1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্কুলে ফের গরমের ছুটি বাড়ায় বিতর্ক

পায়েল সামন্ত কলকাতা
১ জুন ২০২৩

পশ্চিমবঙ্গের স্কুলে গরমের ছুটি আর এক দফা বাড়ল। স্কুল খুলবে ১৫ জুন। একাধিক শিক্ষক সংগঠন বাড়তি ছুটি বাতিলের দাবি জানিয়েছে।

https://p.dw.com/p/4S3HM
গরমের ছুটি বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের মিছিল
ছবি: Payel Samanta/DW

জ্যৈষ্ঠের মাঝামাঝি রাজ্যে তাপমাত্রার পারদ ঊর্ধ্বমুখী। তাপপ্রবাহের সতর্কতা রয়েছে জেলায় জেলায়। এর পরিপ্রেক্ষিতে স্কুলে গ্রীষ্মাবকাশ আরো বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। বুধবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ঘোষণা করেন, ১৪ই জুন পর্যন্ত গরমের ছুটি চলবে।

অথচ ঠিক একদিন আগেই, অর্থাৎ মঙ্গলবার রাজ্যের শিক্ষা দপ্তর স্কুল খোলার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল। তাতে বলা হয়, ছুটির ক্যালেন্ডার অনুযায়ী ৫ জুন উচ্চ মাধ্যমিক স্কুল খুলবে। প্রাথমিক স্কুল খুলবে ৭ জুন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণায় স্কুলের ছুটি বেড়ে গেল দিন দশেক।

একদিনের ব্যবধানে এই দু'রকম ঘোষণায় রাজ্য সরকার ও শিক্ষা দপ্তরের সমন্বয় নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। শিক্ষক সংগঠনগুলির বক্তব্য, গরমের পরিস্থিতি গত কয়েকদিন একই রকম আছে। তা হলে কেন হঠাৎ ছুটি বাড়িয়ে দেওয়া হল? শিক্ষা দপ্তর কি নবান্নের অনুমোদন ছাড়াই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছিল?

চলতি বছরে মাত্রাতিরিক্ত গরম পড়ায় এপ্রিল থেকে মাঝে মাঝে স্কুল বন্ধ থেকেছে। ১৭ এপ্রিল থেকে এক সপ্তাহ স্কুল ছুটি ছিল। তার পর মে মাসের নির্ধারিত গরমের ছুটি এগিয়ে আসে ২২ দিন। ২ মে শুরু হয়ে যায় গ্রীষ্মাবকাশ। পুরো মে মাস বন্ধ ছিল স্কুল। মুখ্যমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী আরো দুই সপ্তাহ স্কুলে পঠনপাঠন বন্ধ থাকবে।

‘৮ হাজার ২০৭টি স্কুল ছাত্র-ছাত্রীর অভাবে বন্ধ হতে চলেছে’

সরকার ছাত্রদের স্বাস্থ্যের দিকটি বেশি গুরুত্ব দিচ্ছে। এই গরমে যাতে তারা অসুস্থ হয়ে না পড়ে সেজন্য স্কুল বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত। চিকিৎসকেরা শিশুদের সাবধানে রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু স্কুল না খোলায় পড়াশোনার ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। এই দীর্ঘ সময় স্কুল বন্ধ থাকায় নির্দিষ্ট সিলেবাস শেষ করা সম্ভব হবে না বলেই আশঙ্কা শিক্ষকদের একাংশের।

এই ঘাটতি পূরণে শিক্ষকদের বাড়তি ক্লাস নেয়ার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তাতে এতদিনের ঘাটতি মেটানো যাবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ থেকে গিয়েছে। বঙ্গীয় প্রাথমিক শিক্ষা সমিতির সাধারণ সম্পাদক আনন্দ হান্ডা বলেন, "স্কুলে প্রথম পর্বের মূল্যায়ন ঠিকমতো হয়নি। দ্বিতীয় পর্বের পড়াশোনা করানো যাচ্ছে না। এর ফলে শিক্ষাব্যবস্থা ধ্বংসের দিকে চলেছে। অভিভাবকরা প্রশ্ন করছেন, কবে স্কুল খুলবে। আমাদের কাছে এর জবাব নেই।"

