1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

কীটনাশক দূষিত ডিম কেলেঙ্কারি

৯ আগস্ট ২০১৭

জার্মানি, নেদারল্যান্ডস ও বেলজিয়াম ইতিমধ্যেই ফিপ্রোনিল দূষিত ডিম কেলেঙ্কারিতে উত্তাল৷ দৃশ্যত সেই দূষিত ডিম ফ্রান্স ও ব্রিটেনেও সরবরাহ করা হয়েছে৷

https://p.dw.com/p/2huky
ছবি: picture alliance/U. Baumgarten

ফিপ্রোনিল একটি উচ্চমাত্রায় বিষাক্ত কীটনাশক, যা একদিকে যেমন মাঠের ফসল রক্ষার জন্য ব্যবহার করা হয়, অপরদিকে পশুচিকিৎসায় জন্তুজানোয়ারের গায়ের পোকা, উকুন ইত্যাদি মারার জন্যও ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ তবে যে সব জন্তুজানোয়ারের মাংস খাওয়া হয় – যেমন হাঁস-মুরগি, তাদের ধারে-কাছে এ বিষ আনা নিষিদ্ধ৷

অপরদিকে ‘ডেগা ১৬’ হলো একটি ক্লিনিং এজেন্ট ও স্যানিটাইজার বা জীবাণুনাশক যা মুরগির খামারেও ব্যবহার করা হয়ে থাকে৷ এই ‘ডেগা ১৬’-র সাথে কোনোভাবে ফিপ্রোনিল মিশে বর্তমান সংকটের সৃষ্টি করেছে৷

কেলেঙ্কারির সূচনা যেখানেই হোক, যেহেতু ইউরোপ জুড়ে পোল্ট্রি প্রোডাক্ট চালান হয়ে থাকে – বিশেষ করে মুরগির ডিমের মতো একটি নিত্য আহার্য বস্তু – সেহেতু যেখানেই এ ধরনের চালান প্রসূত ডিম পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে, সেখানেই ফিপ্রোনিল দূষণের প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে অথবা প্রমাণ পাওয়ার আশঙ্কা থেকে যাচ্ছে; যে কারণে জার্মানিতে আলডি-র মতো টপ ডিসকাউন্টার তাদের সব শাখা থেকে ডিম সরিয়ে ফেলেছে৷ নেদারল্যান্ডস, বেলজিয়াম, সুইডেন ও সুইজারল্যান্ডের মতো দেশেও সুপারমার্কেটের তাক খালি করে ডিম ফেলে দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে৷

এবার দৃশ্যত ফ্রান্স ও যুক্তরাজ্যেও তা ঘটতে চলেছে – অন্তত সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসেবে৷ ইউরোপীয় কমিশনের ‘শীঘ্র সতর্কতা প্রণালী’ নাকি দেখেছে যে, ফিপ্রোনিল দূষিত ডিম জার্মানি হয়ে ফ্রান্স ও ব্রিটেনে সরবরাহ করা হয়েছে৷ স্বভাবতই সংশ্লিষ্ট দু'টি দেশকে সাবধান করে দিয়েছে ইইউ৷

ব্রিটেন ও ফ্রান্স 

যুক্তরাজ্যের ফুড স্ট্যান্ডার্ড এজেন্সি – যারা খাদ্যের মান নিশ্চিত করার দায়িত্বে – তারা জানিয়েছে যে, যুক্তরাজ্যের কোথায় কোথায় ফিপ্রোনিল দূষিত ডিম সরবরাহ করা হয়েছে, তা নিয়ে জরুরি অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে৷ তবে দূষিত ডিমগুলির সংখ্যা খুবই কম ও তা থেকে জনস্বাস্থ্য জনিত ঝুঁকিও খুব কম, বলে এফএসএ-র অভিমত৷ এছাড়া এযাবৎ তদন্ত করে দেখা গেছে যে, বিক্রির মতো আর কোনো দূষিত পণ্য আর দোকানে নেই৷

