1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘বিশ্বের সাতটি টক শো’র একটি তৃতীয় মাত্রা’

সমীর কুমার দে ঢাকা
২৩ অক্টোবর ২০১৮

বাংলাদেশের প্রথম টক শো তৃতীয় মাত্রা৷ এর মাধ্যমেই ২০০৩ সালে দেশে টক শো যাত্রা শুরু করে৷ দেশের সবচেয়ে পুরনো ও জনপ্রিয় অনুষ্ঠানের গল্প ডয়চে ভেলেকে শুনিয়েছেন অনুষ্ঠানের সঞ্চালক জিল্লুর রহমান৷

https://p.dw.com/p/36tG4
Zillur Rahman
ছবি: Zillur Rahman

ডয়চে ভেলে: তৃতীয় মাত্রা কীভাবে শুরু হয়েছিল?

জিল্লুর রহমান: এটা শুরু হয়েছিল ২০০৩ সালে৷ তখন পার্লামেন্ট খুব একটা কার্যকর ছিল না৷ বিরোধী দল খুব একটা অ্যাকটিভও ছিল না৷ তাঁদের সংসদের প্রতি আগ্রহ ছিল কম৷ সেই সময় টেলিভিশনে টক শো বলতে যা বোঝায়, তাও ছিল না৷ যেগুলো ছিল সেগুলো একটা আলোচনা অনুষ্ঠানের মতো করে হতো৷ তখন আমি একটা পাইলট প্রজেক্টের মতো দুই-একটা টক শো করলাম৷ অপজিশন এবং সরকারি দল সবাইকে নিয়ে কয়েকটি করার পর আমার মনে হলো, এটা আমি করতে পারি৷ তখন সাগর ভাইয়ের সঙ্গে কথা হলো৷ তিনি অনুমতি দিলেন যে এমন একটা অনুষ্ঠান করা যায়৷ এরপর মূল কাজ শুরু করলাম৷ আসলে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার বিষয়টি মাথায় রেখেই এবং সব পক্ষের মানুষ যেন এক টেবিলে বসতে পারেন সেই চিন্তা থেকেই এই অনুষ্ঠানটির যাত্রা শুরু হয়৷

এমন একটি অনুষ্ঠানের চিন্তা কীভাবে আপনার মাথায় এসেছিল?

এটা কিন্তু বিশ্বের অন্যান্য দেশে আছে৷ এটা যে নতুন কনসেপ্ট তা না৷ বাংলাদেশে যেহেতু পলিটিক্যাল ডিবেটের কোনো প্ল্যাটফর্ম ছিল না, সে কারণে আমরা এই সুযোগটি নিয়েছি৷ এটা পার্লামেন্টে হলেই সবচেয়ে ভালো হতো কিন্তু সেখানে যেহেতু হচ্ছে না তাই সেই সুযোগটা আমরা নিয়েছি৷ একটা-দুটো অনুষ্ঠান করে আমরা নিশ্চিত হয়েছি যে এটা করা সম্ভব৷ এবং  সেটা পরবর্তীতে প্রমাণিতও হয়েছে৷ আসলে শুরুর দিন থেকেই দর্শকরা খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছে৷ আমি এমনও গেস্ট পেয়েছি যে তাঁরা কেউ ছয়বার, কেউ পাঁচবার, কেউ চারবার পার্লামেন্টে এসেছেন৷ অথচ তাঁদের মধ্যে দেখা হয়নি, কথা হয়নি৷ আমার এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে তাঁদের সামনাসামনি প্রথম দেখা হয় এবং কথা হয়৷ আসলে রাজনীতিটাকে একটা ইতিবাচক ধারায় ফিরিয়ে আনার চেষ্টা আমরা করেছি৷ ইচ্ছা থাকলেই যে সেটা করা সম্ভব তা প্রমাণ করেছি৷ 

এই দীর্ঘ পথচলায় আপনার কি কোনো সংকটের মুখোমুখি হতে হয়েছে? 

