1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

মশা আর মশাবাহিত রোগ ছিল, আছে, থাকবে

গৌতম হোড় নতুন দিল্লি
১২ মার্চ ২০২১

ভারতে মশাকে কে থামাবে? পঞ্চায়েত, পুরসভা, সরকার কামান দেগেও মশা মারতে পারছে না৷ 

https://p.dw.com/p/3qXXF
নতুন দিল্লিতে মশার ওষুধ ছেটানো হচ্ছে
নতুন দিল্লিতে মশার ওষুধ ছেটানো হচ্ছে (ফাইল ছবি)ছবি: picture alliance/dpa/Str.

প্র্যাকটিসে কী না হয়৷ আমার এক বন্ধুর এক বছরে দুই বার ম্যালেরিয়া হওয়ার পর সে মশা দেখলেই মারতে শুরু করলো৷ ক্রমশ, মশা মারায় এমন দক্ষ হয়ে গেল, তার বাড়িতে কোনো মশা টিকতে পারতো না৷ দেখলেই মারতো৷ আমার অবশ্য এক বছরে তিনবার ম্যালেরিয়া হয়েছে৷ কাঁপতে কাঁপতে ক্লোরোকুইন গিলতে হয়েছে৷ তারপরে চেষ্টা করেও মশা মারার দক্ষতা লাভ করতে পারিনি৷ আমার অবস্থা পুরসভার মশা মারা প্রকল্পের মতো৷ প্রচুর ধোঁয়া দিয়ে গাড়ি চলে যায়৷ মাঝে মাঝে পিঠে বিচিত্র এক যন্ত্র নিয়ে চারপাশে তেল ছড়াতে ছড়াতে কর্মী চলে যান৷ উদ্যোগ-আয়োজনে ফাঁক নেই৷ কিন্তু মশা যায় না৷ মশার বংশ নির্বংশ করতে ধোঁয়া ছড়ালে, একদিকের মশা অন্যদিকে যায়, এইমাত্র৷ তারপর তাদের ফিরে আসতে খুব বেশি সময় লাগে না৷ ফলে অবস্থা যে কে সেই৷ আমিও মশা মারার চেষ্টা করলে তা দুই হাতের ফাঁক দিয়ে ঠিক গলে যায়৷

দিল্লিতে আবার ম্যালেরিয়া কম, ডেঙ্গু বেশি৷ তার কী প্রতাপ! পাড়ায় কারো ডেঙ্গু হয়েছে জানলে প্রতিবেশী তো বটেই, বকিরাও জানলা, দরজা নিতান্ত প্রয়োজন ছাড়া খোলেন না৷ সকালে বারান্দায় বসে চায়ের কাপসহ খবরের কাগজ পড়াও বন্ধ৷ ডেঙ্গুর মশা কামড়ে দিলেই সর্বনাশ৷ মাঝেমধ্যে আবার শুরু হয় চিকনগুনিয়ার তাণ্ডব৷ রক্তচোষা ওই ছোট্ট একরত্তি মশার ক্ষমতা দেখে তাজ্জব হয়ে যেতে হয়৷ অবশ্য এখন করোনা ভাইরাসের ক্ষমতার তলায় মশা একটু চাপা পড়ে গেছে৷ কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মানুষের মনে ভয় ধরিয়ে মশা রাজত্ব করে গেছে৷ সেই রাজত্বের পতন এখনো হয়নি৷ মশাদের তো অমর করে দিয়ে গেছেন জীবনানন্দ তার কবিতায়৷ মশা তার অন্ধকার সঙ্ঘারামে জেগে থেকে জীবনের স্রোত ভালোবাসে৷ তবে হক কথাটা বলেছিলেন অন্নদাশঙ্কর রায়-- দেশান্তরী করল আমায় কেশনগরের মশায়৷ 

মশা দেশান্তরী না করলেও এখনো আতঙ্ক ছড়িয়ে যাচ্ছে৷ আমার মতো তিনবারের ম্যালেরিয়া হওয়া লোকের তো বটেই, যাদের হয়নি, তাদেরও ভয় কম নয়৷ আর ভারতের রাজধানী শহরে গরম মানেই মশা, বর্ষা মানে আরো বেশি মশা, শীতের শুরুতেও মশা, হাড় কাঁপানো শীত ছাড়া এমন আর একটিও সময় নেই, যখন মশা থাকে না৷ ম্যালেরিয়া-ট্যালেরিয়ার ভয় থাকে না৷

