মমতা বললেন, আপনারা সাবধান থাকবেন৷ বিজেপির মদতে ওদেরই কিছু শাখা সংগঠন বাড়ি বাড়ি গিয়ে জানতে চাইছে, বাড়িতে কটা গরু আছে৷ আপনারা পাল্টা জানতে চাইবেন, আপনি কেন জানতে চাইছেন? আপনাদের কী অধিকার আছে এ সব প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার? এর পরই মমতার স্পষ্ট উচ্চারণ, কেউ ধুতি পরবে, কেউ লুঙ্গি৷ যে পরবে, তার ইচ্ছা৷ কেউ ছাগলের মাংস খেতে ভালোবাসে, কেউ গরুর৷ অন্য কেউ কেন বলে দেবে আমি কী পরব, কী খাব! এ রকম যদি চলতে থাকে, তা হলে তৃণমূল কংগ্রেসের কর্মীরা পথে নামবে৷ রাজনৈতিকভাবে এই বদমাইশির মোকাবিলা করা হবে৷ এখানে লক্ষ্যণীয় যে মমতা প্রশাসনিক মোকাবিলার কথা‌ কিন্তু একবারও বলেননি৷ বরং বুঝিয়েছেন, প্রশাসনিক হস্তক্ষেপ করার দরকারও মনে করছেন না তিনি৷ তার আগে মানুষের সচেতন প্রতিরোধেই আটকে যাবে সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ ছড়ানোর এই অপচেষ্টা৷

জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সতর্ক থাকতে হবে, থাকতে হবে সজাগ

সামগ্রিকভাবে নিরাপত্তা, সুরক্ষার দায়িত্বও মমতা তুলে দিতে চেয়েছেন মানুষের হাতে৷ প্রতিবেশী বাংলাদেশে সম্প্রতি যে হিংসাত্মক জঙ্গিপনা চলছে, তার প্রসঙ্গ টেনে বলেছেন, সমস্ত পাড়া, মহল্লাকে সজাগ, সতর্ক থাকতে হবে৷ কোনো সন্দেহজনক লোকজন, কাজকর্ম, গতিবিধি দেখলেই খবর দিতে হবে পুলিশকে৷ অচেনা কাউকে বাড়ি ভাড়া দেওয়ার আগে, তার সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য নিয়ে স্থানীয় থানাকে যাচাই করার জন্য দিতে হবে৷ সন্ত্রাসবাদ, বা সন্ত্রাসী প্রবণতা রোখার কাজ যে কেবল প্রশাসনের না, সামাজিক স্তরেও তার প্রতিরোধ থাকতে হবে, সেটা স্পষ্ট করে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী৷ তাঁর এই উদ্যোগ এই কারণেই অসাধারণত্ব দাবি করছে যে পশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী অবস্থান এর আগেও নিশ্চিত করতে চেয়েছে সরকার, বা দল৷ কিন্তু এভাবে তার দায়িত্ব সাধারণ মানুষের সঙ্গে ভাগ করে নিয়ে, তাদেরকেও সমান দায়িত্বশীল করে তোলার এই সহজিয়া চেষ্টা আগে চোখে পড়েনি৷ কারণ, এ কথা কে না জানে যে প্রতিরোধের ময়দানে দাঁড়িয়ে তত্ত্বকথা নয়, মানুষের সচেতনতাই একমাত্র অস্ত্র৷ পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী সেই অমোঘ অস্ত্রেই শান দিয়ে রাখছেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য