1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

২০২২: ব্লাঙ্কেট কাভারেজ ইনফোওবেসিটির রসদ যুগিয়েছে

৩০ ডিসেম্বর ২০২২

দিন, সপ্তাহ, মাস পেরিয়ে বছর৷ এভাবে চক্রাকারে চলে ক্যালেন্ডারের পাতা৷ এই চক্রে ঘনিয়ে এসেছে ২০২২ সালের শেষ প্রান্ত৷

https://p.dw.com/p/4LZKO
কিয়েভের কাছে পেট্রোল ডিপোতে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার পর আগুন ধরে যায়৷
ইউক্রেন সংকট বিশ্ব রাজনীতির মতো বিশ্ব গণমাধ্যমকেও দুভাগে বিভক্ত করেছে৷ ছবি: Alisa Yakubovych//EPA-EFE

এ বছরটি ইতিহাসের পাতায় এমন একটি বছর হিসেবে লেখা থাকবে যেখানে মহামারির প্রকোপ কাটিয়ে উঠতে না উঠতে বেজেছে যুদ্ধের দামামা, যার জেরে বিশ্বজুড়ে খাদ্য ও জ্বালানিসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম অভাবনীয় ও অকল্পনীয় হারে বেড়েছে৷ বছর জুড়ে একদিকে কয়েকজন রাষ্ট্রীয় প্রধানকে হারানোর বেদনায় বিশ্ববাসী শোকে মূহ্যমান যেমন ছিল তেমনি অন্যদিকে অদক্ষ ও কলঙ্কিত কিছু নেতার বিদায়ে বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ উল্লসিতও ছিল৷ পরিবেশ সম্মেলনগুলোতে উপেক্ষিত হয়েছে প্রান্তিক ও ঝুঁকিপূর্ণ মানুষের জীবনের কান্না৷ শেষ দিকে এসে এক মাসেরবিশ্বকাপ ফুটবল জ্বরে বুদ হয়েছিল বিশ্ববাসী৷ এসব ঘটনা-দুর্ঘটনা নানা প্রান্তে সংঘটিত হলেও আমরা ঘরে বসেই জানতে পেরেছি গণমাধ্যম, বিশেষ করে আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের কল্যাণে৷ এসব ঘটনা গণমাধ্যমে ব্যাপক কাভারেজ পেয়েছে এবং এখনও পাচ্ছে৷ কিন্তু প্রতিটি ঘটনায় আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর পরিবেশনা, পরিবেশনের ধরন, ব্যবহৃত শব্দ  ও ভাষা নানাভাবে সমালোচিত হয়েছে৷ বিদ্যমান সবচেয়ে বড় সমালোচনাটি পশ্চিমা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে, ‘আমরা বনাম তোমরা’ শ্রেণীবিন্যাস তৈরির প্রবণতা কখনও কখনও প্রচলিত বর্ণবাদের ধারণাকেও হার মানিয়েছে৷ তাছাড়া কয়েকটি নির্দিষ্ট ইস্যুতে অতিরঞ্জন অতীতের সব রেকর্ড ছাড়িয়ে যাওয়ায় গণমাধ্যমগুলোর কাভারেজ ‘ব্লাঙ্কেট কাভারেজ’ হিসেবে সমালোচিত হচ্ছে৷ কখনও কখনও গণমাধ্যমের এই অতিরঞ্জন মানুষের ‘ইনফোওবেসিটি’ বা ‘তথ্যস্থূলতা’র ক্ষেত্রে রসদ যুগাচ্ছে বলে মনে করছেন গণমাধ্যম সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষক ও গবেষকরা৷

