1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

ভয় ছড়াচ্ছে কারা?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১২ আগস্ট ২০১৮

নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের সময় ‘গুজব ছড়ানোর’ অভিযোগে ফেসবুক ও টুইটারেরসহ ৪৫টি লিংক-এর বিরুদ্ধে তথ্যপ্রযুক্তি আইনে মামলা হয়েছে৷ গ্রেপ্তার করা হয়েছে আলোচিত্রী শহীদুল আলম ও অভিনেত্রী নওশাবাসহ কয়েকজনকে৷

https://p.dw.com/p/331z2
ঢাকায় ছাত্র বিক্ষোভ
ছবি: DW/S. Kumar

পুলিশের সঙ্গে এই প্রক্রিয়ায় যুক্ত হয়েছে ছাত্রলীগও৷ তারা ‘গুজব ছড়ানোর' অভিযোগে বেশ কয়েকজন ছাত্রকে ধরে পুলিশে দিয়েছে৷ ছাত্রলীগ দাবি করেছে তারা এরইমধ্যে ৭০০ ফেসবুক আইডি চিহ্নিত করেছে যারা ‘গুজব ছড়ায়'৷ আর এই নিয়ে এখন অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট, ইউটিউবার ও ব্লগারদের মধ্যে এক ধরনের আতঙ্ক বিরাজ করছে৷

‘‘বাক স্বাধীনতাতো পুরোপুরি নাই’’

বাংলাদেশের তরুণ ও জনপ্রিয় ইউটিউবারদের একজন নর্থ সাউথ ইউনিভার্সিটির সালমান মোহাম্মদ মুক্তাদির৷ শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলাকালে পুলিশ তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যায়৷ পরে অবশ্য তাঁকে ছেড়ে দেয়া হয়৷ সালমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আন্দোলনের সময় আমার ভূমিকা ছিল শান্তি স্থাপন৷ ছাত্ররা পুলিশকে যেন শত্রু না ভাবে৷ আবার পুলিশও যেন ছাত্রদের শত্রু না ভাবে৷ তারপরও আমাকে ৪ অগাস্ট রাতে গোয়েন্দা কার্যালয়ে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নেয়া হয়৷'' 

তিনি বলেন, ‘‘আমরা যাই বলিনা কেন বাক স্বাধীনতাতো পুরোপুরি নাই৷ আমরা যা বলতে চাই তা সবসময় বলতে পারিনা৷''

বাংলাদেশের অন্যতম জনপ্রিয় এই ইউটিউবার আরো বলেন, ‘‘এখন এক ভয় বা চাপতো রয়েছেই৷ একটা বাধ্যবাধকতার সৃষ্টি হয়েছে৷ শুরুর দিন থেকে সবাই কথা বলেছেন৷ শিল্পীরা কথা বলেছেন৷ সমাজের সবাই কথা বলেছেন৷ তারা হঠাৎ করে এখন চুপ করে গেলেন কেন?''

‘‘আমাকে অনেকে অনেক ধরনের হুমকি দিয়েছেন’’

সাইফুল বাতেন টিটো একজন অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট এবং লেখক ও ব্লগার৷ তিনি তাঁর ফেসবুকে এবার ছাত্রদের ‘নিরাপদ সড়ক চাই' আন্দোলন নিয়ে লেখালেখি করেছেন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ভয়ের নানান দিক রয়েছে৷ ফেসবুকের ইনকক্সে আমাকে অনেকে অনেক ধরনের হুমকি দিয়েছেন৷ লেখালেখি বন্ধ করতে বলেছেন৷ পোস্ট সরিয়ে নিতে বলেছেন৷ এখনো এই চাপ অব্যাহত আছে৷''

তিনি বলেন, ‘‘পুলিশের দিক দিয়েও আমরা আতঙ্কে আছি৷ অনলাইন এ্যাক্টিভিস্ট অপরাজিতা সংগীতা হয়রানির শিকার হয়েছেন৷ বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে যা বলছি তার অনেকটা সরকারের বিরুদ্ধে যায়৷ তথ্য প্রযুক্তি আইনের ৫৭ ধারা বা ডিজিটাল আইনের ৩২ ধারা কোনোটিই আমাদের জন্য নিরাপদ নয়৷'' 

