1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

শুরু হচ্ছে রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৬ এপ্রিল ২০১৭

প্রবল বিরোধিতার পরও রামপাল বিদ্যুকেন্দ্রের কাজ আগামী মাসেই শুরু হচ্ছে৷ তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ মনে করেন এটা ‘‘অবিশ্বাস্য মাত্রায় একগুঁয়েমি বা জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতা৷’’

https://p.dw.com/p/2bxbf
Bangladesch Sundarbans Mangrovenwald Khulna Rehe
ছবি: Imago/UIG

এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ঠিকাদার কোম্পানি ভারত হেভি ইলেক্ট্রিক্যালস লিমিটেড (ভেল)-কে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দিয়েছে কেন্দ্রটির মালিক বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল)৷ এর মাধ্যমে বহুল আলোচিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্মাণকাজ সম্পন্ন করার জন্য ক্ষণ গণনা শুরু হয়ে গেল৷

আগামী মে মাসেই কাজ শুরু করবে ভেল৷ ৪১ সপ্তাহের মধ্যে দুই ইউনিটের কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ করা হবে বলে সময়সূচি চূড়ান্ত করা হয়েছে৷ সে অনুযায়ী কেন্দ্রটির প্রথম ইউনিটের নির্মাণ কাজ আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে এবং দ্বিতীয় ইউনিটের কাজ ২০১৯ সাল নাগাদ শেষ করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে৷

‘‘ভেলকে কাজ শুরু করার নোটিশ দেওয়া হয়েছে’’

বিআইএফপিসিএল-এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক উজ্জ্বল কান্তি ভট্টাচার্য ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভেলকে কাজ শুরু করার নোটিস দেওয়া হয়েছে৷ এখন তারা নির্মাণ কাজ শুরু করবে৷ এ নোটিস দেওয়ার ৪১ সপ্তাহের মধ্যে প্রথম ইউনিটের কাজ শেষ করার সময়সূচি চূড়ান্ত করা আছে৷ আমরা মনে করছি, নোর্টিশ দেয়ার দিন থেকেই ক্ষণ গণনা শুরু হবে৷ তারা মাঠ পর্যায়ে কবে কাজ করবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ না৷ আমরা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই কাজ বুঝে নেব৷ যদি তারা শেষ করতে না পারে তাহলে চুক্তি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে তাদের বিরুদ্ধে৷ তবে আশা করছি, শিগগিরই তারা মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করবে৷ আর আগেও আমরা কিছু কাজ এগিয়ে রেখেছিলাম৷’’

সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের উত্তর-পশ্চিম প্রান্তসীমা থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বাগেরহাটে ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে বিআইএফপিসিএল৷ বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ উদ্যোগে নির্মিতব্য কেন্দ্রটিতে ৬৬০ মেগাওয়াট ক্ষমতার দুইটি ইউনিট থাকবে৷ তবে এটি নির্মাণের ব্যাপারে প্রকল্প গ্রহণের শুরু থেকেই বিরোধিতা করে আসছে দেশি-বিদেশি বিভিন্ন পরিবেশবাদী ও নাগরিক সংগঠন৷

তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকার গত ৭ বছর ধরে এটা করার চেষ্টা করছে৷ এখনও পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তন হয়নি৷ এখানে কোনো জ্ঞান, কান্ডজ্ঞান বা বিজ্ঞান সবকিছুই সরকারের কাছে তুচ্ছ৷ সেই কারণে সুন্দরবনও সরকারের কাছে তুচ্ছ৷ দেশের স্বার্থও সরকারের কাছে তুচ্ছ৷ দেশের স্বার্থের কথা কারো মাথায় থাকলে বা জনগণের স্বার্থের কথা মাথায় থাকলে বা নিজেদের আইন কানুনের প্রতি গুরুত্ব দিলে কিংবা কোনো সরকার আন্তর্জাতিক যেসব জায়গায় ক্লাইমেট চেঞ্জ বা ‘সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল’ এসব জায়গায় যে স্বাক্ষর করে, সেগুলোর প্রতি গুরুত্ব দিলে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করতে পারত না৷ সুন্দরবন বিনাশী এই প্রকল্প করতে পারত না৷ এটা অবিশ্বাস্য মাত্রায় একগুঁয়েমি বা জনস্বার্থবিরোধী তৎপরতা৷ যেটা বিশ্বের ইতিহাসে বিরল৷ আমরা গত ২০ এপ্রিল উপকূলীয় এলাকার জনগণকে নিয়ে মহাসমাবেশ করেছি৷ সেখান থেকে আগামী ৬ মাসের কর্মসূচিও ঘোষণা করা হয়েছে৷’’

