1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‌যুদ্ধ যেন এক সিনেমা!‌

শীর্ষ বন্দ্যোপাধ্যায়
৩ অক্টোবর ২০১৬

সংবাদমাধ্যমে এবং ফেসবুক ও টুইটারের মতো সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধের সম্ভাবনা নিয়ে মানুষের উৎসাহ তুঙ্গে৷ দেখে মনে হচ্ছে, যুদ্ধ যেন এক নতুন সিনেমা৷ উৎসবের মরশুমে রিলিজ করবে!‌

https://p.dw.com/p/2QpBC
বলিউড অভিনেতা সালমান খান
ছবি: Getty Images/AFP/Str

হিন্দি ছবির জনপ্রিয় অভিনেতা সলমন খান৷ দোষের মধ্যে তিনি বলেছিলেন, পাকিস্তানি অভিনেতারা তো সন্ত্রাসবাদী নন!‌ ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার জেরে পাকিস্তানি অভিনেতাদের ভারত ছেড়ে চলে যাওয়ার যে ফতোয়া জারি করেছে হিন্দুত্ববাদী দলগুলো, তারই প্রতিক্রিয়ায় সলমনের এই বক্তব্য৷ সেটাও স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে নয়৷ সাংবাদিক সম্মেলনে এ বিষয়ে সলমনকে প্রশ্ন করা হয়েছিল৷ সলমনের জবাব শোনার পর রীতিমত ক্ষিপ্ত শিবসেনা, মহারাষ্ট্র নবনির্মাণ সেনার মতো দক্ষিণপন্থি সংগঠন৷

দাবি উঠেছে, শুধু পাকিস্তানি অভিনেতা নয়, পাকিস্তানের সমর্থকদেরও পাকিস্তানেই ফেরত পাঠিয়ে দেওয়া উচিত৷ হিন্দি ছবির অভিনেতাদেরও কেউ কেউ এই পাকিস্তান বিরোধিতায় সামিল৷ জনপ্রিয় অভিনেতা নানা পাটেকর যেমন সদ্য বিবৃতি দিয়েছেন, দেশ সবার আগে৷ পাকিস্তানি অভিনেতাদের ভারতে কাজ করতে আসার এটা ঠিক সময় নয়৷ তবে সলমনের মতো মুখ খুলেই যে শুধু বেকায়দায় পড়ছেন তা নয়, কোনো বিরোধে না থেকেও শত্রু হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছেন শিল্পীরা৷

এর আগে বিশ্ববিশ্রুত গজল গায়ক গুলাম আলির অনুষ্ঠান বাতিল করতে হয়েছিল হিন্দুত্ববাদীদের আপত্তিতে, সদ্য আরেক জনপ্রিয় পাকিস্তানি গায়ক আতিফ ইসলামের অনুষ্ঠান বাতিল করে দিতে হল দিল্লির কাছে, গুরগাঁও-তে৷ এখানেও আপত্তি জানিয়েছিল হিন্দুত্ববাদীরা৷ সমস্যা হচ্ছে, এমন এক পরিস্থিতিতে অন্য শিল্পীরা সবাই মুখ বুজে থাকাই নিরাপদ মনে করছেন৷ যাঁরা সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষের বিরুদ্ধে, শিল্পীদের মধ্যে এই ভারতীয়, পাকিস্তানি বিভাজনের বিরুদ্ধে কথা বললে লোকে শুনত, হয়ত বা বুঝতও, তাঁরা একটি কথাও বলছেন না৷

এবং পাকিস্তানের বিরোধিতা, এখনই যুদ্ধ বাধিয়ে পাকিস্তানকে উচিত শিক্ষা দেওয়ার জন্য যাঁরা তড়পাচ্ছেন, তাঁদের ভাবসাব দেখে মনে হচ্ছে, যুদ্ধ যেন নতুন কোনো সিনেমা, যা এই উৎসবের মরশুমে দেশজুড়ে রিলিজ করবে! যুদ্ধ‌ যেন পারিবারিক বিনোদন!‌ সবাই মিলে টিভির সামনে বসে যেটা জমিয়ে উপভোগ করা যাবে৷ সংবাদমাধ্যমের একাংশ ইন্ধন জোগাচ্ছে এই যুদ্ধ যুদ্ধ উন্মাদনায়৷ টিভিতে নিয়মিত চর্চা চলছে রণকৌশল নিয়ে, পত্র-পত্রিকায় লেখা বেরোচ্ছে, দু'দেশের তুল্যমূল্য সামরিক শক্তি নিয়ে৷ সক্ষমতায় ভারত কীভাবে সব বিষয়েই এগিয়ে আছে পাকিস্তানের থেকে, তা ফলাও করে প্রচার করা হচ্ছে৷ খবরের কাগজের প্রথম পাতার শিরোনাম হচ্ছে, দরকার হলে মোক্ষম মার দেওয়া হবে পাকিস্তানকে!‌ যুদ্ধ হলে দেশের অর্থনীতির ওপর কীভাবে চাপ বাড়বে, কীভাবে সেই চাপ ঘুরে আসবে সাধারণ মানুষের কাঁধে, সেই নিয়ে কোনো কথা হচ্ছে না৷ এমনকি সামগ্রিকভাবে যুদ্ধের বিরুদ্ধেই কম কথা বলছে লোকে, কারণ তা হলে হয়ত তাকে দেশদ্রোহী বলে দেগে দেওয়া হবে৷ বলা হবে পাকিস্তানপন্থি, বলা হবে পাকিস্তানে চলে যেতে৷ ফলে যুক্তি-বুদ্ধি মুখ লুকিয়েছে কুযুক্তির ভয়ে৷ রয়েছে শুধু জাতীয়তাবাদী প্রচারের ঢক্কানিনাদ আর দেশভক্তির উন্মাদনা৷

সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে একটি মন্তব্য ইদানীং ফিরে ফিরে আসছে৷ সরকার একটা যুদ্ধ তহবিল গঠন করুক৷ আর যাঁরা সত্যিই যুদ্ধ চান, সেই নাগরিকেরা নিজেদের সঞ্চয়ের একটা অংশ সেই তহবিলে দান করুক, যাতে যুদ্ধের খরচ তুলতে সরকারকে সবার ওপর কর না বসাতে হয়৷ ওই তহবিলের টাকাতেই দিব্যি যুদ্ধ চলতে পারে৷ একমাত্র তখনই বোঝা যাবে, কার দেশভক্তি কত জোরালো!‌ এটাও কুযুক্তি, কারণ যুদ্ধ অবশ্যম্ভাবী হলে যুদ্ধ করতেই হবে৷ কিন্তু যাঁরা যুদ্ধ চাই বলে ক্ষেপে উঠেছেন, তাঁরাও তো যুদ্ধের সপক্ষে কুযুক্তি ছাড়া কিছু দিচ্ছেন না!‌

যুদ্ধ কি করতেই হবে? জানান আপনার মন্তব্য, নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান