1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু নিয়ে বিতর্ক

২২ মে ২০১৭

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, হাসপাতালের চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব, কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে এক সপ্তাহ ধরে এ নিয়ে চলছে বিশদ আলোচনা৷

https://p.dw.com/p/2dO2B
BHangladesch Dhaka Medical College und Krankenhaus
শিক্ষার্থীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ, চিকিৎসক ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব, কর্তব্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছেছবি: DW

ডয়চে ভেলের কন্টেন্ট পার্টনার বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম-এর প্রতিবেদনে জানা যায়, ১৮ ই মে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্রী আফিয়া জাইন চৈতী’র মৃত্যুর ঘটনায় ঢাকার সেন্ট্রাল হাসপাতালের বিরুদ্ধে অবহেলা ও ভুল চিকিৎসার অভিযোগে মামলা হয়৷ মামলাটি করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ৷  মামলার আসামি অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহসহ ৮ চিকিৎসককে আদালত জামিন দিয়েছে৷ 

ছাত্রীর মৃত্যুর পরপরই সতীর্থরা হাসপাতালটিতে ভাংচুর চালায়৷ তাদের অভিযোগ– বুধবার ডেঙ্গু জ্বর নিয়ে হাসপাতালটিতে ভর্তি হলেও তাকে ক্যান্সারের চিকিৎসা দেওয়া হয়েছিল৷

মামলায় ডা: এ বি এম আব্দুল্লাহকে প্রধান আসামি করা হয়েছে৷ এ প্রসঙ্গে বিস্ময় প্রকাশ করে সাংবাদিক নাজমুল হোসেন লিখেছেন, ‘‘আমি পেশায় সাংবাদিক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র৷ আব্দুল্লাহ স্যারকে প্রধান আসামি করার তীব্র বিরোধিতা করছি৷ দোষ সেন্ট্রাল হাসপাতালের অবহেলার, আব্দুল্লাহ স্যারের নয়৷’’

তিনি নিজের অভিজ্ঞতার কথা তুলে ধরে লিখেছেন, ‘‘আমার স্ত্রী যখন সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা, তখন  কঠিন অ্যাজমায় আক্রান্ত হন৷ বাচ্চাকে বাঁচানো কঠিন ছিল৷ সেই সময় পাশে ছিলেন আব্দুল্লাহ স্যার৷’’ তিনি মৃত মেয়েটির পরিবারকে সান্ত্বনা জানিয়েছেন৷ তবে শিক্ষার্থীদের হাসপাতাল ভাংচুরের বিরোধিতা করেছেন৷নাজমুল হোসেন লিখেছেন, ‘‘চিন্তা করুন, ওই অরাজক পরিস্থিতির সময়ে হাসপাতালের বাকি রোগীদের কী অবস্থা হয়েছিল? এটা কি অপরাধ নয়?’’

সাংবাদিক প্রভাষ আমিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও সাংবাদিকদের দায়িত্ব নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন৷ লিখেছেন, ‘‘ডা. আব্দুল্লাহও মানুষ৷ তিনি ভুল করতেই পারেন না, তা নয়৷ কিন্তু আফিয়ার ক্ষেত্রে চিকিৎসা ঠিক ছিল না ভুল; সেটা বিচারের ক্ষমতা নিশ্চয়ই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী, প্রক্টর, সাংবাদিক বা পুলিশের নেই৷ কিন্তু শিক্ষার্থীরা ভাঙচুর করলেন, প্রক্টর মামলা করলেন, আর আমরা সাংবাদিকরা লিখে দিলাম- ডা. আব্দুল্লাহর ভুল চিকিৎসায় রোগীর মৃত্যু৷ এ কেমন কথা? ডা. আব্দুল্লাহ ভুল করেছিলেন কিনা, সেটা যাচাই করতে পারবেন ডাক্তাররাই৷ প্রয়োজনে বিএমডিসি বা বিএমএ তদন্ত করুক৷’’

তিনি বাংলাদেশের চিকিৎসা ব্যবস্থার উন্নয়নের উপর জোর দিয়েছেন৷ লিখেছেন, ‘‘চিকিৎসা শিক্ষার মান উন্নত করতে হবে, যাতে সার্টিফিকেটধারী অদক্ষ ডাক্তার তৈরি না হয়৷ ঠুঁটো জগন্নাথ বিএমডিসিকে সক্রিয়, কার্যকর ও সক্ষম করে গড়ে তুলতে হবে৷ নইলে এই অনাকাঙ্ক্ষিত ভাঙচুর, মারধোর, মামলা, হামলা চলতেই থাকবে৷’’

একাত্তর টেলিভিশনের একটি অনুষ্ঠানে ডাক্তার আব্দুল্লাহ স্কাইপে সরাসরি যোগ দিয়েছিলেন৷ সেখানে তাঁকে আসামি করা সম্পর্কে দাবি করেন, ‘‘চিকিৎসা ক্ষেত্রে কোনো অবহেলা বা ভুল হয়নি, কেননা, কোনো চিকিৎসকই চান না তাঁর হাতে কোনো রোগীর মৃত্যু হোক৷’’ তিনি বলেন, কোনো রোগীকে যদি শেষ মুহূর্তে চিকিৎসার জন্য আনা হয়, বা কোনো জটিলতা হয়, তাহলে রোগীর মৃত্যু হতেই পারে৷ তবে তিনি এটাও স্বীকার করেন যে, দেশে ভালো চিকিৎসক তৈরি হচ্ছে না,  তাই অবহেলার বিষয়টিও এড়িয়ে যাওয়া যায় না৷

