1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জৈব চাষ কেন বাড়ানো উচিত?

৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

কোনো ধরনের কৃত্রিম সার, রাসায়নিক ইত্যাদি ব্যবহার ছাড়াই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক পদ্ধতিতে উৎপাদিত ফসলকেই অরগ্যানিক বলা হয়৷  জৈব সার ব্যবহারে মাটির উর্বরতা দীর্ঘস্থায়ী হয়৷ উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ৷

https://p.dw.com/p/2jHf0
ছবি: Imago/ZumaPress

২০১০ সালে কক্সবাজারের মারমেইড ইকো রিসোর্টে গিয়ে খাবার খেয়ে বড়ই তৃপ্তি পেয়েছিলাম৷ যেহেতু ইকো রিসোর্ট, তাই সেখানে খাবারগুলো ছিল একেবারেই অরগ্যানিক৷ তাজা তাজা ফল, ফলের রস সবই তাদের বাগানের বা আশেপাশের লোকজনের কাছ থেকে কেনা, যেখানে কোনো রাসায়নিক সার বা কীটনাশক ব্যবহার করা হয়নি৷ এ সব খাবার খেয়ে তৃপ্তি যেমন পেয়েছিলাম, তেমনটা কক্সবাজারের আর কোথাও পাইনি৷ সেই ভালো লাগার রেশ রয়ে গেছে এখনো৷ সেখানকার ফল বা মাছ খেয়ে যে কেউ টের পাবে ঢাকার ফল বা মাছ থেকে এর স্বাদ কতটা ভিন্ন, অর্থাৎ এগুলো একেবারেই নির্ভেজাল, ফরমালিন মুক্ত৷


কেন খাবেন অরগ্যানিক খাবার?

আমাদের দেশে ফরমালিনযুক্ত খাবারের আধিক্য থাকায় গত কয়েক বছর ধরে অরগ্যানিক খাদ্যের চাহিদা বাড়ছে৷ ২০১৪ সালে নিউ ক্যাসল বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক প্রমাণ করেন অরগ্যানিক খাবারের উপকারিতা৷ ব্রিটিশ জার্নাল অফ নিউট্রিশন-এ প্রকাশিত তাঁদের গবেষণা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সাধারণ সারমিশ্রিত ফসলের চেয়ে অরগ্যানিক ফসলে কীটনাশকের পরিমাণ এক চতুর্থাংশের চেয়েও কম থাকে৷ বিষাক্ত ধাতব উপাদানও কম থাকে৷ তাই এতে ক্যানসার প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট অনেক বেশি মাত্রায় পাওয়া যায়৷

প্রতিদিন পাঁচটি করে ফল খেতে পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা৷ আর এ পাঁচ ফলের মধ্যে যদি অরগ্যানিক খাবার থারে তাহলে তা কিছু বাড়তি স্বাস্থ্যগত সুবিধা যোগ করে, যা আরও দু'টি অতিরিক্ত ফল খাওয়ার মতো৷ গবেষকদলের প্রধান যুক্তরাজ্যের নিউক্যাসেল ইউনিভার্সিটির গবেষক প্রফেসর কার্লো লেইফার্ট জানান, পরিসংখ্যানগতভাবে কিছু অর্থবহুল পার্থক্য দেখা গেছে সাধারণ ও অরগ্যানিক খাবারের মধ্যে৷ বিশেষ করে অ্যান্ট-অক্সিডেন্টের হার শতকরা ১৯ থেকে ৬৯ ভাগ পর্যন্ত বেশি থাকে অরগ্যানিক খাবারে৷ এ গবেষণার জন্য বিশ্বব্যাপী পরিচালিত ৩৪৩টি সমীক্ষার ফলাফল সংগ্রহ করা হয়৷ এরপর বিভিন্ন ফল ও সবজির ক্ষেত্রে তা পর্যালোচনা করা হয়৷ তবে এ গবেষণার ফলাফল কিছু বিজ্ঞানী সমালোচনাও করেছেন৷ তাঁরা বলছেন, বিভিন্ন পরিবেশ ও ভূমিতে এ গবেষণাটি বিস্তারিতভাবে না করেই ফলাফল তুলনা করা হচ্ছে৷

Landwirtschaft in Asien
রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করলে প্রতিবছরই মাটির উর্বরতা হ্রাস পেতে থাকেছবি: AP


রাসায়নিক চাষের ফসলে রোগব্যাধি:
বাজার থেকে আমরা যেসব খাবার-দাবার ও সবজি কিনে খাই, তার প্রায় সবগুলোর মধ্যেই বিভিন্ন কৃত্রিম সার, রাসায়নিক মিশ্রিত থাকে৷ এর ক্ষতিকারক প্রভাব আমাদের সবার উপর পড়ছে৷ কৃত্রিম সার, রাসায়নিক দ্রব্য, ফরমালিন ইত্যাদির যথেচ্ছ ব্যবহারে ক্যানসার, ডায়াবেটিস, লিভারের ক্ষতি সাধনসহ নানাবিধ রোগব্যাধির প্রকোপ মারাত্মক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ বিশেষভাবে শিশুদের ওপর এর প্রভাব বেশ প্রবল৷ শিশুদের খাবার-দাবারের সাথে তাদের বিভিন্ন আচরণগত পরিবর্তনের সম্পর্ক রয়েছে৷ তাই অরগ্যানিক (কৃত্রিম সার ও রাসায়নিক মুক্ত) খাবার ও শাক-সবজি আমাদের নিজেদের জন্য তো দরকারই, শিশুদের জন্য এর প্রয়োজন আরও বেশি৷

বিজ্ঞানীদের মতে অরগ্যানিক ফুড অনেক বেশি পুষ্টিগুণ সমৃদ্ধ৷ গবেষণায় দেখা গেছে, যে জৈব খাদ্য বা অরগ্যানিক ফুড শরীরের চর্বি কমায় এবং পেশীর গঠনে সহায়তা করে৷

জৈব চাষে ফলন কেমন?

