1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
ব্যবসা-বাণিজ্য

সিগারেটের দাম ও কালো টাকা

হাবিব ইমরান
৫ জুন ২০১৮

কালো টাকার আলোচনা বাজেটের আগে-পরে অনিবার্য৷ কালো টাকার মূল উৎস অনিয়ম৷ বাজেটে বারবার  ছাড় দেওয়া সত্ত্বেও কালো টাকার বিনিয়োগ হয়নি৷ বরং সেই টাকা গেছে সুইস ব্যাংকে৷

https://p.dw.com/p/2yqHV
ছবি: picture-alliance/MAXPPP/O. Boitet

প্রত্যেক বাজেটের আগের একমাস সিগারেট বা তামাক পণ্যের দাম বেড়ে যায়৷ তামাক নিয়ন্ত্রণজনিত আইনের সহায়তা নিয়ে মুনাফাভোগীরা ‘স্টক' করে শলাকার পর শলাকা৷ তারপর মোটামুটি মানের প্রতিটি সিগারেট বিক্রি করা শুরু করে নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৫০ পয়সা থেকে এক টাকা বেশি দামে৷

 ২০১৭ সালে ব্রিটিশ অ্যামেরিকান টোব্যাকো প্রায় সাড়ে ২০ হাজার ৪১৩ কোটি টাকার সিগারেট বিক্রি করে, যা আগের বছর ছিল ১৬ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকার৷ অর্থাৎ বিক্রি হওয়া প্রতি সিগারেটের দাম যদি গড়ে ৩ টাকা ধরি, তাহলে কম-বেশি ৬ হাজার কোটি সিগারেট বিক্রি করেছিল প্রতিষ্ঠানটি৷ সেই হিসেবে মাসে বিক্রি করে ৫০০ কোটি সিগারেট৷ ৫০ পয়সা করে প্রতি সিগারেটে বাড়তি দাম ধরলে, দুইশ' বা আড়াইশ' কোটি টাকা বেমালুম হাপিস হয়ে যায়! এটাই তো ‘কালো টাকা', তাই না!

‘কালো টাকা' মানে হচ্ছে অপ্রদর্শিত আয়; সেটা অবৈধ পথে উপার্জিত অর্থও হতে পারে, আবার বৈধ পথে৷ কেবল সেই টাকার ওপর কর দেওয়া হয় না, এই যা৷ সিগারেট বিক্রির উদাহরণ টানলাম এ কারণে যে, আইনের ফাঁকফোকড় এবং শাসন বা বাজার নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা না থাকলে কালো টাকা তৈরি খুব সহজ হয়ে যায়৷

প্রতি বছর চোখে পড়ে সিগারেটের স্টকের বিষয়টি৷ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানও দাম বৃদ্ধিতে আইনের অজুহাতে কিছু করে না, আবার এলাকার দোকানদাররাও সিগারেট পাওয়া যাচ্ছে না বলে দাম বেশি রাখেন৷ প্রতিবছরই মনে হয়, সারা বছর ধরে যেসব কোম্পানি দুর্দান্তভাবে মার্কেট চেইন ঠিক রাখে, এই মাসের জন্য তারা পারে না কেন! সমস্যা কোথায়?

এইরকম ছোট ছোট অনিয়ম ও ছাড় বিপুল অঙ্কের কালো টাকা তৈরি করে

জমি বিক্রির ক্ষেত্রে ব্যাপারটি সবচেয়ে বেশি প্রযোজ্য৷ দেশে সবচেয়ে বেশি কালো টাকা আসে নাকি জমি বিক্রি থেকেই৷ এটা যে অবৈধ পথে আসে সবসময়, তা নয়৷ ধরা যাক, কোথাও আপনার দাদার একখণ্ড জমি ছিল৷ দিন দিন জমির দাম বেড়েই চলেছে৷ এ অবস্থায় আপনি জমি বিক্রি করলেন ২০ বছর পর অনেক দামে৷ কিন্তু দেশের ভূমি আইনে এলাকাভিত্তিতে জমির দাম নির্ধারণ করা আছে৷ আপনি তার চেয়ে অনেক বেশি দামে বিক্রি করে দেখালেন আইন অনুযায়ী নির্ধারিত মূল্যেই বিক্রি করেছেন৷ এই যে বাড়তি টাকা আসবে, সেটাই অপ্রদর্শিত আয় বা কালো টাকা৷

তবে ইদানীং কালো টাকা ও অপ্রদর্শিত অর্থের মধ্যে একটা স্পষ্ট সীমারেখা টানার দাবি উঠেছে৷ তাঁদের মতে, অপ্রদর্শিত অর্থের উৎস বৈধ হতে পারে, আবার অবৈধও হতে পারে৷ কিন্ত কালো টাকার উৎস নিশ্চিতভাবেই অবৈধ৷ তাই বৈধ অপ্রদর্শিত অর্থের সঙ্গে কালো টাকাকে গুলিয়ে ফেলা উচিত নয়৷  

  

Habib Imran
হাবিব ইমরান, ডয়চে ভেলেছবি: DW/S. Burman

বাজেট এলেই সাধারণত আলোচনায় আসে কালো টাকা বা অপ্রদর্শিত আয় বৈধ করার বিষয়টি৷ ১৯৭৫ সালে সামরিক সরকার এক ফরমান জারির মাধ্যমে দেশে প্রথম কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়৷তারপর থেকে এ সুযোগ বিভিন্নভাবে দেওয়া হচ্ছে৷

অর্থনীতিবিদ ও গবেষকরা প্রতিবছর বিষয়টি নিয়ে আপত্তিও তোলেন৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়৷ এর মানে হলো, অপ্রদর্শিত অর্থ মূল অর্থনীতিতে নিয়ে আসা৷      

বিদেশে অর্থপাচার বন্ধে ও দেশে বিনিয়োগ অক্ষুন্ন রাখতে ২০১৮-১৯ সালের বাজেটেও কালো টাকা সাদা করার সুযোগ থাকবে বলে জানিয়েছেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) চেয়ারম্যান মো. মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া৷ জরিমানার বিধান রেখেই বাজেটে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেওয়া হবে বলে জানান তিনি৷

তবে যে উদ্দেশ্য নিয়ে ‘কালো টাকা' সাদা করার কথা বলা হয়, তা রয়ে যায় অসফলই৷ ২০১৬ সালে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের জমা রাখা অর্থের পরিমাণ তার আগের বছরের চেয়ে এক হাজার কোটি টাকা বেড়ে গিয়েছিল৷ সাড়ে পাঁচ হাজার কোটি টাকা থেকে দাঁড়িয়েছিল সাড়ে ছয় হাজার কোটি টাকায়৷  

মূলধারায় কালো টাকা ফিরিয়ে আনতে হলে এর পথগুলো কঠিন করতে হবে৷ দুর্নীতির ছোট ছোট রাস্তাগুলো বন্ধ করা ছাড়া উপায় নেই৷ ভূমি বিক্রির আইনের মতো  ফাঁকফোকড়গুলো বন্ধ করতে হবে৷ সিগারেটের ফাটকা মূল্য বৃদ্ধির মতো আপাত ছোট কালোটাকার উৎসগুলো কঠোর বাজার নিয়ন্ত্রণের মধ্যে দিয়ে বড় জায়গায় হাত দিতে হবে৷ অবশ্য সার্বিক অবস্থায় তা খুব দূরে বলেই মনে হয়৷

পাঠক, ব্লগটি কেমন লাগলো লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান