স্বর্গীয় এক পাখি

পাখিটির ইংরেজি নাম প্যারাডাইজ ফ্লাইক্যাচার৷ তবে দুধরাজ, সাহেব বুলবুলি, শাহ-বুলবুল নামেও পরিচিত৷ দেখতে বুলবুলির মতো হলেও এটি বুলবুলি পাখির সমগোত্রীয় নয়৷

পুরুষ দুধরাজের জীবনে আছে দুটি পর্ব - খয়েরি আর সাদা৷ দুই থেকে তিন বছর পর্যন্ত পুরুষ পাখি খয়েরি পর্বে জীবন কাটায়৷ তারপর এদের গায়ের খয়েরি রংটা ধীরে ধীরে সম্পূর্ণ সাদা হয়ে যায়৷ সাধারণত পুরুষ পাখির লেজে লম্বা দুটি পালক এর রূপকে বহুগুনে বাড়িয়ে দেয়৷

মেয়ে দুধরাজের লেজে বাড়তি লম্বা পালক দুটি থাকে না বলে এরা পুরুষ দুধরাজের মতো এতটা সুদর্শন নয়৷ পিঠের রঙ হালকা বাদামি, পেটে ধুসরের সঙ্গে সাদার মিশ্রণ৷

দুধরাজ পাখির বাসা বানানোর পছন্দের স্থান হল বাঁশঝাড়৷ আম কাঁঠালের বাগানেও তাদের দেখা মেলে৷ উঁচু গাছের ডালে চমৎকারভাবে ঘাস, লতাপাতা, মাকড়সার জাল দিয়ে পেয়ালা আকৃতির খুব সুন্দর বাসা বানায় তারা৷

উড়ন্ত পোকামাকড় ধরতে অত্যন্ত পারদর্শী এই পাখি৷ এবং এসব কীটপতঙ্গই এদের প্রিয় খাদ্য৷

একটি পাখি ডিম দেয় তিন থেকে পাঁচটি৷ সবগুলো ডিম ফোটে না৷ যেগুলো ফোটে তার সব বাচ্চাও বাঁচে না৷ এদের ছানার মৃত্যুর হার অন্যদের চেয়ে বেশি৷ সে কারণে দুধরাজের সংখ্যা বরাবরই কম৷ বাবা মা উভয়েই ডিমে তা দেয়৷ তা থেকে দুই তিনটি ছানা বড় হয়৷

ডিম থেকে ফোটার পর হালকা গোলাপিই থাকে এদের রং৷ যৌবনে সে লাল আর মরিচা রংয়ে আবৃত হয়৷ শৈশব-কৈশোর পেরনোর পর তার রং বদলে যায়৷

দুধরাজের প্রজনন মৌসুম শুরু হয় বৈশাখ মাসে৷ সাধারণত তাই বাসায় বাচ্চা ফুটে বর্ষা মৌসুমে৷ সে সময়ে মা পাখি সারা দিন-রাত বৃষ্টিতে ভিজে বাচ্চাদের রক্ষা করে থাকে৷

দুধরাজ সাধারণত ১০-১২ বছর বাঁচে৷ পুরো জীবনটাই প্রকৃতির বৈরি পরিবেশের সঙ্গে যুদ্ধ করে বেঁচে থাকতে হয় তাদের৷

দুধরাজ অত্যন্ত সাহসী ও চঞ্চল প্রকৃতির পাখি৷ অনেক বড় শত্রু পাখিকেও তাড়িয়ে বেড়ায় এরা৷ আর এ কারণে অনেক নিরীহ পাখি এদের বাসার কাছে বাসা তৈরি করে৷

দুধরাজ পাখির জীবনধারা নিয়ে আলোকচিত্রী আরিফ আহমেদ তৈরি করেছেন একটি ডকুমেন্টরি ফিল্ম৷ নাম ‘প্যারাডাইজ নেস্ট’৷ পাখি নিয়ে বাংলাদেশে তৈরি প্রথম চলচ্চিত্র এটি৷ সাড়ে আট মিনিটের স্বল্প দৈর্ঘ্য এই চলচ্চিত্রে তুলে ধরা হয়েছে প্যারাডাইস ফ্লাইক্যাচার বা দুধরাজ পাখির বিচিত্র জীবনধারা৷ চলচ্চিত্রটি চিত্রায়িত করা করা হয়েছে কুষ্টিয়ায়৷

বন্যপ্রাণী আলোকচিত্রী আরিফ আহমেদ বলেন, দেশে যেভাবে পাখি নিধন হয় তা রোধ করতে একটা উদ্যোগ নেয়া দরকার৷ সেই ভাবনা থেকে দেশে এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষে আমি দুধরাজের জীবনের গল্প নিয়ে ‘প্যারাডাইস নেস্ট’ চলচ্চিত্র নির্মাণ করেছি৷