1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

বাংলাদেশে আসছে কার্বন ট্যাক্স

২৩ মে ২০১৭

বাংলাদেশের আগামী অর্থ বছরের বাজেটে কার্বন ট্যাক্স আরোপ করা হতে পারে৷ গত মার্চে অর্থমন্ত্রী এমন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন৷ এবার জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)-এর চেয়ারম্যান সরাসরি এই ট্যাক্স বা কর আরোপের কথা বললেন৷

https://p.dw.com/p/2dRxT
Abwracken von Schiffen in Geddani Pakistan
ছবি: Roberto Schmidt/AFP/GettyImages

মঙ্গলবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান নজিবুর রহমান বলেন, ‘‘এই কর ‘গ্রিন’ প্রকল্পের একটি অংশ৷ চলতি বছরের বাজেটে এটি যোগ করা হতে পারে৷’’ এবার বাজেটে এই কর প্রচলন হলে এ বছরের ১ জুলাই থেকে তা কার্যকর হবে৷ তবে এটা কীভাবে এবং কী হারে আরোপ করা হবে, তা এখনো স্পষ্ট নয়৷ তবে জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহারের ওপর এই কর আরোপ করা হবে বলে জানা গেছে৷

বিশ্বব্যাংকের পরিসংখ্যান অনুযায়ী, বাংলাদেশ জনপ্রতি ০ দশমিক ৪৪ টন কার্বন ডাই-অক্সাইড উৎপন্ন করে৷ যুক্তরাষ্ট্রে এর পরিমাণ ১৬ দশমিক ৪ টন, অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ দশমিক ৩ টন ও কাতারের ৪০ দশমিক ৫ টন৷

ব্যবসায়ী এবং পরিবেশবাদীদের স্বাগত

জানালেও এর মধ্যে ফাঁক আছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)-এর সাধারণ সম্পাদক এম এ মতিন৷ তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এতে কার্বন নিঃসরণ কতটুকু কমবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান, কারণ, ব্যবসায়ী বা শিল্প মালিকরা এই ট্যাক্স ক্রেতা বা সাধারণ মানুষের ওপর চাপিয়ে দেবেন৷ যতটুকু কর আরোপ করা হবে তা শিল্প মালিকরা তাদের উৎপাদন খরচের মধ্যে ধরে পন্যের দাম নির্ধারণ করবে৷ ফলে তাদের ওপর কোনো চাপ পড়বে বলে মনে হয় না৷’’

এতে কার্বন নি:সরণ কতটুকু কমবে তা নিয়ে আমি সন্দিহান: এম এ মতিন

তিনি বলেন, ‘‘যদি এমন হতো একটি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দিয়ে বলত যে, প্রথম বছর কতটুকু কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে, দ্বিতীয় বছরে কত৷ এভাবে হয়ত পঞ্চম বছরে মাত্রা অনুযায়ী নিঃস্বরণ বন্ধ না হলে কারখানা বন্ধ করে দেয়া হবে৷ তা হলে হয়ত কাজে দিত৷ আর একই সঙ্গে করও আরোপ করা যেত৷’’

পরিবেশবাদীরা মনে করেন, বৈশ্বিক উষ্ণতা ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস কমাতে প্যারিস চুক্তির লক্ষ্য বাস্তবায়নে হয়তো নতুন এই কর খুব বেশি ভূমিকা রাখবে না৷

বাংলাদেশ ফেডারেশন চেম্বার্স অফ কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি (এফবিসিসিআিই) প্রেসিডেন্ট আব্দুল মাতলুব আহমাদ রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমাদের যতটা সম্ভব কার্বন নিঃসরণ কমাতে হবে৷ কর আরোপই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে কার্যকরী পদক্ষেপ৷ কর আরোপে শুধু জ্বালানির দামই বাড়বে না, বরং নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারে সবাইকে উৎসাহিত করবে৷’’ তিনি বলেন, ‘‘সরকার যদি পরিবেশবান্ধব নবায়নযোগ্য জ্বালানি আমদানি করতে চায় তবে দূষণকারীদের উপর কর আরোপ করতে হবে৷’’

আর পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)-এর চেয়ারম্যান আবু নাসের খান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘গ্রীন ট্যাক্স প্যাকেজের আওতায় এই কার্বন ট্যাক্স আরোপের সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখি৷ তবে দেখতে হবে এই ট্যাক্স কোন খাতে খরচ হয়৷ এটা যদি সরকারের রাজস্ব আদায় বাড়ানোর কোনো কৌশল হয়, তাহলে খুব বেশি কাজে আসবে না৷ এটা পরিবেশ রক্ষার কাজে ব্যয় করতে হবে৷’’

কার্বন ট্যাক্স আরোপের সিদ্ধান্তকে আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখি: আবু নাসের খান

তিনি আরো বলেন, ‘‘এই ট্যাক্স হতে হবে উচ্চহারে এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানিকে উৎসাহ দিতে হবে৷’’

বিশেষজ্ঞরা রয়টার্স বলেন, ‘‘কার্বন করের কারণে জীবাশ্ম জ্বালানির দাম বেড়ে যাবে৷ এটাই জলবায়ু মোকাবেলায় সবচেয়ে সহজ পদক্ষেপ হতে পারে৷ কিন্তু কখনো কখনো এটি রাজনৈতিকভাবে অন্যরকম ফল বয়ে নিয়ে আসে৷ শুধুমাত্র অনুন্নত দেশগুলোতে জ্বালানির দাম বেড়ে যায়, যেটা রাজনৈতিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ৷’’

পেনসিলভিনিয়ায় লক হ্যাভেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলাদেশি অধ্যাপক মো. খালেকুজ্জামান রয়টার্সকে বলেন, ‘‘আমার মনে হয়, কার্বন নিঃসরণের ফলে যারা লাভবান হচ্ছে তাদেরই কর্পোরেট দায়বদ্ধতার আওতায় এই কর দেওয়া উচিত৷ সাধারণ মানুষদের উপর এই চাপ দেওয়া ঠিক হবে না৷’’

তিনি মনে করেন, কার্বন কর আরোপের পাশাপাশি নবায়নযোগ্য জ্বালানি ব্যবহারের বিষয়টিও আরও গুরুত্বের সঙ্গে দেখা উচিত সরকারের৷

চলতি মাসের প্রথম দিকে ঢাকায় অনুষ্ঠিত জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী এম এ মুহিত বলেন, ‘‘জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় আমাদের অবদান হয়তো খুবই সামান্য৷ কিন্তু আমরাই সবচেয়ে ভুক্তভোগী দেশগুলোর একটি৷ আর এই সমস্যার কারণে জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বিশ্বের সবচেয়ে কার্যকরী প্রকল্প রয়েছে আমাদের৷ অন্য কোথাও এমন প্রকল্প দেখা যায়নি৷’’

জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় বৈশ্বিক সহায়তা চাওয়ার পাশাপাশি নিজস্ব অর্থায়নে বেশকিছু প্রকল্প চালু রেখেছে বাংলাদেশ৷ নিচু অঞ্চলে অবস্থান করা বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে বড় হুমকিই সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি৷ এতে করে ঘূর্ণিঝড়, বন্যা, খরাসহ অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মুখোমুখি হতে হয় বাংলাদেশকে৷ জলবায়ু মোকাবেলায় উদ্ভাবনী দক্ষতার জন্য বাংলাদেশ এখন বিশ্বে নেতৃস্থানীয় পর্যায়ে রয়েছে৷

প্রিয় পাঠক, আপনি কিছু বলতে চাইলে লিখুন নীচে মন্তব্যের ঘরে...