1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ঢাকায় বৃষ্টি, প্রশান্তির চেয়ে ভোগান্তি

৪ জুলাই ২০১৭

ঢাকা শহরে বর্ষাকালটা মানুষের জন্য যতটা না আশীর্বাদ, তার চেয়ে বেশি অভিশাপ৷ এক দু’ঘণ্টার বৃষ্টিতে তলিয়ে যায় রাস্তাঘাট, তৈরি হয় যানজট, ঘটে দুর্ঘটনা৷ ঢাকাবাসীর কি এই অভিশাপ থেকে মুক্তি নেই?

https://p.dw.com/p/2flQH
ছবি: picture-alliance/dpa/NurPhoto/K. Sumon

২০০৪ বা ২০০৫ সালের ঘটনা৷ তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আমি৷ থাকি ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে৷ হলে থাকার কারণে যেটা হয়, পরিবার পরিজন ছেড়ে দূরে থাকায় ছোট ছোট আনন্দের ঘটনাই হলের মেয়েদের জীবনে খুশির বন্যা বইয়ে দেয়৷ তীব্র গরমের পর বর্ষায় এক পশলা বৃষ্টি ছিল এমন একটি বিষয়৷ টানা বৃষ্টিতে হলের সামনে কিছুটা পানি জমে যায়৷ ছুটির দিন হওয়ায় মেয়েরা সেই পানিতে গিয়ে আনন্দে সবাই মিলে লাফালাফি করে, কেউ কেউ ছাদে উঠে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকে৷ কিন্তু সন্ধ্যা নামার সাথে সাথে সেই আনন্দটা অনেকটাই মলিন হয়ে যায়৷ কেননা, হলের গেটের পাশে বড় বড় দুটি ড্রেনে আবর্জনা জমে বৃষ্টির পানি আটকে যায়৷ ফলে হলের সামনে বাড়তে থাকে পানি৷

মধ্যরাতে হঠাৎ চেঁচামেচিতে ঘুম ভেঙে যায়৷ আমি দোতলায় থাকতাম৷ বারান্দায় বেরিয়ে দেখি একতলায় পানি উঠেছে৷ মেয়েরা তাদের জিনিসপত্র সরাতে ব্যস্ত৷ কয়েক ঘণ্টা পর হলের বিদ্যুৎ চলে গেল৷ বন্ধ হয়ে গেল পানি সরবরাহ৷ ভোর হতেই হল ছাড়ার নির্দেশ দেয় কর্তৃপক্ষ৷ সবাই ঢাকা শহরে পরিচিতদের বাসায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে থাকি৷ অনেকেই তাদের অভিভাবককে ডেকে পাঠায়, যাতে তাঁরা এসে নিয়ে যান৷ আমার কয়েকজন বান্ধবী সিদ্ধান্ত নেন ৫/৬ জন করে এক একটি আত্মীয় বা পরিচিত পরিবারের বাসায় থাকবেন৷ কারণ, ঢাকা শহরে সবারই তো পরিচিত মানুষ নেই৷ আমি উত্তরায় ভাইয়ার বাসায় যাব ঠিক করলাম৷ হলের ভেতর থেকে বাইরের অবস্থা টের পাওয়া যাচ্ছিল না৷ একতলার পানি পেরিয়ে বাইরে বেরিয়ে দেখি, হলের সামনেটা নদীতে পরিণত হয়েছে৷ সেটা পার হতে হলে কোনো বাহন ছাড়া উপায় নেই৷ আর আমাকে যেতে হবে সেই উত্তরা৷ অনেকেই নীলক্ষেত থেকে ভ্যান বা রিক্সা ডেকে এনেছিলেন৷ আমার এক বন্ধুকে ফোন করার পর সে-ও একটা ভ্যান নিয়ে হাজির হলো৷ ভ্যানে ওঠার পরও রক্ষা নেই৷ এত পানি যে পা ভিজে যায়৷ রাস্তায় নেই কোনো বাস, নেই কোনো গাড়ি৷ কয়েকটা সিএনজিতে পানি ঢুকে বিভিন্ন জায়গায় থমকে আছে৷ এ যেন এক বিচিত্র জনপদ৷ গতকালও সকালে যেখানে নিউমার্কেটের সামনে ছিল বহু মানুষ, আজ সেই এলাকা পানিতে থই থই৷ নিউমার্কেটের ভেতর থেকে রিকশায় করে অনেক দোকানিকে তাঁদের জিনিসপত্র নিয়ে যেতে দেখলাম৷ চেহারার বিধ্বস্ত অবস্থা দেখেই টের পাওয়া যায় কী পরিমাণ লোকসান গুণতে হবে তাঁদের৷

