যেসব বিষয়ে সমঝোতার পর জার্মানিতে জোট
বিভিন্ন ইস্যুতে মতপার্থক্যের কারণে এক মাস ধরে জার্মানির জোট সরকারের ব্যাপারে আলোচনা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছিল৷ ১৮ ঘণ্টা আলোচনার পর জোট গঠনে একমত হলেও কে কোন মন্ত্রণালয় পাচ্ছেন তা ঠিক হয়নি৷
বার্লিনে চুক্তি সম্পন্ন
অনেক বিষয়ে মতানৈক্য থাকায় কয়েক সপ্তাহ ধরে চেষ্টা চললেও জোট সরকার গঠনের প্রয়াস সাফল্যের মুখ দেখছিল না৷ বার্লিনে ১৮ ঘণ্টার বৈঠক শেষে বুধবার সকালে সে অপেক্ষার অবসান হয়েছে৷ ইতিহাসে সবচেয়ে বড় জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে জার্মানির সবচেয়ে বড় দুটি দল খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী (সিডিইউ) ও সামাজিক গণতন্ত্রী (এসপিডি) দল৷ দলের প্রতিনিধিরা সরকার গঠনে ঐকমত্যে পৌঁছেছে৷ মন্ত্রণালয় বণ্টনের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি৷
সমঝোতার পথ
সেপ্টেম্বরে নির্বাচনের পর জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল-এর খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী পেয়েছিল অন্তত ৪২ ভাগ ভোট৷ অনেকেই সিগমার গাব্রিয়েলের নেতৃত্বাধীন সামাজিক গণতন্ত্রী দলকে ম্যার্কেলের দলের ভবিষ্যৎ অংশীদার হিসেবে দেখেছিলেন৷ যদিও দু দলের মধ্যে অনেক বিষয়েই মতপার্থক্য ছিল৷
ন্যূনতম মজুরি : নীতির লড়াই
জাতীয় ন্যূনতম মজুরি – এই একটি ইস্যুতে দুই দলের মধ্যে নীতিগত ব্যবধান অনেক বেশি৷ চূড়ান্ত চুক্তিতে প্রতি ঘণ্টার ন্যূনতম মজুরি সাড়ে আট ইউরো নির্ধারণ করা হয়েছে, যেমনটা এসপিডি দাবি করেছিল৷ কিন্তু ২০১৫ সালের আগে এটি কার্যকর হবে না৷ সিডিইউ-র আশঙ্কা এই সিদ্ধান্তের ফলে অনেক মানুষ চাকরি হারাবেন৷
মহাসড়কে টোলের প্রস্তাব
জার্মানির মহাসড়কগুলোতে টোল দেয়ার বিষয়টিতে দুই দলই রাজি নয়৷ কিন্তু সিডিইউ’র বাভারিয়ান সহযোগী সিএসইউ’র প্রধান হর্স্ট জেহোফার তাঁর ভোটারদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন মহাসড়কে গাড়ি চলাচলের উপর টোল আরোপ করলেই কেবল তিনি কোনো জোটে যাবেন৷
কে বেশি পেনশন পাবে?
এসপিডি’র দাবি, যেসব কর্মী ৪৫ বছর ধরে চাকরি করছেন, তাদের পূর্ণ পেনশন দিতে হবে, যদি তাদের বয়স ৬৩ বছরও হয়৷ এমনকি ১৯৯২ সালের আগে যাদের সন্তান আছে সেসব মায়েদের পেনশন বোনাস দেয়ার পক্ষে সিডিইউ৷ চূড়ান্ত চুক্তিতে দুটি দাবিকে একসাথে করা হয়েছে, যার ফলে জার্মানির কয়েকশ’ কোটি ইউরো খরচ হবে৷
শীর্ষ চাকরিগুলোতে বেশি নারী
বিএমডাব্লিউ’র বোর্ড সদস্যদের মধ্যে মাত্র ১২.৫ ভাগ নারী৷ দুই দলই বলেছে, এটা যথেষ্ট নয়৷ তারা দেখতে চায়, পাবলিক কোম্পানিগুলোর শীর্ষ পদে নারীদের নিযুক্ত করা হচ্ছে৷ তারা শীর্ষ পদগুলোতে নারীদের নিয়োগ ৩০ ভাগ বাড়ানোর পক্ষে একমত হয়েছে, যা বর্তমানের চেয়ে তিনগুন বেশি৷
স্বাস্থ্যসেবা
স্বাস্থ্যসেবার বিষয়ে খুব দ্রুতই সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই দল৷ বিমার পরিমাণ বাড়ানো হবে এবং জনস্বাস্থ্য বিমার প্রিমিয়াম শেষ করা হবে৷
পররাষ্ট্রনীতি
আশা করা হচ্ছে, সামাজিক গণতন্ত্রী দলের ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী হতে পারেন৷ ফলে জার্মান পররাষ্ট্রনীতিতে অনেকটা পরিবর্তন আসতে পারে, বলে ধারণা করছেন অনেকে৷ তবে, সিডিইউ এর কাছে পররাষ্ট্রমন্ত্রীর চেয়ে অর্থমন্ত্রী বেশি গুরুত্বপূর্ণ৷
জ্বালানি নীতিতে সমঝোতা
দুই দলই দেশের চাহিদা অনুযায়ী নবায়নযোগ্য জ্বালানি ৫৫ থেকে ৬০ ভাগ বাড়ানোর পরিকল্পনায় একমত হয়েছে৷ এসপিডি নবায়নযোগ্য জ্বালানি থেকে বিদ্যুৎখাতে ৭৫ ভাগ ব্যবহারের পক্ষে, অন্যদিকে সিডিইউ বলেছে, ৫০ থেকে ৫৫ ভাগই যথেষ্ট৷
তৃণমূল কর্মীদের অধিকার
জার্মানির ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দলের সদস্যরা জোট সমর্থনের অধিকার পেয়েছে৷ ফলে এসপিডি তার তৃণমূল সমর্থকদের জিজ্ঞেস করবে তারা এই জোটে যাবে কিনা৷