ব্লগার এবং লেখক আইরিন সুলতানা অবশ্য অন্য ধরনের এক ভয়ের কথা ভাবেন৷ তিনি বলেন, ‘‘শিক্ষার্থীদের এই আন্দোলনকে আমরা অভিভাবকরা সঠিকভাবে গাইড করতে পারিনি৷ ফলে আমরা এখানে মারামারির ঘটনা দেখলাম৷ প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ২২ জন ছাত্রকে আটক করা হল৷ রিমান্ডে নেয়া হল৷ তারা কারাগারে গেল৷''

‘‘আরো কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে’’

তিনি বলেন, ‘‘ছাত্রলীগ বা ছাত্রদল বা দুর্বৃত্ত যাই বলিনা কেন তারা একটা অদ্ভূত পরিস্থিতির সৃষ্টি করলো৷ রক্তারক্তি হল৷ ব্লগার এ্যাক্টিভিস্টরা আতঙ্কিত হলেন কিনা তারা চেয়েও বড় ব্যাপার হল এই শিক্ষার্থীরা একটি সরল আন্দোলন শুরু করেছিল৷ একটি প্রয়োজনীয় আন্দোলনে নেমেছিল৷ যা আমরা পারিনি৷ কিন্তু আমরা যার যার জায়গা থেকে সেটাকে নিজেদের স্বার্থে নষ্ট করলাম৷ সংঘাতে নিয়ে গেলাম৷ এটা এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি করেছে৷ যার ছাপ অনেক গভীরে যাবে৷''

সোশ্যাল অ্যাক্টিভিস্ট অপরাজিতা সংগীতাকে ডিবি অফিসে নিয়ে যাওয়া হয় ৫ অগাস্ট৷ পরে তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ছেড়ে দেয়া হয়৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমাকে ফোন করলেই আমি ডিবি অফিসে যেতাম৷ কিন্তু আমাকে যে আয়োজন করে ধরে নিয়ে যাওয়া হয় তা আমাকে বিব্রত করেছে৷ আমাকে ছেড়ে দেয়ার সময় বলা হয়েছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যায়নি৷ কিন্তু কী অভিযোগ তা বলা হয়নি৷'' 

‘‘এটা এই শিক্ষার্থীদের মধ্যে একটা আতঙ্ক তৈরি করেছে’’

তিনি বলেন, ‘‘আমি নানা ধরনের সামাজিক কর্মকাণ্ড করি৷ লেখালেখি করি৷ ছাত্রদের আন্দোলনেও আমার নৈতিক সমর্থন ছিল৷ আমাকে যেভাবে ধরে নেয়া হল তাতে ভয়ের সৃষ্টি হয়৷ আমার বন্ধুদের মাঝে আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘ছাত্রলীগ ফেসবুক আইডি সনাক্ত করছে এটা নিয়ে কোনো মন্তব্য করে চাইনা৷ তবে আমার প্রশ্ন, তারা কি পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে পারছেন না?''

এদিকে, সাইবার ক্রাইম ইউনিট সূত্র জানা যায়, পুলিশ প্রথমে ২৯টি লিংকের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে৷ পরে আরো ১৬টি লিংকের বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা করেছে৷ এছাড়া আরো চারটি মামলা করা হয়েছে আলাদাভাবে ব্যক্তির বিরুদ্ধে৷ মোটের উপর, গোয়েন্দারা আরো কিছু ফেসবুক পেজ, আইডি এবং লিংক নজরদারিতে রেখেছে৷ 

‘‘আমাকে যেভাবে ধরে নেয়া হল তাতে ভয়ের সৃষ্টি হয়’’

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার মাসুদুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের সুফলের সঙ্গে কুফলও আছে৷ এর মাধ্যমে গুজব ছড়ানোসহ নানা অপরাধ করা হয়৷ কেউ কেউ আবার না বুঝে উৎসাহী হয়ে লাইক, কমেন্ট এবং শেয়ার দেন৷ তাদের আমরা সতর্ক এবং দায়িত্বশীল হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি৷

তিনি বলেন, ‘‘যারা টার্গেট নিয়ে উদ্দেশ্যমূলকভাবে একাজ করছেন কাদের কয়েকজনকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনা হয়েছে৷ আরো কয়েকজনকে আইনের আওতায় আনার কাজ চলছে৷ তবে যারা এসব কাজে জড়িত নন, তাদের আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নাই৷''