1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পাহাড়ে আধিপত্যের কোন্দলেই এমন হত্যাকাণ্ড?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৯ মার্চ ২০১৯

১৪ ঘণ্টা ব্যাবধানে রাঙামাটিতে দু'টি ঘটনায় ৮ জনকে হত্যার নেপেথ্যে কি পাহাড়ের আধিপত্যের রাজনীতি? নাকি অন্যকিছু? পুলিশ বলছে, মোটিভ তাদের কাছে পরিস্কার, তবে তদন্তের স্বার্থে এখন তারা প্রকাশ করছেন না৷

https://p.dw.com/p/3FJYt
Bangladesch Dhaka Polizei sichert Vorbereitungen für Parlamentswahl
ছবি: Imago/Zumapress/K. Salahuddin Razu

রাঙামাটির বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঙ্গচঙ্গ্যাকে মঙ্গলবার সকাল ৯টার দিকে দুর্বৃত্তরা গুলি করে হত্যা করে৷ উপজেলার আলিক্ষ্যং এলাকায় এই ঘটনা ঘটে৷ আগের দিন সন্ধ্যা ৭টার দিকে একই জেলার বাঘাইছড়িতে দুর্বৃত্তরা ব্রাশফায়ারে দু'জন নির্বাচন কর্মকর্তাসহ সাতজনকে হত্যা করে৷

কারা দায়ী?

রাঙামাটি জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজী মুছা মাতব্বর দাবি করেছেন, ‘‘বিলাইছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি সুরেশ কান্তি তঙ্গচঙ্গ্যাকে হত্যার জন্য পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি দায়ী৷ আওয়ামী লীগকে দুর্বল করার জন্যই এই হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে৷''

সোমবার অনুষ্ঠিত নির্বাচনে বিলাইছড়ি উপজেলায় পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি সমর্থিত প্রার্থী বীরোত্তম তঞ্চঙ্গ্যার কাছে পরাজিত হয়েছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী জয়সেন তঞ্চঙ্গ্যা৷ হাজী মুছা মাতব্বর দাবি করেন, ‘‘তারা জয়ের পর ওই এলাকায় আওয়ামী লীগ বিনাশে নেমেছে৷''

নির্বাচনে অংশগ্রহণকারীদের দ্বন্দ্বের ফলেই এই হত্যাকান্ড ঘটেছে: মাইকেল চাকমা

তবে জনসংহতি সমিতির জেলা সম্পাদক নীলোৎপল খীসা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তার দলের জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেন৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা এই ধরনের রাজনীতির চর্চা করি না৷ এসব ঘটনার সঙ্গে আমাদের জড়ানোর চেষ্টা রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থ করার হীন চেষ্টা৷''

সোমবার রাঙামাটিতে ভোট শেষে ব্যালট বাক্সসহ নির্বাচনি সরঞ্জাম নিয়ে উপজেলা সদরে ফেরার পথে দুর্বৃত্তদের গুলিতে দুই নির্বাচনি কর্মকর্তাসহ সাতজন নিহত হন৷ নিহতদের মধ্যে চারজন আনসার সদস্যও ছিলেন৷ আনসারদের মধ্যে দুই জন নারী৷ সাজেক ইউনিয়নের একটি কেন্দ্রের ফল ঘোষণা শেষে স্থানীয় চান্দের গাড়িতে করে বাঘাইছড়ি উপজেলা সদরে ফিরছিলেন তাঁরা৷ বাঘাইছড়ির নয় মাইল এলাকায় এ হামলার ঘটনা ঘটে৷

স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়, বাঘাইছড়ি উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে জনসংহতি সমিতি (জেএসএস)-এর বড়ঋষি চাকমা  এবং জনসংহতি সমিতি (এমএন লামা)-র  সুদর্শন চাকমা প্রার্থী ছিলেন৷ বাঘাইছড়ি এবং নানিয়ারচরে এম এন লারমার প্রার্থীর সমর্থনে আওয়ামী লগি কোনো প্রার্থী দেয়নি৷ কিন্তু অনিয়মের অভিযোগ এনে সকালে ভোট বর্জনের ঘোষণা দেন জনসংহতি সমিতির বড়ঋষি৷ অপরদিকে জেএসএস এবং ইউপিডিএফ এই নির্বাচনে এক হয়ে কাজ করে৷ ইউপিডিএফ-এর  ওই এলাকায় প্রভাব থাকার পরও তারা কোনো প্রার্থী দেয়নি৷ হামলাস্থল  নয় মাইল এলাকাটি ইউপিডিএফ অধ্যুষিত৷ তাই এই হামলার জন্য ইউপিডিএফকে দায়ী করা হচ্ছে৷

দু’টি হত্যাকান্ডের মোটিভ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছি: আলমগীর কবীর

ইউপিডিএফ-এর মুখপাত্র মাইকেল চাকমা ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাদের কেউ এই হত্যাকাণ্ডে জড়িত নয়৷ আমরা উপজেলা নির্বাচনেও অংশ নেইনি৷ যারা নির্বাচনে অংশ নিয়েছে, তাদের দ্বন্দ্বের ফলেই এই হত্যাকাণ্ড ঘটেছে৷ এর দায় সরকার কোনোভাবেই এড়াতে পারে না৷ যারা হত্যাকাণ্ডে জড়িত, তারা এখন নিজেদের বাঁচাতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে আমাদের ওপর দায় চাপাচ্ছে৷'' 

রঙামাটি জেলার পুলিশ সুপার আলমগীর কবীর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দু'টি ঘটনায় এখনো কোনো মামলা হয়নি৷ কাউকে গ্রেপ্তারও করা হয়নি৷ নিহতদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্ত এবং দাফন কাফন নিয়েই আমরা ব্যস্ত আছি৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ দু'টি ঘটনাতেই আমরা হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা পেয়েছি৷ তবে তদন্তের স্বার্থে এখন তা প্রকাশ করব না৷''

তবে তিনি বলেন, ‘‘পাহাড়ে স্থানীয় রাজনৈতিক গ্রুপগুলোর মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে দ্বন্দ্ব এবং সংঘাত চলে আসছে৷ বাঘাইছড়ির হত্যাকাণ্ড তারই ধারাবাহিকতা হতে পারে৷ আর বিলাইছড়ির ঘটনায় তো আওয়ামী লীগ নেতারা প্রকাশ্যেই একটি গ্রুপকে দায়ী করেছে৷''

দু’টি ঘটনাই স্থানীয় দলগুলোর আধিপত্যের লড়াইয়ের ফল: জিয়াউল হক জিয়া

রাঙামাটির সাংবাদিক জিয়াউল হক জিয়া দুটি ঘটনার পরই ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন৷ হত্যাকাণ্ড নিয়ে কথা বলেছেন স্থানীয় লোকজন এবং পুলিশ প্রশাসনের সঙ্গে৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়েছে দু'টি ঘটনাই দীর্ঘদির ধরে চলে আসা স্থানীয় দলগুলোর আধিপত্যের লড়াইয়ের ফল৷ আর দু'টি ঘটনায় জেএসএস এবং ইউপিডিএফ জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে৷''

কত গ্রুপ, কেন গ্রুপ?

পাহাড়ে এখন চারটি পরস্পরবিরোধী  রাজনৈতিক গ্রুপ সক্রিয়৷ আর এই গ্রুপগুলো সৃষ্টি হয় শান্তি চুক্তির পরে৷ শান্তি চুক্তির পক্ষ-বিপক্ষ ইস্যুতে ২০০৯ সালে জ্যোতিরিন্দ্র বোধিপ্রিয় লারমা ওরফে সন্তু লারমার নেতৃত্বাধীন পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (জেএসএস) ভেঙে পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতি (এমএনলারমা ) নামের আরেকটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে৷ 

অন্যদিকে, ২০ বছর আগে পার্বত্য চট্টগ্রামে পূর্ণস্বায়ত্তশাসন আন্দোলনের দাবিতে গঠিত ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (ইউপিডিএফ) ২০১৭ সালের নভেম্বরে দুই ভাগ হয়ে যায়৷ নতুন অংশ ইউপিডিএফ-গণতন্ত্র নামে পরিচিতি পায়৷ তারা পূর্ণস্বায়ত্তশাসনের দাবি থেকে কিছুটা সরে এসে শান্তি চুক্তির পূর্ণ বাস্তবায়ন দাবি করে৷ পাহাড়ে এই চারটি সংগঠন পরস্পরের বিরুদ্ধে সক্রিয়৷ গত ১৫ মাসে তাদের মধ্যে দ্বন্দ্ব সংঘাতে ৫৮ জন নিহত হয়েছেন বলে সংবাদ মাধ্যমের খবর৷ তারা আধিপত্য টিকিয়ে রেখে অর্থনৈতিক কারণে সংঘাতে জড়িয়ে পড়ে বলে স্থানীয় সূত্রগুলো জানায়৷

১৫ মাসে ৫০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ডের কোনো বিচার হয় না: সঞ্জীব দ্রং

আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক সঞ্জীব দ্রং ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘পার্বত্য শান্তিচুক্তি বাস্তবায়ন না হওয়ার কারণেই এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ নানা গ্রুপ সৃষ্টি হয়েছে, সৃষ্টি হয়েছে পারস্পরিক সন্দেহ আর অবিশ্বাস৷ পার্বত্য চট্টগ্রামের আদিবাসীরা মনে করে শান্তি চুক্তি আর বাস্তবায়ন হবে না৷ তাদের মধ্যে এখন গভীর হতাশা৷ আত্মনিয়ন্ত্রণের অধিকার পাওয়ার কোনো সম্ভাবনা  না দেখে আধিপত্যের সংঘাতে নেমেছে তারা৷''

তিনি বলেন, ‘‘পার্বত্য চট্টগ্রামে এই যে হত্যা, সংঘাত, ১৫ মাসে ৫০টিরও বেশি হত্যাকাণ্ড এর কোনো প্রতিকার ও বিচার হয় না৷ বিচার হয় না নারী নির্যাতন ও অপহরণের৷ এই বিচারহীনতার কারণেও যতই দিন যাচ্ছে পরিস্থিতি ততই খারাপ হচ্ছে৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য