1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘রাজনৈতিক সহনশীলতা আশা করতে পারি, ভরসা পাই না’

সমীর কুমার দে ঢাকা
৩০ ডিসেম্বর ২০২২

পদ্মা সেতু, মেট্রোরেল চালুর মধ্য দিয়ে বিদায়ী বছরে বড় দু'টি প্রকল্প দৃশ্যমান হয়েছে৷ রাজনৈতিক সহনশীলতার মধ্যে বছরের শেষে এসে হঠাৎ করে অস্থিতিশীল হয়ে পড়ে রাজনৈতিক অঙ্গন৷

https://p.dw.com/p/4LZUn
ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী
ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীছবি: Sirajul Islam Chowdhury

আর এক বছর পরই জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ সবকিছু মিলিয়ে বিদায়ী বছরটি কীভাবে পর করলাম, আর নতুন বছরে প্রত্যাশাই বা কী? এসব নিয়ে ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলেছেন ইমিরেটাস অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী৷

ডয়চে ভেলে : বিদায়ী বছরটি থেকে আমরা নতুন কী অর্জন করেছি?

অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী : বিদায়ী বছরে দু'টি জিনিস হয়েছে, এক. পদ্মা ব্রিজের উদ্বোধন হলো৷ আর দুই. মেট্রোরেল চালু৷ এছাড়া রাজনৈতিক অঙ্গনটা তপ্ত হল৷ বিরোধী দল হিসেবে বিএনপির একটা আত্মপ্রকাশ দেখলাম৷ বেকারত্ব বৃদ্ধি পেয়েছে, দ্রব্যমূল্য বেড়েছে, যানবাহনের খরচ বেড়েছে এগুলো ঘটেছে৷

বিদায়ী বছরে সামাজিক কোন পরিবর্তন আপনি লক্ষ্য করেছেন?

সামাজিক পরিবর্তন তো হঠাৎ করে চোখে পড়ে না৷ কিন্তু যেটা আমি বুঝতে পারছি, এই যে মধ্যবিত্ত শ্রেণী তারা খুব বিপদে পড়েছে৷ মানে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর একটা অংশ নিচে নেমে গেছে৷ আরেকটা অংশ কোনমতে টিকে আছে কষ্ট করে৷ মধ্যবিত্ত শ্রেণীটা অনেক কষ্টে আছে৷ আর গরীব মানুষের যে কী হাল সেটা আমরা ধরতেও পারছি না৷ গরীব মানুষের সঙ্গে মধ্যবিত্তের যে যোগাযোগ সেটা অনেক কমে গেছে৷ সামাজিকভাবে মেরুকরণ ঘটছে৷ এটা আগেও ছিল কিন্তু সেটা বিদায়ী বছর অনেকটা বেড়েছে৷

সারা বিশ্বে যে অর্থনৈতিক মন্দা ছিল, তার মধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে আপনি কীভাবে মূল্যায়ন করবেন?

বিশ্ব মন্দায় বাংলাদেশও পড়েছিল৷ কিন্তু বাংলাদেশ খুব একটা ভয়ংকর পরিস্থিতিতে পড়েনি৷ এর মূল কারণ হচ্ছে এখানকার যে মেহনতি মানুষের শ্রম৷ তারা এর মধ্যেও বিদেশে গেছে, বিদেশ থেকে রেমিটেন্স পাঠিয়েছে৷ তারা গার্মেন্ট খাতটাকে চালু রেখেছে, শুধু চালু রাখেনি, ভালোভাবেই চালু রেখেছে৷ মেহনতি মানুষের শ্রমের জন্যই কোন বড় বিপর্যয় ঘটেনি৷ কিন্তু মানুষের জন্য যেটা হয়েছে, দ্রব্যমূল্য অনেক বেড়েছে৷ সমস্ত কিছুরই দাম বেড়েছে৷ চিকিৎসার দাম অনেক বেড়ে গেছে৷ ওষুধের দাম বেড়েছে৷ শুধু বিপর্যয় হয়নি মেহনতি মানুষের শ্রমের জন্য৷

‘বড় বড় যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটাকে উন্নয়ন বলা যাবে না’

রাজনৈতিক কোন পরিবর্তন কী আপনি লক্ষ্য করেছেন? ইতিবাচক বা নেতিবাচক?

ইতিবাচক একটা লক্ষণ দেখা যাচ্ছিল, মনে হচ্ছিল, বিরোধী দল তাদের কর্মসূচি পালন করতে পারবে৷ তার মধ্যেও তাদের উপর নানান ধরনের চাপ ছিল৷ পরিবহন ধর্মঘট হয়েছে৷ পরে দেখা গেল, সরকারের দিক থেকে সহনশীলতাটা কমে গেছে৷ যেটা আশা করা গেছিল, যে রাজনৈতিক পরিস্থিতিটা উন্নত হবে সেটা কিন্তু শেষ পর্যন্ত হলো না৷

বিদায়ী বছরে আমাদের ব্যর্থতা কী ছিল?

মূল ব্যর্থতা ছিল, দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণের কোনো পরিকল্পনা ছিল না৷ দ্রব্যমূল্যটা মানুষকে খুবই বিপন্ন করেছে বলে আমার মনে হয়৷

শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা এগুতে পেরেছি, নাকি পিছিয়ে যাচ্ছি?

