1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

রবীন্দ্রনাথের কবিতার ছন্দে মুগ্ধ হয়েই আমার অনুবাদ শুরু: উইলিয়ম রাদিচে

২ আগস্ট ২০১১

ইংরেজি-ভাষী এলাকায় রবীন্দ্র-চর্চার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখছেন যাঁরা, ব্রিটিশ কবি ও রবীন্দ্র-অনুবাদক উইলিয়ম রাদিচে তাঁদের অন্যতম৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে সাক্ষাৎকারে রাদিচে তাঁর রবীন্দ্র-চর্চার নানা দিক তুলে ধরেছেন৷

https://p.dw.com/p/128sq
উইলিয়ম রাদিচেছবি: William Radice

১৯১৩ সালে রবীন্দ্রনাথ সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার পর ইংরেজি সহ নানা ভাষায় তাঁর লেখা অনুবাদের হিড়িক পড়ে যায়৷ ইংল্যান্ডে ম্যাকমিলান প্রকাশনীর হাত ধরে বের হতে থাকে রবীন্দ্র সাহিত্যের অনুবাদ গ্রন্থ৷ সেই অনুবাদকে সামনে রেখে প্রকাশিত হয় জার্মানির কু্র্ট ভল্ফ্ ফ্যারলাগ থেকে রবীন্দ্র রচনার জার্মান ভাষান্তর৷ যশস্বী ফরাসি লেখক খোদ অঁদ্রে জিদ গীতাঞ্জলি অনুবাদ করেন৷ বহুকাল পরে আটের দশকের মাঝামাঝি মূল বাংলা থেকে রবীন্দ্রনাথের কবিতার ইংরেজি ভাষান্তরের ক্ষেত্রে এক নতুন মাত্রা এনে দেন উইলিয়ম রাদিচে৷ দীর্ঘদিন ধরে বিলেত প্রবাসী কবি ঔপন্যাসিক ও প্রাবন্ধিক কেতকী কুশারী ডাইসনও মূল বাংলা থেকে রবীন্দ্রনাথের রচনার ইংরেজি অনুবাদ করেছেন৷

রাদিচের জন্ম ১৯৫১ সালে লন্ডনে৷ নিজে একজন প্রতিষ্ঠিত কবি৷ এই ব্রিটিশ কবি পরম অধ্যবসায় আর যত্ন নিয়ে ইংরেজিভাষী পাঠকদের উপহার দেন ‘‘রবীন্দ্রনাথ টেগোর: সিলেক্টেড পোয়েমস'' সংকলন৷ ১৯৮৫ সালে পেঙ্গুইন প্রকাশ করে এই কাব্যগ্রন্থ৷ ইতোমধ্যে এই সংকলনের একাধিক সংস্করণ বেরিয়ে গেছে৷

উইলিয়ম রাদিচে রবীন্দ্রনাথের কবিতা অনুবাদে ব্যাপৃত হলেন যখন, তখন পশ্চিমে রবীন্দ্রচর্চা এক ধরনের বিস্মৃতির শিকার হয়ে ছিল৷ তা সত্ত্বেও রবীন্দ্রনাথে কেন এলেন? রাদিচের জবাব: ‘‘আমি বাংলা শিখতে শুরু করেছিলাম৷ বাংলা শেখার সময় আমি রবীন্দ্রনাথের কবিতা আর ছোটগল্প পড়ছিলাম৷ এবং তাড়াতাড়ি বুঝতে পেরেছি যে উনি আসলে মহাকবি - বিশ্বকবি৷ বিশেষ করে ওনার কবিতায় একটা ছন্দ পাই৷ সেই ছন্দ শুনে আমি এত মুগ্ধ হয়েছিলাম যে, তাড়াতাড়ি আমি ঠিক করলাম আমি অনুবাদ করব৷ আমি নিজে কবি৷ আর আমার নিজের কবিতায় ছন্দের ভূমিকা বেশ বড়৷ সবসময় আমি চেষ্টা করি রবীন্দ্রনাথের মূল ছন্দটা বুঝতে৷''

Rabindranath Tagore (1861 - 1941) undatierte Aufnahme
রবীন্দ্রনাথের কবিতার ছন্দ শুনে মুগ্ধ হয়ে আমি ঠিক করলাম অনুবাদ করব: রাদিচে

