1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হাতি বাঁচাতেও বন্দুক লাগে

১৫ মার্চ ২০১৮

হাতির দাঁতের চাহিদা ও আফ্রিকায় চরম দারিদ্র্যের সঙ্গে চোরাশিকার যোগ হওয়ার ফলে আফ্রিকা থেকে হাতিরা চিরকালের মতো উধাও হতে পারে, এমন আশঙ্কা দেখা দিয়েছে৷ তবু কিছু মানুষ এখনও আফ্রিকার হাতিদের বাঁচানোর স্বপ্ন দেখছেন৷

https://p.dw.com/p/2uLfv
Global Ideas küssende Tiere Elefanten
ছবি: picture-alliance/blickwinkel/P. Espeel

হাতিকে বাঁচাবেন যেভাবে

সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক দেশটি মধ্য আফ্রিকায়; চাড, সুদান, কঙ্গো আর ক্যামেরুনের ঠিক মাঝামাঝি৷ দেশটির দক্ষিণাঞ্চলে ক্রান্তিমণ্ডলীয় অরণ্য; এলাকাটি আপাতত শান্ত, যুদ্ধ চলেছে দেশের অন্যত্র৷

২০১৩ সালের যুদ্ধের সময় যে সব বনকর্মীরা জাংগা-সাংগা এলাকায় থেকে গিয়েছিলেন, গোরিলা বিশেষজ্ঞ টেরেন্স ফু তাদের একজন৷ টেরেন্স শোনালেন, ‘‘বিদ্রোহীরা এখানে এসেছিল, প্রকল্পের অফিসকাছারি লুট করেছিল৷ সুদান থেকেও কিছু চোরাশিকারি এখানে পৌঁছাতে পেরেছিল৷ ওরা সাংগা বে ফরেস্ট ক্লিয়ারিং-এ গিয়ে বহু হাতি মারে, ফলে সেখানে হাতিদের বাস করাই অসম্ভব হয়ে ওঠে৷''

তবুও জাংগা-সাংগার প্রাণীজগৎ একেবারে লোপ পায়নি – যার একটা কারণ জার্মানি থেকে দরাজ অর্থসাহায্য৷ ন্যাশনাল পার্কটিতে আজও প্রায় ২,০০০ গোরিলা মোটামুটি শান্তিতেই বাস করে – পশ্চিমি সমতলভূমির গোরিলা৷

টেরেন্স  বললেন, ‘‘এই পার্ক এখানকার কর্মীদের জন্য একটা রোজগারের উৎস – আমাদের প্রকল্পে তাদের ৬০ জন কাজ করে৷ সেটা খুব কম নয় – আমরা এভাবে ১২০টি পরিবারের অন্ন যোগাই৷ স্থানীয় মানুষজনের তা থেকে সুবিধা হয়৷''

তথাকথিত ‘ফরেস্ট এলিফ্যান্ট' বা জঙ্গলের হাতিরা খোলা তৃণভূমির হাতিদের চেয়ে আকারে ছোট এবং জঙ্গলেই বাস করে৷ জাংগা-সাংগায় এরকম প্রায় বারোশো হাতি আছে৷

জঙ্গলের মাঝখানে খানিকটা খোলা জায়গা৷ এখানকার মাটি নোনা৷ জন্তুজানোয়াররা সেই লবণ খেতে আসে৷

বছর খানেক হলো লুইস আরানৎস ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ড ফর নেচার বা ডাব্লিউডাব্লিউএফ সংস্থার হয়ে এখানে কাজ করছেন৷ সংকটপীড়িত এলাকায় প্রকৃতি সংরক্ষণে তাঁর বিপুল অভিজ্ঞতা আছে৷

বিশেষ করে হাতিরাই চোরাশিকারিদের শিকার হয়

খোলা জায়গায় হাতিগুলো চঞ্চল হয়ে পড়েছে৷

ডাব্লিউডাব্লিউএফ জাংগা-সাংগার কর্মী লুইস আরানৎস বললেন, ‘‘আমরা খুব বেশি করতে পারি না৷ আমাদের রেঞ্জার আছে৷ আমরা চোরাশিকারিদের থামানোর চেষ্টা করি৷ কিন্তু হাতির দাঁতের চোরাচালান বন্ধ না হলে আমরা সব হাতিদের খোয়াবো বলে আমার ধারণা৷''