২ মে থেকে গরমের ছুটি পড়ার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছিল এই সমিতি। ছুটি ফের বাড়ায় আগামিকাল, শুক্রবার আবার বিক্ষোভ আন্দোলনের ডাক দিয়েছেন শিক্ষকরা। একই দাবিতে পথে নেমেছিল মাধ্যমিক শিক্ষক ও শিক্ষাকর্মী সমিতি।

তাদের বক্তব্য, গরমের অজুহাতে স্কুল বন্ধ রাখা যাবে না। প্রয়োজনে সকালের দিকে প্রাথমিক স্তরের পড়ুয়াদের স্কুলে আনতে হবে। বিদ্যালয় বন্ধ থাকায় ছেলেমেয়েরা মিড ডে মিল থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। এর ফলে তাদের পুষ্টিতে ঘাটতির আশঙ্কা রয়েছে।

রাজ্য সরকার বিভিন্ন বেসরকারি স্কুল কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ জানিয়েছে, তারাও যেন ১৪ জুন পর্যন্ত প্রতিষ্ঠান বন্ধ রাখে। যদিও এই স্কুলগুলি স্বাধীনভাবে সিদ্ধান্ত নিতে পারে। এই পরিস্থিতিতে প্রশ্ন উঠছে, সরকারি স্কুলে পঠনপাঠন এভাবে ব্যাহত হলে কি স্কুলছুটের সংখ্যা বাড়বে না? আরো রমরমা হবে না বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের?

আনন্দ হান্ডার বক্তব্য, "৮ হাজার ২০৭টি স্কুল ছাত্র-ছাত্রীর অভাবে বন্ধ হতে চলেছে। এ বছরই বন্ধ হতো, আগামী বছর হবেই। সরকারি স্কুলে পড়াশোনা না হলে ছেলেমেয়েরা আসবে কেন? আস্তে আস্তে আরো বেশি স্কুল ছাত্রশূন্য হয়ে পড়বে। ধীরে ধীরে সরকারি শিক্ষা ব্যবস্থা মুছে যাবে।"

শিক্ষক সমাজের একাংশ অবশ্য এর মধ্যে 'বেসরকারিকরণের চক্রান্ত' দেখছেন না। তাদের মতে, স্কুলের ছুটির বিষয়টি চূড়ান্ত করার ক্ষেত্রে সমন্বয়ের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। শিক্ষার সঙ্গে পরিবেশ, স্বাস্থ্য দপ্তর ও বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ নিতে হবে। নইলে পড়ুয়াদের একটা বড় অংশ পিছিয়ে পড়বে যারা মূলত স্কুলের পঠনপাঠনের উপর নির্ভরশীল।

রাজ্যের সিদ্ধান্তের সঙ্গে রাজনীতিকে জুড়ে দেখছেন শিক্ষাবিদ ড. পবিত্র সরকার। তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, "এটা এক ধরনের জনতোষিণী নীতি। পঞ্চায়েত ভোট আসছে, তাই রাজ্য সরকার মানুষকে খুশি করার চেষ্টা করছে। এই গরমে যাতে কারো কষ্ট না হয়! কিন্তু এমন গরম আবারো পড়বে, সেজন্য শিক্ষাকে অবহেলা করা ঠিক হবে না।"

কোভিড অতিমারির জেরে মাসের পর মাস স্কুল বন্ধ ছিল। এতে স্কুলছুটের সংখ্যা বেড়েছে। আরো নির্ভরতা বেড়েছে অনলাইন পঠনপাঠনে। গজিয়ে উঠেছে একাধিক বড় পুঁজির মোবাইল নির্ভর টিউটোরিয়াল সংস্থা। এখানে গ্রাহক হয়ে স্কুলের মতো পড়াশোনা করা যায়।

কিন্তু দরিদ্র ও শিক্ষাদীক্ষায় পিছিয়ে থাকা পরিবারের ছেলেমেয়েরা কি এ সবের সুযোগ নিতে পারবে? নাকি আরো বাড়বে ডিজিটাল বিভাজন? সরকারি স্কুলে গরমের ছুটির মেয়াদ বৃদ্ধি এই প্রশ্নও তুলে দিয়েছে।