আপনি নিজে যেহেতু গণমাধ্যমে কাজ করেন, আপনি নিজেও ভালো জানেন যে গণমাধ্যমকে সংকটের মোকাবিলা করেই পথ চলতে হয়৷ এই পথটা যে খুব একটা মসৃণ, সেটা কিন্তু না৷ এটা শুধু বাংলাদেশ না, উন্নত গণতন্ত্রের দেশেও এটা কিন্তু এতটা মসৃণ না৷ আমাদের মতো দেশে তো নিশ্চয় এটা ডিফিকাল্ট৷ আমি মনে করি এগুলো সাংবাদিকদের জীবনের অংশ৷ এগুলো মোকাবিলা করেই আমাদের সামনের দিকে এগিয়ে যেতে হবে৷ যেমন ধরেন, কোনো অনুষ্ঠান আমাকে বন্ধ করে দিতে হয়েছে৷ আবার কোনো অনুষ্ঠান আমি প্রচার করতে পারিনি৷ চাপ তো সবসময়ই থাকে৷ তবে সব চাপ যে সরকারি, বিষয়টা তেমন না৷ যেমন ধরেন, বন্ধু-বান্ধবের চাপ থাকে, বিরোধী রাজনৈতিক দলের চাপও থাকে, এমনকি আপনি যে টেলিভিশনে কাজ করছেন সেই টেলিভিশনেও চাপ থাকে৷ আবার পরিবার-স্বজনেরও চাপ থাকে৷

জিল্লুর রহমান

তৃতীয় মাত্রাকে কি আপনি অন্য টক শোগুলো থেকে আলাদা মনে করেন?

এই বিচারের ভারটা কিন্তু দর্শকদের৷ আর দর্শকরা আসলে এটার বিচার করেনও৷ দেখেন যতগুলো টক শো হয় তার মধ্যে প্রায় অর্ধেক ভিউয়ার্স কিন্তু তৃতীয় মাত্রার৷ টেলিভিশন টক শো নিয়ে কিন্তু অনেকগুলো সার্ভে হয়েছে৷ এমনকি সরকারিভাবে পিআইডি থেকেও হয়েছে৷ সেখানেও দেখা গেছে তৃতীয় মাত্রার অবস্থান অনেক উপরে৷ আমার মনে হয় এর একটা বড় কারণ যে, আমি প্রফেশনালি এটা করার চেষ্টা করি৷ এখানে আমি কোনো পলিটিক্যাল পার্টির কথা বলি না৷ আমার নিজের কোনো পলিটিক্যাল আইডিওলজি এখানে প্রচার করার চেষ্টা করি না৷ অন্তত কেউ আমাকে এই অভিযোগটা করতে পারবে না যে, আমি পলিটিক্যালি বায়াসড৷ তবে কেউ কেউ পলিটিক্যালি ব্লাইন্ড- এমন অভিযোগ করেন৷ তবে এটা আওয়ামী লীগের দিক দিয়ে যেমন আছে, তেমনি বিএনপির দিক দিয়েও আছে৷ যাঁরা একটু পলিটিক্যাল ব্লাইন্ড তাঁরা প্রশ্ন করলেই মনে করেন যে আমি অন্য দলকে ফেভার করার চেষ্টা করছি৷ এ ধরনের অভিযোগ সব রাজনৈতিক দল থেকেই আমার বিরুদ্ধে আছে৷ আমরা গেস্ট সিলেকশনের ব্যাপারে সবসময় সতর্ক থাকার চেষ্টা করি৷ যদিও সবসময় সেটা করা সম্ভব হয় না৷ তারপরও আমরা সতর্ক থাকি৷

আপনি তৃতীয় মাত্রার কয়েকটি এপিসোডের কথা যদি বলেন যেগুলোতে স্মরণীয় কিছু ঘটেছে?

আসলে এটার এত এপিসোড, যে আমি আপনি যখন কথা বলছি তখন ৫ হাজার ৫৪৬তম পর্বটিও প্রচার হয়ে গেছে৷ আসলে এটা চলছে ১৬ বছর ধরে৷ এগুলো তো বলার অপেক্ষা রাখে না৷ তার মধ্যে আপনি যদি বলেন তাহলে আমি বলবো যে আমার প্রথম এপিসোডটি ছিল আমার জন্য খুবই চ্যালেঞ্জিং৷ প্রথম এপিসোডে এসেছিলেন তৎকালীন আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদ এবং বার কাউন্সিলের সভাপতি ব্যারিস্টার রোকনউদ্দিন মাহমুদ৷ ওইদিনই আসলে তৃতীয় মাত্রার ভাগ্য নির্ধারিত হয়ে গেছে৷ এর পরের পর্বটাতে এসেছিলেন সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী, যাঁর রাজনৈতিক পরিচয় আপনারা জানেন৷ তাঁকে আমি এমন কিছু প্রশ্ন করেছি, যেটা সাধারণত অন্য কেউ করার সাহস করবেন না৷ এই পর্বটি প্রচার হওয়ার পর অনেকেই আমাকে নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছিলেন৷ তবে আমি খুবই কনফিডেন্ট ছিলাম৷