সিএনজি চালকদেরও একই অবস্থা৷ কারণ, তারা দিন আনেন দিন খান৷ দিনে একটা নির্দিষ্ট টাকা না উঠলে মালিককে ভাড়া দেবেন কিভাবে? অসহায় এ মানুষগুলোর কষ্টের কাছে আমাদের কষ্ট তো কিছুই না৷ নিউমার্কেটের সামনে রাখা ময়লা আবর্জনার স্তূপ বৃষ্টির পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে৷ বের হচ্ছে তীব্র গন্ধ৷ বলাকা সিনেমার উল্টো দিকে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করতে লাগলাম উত্তরা যাওয়ার কোনো বাস বা সিএনজি পাওয়া যায় কিনা৷ কিন্তু কিসের কী! ভ্যানওয়ালা তখনও আমাদের পেছনে দাঁড়িয়ে, জানালেন, উনি নিজেই পৌঁছে দেবেন ফার্মগেট পর্যন্ত৷ সেখানে পানি থাকবে না বলে ওনার ধারণা৷ কিছুই করার নেই৷ পৌঁছাতে হবে উত্তরায়৷ তাই বন্ধুকে নিয়ে উঠে পড়লাম ভ্যানে৷

অমৃতা পারভেজ
অমৃতা পারভেজ, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

রাস্তায় যেতে যেতে দেখতে পেলাম মানুষের দুর্ভোগের আরও চিত্র৷ নিউমার্কেটের কাঁচা বাজারে পানি ঢুকে পড়েছে৷ সেখানকার বিক্রেতারা মাথায় হাত দিয়ে বসে পড়েছেন৷ অন্যদিকে, হকার্স মার্কেটেরও একই অবস্থা৷ কাপড় নিয়ে এদিক-ওদিক দৌড়াদৌড়ি করছেন দোকানিরা৷ কী উদভ্রান্ত অবস্থা সবার৷ হঠাৎ চোখের সামনেই একটা রিকশা উল্টে গর্তে পড়ে গেল, রিকশায় এক নারী ও একটি ছোট ছেলে ছিল, তারা পড়ে গেল পানিতে৷ রিকশাওয়ালাই টেনে তুললেন তাদের৷ কিন্তু ততক্ষণে তারা পানি আর নোংরায় মাখামাখি৷ 

এলিফ্যান্ট রোড দিয়ে যেতে গিয়ে দেখি অবস্থা আরও খারাপ৷ কিছুদিন আগেই রাস্তাটা খোঁড়া হয়েছে৷ তাই বিভিন্ন জায়গায় গর্ত সৃষ্টি হয়েছে৷ যাঁরা রিকশা চালাচ্ছেন, তাঁরা জানেন না ঠিক কোথায় গর্ত রয়েছে৷ তাই ঘটেছে বেশ কয়েকটি  দুর্ঘটনা৷ পুরো বছরজুড়েই রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে বিদ্যুৎ, গ্যাসের লাইন বসাতে খোঁড়াখুঁড়ি চলতে ই থাকে৷

জলাবদ্ধতা থেকে বাঁচতে যাঁরা শুকনো অলিগলিতে ঢুকেছেন, আটকে গেছেন যানজটে৷ ফলে অবস্থা বেগতিক৷ রওনা হয়েছিলাম বেলা ১১ টায়৷ কিন্তু ফার্মগেট পৌঁছাতে লেগে গেল তিন ঘণ্টা৷ অবশেষে সেখান থেকে বাস নিয়ে পৌঁছে গেলাম উত্তরায়৷

এটা কেবল একটা দিনের চিত্র৷ তা-ও প্রায় ১২/১৩ বছর আগের কথা৷ বর্তমানের ঢাকায় মানুষ আরও বেড়েছে৷ তাই যেখানে-সেখানে আবর্জনা ফেলার হারও বেড়েছে৷ বিশেষ করে ড্রেনে৷ ফলে ড্রেন বন্ধ হয়ে অতিরিক্ত পানি নদী নালাতে গিয়ে পড়ছে না৷ ফলে একটু বৃষ্টিতেই সৃষ্টি হচ্ছে জলাবদ্ধতার৷ অপরিকল্পিত নগরায়ন এবং মানব আচরণই এই সমস্যার অন্যতম কারণ৷ তাই নগরপিতাকে নিতে হবে পরিকল্পিত পদক্ষেপ আর জনগণকে হতে হবে সচেতন৷ এছাড়া এই অভিশাপ থেকে মুক্তির নেই কোনো উপায়৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য