তবে এই ঘটনার ক্ষেত্রে সবকিছু যাচাই-বাছাই না করে তাকে আসামি করার বিষয়টি মেনে নিতে পারছেন না তিনি৷ অনুষ্ঠানে উপস্থিত সাংবাদিকও জানান দেশে ডেঙ্গু সম্পর্কে সর্বপ্রথম যে চিকিৎসক সচেতনতা সৃষ্টি করেছিলেন, তিনি ডা. আবদুল্লাহ৷ ঐ সাংবাদিক এ সময় সাংবাদিক ও সম্পাদকের দায়িত্বশীলতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন৷ বলেন, তথ্য যাচাই বাছাই না করেই লিখে দেয়া হলো ‘ভুল চিকিৎসায় মৃত্যু’৷ এটা কী ধরনের সাংবাদিকতা সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলেছেন তিনি৷

এদিকে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এবং দেশের চিকিৎসক ও ডাক্তারি পড়ছে এমন শিক্ষার্থীরা নিজেদের অবস্থান তুলে ধরেছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে৷

 

চিকিৎসক নাসির লিখেছেন, ‘‘মহান সাংবাদিক সাহেবরা কখনোই ঘটনার ভিতরে ঢোকেন না, নিউজের সত্যতা যাচাই না করেই একটা নিউজ করে বাহবা কুড়ান৷ এসব নিউজের কোনো পোস্টমর্টেমও করেন না৷’’ তিনি মৃত মেয়েটির রিপোর্ট পোস্ট করে লিখেছেন, ‘‘নিচের রিপোর্টটাই বোঝার জন্য যথেষ্ট যে মেয়েটার ডেংগু হয়েছিল নাকি ক্যান্সার৷ এটা এক ধরণের রক্তের ক্যান্সার৷’’

চিকিৎসক জাহিদুর রহমান লিখেছেন, ‘‘ দয়া করে ডাক্তারদের প্রাইভেট প্র্যাকটিস বন্ধ করার মতো কঠিন সিদ্ধান্ত পালন করতে বাধ্য করবেন না৷’’ তিনি আরও লিখেছেন, ‘‘হলুদ সাংবাদিকতার কারণে বিভিন্ন পত্রিকার বিরুদ্ধে মামলা করা উচিত, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে করা উচিত মানহানির মামলা৷’’

মাহমুদা খানম চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে লিখেছেন, ‘‘ডাক্তার, তোমরা কি মানুষ? নাকি মাঝেমধ্যে কসাই হয়ে যাও? ভুল চিকিৎসায় যারা তাদের আপনজন হারায়, তারাই কেবল বোঝে হারানোর ব্যথা৷ আমার পরিবার এমনই এক স্বজন হারানোর ব্যথায় আজও জর্জরিত৷’’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক শিক্ষার্থী মৃত্যুর খবরটি শেয়ার করে লিখেছেন তারা এই ঘটনায় ক্ষুব্ধ৷ তারা তাদের বোনকে হারিয়েছেন এবং এই শোক জানানোর ভাষা তাদের নেই৷

সাংবাদিক ও প্রযোজক ইমদাদুল জাহিদ হাসপাতাল ভাংচুর প্রসঙ্গে লিখেছেন, ‘‘ভাই, হাসপাতাল কী দোষ করেছিল? হাসপাতালে আরো অনেক রোগী ছিল৷ আপনাদের ভাংচুরে কি তারা আতংকিত হয়ে আরো বেশি অসুস্থ হয়ে পড়বে না? ভাংচুর করলেই সুচিকিৎসা নিশ্চিত হবে? এখানে একজন ডাক্তারের উপর রাগ করে আপনারা হাজারটা অসুস্থ মানুষকে কষ্ট দিতে পারেন না৷ হাসপাতাল রোগীদের, অসুস্থ মানুষদের, কষ্টে চিৎকার করা স্বজনদের৷ এখানে অন্তত বিপ্লব চলে না৷ তবে একটা ব্যাপার জানেন কিনা জানি না, যুদ্ধাবস্থাতেও শত্রুপক্ষের হাসপাতালে হামলা করা হয় না৷ হাসপাতালকে হামলার উর্ধ্বে রাখা হয়৷ হরতালে অ্যাম্বুলেন্স ছেড়ে দেয়া হয়৷ সহপাঠীর শোক আপনাদের হাতে লাঠি তুলে দিতে পারে৷ সহপাঠীর শোককে শক্তিতে পরিণত করে নিরপরাধ ডাক্তারদের মার দেয়া দেখে নিশ্চয়ই আপনাদের প্রিয় বান্ধবীর আত্মা শান্তি পাচ্ছে....’’

সংকলন: অমৃতা পারভেজ

সম্পাদনা: আশীষ চক্রবর্ত্তী

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান