1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

উভচর বাস!

৯ আগস্ট ২০১৭

ড্যানিউব নদীর উপর নৌকাবিহার নতুন কিছু নয় – কিন্তু হাঙ্গেরির রাজধানী বুদাপেস্ট শহরে তাতে আরো একটি মাত্রা যোগ হয়েছে: বাসে চড়ে নৌকাবিহার!

https://p.dw.com/p/2hucb
ড্যানিউবের পারে বুদাপেস্টছবি: picture-alliance/Robert Harding

শহরের কেন্দ্র থেকে যখন যাত্রা শুরু হয়, তখন মনে হবে আর পাঁচটা বাসের মতোই৷ এ বাস কিন্তু ডাঙাতেও চলে, আবার জলেও চলে – অর্থাৎ একটি অ্যাম্ফিবিয়ান বা উভচর যান৷ ঠিক সেই কারণেই পর্যটকরা এই অভিনব সাইটসিইং টুর পছন্দ করেন, জানেন টুর গাইড রেজিনা বোডর৷

একে তো জলচর বাসে চড়ার অভিজ্ঞতা, তার উপর আবার নদী থেকে বুদাপেস্ট দেখা, যা কিনা এক আশ্চর্য অভিজ্ঞতা৷ মনে রাখতে হবে, ড্যানিউব নদীর এই প্যানোরামা ইউনেস্কোর বিশ্ব সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় রয়েছে৷

দেড় ঘণ্টার টুরে বাসটা প্রথমে বুদাপেস্টের প্রাচীন অংশে যা কিছু দেখবার মতো, তা ঘুরে দেখায় – ঠিক অন্যান্য টুরিস্ট বাসের মতোই – যেমন সেন্ট স্টেফানের বাসিলিকা বা গির্জা, যেখানে অন্যান্য রাজারাজড়া ও সাধুসন্তের সঙ্গে হাঙ্গেরির ফুটবলের কিংবদন্তি ফেরেঞ্চ পুস্কাসেরও সমাধি রয়েছে৷

উভচর যানে বুদাপেস্ট ভ্রমণ

শেষমেষ বাস চলে নদীর দিকে: এ বাস যে শীঘ্রই স্টিমার হয়ে যাবে, সেটা অনেক যাত্রীর কাছে ভয়ের ব্যাপার বৈকি৷ তাদের প্রতিক্রিয়াও তাই বলে: এক যাত্রী বলছেন, ‘‘ড্যানিউবে আজ বেশ ঢেউ আছে৷ বাস সেই ঢেউ সামলে যেতে পারবে, নাকি ডুবে যাবে, কে বলবে৷’’

এক হিসেবে সিটি ট্যুরের এটাই হল ক্লাইম্যাক্স, বাসটা যখন ৭০ মিটার লম্বা ব়্যাম্প ধরে জলে নামে৷ সঙ্গে উচ্চৈঃস্বরে আবহসংগীত, তারপর – ঝপাস! যাত্রীরা আশ্বস্ত – বাস সত্যিই জলে চলতে পারে৷ বাসচালক টামাস নাহোচকি মজা করে বললেন, ‘‘ডাঙায় চলে ঠিক বাসের মতো – ছ'টা চাকা আর ইঞ্জিন, সবই আছে৷ আবার জলের ওপর বাসটা চলে একটা সুবিশাল জেট-স্কির মতো – তবে অতটা জোরে নয়৷’’

অন্য চোখে

ওদিকে টুরিস্টরা একটা সম্পূর্ণ অন্য দৃষ্টিকোণ থেকে বুদাপেস্টকে দেখছেন – ড্যানিউবের এই দ্বীপটির নাম রাখা হয়েছে রাজকন্যা মার্গারেটের নামে৷ তাঁর বাবা রাজা চতুর্থ বেলা রাজকন্যাকে এই দ্বীপের ডমিনিকান যাজকদের মঠে পাঠিয়েছিলেন যুদ্ধজয়ের পর, ঐশ্বরিক কৃপার জন্য মানত হিসেবে৷ মার্গারেটে এই দ্বীপেই দেহ রাখেন, মাত্র ২৮ বছর বয়সে৷ দ্বীপটিতে শুধু পর্যটকরাই নন, বুদাপেস্টের বাসিন্দারাও হাওয়া খেতে আসেন৷

ড্যানিউবের দু'পারে রয়েছে বুদাপেস্ট শহরের বুদা আর পেস্ট, এই দু'টি অংশের ঐতিহাসিক কেন্দ্রস্থল৷ বুদায় দেখতে পাওয়া যাবে হাঙ্গেরির বৃহত্তম ভবন, একটি প্রাসাদদুর্গ৷ পেস্টের দিকের তীর জুড়ে রয়েছে ২৬৮ মিটার দৈর্ঘের সংসদ ভবন, যা লন্ডনের ওয়েস্টমিনস্টারের অনুকরণে তৈরি করা হয় – নির্মাণের কাজ শেষ হয় ১৯০৪ সালে৷

কফিহাউস

অস্ট্রো-হাঙ্গেরীয় হাব্সবুর্গ সাম্রাজ্যের আমল থেকে চলে আসছে বুদাপেস্টের কফিহাউসগুলোর ঐতিহ্য৷ ঊনবিংশ শতাব্দীতে বুদাপেস্টের কোণায় কোণায় গজিয়ে উঠেছিল এ ধরনের কফি পানশালা৷ সেগুলো ছিল লোকজনের দেখাসাক্ষাৎ করার, আড্ডা দেবার জায়গা৷ তাদের মধ্যে কয়েকটি ঐতিহাসিক কফিহাউস আজও বেঁচে রয়েছে, যেমন পেস্টের পুরনো শহর এলাকার জ্যার্বো কফিহাউস, যার উদ্বোধন করা হয় ১৮৫৮ সালে৷

কাফে জ্যার্বোর মার্কেটিং প্রধান আনা নিসকাচ বলেন, ‘‘বুদাপেস্টে কফিহাউসের প্রথা চলে আসছে বহুদিন ধরে৷ কমিউনিস্ট আমলে তা কিছুটা কমে এসেছিল, কিন্তু এখানকার মানুষজন চিরকালই কাফেতে যেতে ভালোবাসেন৷ কাফেতে নানা দেশের, নানা ভাষার মানুষের সঙ্গে দেখা হয়, তাদের সঙ্গে আলাপ করা যায়৷’’

ভাসন্ত বাস আবার ডাঙায় ফিরেছে, পর্যটকরা খুশি – বাড়িতে ফিরে বাসে চড়ে নৌকাবিহারের কাহিনি শোনাতে কারই বা না ভালো লাগবে!

ফিলিপ ক্রেচমার/এসি