তাও তো ম্যালেরিয়ার মোকাবিলায় সাফল্য পেয়েছে ভারত৷ স্বাধীনতার পর সাড়ে সাত কোটি মানুষ প্রতিবছর ম্যালেরিয়ায় আক্রান্ত হতেন৷ ২০২০ সালে আক্রান্ত হয়েছেন এক লাখ ৫৭ হাজার ২৮৪ জন, যা ২০১৯-এর তুলনায় ৪৫ শতাংশ কম৷ এরকম চলতে থাকলে ২০৩০ সালে ম্যালেরিয়া-মুক্ত হওয়ার লক্ষ্য়ও পূরণ হতে পারে৷

ম্যালেরিয়া কমছে ঠিকই, মশা নয়৷ আর আসছে নতুন নতুন রোগ৷ ডেঙ্গু, চিকুনগুনিয়া, জাপানি এনকেফেলাইটিস৷ ডেঙ্গু কোনো একবছর কম থাকে, পরের বছর বেড়ে যায়৷ সরকারি হিসাব বলছে, ২০১৮ সালে ভারতে এক লাখের বেশি মানুষের ডেঙ্গু হয়েছিল৷ তার পরের বছর তা দেড় লাখ ছাড়িযে যায়৷ গত বছর নভেম্বর পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ৩৩ হাজার মানুষ৷ তাহলে কি এই বছর আবার ডেঙ্গু বাড়বে? সরকার আশ্বস্ত করে বলছে, বাড়বে না৷ মানুষ উদ্বেগে আছেন৷ 

গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লি
গৌতম হোড়, ডয়চে ভেলে, নতুন দিল্লিছবি: privat

ন্যাশনাল ভেক্টর বোর্ন ডিজিজ কন্ট্রোল প্রোগ্রাম চিকুনগুনিয়া নিয়ে যে সংখ্যাতত্ত্ব দিয়েছে তাতে দুইটি ভাগ আছে৷ একটি হলো, যাদের চিকুনগুনিয়া হয়েছে এবং যাদের হয়েছে বলে সন্দেহ করা হচ্ছে৷ সন্দেহের তালিকায় অনেক বেশি মানুষ৷ সেই সংখ্যা কখনো এক লাখের বেশি, কখনো আড়াই লাখ ছাড়িয়েছে, কোনো বছর আবার ৬৪ হাজারে থেমে গেছে৷ উত্তর প্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী যোগী আদিত্যনাথের গোরক্ষপুর তো এনকেফেলাইটিসের জন্য বিখ্যাত ছিল৷ সাংসদ থাকার সময় লোকসভায় বহুবার তিনি এই প্রসঙ্গ তুলেছেন৷ কেন তা নির্মূল করা যাচ্ছে না, সেই প্রশ্নও তুলেছেন৷ ভারতের গ্রামগঞ্জের মানুষের ম্যালেরিয়া হলে তা যে সরকারি নথিতে উঠবেই, এমন পরিকাঠামো এখনো এদেশে তৈরি হয়নি৷

মোটকথা, মশা আছে৷ মশাবাহিত রোগ আছে৷ ডেঙ্গুর মশা হয় পরিষ্কার জলে৷ দিল্লিতে দীর্ঘ প্রচার চালিয়েছে কেজরিওালের সরকার৷ বাড়িতে, বাড়ির সামনে জল জমতে দেবেন না৷ দিলেই ডেঙ্গুর মশা হবে৷ কিন্তু দিল্লি জুড়ে পরিষ্কার ও নোংরা জলের কোনো অভাব নেই৷ না আছে লোকের সচেতনতা, না আছে পুরসভার সেই যুদ্ধকালীন তৎপরতা৷ ফলে মশা আছে, মশা থাকবে, এটাই ভবিতব্য৷ আর মশা থাকলে মশাবাহিত রোগও থাকবে৷ তাই মশা ও মশাবাহিত রোগ নিয়েই আমাদের বেঁচে থাকতে হবে৷