জৈব সার দিয়ে চাষ করলে প্রথম এক থেকে দু'বছর ফলন কিছুটা কম হবে এতে সন্দেহ নেই৷ তবে চার থেকে পাঁচ বছর পর রাসায়নিক সার দিয়ে চাষ করা জমির তুলনায় ফলন বেশি হবে৷ যে জমিতে সর্বশেষ রাসায়নিক সার ব্যবহার করে চাষাবাদ করা হয়েছে সেই জমি ন্যূনতম তিনবছর পতিত অবস্থায় ফেলে রাখলে বা পুনরায় রাসায়নিক সার প্রয়োগ ছাড়া চাষ করলেই অরগ্যানিক খাদ্য উৎপাদন করা সম্ভব৷ চাষাবাদে ব্যবহৃত বহুল প্রচলিত রাসায়নিক সারের অবশিষ্টাংশ তিন বছরে ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে৷

বাংলাদেশের অর্থনীতির মূল চাবিকাঠি হচ্ছে কৃষি৷ এ দেশের ৯০ শতাংশ কৃষকের কাছে মধ্য আশির দশকের আগ পর্যন্ত অরগ্যানিক কৃষি ছিল বেশ জনপ্রিয় তারপর নানা প্রলোভনে কৃষকরা বাধ্য হয়ে রাসায়নিক কৃষিতে ঝুঁকে পড়েছে নব্বইয়ের দশকে৷ বর্তমান বিশ্বে অরগ্যানিক কৃষিতে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে বটে, তবে বাংলাদেশে এর মাত্রা খুবই কম৷ ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অফ অরগ্যানিক এগ্রিকালচার মুভমেন্ট কৃষকদের জৈব উপায়ে ফসল উৎপাদনে সহায়তা করে৷

খরচ কম, জর্মির উর্বরতা বৃদ্ধি:
জৈবসার প্রয়োগ ও জৈব কীটনাশক প্রযুক্তি ব্যবহার করে ধানসহ বিভিন্ন ধরনের ফসল এবং সবজির উৎপাদন খরচ শতকরা ২৫-৩০ শতাংশ কমিয়ে আনা সম্ভব৷ জৈবসার ব্যবহার করলে ফসলের উৎপাদন খরচ রাসায়নিক সারের চেয়ে শতকরা ৫০-৬০ শতাংশ কম হয়৷ অরগ্যানিক খাবার ও শাক-সবজি হয়ত সামান্য ব্যয়বহুল৷ কারণ উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য এতে হরমোন, কৃত্রিম সার ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় না৷ সেই সাথে পোকামাকড় দমনের জন্য রাসায়নিক বিষ না দেয়ায় এবং পচন রোধের জন্য ফরমালিন না দেয়ার ফলে সংরক্ষণ ব্যয় বেশি৷

অমৃতা পারভেজ
অমৃতা পারভেজ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

রাসায়নিক সারের পরিবর্তে উচ্চ পুষ্টিমানসম্পন্ন প্রযুক্তিতে উৎপাদিত জৈব সার সবজি ও ধান গাছে প্রয়োজনীয় ইউরিয়া, পটাশ ও ফসফেট সারের জোগান দেয়৷ আধা-কম্পোস্ট গোবর, মুরগির বিষ্ঠা, ধানের কুঁড়া, মাছ-মুরগির পাখনা ও পরিপাকতন্ত্র তথা পরিত্যক্ত অংশ একসাথে করে জৈব কম্পোস্ট সার তৈরি করা হয়৷ জৈবসার প্রয়োগ করলে আর অতিরিক্ত ইউরিয়া, পটাশ ও টিএসপি সার প্রয়োগের প্রয়োজন হয়না৷ এছাড়া মাটির উর্বরতা ও স্বাস্থ্য দীর্ঘস্থায়ী হয়৷ উৎপাদিত ফসল হয় স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদ৷

অপরদিকে রাসায়নিক কীটনাশক ছাড়া পর্যায়ক্রমিক শস্য চাষ এবং মেহগনি, পীতরাজ, গাছ আলু ও নিমের নির্যাস ব্যবহার করে সবজি ও অন্যান্য ফসলের রোগবালাই দমন করা সম্ভব হয়েছে৷ জৈব পদ্ধতিতে জমিতে দীর্ঘ মূল ও স্বল্প দৈর্ঘ্যের মূল বিশিষ্ট সবজির সমন্বয় ঘটিয়ে মাটির উর্বরতা সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়েছে৷ কম খরচে শস্যে এ ধরনের জৈব কীটনাশক ব্যবহার করে একদিকে যেমন কৃষকদের অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব, তেমনি জনস্বাস্থ্যও রক্ষা করা সম্ভব৷ অথচ রাসায়নিক সার ও রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার করলে প্রতিবছরই মাটির উর্বরতা হ্রাস পেতে থাকে৷ বারি, ব্রি কর্তৃক উদ্ভাবিত নানা জৈব পদ্ধতির মাধ্যমে পোকামাকড় ও রোগ জীবাণু প্রতিরোধী ফসল উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা অর্জিত হয়েছে৷

দূরদর্শী পদক্ষেপের মাধ্যমে রাসায়নিক কৃষি বর্জন করে প্রাণ-বৈচিত্র্য নির্ভর জৈব কৃষির মাধ্যমে খাদ্যে সার্বভৌমত্ব অর্জন সম্ভব৷

অরগ্যানিক খাদ্য বা জৈব চাষ সম্পর্কে আপনাদের মতামত জানান আমাদের, লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য