রবীন্দ্রনাথ পড়তে গিয়ে প্রথম কোন্ কবিতাখানা নাড়া দিয়েছিল তাঁকে৷ রাদিচে বললেন: ‘‘আগমন, খেয়াতে বেরিয়েছিল৷ আবার ইংরেজি গীতাঞ্জলিতে আগমন কবিতা ব্যবহার করেছিলেন৷ ‘‘তখন রাত্রি আঁধার হল সাঙ্গ হলো কাজ''৷ ওটাই প্রথম কবিতা যা আমি অনুবাদ করেছিলাম৷''

‘‘তখন রাত্রি আঁধার হল, সাঙ্গ হলো কাজ

আমরা মনে ভেবেছিলাম আসবেনা কেউ আজ৷''

রবী ন্দ্রনাথের এই ছন্দোবদ্ধ পংক্তিগুলো তরুণ রাদিচের মনে অনুরণন তোলে৷ তাঁকে নিয়ে যায় বিশ্বকবির সৃষ্টির অপার ভাণ্ডারে৷ চলে সেই কাব্যসুধার মাঝে তাঁর অবগাহন৷

উইলিয়ম রাদিচের নিজের কাব্যগ্রন্থ একাধিক৷ ১৯৭৪ সালে বের হয় তাঁর প্রথম কবিতার বই ‘‘এইট সেক্সন্স''৷ তারপর ‘‘স্ট্রাইভিংস''- ১৯৮০ সালে৷ ঢাকার ইউপিএল প্রকাশনী বের করেছে তাঁর কবিতার বই ‘‘দ্য রিট্রিট''৷ ‘‘গ্রিন, রেড, গোল্ড: অ্যা নভেল ইন ওয়ান হান্ড্রেড ওয়ান সনেটস'' প্রকাশিত হয় ২০০৩ সালে৷ তাঁর আর একটি বড় মাপের কাব্য সংকলন ‘‘দ্য ইনফাইনাইট অর্কেস্ট্রা''৷ এর শেষ অংশটি অলংকরণ সহ প্রকাশ করে হামবুর্গের হিরুন্ডো প্রেস ইংরেজি-জার্মান দ্বিভাষিক এক সংকলন হিসেবে৷ কবিতার ছন্দ ঢুকে আছে তাঁর সত্তার গভীরে৷ তাই প্রশ্ন - কবি হওয়ার কারণে রবীন্দ্রনাথ অনুবাদের কাজটা কী সহজ হয়েছে তাঁর জন্য? রাদিচে জানালেন: ‘‘হতে পারে৷ আমার মনে হয় যে কবি না হলে আমি এইসব কাজ করতে পারতামনা৷'

শুধু কবিতা নয়, রবীন্দ্রনাথের ছোট গল্পও অনুবাদ করেছেন রাদিচে৷ তাঁর অনুবাদে ‘‘সিলেক্টেড শর্ট স্টোরিজ প্রকাশিত হয় ১৯৯১ সালে৷ কবিতা না গল্প - কোনটার অনুবাদে রাদিচে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য অনুভব করেছেন?

‘‘উত্তর দেয়া মুশকিল৷ কেননা দুটোই আমার ভাল লাগে৷ অনেকে মনে করে যে গদ্যের অনুবাদ কবিতার অনুবাদের চেয়ে সহজ হবে৷ কিন্তু তা নয়৷ রবীন্দ্রনাথ অবশ্যই মহা গদ্যলেখক - উপন্যাস, ছোটগল্প লেখক ছিলেন৷ কিন্তু তিনি সবসময় কবি ছিলেন৷ যখন তিনি ছোটগল্প উপন্যাস লিখতেন, উনি সবসময় যেন কবি হিসেবে লিখতেন৷ আর সেজন্য ওনার উপন্যাসে ছোটগল্পে কাব্যিক একটা বৈশিষ্ট্য আছে৷ সেটা বোঝা মুশকিল কিন্তু আমি চেষ্টা করেছি৷''

প্রতিবেদন: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক

সম্পাদনা: সঞ্জীব বর্মন