এ কথা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ২০২২ সালে সবচেয়ে আলোচিত ঘটনা ছিল ইউক্রেন যুদ্ধ৷ ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেন সীমান্তে এক লাখেরও বেশি সেনা জড়ো করে আক্রমণ শুরু করে রাশিয়া৷ রুশ সেনারা মূলত ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভ দখল করে প্রেসিডেন্ট ভালোদিমির জেলেনস্কিকে ক্ষমতাচ্যুত করে ইউক্রেনে রাশিয়াপন্থি সরকার প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিল৷ কিন্তু সে চেষ্টা সফল না হওয়ায় দীর্ঘ ১০ মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এ যুদ্ধ কতদিন চলবে তা একমাত্র ভবিতব্যই জানে৷ ইউক্রেন যুদ্ধ এবং এর ফলে পরবর্তীতে পশ্চিমাদের আরোপিত নিষেধাজ্ঞা বৈশ্বিক জ্বালানি পণ্যের সরবরাহ চেইন ভেঙে দিয়েছে, প্রাকৃতিক গ্যাসের দামকে নিয়ে গেছে নতুন উচ্চতায়৷ উন্নত বা অনুন্নত যে কোনো দেশেই জীবনযাত্রার ব্যয় এতটা বেড়েছে যে, অধিক মজুরির দাবিতে বিভিন্ন দেশের পরিষেবা খাতের কর্মীরা ঘন ঘন ধর্মঘটে যাচ্ছেন, বাড়ছে সামাজিক অস্থিরতা৷ দ্য ইকোনমিস্ট ২০০২ সালকে বলছে, ‘দ্য ইয়ার অব ইউক্রেন’ বা ‘ইউক্রেনের বছর’৷ ‘২০২২ সালের সবচেয়ে বড় খবর’ শীর্ষক ইকোনমিস্টের এক প্রতিবেদন বলছে, ২০২০-২১ এর মতো ২০২২ সালের শুরুতে বিশ্বব্যাপী সবচেয়ে বড় সংবাদযোগ্য বিষয় ছিল মহামারী৷ কিন্তু ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেন আক্রমণের পর থেকে বিশ্বব্যাপী মানুষ তাদের এক-চতুর্থাংশ সময় ব্যয় করেছে এ সংক্রান্ত খবর জানতে ও পড়তে৷ অর্থাৎ এই একটি ইস্যু বিশ্বব্যাপী সংবাদ কাভারেজে আধিপত্য বিস্তার করেছে৷ শুধু ইউক্রেন যুদ্ধের খবর জানতে বিশ্বব্যাপী পাঠক-দর্শকদের ব্যয়িত এক বিলিয়ন ঘণ্টার মধ্যে ২৭৮ মিলিয়ন ঘন্টা তারা ব্যয় করেছে৷ ইউক্রেন সংকট বিশ্ব রাজনীতির মতো বিশ্ব গণমাধ্যমকেও দু'ভাগে বিভক্ত করেছে৷ একদিকে রাশিয়া ও তার মিত্র দেশগুলোর সংবাদ মাধ্যমের উপাস্থাপনা এবং অন্যদিকে ইউক্রেনের সমর্থক পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোর পরিবেশনা-দুটোই শুধু পক্ষপাতিত্বের দোষে দুষ্ট নয়, বরং তারা নিজ নিজ মতাদর্শের এজেন্ডা বাস্তবায়নে নিজস্ব বয়ান নির্মাণে সচেষ্ট৷ ইউক্রেন যুদ্ধের কাভারেজের ক্ষেত্রে পশ্চিমা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগটি হলো, তারা অনেক ক্ষেত্রেই বর্ণবাদকে সমর্থন করেছে৷ অন্যদিকে রাশিয়ানপন্থী গণমাধ্যমগুলো এত বেশি নিজস্ব বয়ান প্রচার করেছে যেখানে অনেক ক্ষেত্রেই সঠিক ও ভুয়া খবরের মধ্যে পার্থক্য করা মানুষের পক্ষে কঠিন হয়ে পড়েছে৷ কোন কোন পশ্চিমা গণমাধ্যম ও সাংবাদিক ইউক্রেনের সংকটকে এত বেশি মর্মস্পর্শী হিসেবে তুলে ধরার চেষ্টা করেছে যাতে ইরাক, আফগানিস্তানের মানুষের চেয়ে ইউক্রেনের মানুষকে বেশি ‘সভ্য’ বলে দাবি করেছে৷ ইউক্রেন সঙ্কট নিয়ে পশ্চিমা মূলধারার গণমাধ্যমের পরিবেশনা আমাদের দেখায় যে বিশ্বব্যাপী চলমান অন্যান্য যুদ্ধগুলো কতটা উপেক্ষিত এবং ভুলভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে৷ মূলধারার গণমাধ্যমের এ ধরনের বয়ান ইরাক, আফগানিস্তানের মত দেশে পশ্চিমা আগ্রাসনের এক ধরনের বৈধতা দেয়৷ গণমাধ্যম কর্মী যখন বলেন, ‘‘তৃতীয় বিশ্বের উন্নয়নশীল কোনো দেশে সহিংসতা, যুদ্ধ চলতে পারে, তাদের রক্ত ঝড়বে৷ তারা উদ্বাস্তুর মতো জীবনধারণ করবেন৷ এটাই তো স্বাভাবিক৷ কিন্তু ইউরোপে এটা কি করে সম্ভব?’’ – তখন পশ্চিমা গণমাধ্যমের দ্বৈত নীতির অদৃশ্যমান দেয়ালটি ভেঙে পড়ে৷ এই দ্বৈত নীতির কারণে পাঠক যখন মন্তব্য করে, ‘গায়ের চামড়াই পাসপোর্ট’ – তখন পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলোকে বাধ্য হয়ে ক্ষমা চাইতে হয়৷ পশ্চিমা গণমাধ্যম ইউক্রেনবাসীর সংগ্রামকে ‘বীরত্বপূর্ণ’ ও ‘সাহসী’ হিসেবে চিত্রায়িত করছে, কিন্তু একই কাজ যখন ফিলিস্তিনের মানুষ করছে তখন তাদের ‘সন্ত্রাসী’ আখ্যা দেয়া হচ্ছে৷ অন্যদিকে রাশিয়াননপন্থী গণমাধ্যম বিশেষ করে রাশিয়া ও চীনের গণমাধ্যমগুলো রাশিয়ান সরকারের বয়ানই প্রচার করছে যেখানে ইউক্রেনবাসীর দুর্দশার খবর পৌঁছায় না৷