‘‘জ্ঞান, কান্ডজ্ঞান বা বিজ্ঞান সবকিছুই সরকারের কাছে তুচ্ছ’’

বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিআইএফপিসিএল সূত্র জানায়, বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থার্মাল পাওয়ার কর্পোরেশন (এনটিপিসি)-র যৌথ অংশীদারিত্বে বাংলাদেশ-ভারত মৈত্রী বিদ্যুৎ কোম্পানি (বিআইএফপিসিএল) গঠন করা হয়৷ প্রকল্প বাস্তবায়নে বিআইএফপিসিএলকে ঋণ দিচ্ছে ভারতের এক্সিম ব্যাংক৷ গত ১০ এপ্রিল এ সংক্রান্ত ঋণচুক্তি সই হয়েছে৷ গত রবিবার বিআইএফপিসিএলকে স্পন্সরশিপ চিঠি দিয়েছে পিডিবি ও এনটিপিসি৷ পরদিন ভেলকে কাজ শুরু করার নির্দেশনা দেয় মৈত্রী কোম্পানি৷

সূত্র জানায়, রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের মোট ব্যয় নির্ধারণ করা হয়েছে প্রায় ১৭ হাজার কোটি টাকা৷ এর মধ্যে নির্মাণ ঠিকাদারের কাজে ব্যয় হবে প্রায় ১৩ হাজার কোটি টাকা (প্রায় ১৬০ কোটি মার্কিন ডলার)৷ দরপত্রের শর্ত অনুযায়ী, এই ঋণ সংগ্রহ করবে নির্মাণ ঠিকাদার৷ ভারতের এক্সিম ব্যাংক থেকে ঠিকাদার ভেল এই ঋণ পাবে৷ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সর্বশেষ ভারত সফরকালে গত ১০ এপ্রিল রামপাল বিদ্যুৎকন্দ্র প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী মৈত্রী কোম্পানির সাথে ঋণদাতা ভারতের এক্সিম ব্যাংকের ১৬০ কোটি মার্কিন ডলারের এ ঋণচুক্তি সই ও চুক্তিপত্র বিনিময় হয়৷ গত বছরের ১২ জুলাই ঢাকায় ভেল এবং বিআইএফপিসিএল'র মধ্যে নির্মাণচুক্তি সই হয়৷

গত মঙ্গলবার ভেলের ওয়েবসাইটে এক বিজ্ঞপ্তিতে বাংলাদেশে বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে ১৫০ কোটি (১ দশমিক ৫ বিলিয়ন) ডলারের এই কাজ পাওয়ার কথা জানানো হয়৷ ভারতের রাষ্ট্রায়ত্ত কোম্পানিটির এটাই দেশের বাইরের সবচেয়ে বড় নির্মাণ কাজ৷ বাংলাদেশে এর আগে সিরাজগঞ্জের বাঘাবাড়ি ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ করেছে ভেল৷

সুন্দরবনের কাছে হওয়ায় রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে ব্যাপক বিরোধিতা রয়েছে৷ বিরোধীতাকারীরা বলছেন, কয়লাভিত্তিক এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্বঐতিহ্য সুন্দরবনকে হুমকির মুখে ঠেলে দেবে৷ তবে বাংলাদেশে সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, সুন্দরবন রক্ষায় সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হচ্ছে, যাতে পরিবেশের ক্ষতি নূন্যতম মাত্রায় রাখা হবে৷ ভেলের বিজ্ঞপ্তিতে রামপালে পরিবেশ রায় এফজিডি প্ল্যান্ট স্থাপনের কথা বলা হয়েছে, যাতে বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে নিঃসরিত সালফার গ্যাস নিয়ন্ত্রণ করা যায়৷ ছাই দূষণ বন্ধের পদ্ধতি ব্যবহারের কথাও জানিয়েছে কোম্পানিটি৷ পানি শোধনাগারও করবে তারা৷ রামপালের বড় কাজ পাওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ভারতের পুঁজিবাজারে ভারত হেভি ইলেকক্ট্রিক্যালসের শেয়ারের দাম ২ শতাংশ বেড়ে গেছে৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...