1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

স্বপ্ন এবং জার্মানি, পর্ব ২

ফারজানা কবীর খান২ জানুয়ারি ২০০৯

ইমিগ্রেশন থেকে দাঁড়ালাম লাগেজ নিতে৷ অনেকক্ষণ অপেক্ষা করার পর বুঝতে পারলাম আমার লাগেজ আসছে না৷

https://p.dw.com/p/GQuJ
ক্যোয়েনিগসভিন্টারে বিখ্যাত হোটেল পিটার্সবার্গছবি: AP

আমি এয়ারপোর্টে দায়িত্বরত একজন অফিসারের সাথে কথা বলছি, এমন সময় আরও ১০ মিনিট পর দূর থেকে দেখতে পেলাম আমার লাগেজটি মাত্র এসেছে৷ অফিসারকে ধন্যবাদ জানিয়ে লাগেজবেল্ট থেকে লাগেজ নিয়ে বের হয়ে আসার পর দেখি অনেকের প্রিয় লোকজন তাদের জন্য ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছে৷ আর আমি বিস্মিত চোখে ওদেরকে দেখছি৷ এটাও সম্ভব! এয়ারপোর্টের ভিতর ফুল নিয়ে অপেক্ষা করছে ওরা অথচ মাত্র ২০ ঘন্টা আগে যে ঢাকা এয়ারপোর্টকে আমি দেখে এলাম তাতো কেমন যেন বন্দীশালার মতো বেড়াজাল দিয়ে বাঁধা৷ সবাই কি সুন্দর করে হাসছে , হ্যালো বলছে৷ এদেশেরই নাম জার্মানি৷ সত্যিই আমি অভিভূত৷

তারপর ফ্রাংকফুর্ট থেকে বন-এর ক্যোয়েনিগসভিন্টারে৷ সকালবেলা ঘুম থেকে উঠলাম আমি গীর্জার ঘন্টার শব্দে৷ জানালা খুলতেই শীতের হিমেল হাওয়ার ঝলক৷ জানালা দিয়ে কুয়াশার ফাঁকে দূরের পাহাড় দেখা যায়৷ কি দারুণ সুন্দর এই প্রকৃতি৷ জানালা দিয়ে তাকিয়ে আশেপাশের বাড়িগুলো দেখছি৷ কোথাও হাইরাইজ বিল্ডিং চোখে পড়লো না৷ কিন্তু প্রতিটি বাড়ি ভীষণ আধুনিক৷ এরপর ফ্রেশ হয়ে চমৎকার জার্মান নাস্তা৷ নাস্তার পর আমার বাড়ির মালিক আমায় বললেন, এখন তোমায় রাটহাউসে যেতে হবে এবং আমি যে তাঁর বাসায় উঠেছি এবং ডয়চে ভেলেতে ফেলোশিপ করার সময় এখানেই থাকবো তা রেজিষ্ট্রেশন করাতে হবে৷ তাহলে জার্মান কর্তৃপক্ষের আমার সম্পর্কে সমস্ত তথ্য জানা থাকবে, যেমন আমি কবে জার্মানিতে এসেছি, কতদিন থাকবো৷ শুধু আমার জন্য নয় প্রতিটি জার্মান নাগরিকের ক্ষেত্রেও একই নিয়ম৷ নামঠিকানা রেজিস্ট্রেশন অফিসে নথিবদ্ধ করাতে হয়৷ এই এদেশে আবারও মনে পড়ল আমার দেশের কথা৷ আমার সরকার কি আদৌ জানে বাংলাদেশে আমি কোথায় থাকতাম? তবে কিছুদিন আগের ভোটার আইডি কার্ডের বদৌলতে হয়তো কিছুটা তথ্য তারা জানে বলে আশা করা যায়৷ কিন্তু তার আগে?

রাটহাউসে যাওয়ার পথে দেখলাম যে বাড়িতে উঠেছি পাশেই রাইন নদী৷ অনেক বড় বড় জাহাজ রাইন নদীতে৷ রাটহাউসে হলো নতুন অভিজ্ঞতা৷ আমাকে রাটহাউসে দায়িত্বরত অফিসার ডয়চে ভেলেতে ফেলোশিপ নিয়ে আসার জন্য অভিনন্দন জানালেন৷ তারপর আমায় প্রশ্ন করলেনঃ ‘তুমি কোন দেশ থেকে এসেছ়?' আমি বললাম বাংলাদেশ৷ কিন্তু যখন কম্পিউটারে ডাটা ইনপুট করতে গেলেন আবারও প্রশ্ন করলেন: ‘ তাহলে তুমি কি ইন্ডিয়ান?' প্রথমে প্রশ্নটা আমি বুঝতে পারি নি, যখন বুঝতে পারলাম, বললাম: না, আমি বাংলাদেশী৷ মহিলা বললেন, তিনি খুবই দুঃখিত, তিনি আসলেই জানেন না ইন্ডিয়ার বাইরে বাংলাদেশ নামে কোন রাষ্ট্র আছে৷ আমি হেসে তাকে উত্তর দিলাম, সত্যিই সম্পূর্ণ আলাদা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র বাংলাদেশ৷ হৃদয়ে রক্তক্ষরণ৷ মনে মনে বললাম, তুমি আমার দেশ বাংলাদেশ৷ যেখানে যাই আমার রক্তে তোমার গন্ধ৷