২০১৭ সালে এখানে ২১টি হাতি চোরাশিকারিদের হাতে মারা পড়েছে – আফ্রিকায় যা খুব বেশি বলে গণ্য করা হয় না৷ অপরদিকে কর্তৃপক্ষের কাছে বাজেয়াপ্ত করা হাতির দাঁতের পরিমাণ বাড়ছে৷ লুইস আরানৎস দেখালেন, ‘‘এটা হলো আমাদের সবচেয়ে বড় হাতির দাঁতগুলোর মধ্যে একটা; ওজনে প্রায় ১৭ কিলো৷ চোরাশিকারিদের কাছে অনেক টাকা৷''

লুইস আরানৎস ৩৭ বছর ধরে আফ্রিকায় প্রকৃতি সংরক্ষণের কাজ করছেন ও দেখেছেন, মহাদেশটি থেকে হাতিরা কীভাবে ধীরে ধীরে উধাও হচ্ছে৷ তিনি জানেন যে, ‘‘সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিকের শেষ হাতিগুলো আজ এখানে, বাকি দেশটায় আর কোনো হাতি নেই; চোরাশিকারিরা তাদের সবাইকে শেষ করেছে ও আমরা জানি যে, ওরা এবার এখানে এসে আমাদের হাতিগুলোকে মারার চেষ্টা করবে৷ কাজেই হাতিগুলোকে তাদের হাত থেকে বাঁচানোর জন্য আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে৷''

পার্কে টহল দেবার মতো রেঞ্জারের অভাব নেই, অভাব হল বন্দুক ও গুলিবারুদের, যা ছাড়া পেশাদার চোরাশিকারিদের সাথে যোঝা সম্ভব নয়৷ গোটা আফ্রিকাতেই এই অবস্থা৷ লুইস আরানৎসের ভাষ্যে, ‘‘এভাবে বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন – যারা হাতির দাঁত কেনেন, তাদের ওটাই মূল সমস্যা৷ তারা ভাবেন যে, শুধু হাতিরাই মারা যাচ্ছে৷ কিন্তু বাস্তবে চোরাশিকারি আর রেঞ্জাররা মিলে বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন৷''

লুইস আরানৎস ইতিপূর্বে চাড ও উত্তর কঙ্গোয় কর্মকালে চোরাশিকারিদের বিরুদ্ধে সংগ্রামে মোট ৪০ জন সহকর্মীকে হারিয়েছেন৷ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লেন লুইস: ‘‘খুবই দুঃখের কথা৷ আমরা আফ্রিকাকে ধ্বংস করতে চলেছি, অথচ তা রোখার জন্য কিছুই করছি না৷ আমরা যেন একটা যুদ্ধের মধ্যে রয়েছি ও সেই যুদ্ধে হারতে চলেছি – কিন্তু কেউ তা স্বীকার করতে চায় না৷ আমরা যদি আগামী পাঁচ-দশ বছরের মধ্যে কিছু না করি, তাহলে সব কিছু শেষ হয়ে যাবে৷''

জঙ্গলের মাঝখানে সাংগা ফরেস্ট ক্লিয়ারিং-এ আজও যে অনেক হাতি দেখতে পাওয়া যায়৷ লুইসের মতে তার কারণ: ‘‘বন্দুক আর গুলিবারুদ নিয়ে আমাদের চিরকালই একটা সমস্যা ছিল৷ সবাই বলে: ‘তোমরা বন্দুক দিয়ে কী করে হাতিদের বাঁচাবে?' আমরা হাতিদের বাঁচানোর জন্য বন্দুক চাই না; আমরা বন্দুক চাই, যারা হাতিদের বাঁচাচ্ছে, তাদের বাঁচানোর জন্য৷ সেটা আলাদা৷ চোরাশিকারিরা বন্দুক নিয়ে আসে; আমাদের রেঞ্জারদের বন্দুক না থাকলে তারা মারা পড়বে৷''

ইয়ুর্গেন স্নাইডার/এসি