২০২২ সালে বিশ্বের প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর কাভারেজ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, ইউক্রেন যুদ্ধের বাইরে গণমাধ্যমগুলোতে রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের মৃত্যু এবং রাজনৈতিক পালাবদলের খবর বেশি গুরুত্ব পেয়েছে৷ বিশ্ব নেতৃবৃন্দের মৃত্যু সংক্রান্ত খবরের মধ্যে ৮ জুলাই এক বন্দুকধারীর গুলিতে জাপানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী শিনজো আবের মৃত্যু এবং ৮ সেপ্টেম্বর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের সবচেয়ে দীর্ঘকালীন মুকুটধারী রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথের মৃত্যু আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে বহুল প্রচারিত ইস্যু ছিল৷ রাজনৈতিক পালাবদলের খবরের মধ্যে এক বছরের কম সময়ে তিনবার ডাউনিং স্ট্রিটের মিউজিক্যাল চেয়ারের হাতবদল হওয়া, সংসদে বিরোধীদের অনাস্থা ভোটে হেরে ১১ এপ্রিল ইমরান খানের পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ, ভয়াবহ বৈদেশিক মুদ্রা সঙ্কটের কবলে পড়ে দেশব্যাপী বিক্ষোভের কারণে শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্টের দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়া এবং নভেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যবর্তী নির্বাচনে রিপাবলিকান পার্টির সংসদের নিম্নকক্ষ প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পাওয়ার খবর আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে যথেষ্ট গুরুত্ব পেয়েছিল৷ এসব খবরের মধ্যে ‘একটি নির্দিষ্ট ইস্যুতে গণমাধ্যমের বুদ হয়ে থাকা'র সবচেয়ে ভাল উদাহরণ ছিল ব্রিটেনের রানীর মৃত্যুর খবর৷ ৮ সেপ্টেম্বর রানীর মৃত্যুর পরবর্তী দশদিন বৃটিশ ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোতে যেভাবে একটানা খবর ও বিশ্লেষণ প্রকাশিত এবং প্রচারিত হয়েছে তা নিয়ে খোদ ব্রিটিশরাই তীব্র সমালোচনা করেছেন৷ ৮ সেপ্টেম্বর দুপুর ১২টা ৩৯ মিনিট থেকে পরবর্তী ৪,৬৪১ মিনিট ব্রিটেনের সবচেয়ে বড় পাবলিক টেলিভিশনটিতে মূলত রানীর স্বাস্থ্য, মৃত্যু এবং নতুন রাজার খবর প্রচারিত হয়েছিল৷ শুধু ব্রিটেন নয়, আন্তর্জাতিক অনেক সংবাদপত্র এবং নিউজ ওয়েবসাইটের ক্ষেত্রে একই ধরনের অভিযোগ আছে৷ রানীর মৃত্যুর সংবাদ প্রচারের সাথে সাথে এসব গণমাধ্যমের স্বাভাবিক সংবাদ এজেন্ডার কাভারেজের যেন মৃত্যু ঘটেছিল৷

রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথ
ব্রিটেনের ৪৯ শতাংশ দর্শক মনে করে প্রয়াত রানির মৃত্যু এবং রাজার অভিষেক নিয়ে ব্রিটেনের গণমাধ্যমগুলো অতিরঞ্জন করেছিল৷ছবি: Eddie Mulholland/REUTERS

৮ সেপ্টেম্বর থেকে প্রয়াত রানী ও নতুন রাজার সংবাদ কাভারেজ সর্বব্যাপী হয়ে উঠেছিল, বেশিরভাগ ব্রিটিশ টিভি চ্যানেলগুলোতে স্বাভাবিক প্রোগ্রাম স্থগিত করা হয়েছিল, বিশেষ সংবাদ কাভারেজ বাকি দিনগুলোতে আধিপত্য বিস্তার করেছিল৷ ক্রিস স্টোকেল-ওয়াকার তার এক নিবন্ধে দেখিয়েছেন, রানীর মৃত্যুর পর প্রথম পাঁচ দিনে রাণীকে নিয়ে দ্য ইন্ডিপেডেন্ট ৭২৪টি, মেইল অনলাইন ৫৪০টি, ডেইলি এক্সপ্রেস ৫১১টি এবং মিরর ৪৪৫টি স্টোরি প্রকাশ করেছিল৷ প্রেস গেজেটের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, ৯ সেপ্টেম্বর ১০টি ব্রিটিশ দৈনিক রানীর মৃত্যুর খবরের জন্য ৪০০ পৃষ্ঠার সংবাদ পরিবেশন করেছিল৷ প্রেস গেজেটের এ বিশ্লেষণ অনুযায়ী, যুক্তরাজ্যের বাইরে ‍যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, জার্মানি, ফ্রান্স, স্পেন, মেক্সিকো, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইসরাইলসহ বিশ্বের অনেক দেশের গণমাধ্যমে একই ধরনের চিত্র দেখা গেছে৷ অস্ট্রেলিয়ান পাবলিক ব্রডকাস্টার এবিসি'র কড়া সমালোচনা করেছে দেশটির গণমাধ্যম বোদ্ধারা৷ এ ধরনের ব্যাপক সম্প্রচার ‘ব্লাঙ্কেট বা কম্বল কাভারেজ' হিসেবে সমালোচনার শিকার হয়েছিল৷ ইউজিওভি পরিচালিত এক জরিপে দেখা গেছে, ব্রিটেনের ৪৯ শতাংশ দর্শক মনে করে প্রয়াত রানীর মৃত্যু এবং রাজার অভিষেক নিয়ে ব্রিটেনের গণমাধ্যমগুলো অতিরঞ্জন করেছিল৷ দা গার্ডিয়ানের তথ্য মতে, রানীর মৃত্যু কাভারেজ নিয়ে বিবিসির ওয়েবসাইটে ৬৭০টি আপত্তি এসেছিল এবং ২০২১ সালে তার স্বামীর মৃত্যুর পর একই ধরনের অভিযোগ ছিল এক লাখেরও বেশি৷ এক দর্শকের মন্তব্য ছিল, টিভি স্টেশনগুলোর কম্বল কাভারেজ হাস্যকর এবং এটি একটি আধুনিক গণতন্ত্র মনোভাবের সাথে সম্পর্কিত নয়৷ বিশেষ করে রাণীর মৃত্যুর খবরকে গণমাধ্যমগুলো তাদের এজেন্ডায় এতটাই গুরুত্ব দিয়েছিল, ফলশ্রুতিতে সে সময়ে অনেক বেশি জনগুরুত্বপূর্ণ সমস্যা, যেমন ইংল্যান্ডে অর্থনৈতিক সমস্যা এবং অস্ট্রেলিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে জলবায়ু ও পরিবেশগত সমস্যাকে গণমাধ্যমগুলো উপেক্ষা করেছিল৷ রানীর মৃত্যুর ঠিক একদিন পর বৈশ্বিক উষ্ণতা ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস অতিক্রম করার বিপদ সম্পর্কিত একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণা প্রতিবেদনকে উপেক্ষা করার পর গণমাধ্যমগুলোর পরিবেশনা নিয়ে সমালোচনা বেড়েছে৷

মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী, শিক্ষক, গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়
মোহাম্মদ সাইফুল আলম চৌধুরী, শিক্ষক, গণযোগাযোগ সাংবাদিকতা বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ছবি: bdnews24.com

এই সমালোচনা আরো তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে হবে যখন দেখা যায়, নভেম্বরে মিশরে অনুষ্ঠিত কপ২৭ সম্মেলনে যখন দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্বন নির্গমন কমানোর ক্ষেত্রে ধনী দেশগুলোর সিদ্ধান্তহীনতা নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যম মৌনতার নীতি অবলম্বন করেছিল৷ গণমাধ্যম যেভাবে ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে বছরব্যাপী, রানীর মৃত্যু নিয়ে দশদিন ব্যাপী আর বিশ্বকাপ নিয়ে মাসব্যাপী কাভারেজ দিয়েছে বৈশ্বিক জলবায়ু সমস্যা নিয়ে যদি অন্ততপক্ষে একটি দিন তেমন কাভারেজ দিতো তাহলে বিপন্ন মানুষ ও প্রাণীকূল নিয়ে আমরা আরো বেশি করে ভাবার সুযোগ পেতাম৷ ফ্রান্সের পিয়েরে-সিমন ল্যাপ্লেস ইনস্টিটিউটের প্রধান জলবায়ু বিজ্ঞানী রবার্ট ভাটার্ড বলেছেন, ২০২২ সাল পৃথিবীর সবচেয়ে উষ্ণতম বছরগুলোর একটি৷ কিন্তু উচ্চ-তাপমাত্রার এই রেকর্ড নিয়ে গণমাধ্যমগুলোতে কোনো হৈ চৈ দেখা যায়নি৷ বছরের শেষ দিকে এসে ফিফা বিশ্বকাপ গণমাধ্যমে ‘বুদ হয়ে থাকা' বিষয়ের আরেকটি পালক যোগ করেছিল৷ ফিফা বিশ্বকাপ নিয়ে পশ্চিমা গণমাধ্যমের বিরুদ্ধে ইসলামোফোবিক কাভারেজের অভিযোগ তুলেছেন অনেক গণমাধ্যম গবেষক৷   

গবেষকরা মনে করেন, ইউক্রেন যুদ্ধ, রানীর মৃত্যু কিংবা বিশ্বকাপ ফুটবল – এ ধরনের ইস্যুগুলোর অতিরঞ্জিত কাভারেজ মানুষের জন্য ক্ষতির কারণ হতে পারে৷ দীর্ঘমেয়াদে গণমাধ্যমের এ ধরনের চর্চা ইনফোওবেসিটি বা তথ্যস্থূলতাকে বাড়িয়ে দিতে পারে৷ অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়টার্স ইনস্টিটিউট ফর জার্নালিজম স্টাডিজের এক গবেষণার মাধ্যমে নিক নিউম্যান আশঙ্কা করেছেন, গণমাধ্যমের এ ধরনের চর্চা মানুষের মধ্যে ‘ইনফরমেশন ফ্যাটিগ’ বা ‘তথ্য ক্লান্তি’ বাড়িয়ে দিবে যা ভবিষ্যতে মানুষকে গণমাধ্যম বিমুখ করে তুলতে পারে৷ একদিকে পশ্চিমা প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলোর নির্দিষ্ট কিছু ইস্যুতে ডাবল স্ট্যান্ডার্ড বা দ্বৈত আচরণ অন্যদিকে অতিরঞ্জিত পরিবেশনা সামনের বছরে গণমাধ্যমের প্রতি মানুষের আস্থার সঙ্কটকে বাড়িয়ে তুলতে পারে৷ উপরন্তু এর ফলে ইনফো পোলুশন বা তথ্য দূষণও ঘটতে পারে বলে অনেকের আশঙ্কা৷