ফরাসি সরকার জানিয়েছেন যে, পশ্চিম ফ্রান্সের দু'টি ফুড প্রসেসিং প্ল্যান্ট বা খাবার তৈরির কারখানায় নেদারল্যান্ডস থেকে আসা ফিপ্রোনিল দূষিত ডিমের ১৩টি ব্যাচের হদিশ পাওয়া গিয়েছে৷ তবে সেই সব ডিম ইতিমধ্যেই সুপারমার্কেটে পাঠানো হয়ে গিয়েছে কিনা, সে বিষয়ে ফ্রান্সের কৃষি মন্ত্রণালয় কিছু বলতে পারেনি৷

গত সপ্তাহে উত্তর ফ্রান্সের পা-দ্য-কালে অঞ্চলের একটি মুরগির খামারকে নজরদারিতে রাখা হয়, কেননা খামারের মালিক স্বীকার করেন যে, তাদের এক সাপ্লায়ার ফিপ্রোনিল কীটনাশক ব্যবহার করেছে৷ তবে খামারটি থেকে কোনো ডিম বাজারে পাঠানো হয়নি, বলে কৃষি মন্ত্রক জানিয়েছে৷

গ্রাহকদের পর খামারদের পালা

ফিপ্রোনিল কেলেঙ্কারির ফলশ্রুতি হিসেবে গত কয়েক সপ্তাহে সুপারমার্কেট থেকে বেশ কয়েক কোটি ডিম ফেলে দেওয়া হয়েছে; অপরদিকে লক্ষ লক্ষ মুরগি বিনষ্ট করা হয়েছে৷

ওলন্দাজ ও বেলজীয় কর্তৃপক্ষ ফিপ্রোনিল দূষণের উৎস হিসেবে নেদারল্যান্ডসের এক ক্লিনিং প্রোডাক্টস সাপ্লায়ারকে শনাক্ত করেছেন৷ দৃশ্যত ঐ সাপ্লায়ার ‘লাল উকুন’ নামে মুরগিদের এক প্যারাসাইট মারার জন্য ফিপ্রোনিল সরবরাহ করেছিল৷

আগুন ছাড়াই ডিম ভাজি করা যায় যে দেশে

ফিপ্রোনিল কেলেঙ্কারিতে সংশ্লিষ্ট খামারগুলির বিরুদ্ধে বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও জার্মানিতে পুলিশি তদন্ত চলেছে৷ নেদারল্যান্ডসে ইতিমধ্যেই তিন লাখ মুরগি মেরে ফেলা হয়েছে ও আরো লক্ষ লক্ষ মুরগি বিনষ্ট করার প্রয়োজন পড়তে পারে – কেননা ডিম থেকে ফিপ্রোনিলের যাবতীয় রেশ উধাও হবার পরেই ওলন্দাজ খামারগুলি আবার বাজারে তাদের ডিম বিক্রি করতে পারবে৷ অর্থাৎ গ্রাহকদের জন্য ফিপ্রোনিল আতঙ্কের অবসান ঘটলেও, মুরগির খামারগুলির নতুন করে ডিম উৎপাদন শুরু করতে বেশ কয়েক সপ্তাহ, এমনকি মাস সময় লেগে যেতে পারে৷ সেই সঙ্গে থাকবে লক্ষ লক্ষ ইউরো লোকসান৷

নেদারল্যান্ডস কর্তৃপক্ষ আপাতত পরীক্ষা করে দেখছেন, মুরগির মাংসেও ফিপ্রোনিলের রেশ পাওয়া যায় কিনা৷ অপরদিকে বেলজিয়াম কর্তৃপক্ষকে জবাবদিহি করতে হচ্ছে, জুন মাসেই ফিপ্রোনিল দূষণের ঘটনা আবিষ্কার করা সত্ত্বেও তারা নেদারল্যান্ডস বা জার্মানির মতো প্রতিবেশী দেশগুলিকে ২০ শে জুলাই-এর আগে সে কথা জানাননি কেন৷ নেদারল্যান্ডসের মুরগির খামারগুলির এক-পঞ্চমাংশ ও বেলজিয়ামের মুরগির খামারগুলির এক-চতুর্থাংশ আপাতত কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে৷

এসি/ডিজি (এএফপি, ডিপিএ, এপি)