1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জম্মু-কাশ্মীরের ‘বিশেষ মর্যাদা’ প্রত্যাহারের দাবি

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুনদিল্লি
৪ অক্টোবর ২০১৭

বিজয়া দশমীর ভাষণে মৌলবাদী হিন্দু সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘ আরএসএসের প্রধান জম্মু-কাশ্মীর রাজ্যের ‘বিশেষ মর্যাদা’ রদ করতে সংবিধান সংশোধনের দাবি জানিয়েছেন৷ এ নিয়ে চলছে রাজনৈতিক বিতর্ক৷

https://p.dw.com/p/2lAWD
ভারতের রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত ছবি: Strdel/AFP/Getty Images

বিজয়া দশমী উপলক্ষ্যে বিজেপির তাত্ত্বিক সংগঠন রাষ্ট্রীয় স্বয়ং সেবক সংঘের প্রধান মোহন ভাগবত মোদী সরকারের তিন বছরের কাজের মূল্যায়নের পাশাপাশি দু-একটি স্পর্শকাতর ইস্যু তুলে নতুন করে বিতর্কের জন্ম দিয়েছেন৷ তিনি বলেছেন, অবশিষ্ট ভারতের সঙ্গে জম্মু-কাশ্মীরের পূর্ণ সংহতির জন্য অবিলম্বে সংবিধানে প্রয়োজনীয় সংশোধন জরুরি৷ সংবিধানের ৩৭০ অনুচ্ছেদে জম্মু-কাশ্মীরকে বিশেষ মর্যাদা দেওয়া হয়েছে আর সংবিধানের ৩৫(এ) অনুচ্ছেদে রাজ্যের স্থায়ী নাগরিকদের বিশেষ সুবিধা দেবার কথা বলা হয়েছে৷ এসব সংস্থান রদ করে জম্মু-কাশ্মীরকে ভারতের বাকি অংশের মতো একই সুযোগ-সুবিধা দেবার জন্য মোদী সরকারের ওপর চাপ বাড়াচ্ছে সংঘ-পরিবার৷ মোহন ভাগবতের মতে, এটা করতে পারলেই জম্মু-কাশ্মীরের মানুষ ভারতের বাকি অংশের সঙ্গে মিলে- মিশে যাবে সহজেই৷ আরএসএস প্রধানের কথায়, ১৯৪৭ সালে পাক-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীর থেকে চলে আসা উদ্বাস্তুদের নাগরিকত্ব সমস্যা যেমন রয়েছে, তেমনি ৯০-এর দশকে বাধ্য হয়ে কাশ্মীর উপত্যকা থেকে চলে আসা কাশ্মীরি পণ্ডিতদের সমস্যাও রয়েছে৷ তাঁদের পুনর্বাসনের কাজ এখনো অসম্পূর্ণ৷ রাজ্যের তিনটি অ়ঞ্চল জম্মু, কাশ্মীর ও লাদাখের জন্য একই মাপের উন্নয়ন৷ রোহিঙ্গা ইস্যুতে সংঘ পরিবার মোদী সরকারের সঙ্গে গলা মিলিয়ে রোহিঙ্গাদের সন্ত্রাসবাদী তকমা দিয়েছে৷ আরএসএস মনে করে, রোহিঙ্গারা ভারতের নিরাপত্তার জন্য বিপদের কারণ৷ কাজেই তাঁদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠানো দরকার৷ মানবিকতার খাতিরে দেশের মানুষের বিপদ ডেকে আনা কাজের কথা নয়৷

জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করার বিষয়ে আরএসএসের নীতি অবস্থানের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে রাজ্যের বিরোধী দল ন্যাশনাল কনফারেন্স৷ তাদের মতে, বিজেপি রাজ্যের শাসকদল পিডিপির জোটসঙ্গী হওয়ায় মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতি এখনও চুপচাপ আছেন৷ ন্যাশনাল কনফারেন্সের রাজ্য মুখপাত্র জুনেদ আজিম মাট্টু তাঁর প্রতিক্রিয়ায় বলেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদাই বাকি ভারতের সঙ্গে একমাত্র সাংবিধানিক সেতুবন্ধ৷ আরএসএস প্রধানের উচিত হবে দেশের আর্থিক মন্থরতার সময় জনগণকে বিভ্রান্ত না করা এবং জনগণের আবেগে সুড়সুড়ি না দেওয়া৷ রাজ্যে যখন পিডিপি-বিজেপি জোট সরকার গঠন করা হয়, তখন পরিষ্কার সমঝোতা হয়েছিল যে, সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫(এ) অনুচ্ছেদে হাত লাগানো হবে না৷ এখন সেই পিডিপি মুখ্যমন্ত্রী মেহবুবা মুফতির এই আত্মসমর্পণ বিশেষ উদ্বেগের কারণ৷ রাজ্যকে এভাবে বিজেপির হাতে বিকিয়ে দেওয়ার পরিণাম হবে মারাত্মক এবং সুদূরপ্রসারী৷ জুনেদ আজিম মাট্টুর মতে, মেহবুবা মুফতির উচিত এর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো৷ জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা আলোচনাযোগ্য নয়৷

বিশিষ্ট রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমূল্য গাঙ্গুলি ডয়চে ভেলেকে বললেন, জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা রদ করতে সংবিধানের ৩৭০ এবং ৩৫(এ) ধারা পরিবর্তনের দাবি বিজেপি-আরএসএসের পুরানো অ্যাজেন্ডা৷ এখন তো আএসএস আরো আগ্রাসী হতে চায়, কারণ, বিজেপি এখন বেকায়দায়৷ অর্থনৈতিক সংকটের সন্মুখীন৷ তাই আরএসএসের ছাত্র সংগঠন অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের হালের কয়েকটি নির্বাচনে বেহাল অবস্থা৷ এখন আরএসএস বা সংঘ পরিবারের একটাই অ্যাজেন্ডা, কিভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তাপ ছড়ানো যায়, যেটা ওদের মূল নীতির ভিত্তি৷ কথা হচ্ছে, সংবিধান সংশোধনের মাধ্যমে জম্মু-কাশ্মীরের বিশেষ মর্যাদা প্রত্যাহারের চেষ্টা করলে রাজ্যে বিজেপি-পিডিপি জোট সরকার ভেঙে যাবে৷ বিজেপি অবশ্যই বিশেষ করে নির্বাচনের মুখে এই রকম একটা ঝটকা লাগুক সেটা চাইবে না৷ কাজেই এই অ্যাজেন্ডা থেকে যাবে অ্যাজেন্ডাতেই৷ কার্যকর হবে না৷ এটা শুধু উত্তেজনা বাড়ানোর জন্য আরএসএসের কৌশলমাত্র৷ সমর্থনের মূল ভিত্তি ধরে রাখতে মুসলিমবিরোধিতা করাই তাদের উদ্দেশ্য৷ যেমন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে বিজেপির সঙ্গে একই মেরুতে দাঁড়িয়েছে সংঘপরিবার৷  রাজনৈতিক বিশ্লেষক অমূল্য গাঙ্গুলী ডয়চে ভেলেকে আরো বললেন, আরএসএস চায়, ইসরায়েলের ভূখন্ডে ফিলিস্তিনিদের বসতি স্থাপনের মতো কাশ্মীরে ঘরছাড়া হিন্দু পণ্ডিতদের জন্য অনরূপ একটা ব্যবস্থা৷ সেটা এখানে হবে না৷ কাশ্মিরী পণ্ডিতরাই সেটা চাইবে না৷ ঘরছাড়া কাশ্মিরী পণ্ডিতরা চাইবে আগের মতো স্থানীয় মুসলিমদের সঙ্গে মিলেমিশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকতে৷ আরএসএস চায় একটা আলাদা জায়গা৷ কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া, পুলিশের পাহারা দেওয়া একটা আলাদা জায়গা৷ সেটা সম্ভব নয়৷

‘আরএসএস পরিবারের একটাই অ্যাজেন্ডা, কিভাবে সাম্প্রদায়িক উত্তাপ ছড়ানো যায়’