1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে নিরাপত্তা ইস্যু

হারুন উর রশীদ স্বপন, ঢাকা১৬ মে ২০১৬

যদি প্রশ্ন করা হয়, বাংলাদেশে এখন সবচেয়ে বড় ইস্যু কোনটা? তাহলে উত্তরের শীর্ষে থাকবে ‘নিরাপত্তা' ইস্যুটি৷ কিছু ব্যতিক্রম বাদ দিলে, দেশের কোনো মানুষই এখন আর ঘরে-বাইরে নিরপদ বোধ করছেন না৷ সবার মধ্যেই রয়েছে এক ধরনের আতঙ্ক৷

https://p.dw.com/p/1IoR2
সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই
প্রতীকী ছবিছবি: picture-alliance/AP Photo

মুক্তমনা ব্লগার, সাধাররণ মানুষ, ব্যবসায়ী, নারী, শিশু কেউই আজ তার নিরপত্তা নিয়ে সন্তুষ্ট নয়৷ প্রশ্ন হলো – কেন? কী কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে? এর সমাধানই বা কী?

বরগুণার দেবদাস মজুমদার

দেবদাস মজুমদার দেশের একটি প্রত্যন্ত অঞ্চল, দক্ষিণের বরগুণার বামনায় বসবাস করেন৷ সমাজ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করেন তিনি৷ আজও একটি বাসযোগ্য বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেন৷ কিন্তু স্ত্রী, সন্তান নিয়ে কেমন আছেন তিনি? নিরাপদ বোধ করছেন কি?

দেবদাস মজুমদার

‘‘না, আমরা কেউই এখন আর নিরপদ নই৷ আমি আমার পরিবারের সদস্য – কেউই নয়৷ আমার প্রতিবেশীরাও নয়৷ এক অস্থির সময় পার করছি আমরা৷ সারাক্ষণ চিন্তা হয়, কি জানি কী হয়ে যায়৷''

দেবদাসের কথায়, ‘‘যারা সমাজ নিয়ে ভাবেন, দেশের মানুষকে নিয়ে চিন্তা করেন, চর্চা করেন মুক্তচিন্তার, তারাই যদি খুন হয়ে যান তাহলে বুঝতে হবে অন্ধকার আমাদের গ্রাস করছে৷ আমাদের বুঝতে হবে কোথাও বড় ধরনের একটা শূন্যতার সৃষ্টি হয়েছে, যা কিনা মানুষের মধ্যে নিরপত্তাহীনতা প্রবল করছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘কেউ মনে করতে পারেন শহুরে মানুষের নিরপত্তাহীনতা বেশি৷ আসলে গ্রামে কিন্তু এটা আরও বেশি৷ এখানকার ঘটনা সংবাদমাধ্যমে আসে না৷ মানুষ যে কী ভয়াবহ সময় পার করছে, তা বলে বোঝানো যাবে না৷''

পিরোজপুরের শিরিন

শিরিন আফরোজ থাকেন পিরোজপুর জেলা সদরে৷ তিনি সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত৷ টেলিভিশন এবং প্রিন্ট – দুই মাধ্যমেই সাংবাদিকতা করেন তিনি৷ শিরিন জানালেন, ‘‘সঠিক তথ্য প্রকাশের সুযোগ দিন দিন সীমিত হয়ে আসছে৷ কোনো প্রতিবেদন যদি প্রভাবশালী কারুর বিরুদ্ধে যায়, তাহলে নানাভাবে হেনস্তা করা হয়৷ আমার ছেলেকে তো অপহরণের হুমকিও দেয়া হয়েছে৷ তাই তাকে আর স্কুলে পাঠাতে পারি না৷''

শিরিন আফরোজ

শিরিনের কথায়, ‘‘আমার ব্যক্তিগত নিরপত্তার বিষয়টি বললাম৷ কিন্তু হাতেগোনা কিছু লোক ছাড়া সবাই একই পরিস্থিতির শিকার৷ যে যেখানে আছেন কোনোভাকেই নিরাপদ বোধ করছেন না৷'' তিনি জানান, ‘‘এই নিরপত্তাহীনতার প্রধান কারণ, বিচার করার ক্ষমতা কিছু লোকের হাতে কুক্ষিগত৷ হত্যার বিচার পাওয়া যায় না৷ উল্টে হত্যাকারী ক্ষমতার দাপট দেখায়৷ তাহলে মানুষ নিরাপদ বোধ করবেন কীভাবে?''