শিক্ষা ক্ষেত্রে আমরা মোটেই এগুতে পারিনি৷ অনেক ছেলে মেয়ে এসএসসি, এইচএসসি পরীক্ষা দিতে পারিনি৷ আবার যে ফল প্রকাশ হয়েছে সেটা দেখেও বোঝা যাচ্ছে না যে, শিক্ষার গুণগত মান বেড়েছে৷ শিক্ষাক্ষেত্রে আমরা এগুতে পারিনি৷

পরের বছরই তো জাতীয় সংসদ নির্বাচন৷ নির্বাচনি সংস্কৃতিতে কি কোনো পরিবর্তন আপনি আশা করেন?

আমরা সবসময় আশা করি৷ আমি নিজেও আশা করি পরিবর্তন হবে৷ কিন্তু কোন ভরসা করতে পারি না৷ আশা করতে পারি পরিবর্তন হবে, রাজনীতিতে সহনশীলতা আসবে এবং সকলের অংশগ্রহণের মধ্য দিয়ে নির্বাচন হবে৷ কিন্তু সেটা ভরসা করতে পারি না৷ যারাই ক্ষমতায় থাকে তারা ক্ষমতা ধরে রাখতে চায়৷ পরাজয় মানতে চায় না৷ পরাজয় হতে পারে সেই সম্ভাবনাটাও কেউ মানতে চায় না৷ এটা না মানলে বুর্জোয়া গণতন্ত্রটাও কাজ করে না৷ নির্বাচন তো গণতন্ত্রের একটা অংশ মাত্র৷ নির্বাচনটা কাজ করে না তখন যখন ক্ষমতাসীনরা মনে করে ক্ষমতায় থাকতেই হবে৷

নির্বাচন ঘিরে ইতিমধ্যে কূটনীতিকদের কিছু তৎপরতা আমরা দেখছি, এই তৎপরতাকে আপনি কীভাবে দেখেন?

এই তৎপরতা তো ভেতরের দূর্বলতার কারণেই৷ কূটনীতিকরা তো সব সময়ই প্রভাব বিস্তার করার চেষ্টা করবে তাদের নিজেদের স্বার্থে৷ তারা পরছে বা সম্ভব হচ্ছে এই কারণে যে, ভেতরে যে রাজনীতি চলছে সেটা তাদের প্রবেশের সুযোগ করে দিচ্ছে৷ সেই সুযোগটা তারা নিচ্ছে নিজেদের স্বার্থে৷ বাংলাদেশের স্বার্থে না৷

আমাদের মূল্যবোধের যে অবক্ষয় হচ্ছে, নতুন বছরে এ থেকে বের হওয়ার কোন পথ আপনি দেখেন কিনা?

আমাদের যে নৈতিক অবক্ষয় হচ্ছে সেটা অর্থনৈতিক কারণে৷ এর মূল কারণটা অর্থনৈতিক৷ এটা থেকে বের হয়ে আসতে হলে, যে ব্যবস্থার মধ্যে আমরা আছি উন্নয়নের এই ধারাটা ব্যবস্থার পরিবর্তন করতে পারবে না৷ এই ধারাতে যত উন্নতি হবে, ততই বৈষম্য বাড়াবে৷ উন্নয়নের এই ধারাকে পরিত্যাগ করে, যে উন্নয়নের ধারাটা সার্বজনীন হয়, উন্নয়ন যাতে সবার কাছে পৌঁছায় সেই চেষ্টা করা দরকার৷ এই চেষ্টাটাই আবশ্যক বলে আমি মনে করি৷

আমরা যে বড় বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন হতে দেখছি, সেটা কি উন্নয়নের ধারা?

বড় বড় যে প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে সেটাকে উন্নয়ন বলা যাবে না৷ দৃশ্যমান এগুলো দেখে মনে হয় উন্নতি হচ্ছে৷ কিন্তু উন্নয়নের ফলটা তো পাওয়া যায় না৷ যেমন পদ্মা ব্রিজ চালু হল, এতে তো ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ হলো না৷ রাজধানী থেকে যে লোক বাইরে যাবে তা নয়, বরং বাইরের লোকই ঢাকায় বেশি করে আসছে৷ যে কারণে উন্নয়নটা মানুষের উপকারে লাগানোর জন্য যে ধরনের দুরদৃষ্টি দরকার সেটার অভাব দেখতে পাচ্ছি৷

নতুন বছরে আপনার প্রত্যাশা কী হবে?

একটা হল, রাজনীতিতে যেন সহিংসতা না বাড়ে৷ রাজনীতির ক্ষেত্রে যেন সহনশীলতা দেখা দেয়৷ রাজনীতি হল সবচেয়ে বড় ব্যাপার৷ সেখানে যদি সহনশীলতা দেখা দেয় সেটা আমাদের জন্য সুখকর হবে৷ এই সহনশীলতা সৃষ্টির জন্য উদ্যোগটা কিন্তু সরকারকেই নিতে হবে৷ সরকারের পক্ষ থেকেই উদ্যোগ নিতে হবে যাতে সহনশীলতা বাড়ে৷ যাতে সবার বক্তব্য উপস্থাপন করার সুযোগ ঘটে৷ যেসব রাজনৈতিক দল আছে তারা যেন প্রকাশ্যে রাজনীতি করতে পারে এবং তাদের যেন সেই সুযোগ থাকে৷