1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সুপ্রিম কোর্টের নিষেধ সত্বেও চলছে নাবালিকা বিয়ে

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২১ অক্টোবর ২০১৭

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় বলা হয়েছে, ভারতে প্রায় ৩০ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় ১৮ বছর হবার আগেই৷ সুপ্রিম কোর্টের রায়ে নাবালিকা বিয়ে অবৈধ ঘোষণা করে বলা হয়, নাবালিকা স্ত্রীর সঙ্গে স্বামীর যৌন মিলন ধর্ষণ বলে গণ্য হবে৷

https://p.dw.com/p/2mFTR
Indien Kindsbraut
ছবি: picture-alliance/dpa/epa/H. Tyagi

জাতীয় পরিবার স্বাস্থ্য সমীক্ষায় দেখা গেছে, ভারতে গড়ে প্রায় ৩০ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যায় বয়স ১৮ হওয়ার আগেই৷ তার মধ্যে সব থেকে বেশি হয়েছে ২০০৭-২০০৮ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী প্রায় ৪২ শতাংশ৷ এখন সেটা কমে দাঁড়িয়েছে, পশ্চিমবঙ্গে ৩২ শতাংশে,  বিহার ৪০ শতাংশ, ঝাড়খন্ডে ৩৮ শতাংশ, রাজস্থানে ৩৫ শতাংশের মতো. উত্তরাখন্ডে ১৪ শতাংশের মতো আর খোদ দিল্লিতে  ১৩ শতাংশ৷ পশ্চিমবঙ্গে ইউনিসেফের মুখ্য ফিল্ড অফিসার আসাদুর রহমান মনে করেন, পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ ছাড়াও আরও ছয়টি জেলা বাংলাদেশ সীমান্ত সংলগ্ন৷ ওইসব জেলায় নাবালিকা বিয়ের হার সারা রাজ্যের মধ্যে সব চেয়ে বেশি৷ তবে রাজ্যে ‘কন্যাশ্রী প্রকল্প' চালু হবার পর অবস্থার কিছুটা উন্নতি হোয়েছে বলে তিনি দাবি করেন৷ তবে এই প্রকল্প রাজ্যের সুন্দরবন এলাকায়,  সংখ্যালঘু , তপশিলি জাতি বা উপজাতি সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকায় পৌঁছায়নি৷ তাই বিয়ে ‘অভিশাপ' হয়ে আসে অল্পবয়সি মেয়েদের জীবনে৷ দেখা দেয় নানা রকম শারীরিক সমস্যা৷ অল্প বয়স থেকে সন্তান ধারণ করতে হয় বলে মা এবং শিশুর স্বাস্থ্য সমস্যা দেখা দেয়৷ বিশেষ করে প্রত্যন্ত গ্রামে যেসব জায়গায় উপযুক্ত স্বাস্থ্য সুবিধা নেই, সেসব জায়গায় জনসংখ্যা বাড়ে, দারিদ্র্য বাড়ে৷  কন্যা সন্তান তাঁর কৈশোর হারায়৷ 

WomenCommision_SMUKHERJEE - MP3-Stereo

মাতৃত্বকালীন মৃত্যু হার সবচেয়ে বেশি উত্তরাখন্ডে৷ প্রায় ৪০ শতাংশের মতো৷ হরিদ্বার থেকে বিশ কিলোমিটার দূরে বন গুর্জর সম্প্রদায়ের একটি গ্রাম নাবালিকা কনেদের জন্য বিখ্যাত৷ এই সম্প্রদায়ের প্রায় ৮০০ মেয়ের বিয়ে হবে এই শীতকালের মধ্যেই৷ তাদের মধ্যে এমন কনেও আছে, যার বয়স বছর তেরো৷ অন্য সবাই ১৮ বছরের নীচে৷ সুপ্রিম কোর্টের নিষেধাজ্ঞা নিয়ে তাঁদের নেই কোনো হেলদোল৷ নেই কোনো মাথা ব্যথা৷ ঐসব পরিবার মনে করে, তাঁদের মেয়েরা লেখাপড়া করেনি, বাইরের জগত সম্পর্কে অজ্ঞ, বিয়ে না দিলে ওরা সমস্যায় পড়বে৷

আসল প্রশ্নটা শুরু এখান থেকেই৷  সাবালিকা হবার আগে মেয়েদের বিয়ে আটকাতে অতি সম্প্রতি সুপ্রিম কোর্ট নিষেধাজ্ঞা জারি করেছেন৷ শীর্ষ আদালতের যুগান্তকারী রায় কুঠারাঘাত করেছে প্রচলিত ধ্যান-ধারণা ও প্রথার মূলে৷ রায়ে সুপ্রিম কোর্ট বলেছে, নাবালিকার বিয়ের পর তার স্বামীর সঙ্গে যৌনমিলন এখন থেকে ধর্ষণ বলে গণ্য করা হবে৷ সেই দেহমিলন স্ত্রীর সম্মতিতে হলেও তা ধর্ষণের নামান্তর৷  সামাজিক যে কারণই থাকুক না কেন, নাবালিকা সর্বঅবস্থাতেই নাবালিকা৷ এর বিরুদ্ধে সওয়াল করে কেন্দ্রীয় সরকার৷ সরকারের যুক্তি, ভারতে ২ কোটি ৩০ লাখেরও বেশি এমন মহিলা আছেন, যাঁদের বিয়ে হয় ১৮ বছরের আগেই৷ সরকার মনে করে, আইন করে তা নিবারণ করা সম্ভব নয়৷ কোনো কিশোরী নিজের বিয়ে রুখতে লড়াই করতে পারে না৷ মেনে নিতে বাধ্য হয় পরিবার এবং পারিপার্শ্বিক চাপে৷ মেয়েদের মধ্যে শিক্ষার প্রসার এবং সামাজিক সচেতনতা গড়ে তোলাই একমাত্র সমাধান৷ 

পশ্চিমবঙ্গে তুলনামূলকভাবে শিক্ষার হার ভালো হওয়া সত্বেও নাবালিকা বিয়ের হার এত বেশি কেন? ডয়চে ভেলে এই প্রশ্নটা রেখেছিল রাজ্য মহিলা কমিশনের প্রধান সুনন্দা মুখোপাধ্য়ায়ের কাছে৷ উত্তরে তিনি বললেন, ‘‘এটা মানতে উনি আদৌ রাজি নন, কারণ, অন্যান্য রাজ্যে নাবালিকা বিয়ে রেকর্ডই হয়না৷ তাঁরা মনে করে, পুরানো শাস্ত্রীয় প্রথা অনুসারে মেয়ের পিরিয়ড শুরুর আগেই মেয়েকে অন্য গোত্রে সম্প্রদান করা হলে পূর্ব পুরুষের মঙ্গল হয়৷ তাঁরা এ-ও মনে করে যে, মেয়ের জীবনে যদি কোনো অমঙ্গল নেমে আসে, তাহলে সেটা যেন হয় অন্য বাড়িতে৷ কারণ, কন্যা সন্তানকে তো নিজের বাড়ির একজন বলে ভাবা হয় না৷''

পশ্চিমবঙ্গ মহিলা কমিশনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায় ডয়চে ভেলেকে আরো বললেন, কন্যাশ্রী প্রকল্প আন্তর্জাতিক স্তরেও প্রশংসিত৷ কিন্তু এই প্রকল্প সমাজের তৃণমূল স্তরে পৌঁছায়নি৷ ব্লক লেভেলেও তা কার্যকর হয়নি৷ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সদর্থক ভূমিকা নিয়ে নড়েচড়ে বসেনি৷ আমি এবং আমরা ছয় বছর ধরে বিভিন্ন গ্রামে ঘুরেছি, চেষ্টা করেছি বাল্যবিবাহ বন্ধ করতে৷ কিন্তু পুরোপুরি সফল হইনি৷ যদিও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায় নিজেও এ বিষয়ে উদ্যোগী৷ নাবালিকা বিয়ের আরও একটা কারণ হলো, গ্রামাঞ্চলে অশিক্ষিত গরিব পরিবারের দুশ্চিন্তা ছোট বয়সে বিয়ে দিতে না পারলে হয়ত তাঁর মেয়ে পাচার হয়ে যেতে পারে কিংবা ধর্ষণের শিকার হতে পারে, এই আতঙ্কটাই তাঁদের তাড়িয়ে বেড়ায়৷

তিনি মনে করেন, আইনের পর আইন করে এটা হবার নয়৷ সেটা সুপ্রিম কোর্টে হোক বা স্থানীয় আদালতে৷ এটা প্রোপাগান্ডার বিষয় নয়৷ পুরস্কার বা তিরস্কারের বিষয় নয়৷ আইনটাকে নীচুতলা থেকে কার্যকর করাই এর আসল চাবিকাঠি৷ কার্যকর করতে হবে ব্লক লেভেল থেকে৷ আইন লংঘনকারী পরিবারকে দিতে হবে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি৷ যেমন, এক জায়গায় ভূমিকম্প হলে আশপাশের এলাকা কেঁপে ওঠে, তেমনি দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি হলে তবেই অন্য পরিবারগুলো হুঁশ হবে৷ পাশাপাশি দরকার সর্বত্র মেয়েদের নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা৷