ঢাকার জাহিদুল ইসলাম

ঢাকার বাসিন্দা জাহিদুল ইসলাম জন নিরপত্তার ইস্যুটিকে দেখেন একটু ভিন্ন চোখে৷ তাঁর মতে, ‘‘আমরা নাগরিকরা এখন বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছি৷ আর এই বিচ্ছিন্নতার সুযোগ নিচ্ছে সমাজবিরোধীরা৷ তারা সংঘবদ্ধ হয়ে এখন আক্রমণ করছে, হামলা করছে৷ শুভ চিন্তা এবং শুভবুদ্ধিকে টার্গেট করছে তারা৷''

জাহিদুল ইসলাম

তাঁর কথায়, ‘‘এটা সামাজিক সংকট, এটা সামাজিক নিরাপত্তাহীনতা৷ তাছাড়া রাষ্ট্র এবং সরকারই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছে৷ তাই মানুষকে আবারো এক হতে হবে৷ মানুষের কাছেই মানুষকে যেতে হবে৷''

পুলিশ সদর দপ্তরের পরিসংখ্যান

এই পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে চার হাজার ২৫টি হত্যা, এক হাজার ৪২২টি ডাকাতি-দস্যুতা, ২১ হাজার ২২০টি নারী ও শিশু নির্যাতন এবং ৮০৬টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে৷ এছাড়া চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ২৬৭টি হত্যা, ১২১টি দস্যুতা, এক হাজার ৩১৫টি নারী-শিশু নির্যাতন ও ৬৬টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে বাংলাদেশে৷

এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে ২৯১টি হত্যা, ১৪৩টি দস্যুতা, এক হাজার ৪৮২টি নারী ও শিশু নির্যাতন, ৫৬টি অপহরণের ঘটনা ঘটেছে৷ মার্চে খুন হয়েছে ৩০৭টি, নারী ও শিশু নির্যাতন হয়েছে এক হাজার ৬৬৩টি এবং অপহরণ হয়েছে ৬৯টি৷ সংবাদপত্রে প্রকশিত খবর অনুযায়ী, গত সাড়ে তিন মাসে হত্যাকাণ্ড ঘটেছে প্রায় দেড় হাজার৷

নূর খান

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) প্রতিবদেন অনুযায়ী, গত তিন মাসে হত্যার শিকার হয়েছে ১৫২টি শিশু৷ নির্যাতনের শিকার হয়েছে ৩৭০টি শিশু, ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১৪৬ জন নারী আর ধর্ষণের পরে হত্যা করা হয়েছে ১০ জন নারীকে৷ এদের মধ্যে দু'জন ধর্ষিতা নারী আত্মহত্যা করেছেন৷ এ সময় ২৮০টি রাজনৈতিক সংঘাতের ঘটনায় বিভিন্ন দলের ৩৫ কর্মী নিহত ও তিন হাজার ৮৭৮ জন আহত হয়েছেন৷

বিচারহীনতার সংস্কৃতির ফলেই নিরাপত্তাহীনতা

আসক-এর ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান ডয়চে ভেলেক বলেন, ‘‘বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণেই এই নিরাপত্তাহীনতার পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে৷ কারণ এখানে যে অপরাধ করলে পার পাওয়া যায়, বিচার হয় না, সেটা এখন প্রায় প্রতিষ্ঠিত৷ ফলে সাধারণ মানুষ নিজেদের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত৷''

তিনি বলেন, ‘‘মানুষকে কথা বলতে দিতে হবে৷ মানুষকে সম্পৃক্ত করতে হবে৷ সাধারণ মানুষ যেন এখন রাষ্ট্রযন্ত্রের কোথাও নেই৷ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে সচল করতে হবে৷ রাজনীতিকে করতে হবে সবার জন্য উন্মুক্ত৷ তা না হলে এই পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের পথ নেই৷''

বন্ধু, আপনিও কি বাংলাদেশে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান