1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

যুদ্ধাপরাধের বিচার দেখে যেতে চান মুক্তিযোদ্ধারা

২২ ডিসেম্বর ২০১১

বিজয়ের চল্লিশ বছর উপলক্ষ্যে ২০১১ সালে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে বেশ কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়৷ এই বিজয়ী সেনারা বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তাদের মতামত, ইচ্ছা-আকাঙ্খার কথা জানিয়েছেন৷

https://p.dw.com/p/13XWD
প্রতীকী ছবিছবি: Gerhard Klas

সকল মুক্তিযোদ্ধা একটি দাবিতে অনড়৷ সেটি হচ্ছে, যুদ্ধাপরাদের বিচার৷ স্বাধীনতার চল্লিশ বছর পরেও মুক্তিযোদ্ধাদের দুঃখ, হতাশা এই একটি জায়গায়৷ একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনীকে সমর্থন জুগিয়েছিল স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি৷ সেসময় অগুনতি বাঙালি'র মৃত্যুর জন্য তাই সমানভাবে দায়ী তৎকালীন পাকিস্তানের এই বাঙালি দোসররা৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও দীর্ঘ সময় একাত্তরে পাকিস্তানের মদদপুষ্ট রাজাকার, আল-বদর, আল-শামসদের বিচার হয়নি৷

বিচার দ্রুত হোক

ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে মুক্তিযোদ্ধারা একাত্তরের যুদ্ধাপরাধের বিচার দাবি করেছেন বলিষ্ঠ কণ্ঠে৷ এদেরই একজন আব্দুর রশীদ৷ যশোরের এই মুক্তিযোদ্ধা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘একাত্তর সালে স্বাধীনতার বিপক্ষে যারা ছিল, সেই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার দেখে যেতে পারবো কিনা, তা নিয়ে মনে আক্ষেপ রয়ে গেছে৷ আমরা চাই যুদ্ধাপরাধের বিচার খুব দ্রুত হোক''৷

Civilians and young liberation fighters, wounded during a bombing raid by Pakistan Air Force on the East Pakistan town of Chuadanga on April 16, 1971, are loaded into a Landrover to be taken to safety and medical treatment. (AP Photo/Michel Laurent)
একাত্তরের যুদ্ধের ময়দানে মুক্তিসেনারাছবি: AP

বিব্রত ফজলু

ফজলুল হক ভূঁইয়া আখাউড়ার বাসিন্দা৷ তিনি একজন দিনমজুর৷ কখনো রিকশা চালান, আবার জীবিকার তাগিদে ঠেলাগাড়ি ঠেলতেও দেখা গেছে তাঁকে৷ বর্তমান সমাজে তাঁর তেমন কোন পরিচয় নেই৷ তাঁর নেই একটি মুঠোফোন, এমনকি একটি হাতঘড়িও৷ এই ফজলুল হক একাত্তরে ছিলেন সম্পূর্ণ ভিন্ন এক মানুষ৷ মাতৃভূমিকে শত্রুমুক্ত করতে অস্ত্র হাতে তুলে নিয়েছিলেন তিনি, বীরত্বের সাথে লড়াই করেছেন, জয়ী হয়েছেন৷

স্বাধীন বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধী, রাজাকারদের দম্ভিত পদচারণায় বিব্রত হন ফজলু৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বললেন সেকথা৷ একই সঙ্গে দাবি করলেন যুদ্ধপরাধের আশু বিচারের৷ তিনি বলেন, ‘আমরা দেশ স্বাধীন করছি ঠিকই৷ কিন্তু স্বাধীনতার বিরোধিতা করেও আজকে রাজাকার, আল-বদর হচ্ছে এদেশের নেতা৷ আল-মুজাহিদ আমাদের ত্রিশজন নৌ-কমান্ডোকে হত্যা করেছে ঈশ্বরদি সেতুর কাছে৷'

Flash-Galerie Bangladesch 1971 Freiheitskrieg
নারী মুক্তিযোদ্ধাদের কয়েকজনছবি: Zinat Rahman

জামায়াতে ইসলামি'র বিচার দাবি

বাংলাদেশের খ্যাতনামা লেখক, সাংবাদিক, মুক্তিযোদ্ধা এবং প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা শাহরিয়ার কবির৷ একাত্তরে সাত নম্বর সেক্টরে যুদ্ধ করেছেন তিনি৷ দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে যুদ্ধাপরাধের বিচারের দাবিতে সক্রিয় শাহরিয়ার৷ ডয়চে ভেলেকে দেওয়া সাম্প্রতিক এক সাক্ষাৎকারে তিনি যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামি'র বিচার দাবি করেন৷ শাহরিয়ার বলেন, ‘যুদ্ধাপরাধের দায়ে জামায়াতে ইসলামির বিচার করতে হবে৷ রাজাকার, আল বদর বাহিনীর বিচার করতে হবে'৷

দেরিতে হলেও বিচার হোক

মিলি রহমান মুক্তিযোদ্ধা নন৷ একাত্তরে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় তিনি ছিলেন পাকিস্তানে৷ তাঁর স্বামী ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান করাচির মৌরিপুর বিমান ঘাঁটি থেকে একটি জঙ্গি বিমান দখলে করে বাংলাদেশের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিলেন৷ লক্ষ্য, নিজেদের দেশের স্বাধীনতায় অবদান রাখা৷ মতিউরের সেই চেষ্টা সফল হয়নি৷ কিন্তু তাঁর সাহসিকতা মুক্তিযোদ্ধাদের প্রেরণা জুগিয়েছে, পাকিস্তানকে করে তোলে ভীত সন্ত্রস্ত৷ একাত্তরের আগস্টে মতিউরের মৃত্যুর পর পাকিস্তানে চরম মানসিক নির্যাতনের শিকার হন মিলি রহমান৷ একসময় অবশ্য সন্তানদের নিয়ে দেশে ফিরে আসতে সক্ষম হন তিনি৷ মিলি'র এখন একটাই চাওয়া, যুদ্ধাপরাধের বিচার৷ দেরিতে হলেও সেই বিচার হবে, এটাই প্রত্যাশা তাঁর৷

বর্তমান সরকার যুদ্ধাপরাধের উদ্যোগ নেওয়ায় সন্তুষ্ট মুক্তিযোদ্ধারা৷ শুধু মুক্তিযোদ্ধা কেন, বর্তমান প্রজন্ম থেকে শুরু করে আপামর জনতা যুদ্ধাপরাধের বিচারকে স্বাগত জানিয়েছে৷ সাধারণ মানুষ রাজনীতি বোঝেনা, বোঝে একাত্তরের পাকিস্তানি দোসরদের বিচার৷ সেই বিচার মৃত্যুর আগে দেখে যাবেন, এমন প্রত্যাশা মুক্তিযোদ্ধাদের৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম

সম্পাদনা: হোসাইন আব্দুল হাই

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য