1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

হেলমুট কোলকে নিয়ে নাটক

৩০ জুন ২০১৭

হেলমুট কোল-এর দ্বিতীয় পত্নী, তাঁর প্রথম বিবাহের সন্তানেরা, বর্তমান জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, হাঙ্গেরির বিতর্কিত প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান– এরা সবাই এই নাটকের চরিত্র৷

https://p.dw.com/p/2fgpj
হেলমুট কোল
হেলমুট কোলছবি: picture-alliance/dpa/A. Burgi

আঙ্গেলা ম্যার্কেলকে এককালে কোল-এর ‘মেইডশেন’ বা ‘খুকি’ বলা হতো, যার পিছনে লুকিয়ে রয়েছে দুই প্রজন্মের দুই জার্মান রাজনীতিকের মধ্যে জটিল সম্পর্কের ইতিহাস৷ সেই ‘খুকি’ আজ কোল-এর মতোই খুব সম্ভবত চতুর্থবারের মতো জার্মান চ্যান্সেলর হতে চলেছেন, কোল-এর মতোই তিনি সিডিইউ দলের সভাপতি ও ইউরোপের প্রথম সারির নেতা – তবুও তাঁকে কোল-এর শোকানুষ্ঠানে বক্তব্য রাখতে দেওয়া হচ্ছিল না বলে জানিয়েছে ‘ডের স্পিগেল’ পত্রিকা৷

হেলমুট কোল সক্রিয় রাজনীতি থেকে অবসর নেন ২০০২ সালে৷ পরবর্তীতে ম্যার্কেলের সঙ্গে তাঁর সম্পর্ক লক্ষণীয়ভাবে শীতল হয়ে পড়ে৷ সিডিইউ দলের বেআইনি চাঁদা ও বিদেশে বেনামা তহবিল সংক্রান্ত কেলেংকারি চলাকালীন ম্যার্কেল দৃশ্যত মন্তব্য করেছিলেন যে, ‘‘কোল-এর স্বীকৃত এসব কার্যকলাপ (সিডিইউ) দলের ক্ষতি করেছে’’ – যা কোল-এর প্রভাব-প্রতিপত্তির অন্ত সূচিত করে বলে বিশেষজ্ঞদের বিশ্বাস৷ এর স্বল্প পরেই ম্যার্কেল নিজে দলের সভাপতিত্ব গ্রহণ করেন ও পরে জার্মান ফেডারাল প্রজাতন্ত্রের প্রথম নারী চ্যান্সেলর নির্বাচিত হন৷ 

২০১০ সালে কোল-এর ৮০তম জন্মদিন উপলক্ষ্যে ম্যার্কেল তাঁর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়েছিলেন এবং বলেছিলেন যে, কোল-এর অবদান ব্যতিরেকে ‘‘লক্ষ লক্ষ মানুষ, যারা আমার মতো ১৯৯০ সাল অবধি পূর্ব জার্মানিতে বাস করেছেন, তাদের জীবন সম্পূর্ণ অন্যরকম হতো৷’’ কিন্তু সব সত্ত্বেও কোল ম্যার্কেলকে কোনোদিনই ক্ষমা করেননি৷ কোল-এর বিধবা স্ত্রী মাইকে কোল-রিশটার-এর বিবৃতি অনুযায়ী, ম্যার্কেল যে তাঁর সমাধি অনুষ্ঠানে ভাষণ দেবেন, কোল নাকি একাধিকবার সে প্রস্তাব নাকচ করেছিলেন৷

ঐক্য-অনৈক্য

মাইকে কোল-রিশটারের বয়স হেলমুট কোল-এর চেয়ে ৩৪ বছর কম৷ দু'জনের আলাপ কোল-এর শেষ কর্মকালের সময় চ্যান্সেলরের দপ্তরে৷ কোল-এর প্রথম স্ত্রী হানেলোরের মৃত্যুর কয়েক বছর পরে উভয়ের বিবাহ সম্পন্ন হয় ২০০৮ সালে৷ কোল তখন হুইলচেয়ারে বসা ও তাঁর বাকশক্তিও অংশত ব্যাহত হয়েছে৷ পরিবারের অন্য সদস্যরা সেই বিবাহে উপস্থিত থাকেননি৷

কোল-রিশটার যা চাননি, ঠিক তা-ই ঘটতে চলেছে৷ প্রথম ইউরোপীয় রাজনীতিক হিসাবে পয়লা জুলাই স্ট্রাসবুর্গের ইউরোপীয় পার্লামেন্টে হেলমুট কোলের জন্য যে শোকানুষ্ঠান আয়োজিত হচ্ছে, সেখানে ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ-ক্লোদ ইয়ুঙ্কার ও ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ এবং সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন ছাড়া বর্তমান জার্মান চ্যান্সেলর হিসেবে আঙ্গেলা ম্যার্কেলও ভাষণ দেবেন৷

কোলকে ইতিহাস কিভাবে স্মরণ করবে?

মাইকে কোল-রিশটার চেয়েছিলেন যে, হেলমুট কোলের আরেক বিশ্বস্ত, হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান কোলের শোকানুষ্ঠানে ভাষণ দিন, কিন্তু তা-ও ঘটছে না৷ অর্বানের ইইউ-বিরোধী মনোভাব ও উদ্বাস্তু নীতির ক্ষেত্রে তাঁর অসহযোগিতা ব্রাসেলসের চোখ এড়ায়নি৷ অপরদিকে হেলমুট কোল জার্মানি তথা ইউরোপকে একতাবদ্ধ করায় তাঁর অবদানের কারণেই ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছেন৷

মনে রাখা দরকার, জার্মানিতে হেলমুট কোলের জন্য কোনো রাষ্ট্রীয় শোকানুষ্ঠান হচ্ছে না, যা কিনা একজন পরলোকগত চ্যান্সেলরের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব৷ এছাড়া কোল-এর বাসস্থান লুডভিগসহাফেনের ফ্রিজেনহাইম সমাধিক্ষেত্র, যেখানে তাঁর প্রথম স্ত্রী হানেলোরে শায়িত, সেখানে কোলকে সমাধিস্থ না করে, তাঁর মরদেহ স্ট্রাসবুর্গ থেকে হেলিকপ্টারে করে ও নদীপথে স্পায়ারে নিয়ে যাওয়া হবে৷ সেখানে ক্যাথিড্রালের পাশে সমাধিস্থ করা হবে তাঁকে৷

কোল তাঁর প্রথম বিবাহের সন্তানদের সঙ্গে সম্পর্ক প্রায় ছিন্ন করেছিলেন৷ এমনকি নাতিদের সঙ্গেও তাঁর কোনো সম্পর্ক ছিল না৷ তাঁর চরিত্রের এই দু'টি দিক – তাঁর ঐক্য ও অনৈক্য সৃষ্টি করার ক্ষমতা নিয়ে অনেকেই মন্তব্য করেছেন৷ কিন্তু জার্মান তথা বৃহত্তর ইউরোপীয় রাজনীতিতে তিনি ছিলেন একতা, একীকরণ এবং ঐক্যবদ্ধতার একটি শক্তি – সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ থাকতে পারে না৷

মাক্সিমিলিয়ানে কোশিক, সের্টান স্যান্ডারসন/এসি