দীর্ঘ এই পথ চলায় তৃতীয় মাত্রার সঞ্চালক হিসেবে আপনার অর্জন কি?

আমি মনে করি আমার অর্জন মানুষের ভালোবাসা৷ আর বাংলাদেশের মতো একটি দেশে একটি অনুষ্ঠান প্রতিদিন করা এবং সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ এই অনুষ্ঠানটি খুবই সেনসিটিভ৷ এখানে পলিটিক্যাল বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়৷ যদিও আমরা অন্যান্য বিষয় নিয়েও অনুষ্ঠান করি৷ তারপরও এটি চালিয়ে নিয়ে যাওয়াই বড় সাফল্য৷ এটার আরেকটা বড় সাফল্য হচ্ছে, বিশ্বের সাতটা লম্বা টক শোর মধ্যে এটা একটা৷ এটাকে আমি বড় অর্জন বলেই মনে করি৷

আপনি কি অন্য চ্যানেলগুলোর টক শো দেখেন? 

দেখতে হয় আমাকে৷ আসলে আমি দেখি৷

সেগুলো কেমন হয়? কার উপস্থাপনা আপনার ভালো লাগে?

অনেকের টক শো-ই ভালো হয়৷ অনেকগুলো ভালো হচ্ছে৷ অনেকের উপস্থাপনাও আমার ভালো লাগে৷ অনেকে খুবই কঠিন প্রশ্ন করেন, অ্যাগ্রেসিভ৷ এটা আবার অনেকেই পছন্দ করেন না৷ অনেকের আবার বাচনভঙ্গি ভালো৷ অনেকে আবার প্রচুর হোমওয়ার্ক করে আসেন৷ এই সবগুলো গুণ অনেকের মধ্যেই আছে৷ একটা বিশেষ দুর্বলতা হলো পলিটিক্যাল বায়াসডনেস৷ এর ঊর্ধ্বে উঠে কেউ অনুষ্ঠান উপস্থাপনা করতে পারছেন, সেটা আমার কাছে মনে হচ্ছে না৷ এটা হতে পারে তাঁর নিজের দুর্বলতা, আবার হতে পারে তাঁর চ্যানেলের পলিসি, এটা ঠিক করে বলা মুশকিল৷ তবে এই বিষয়ে একটা বড় ঘাটতি আমাদের আছে৷ তবে অনেকেই পপুলার এটা তো নিঃসন্দেহে বলা যায়৷ যেমন খালেদ ভালো করেন, নবনীতা ভালো করেন, মিথিলাও ভালো করেন৷

শুরুর সঙ্গে যদি তুলনা করতে বলি তাহলে তৃতীয় মাত্রায় কি পরিবর্তন এসেছে?

আসলে টেলিভিশনের টক শোতে খুব একটা পরিবর্তন করার সুযোগ আছে এমনটি নয়৷ তবে আমরা গিমিক দেয়ার চেষ্টা করি৷ আমি হয়তো কাউকে স্কাইপে বা অন্য কোনোভাবে কানেক্ট করলাম বা আমি আউটডোরে গিয়ে শুটিং করলাম৷ এভাবে যতগুলো করা সম্ভব তৃতীয় মাত্রা কিন্তু সবগুলোই এক্সারসাইজ করেছে৷ কোন সমস্যা নেই৷ দিনশেষে এটা কিন্তু কথার অনুষ্ঠান৷ আপনি যদি ভালো গেস্ট দেন, ভালো কনটেন্ট দেন, সময়ের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে পারেন, তাহলে কিন্তু মানুষ অনুষ্ঠান দেখে৷ এর বাইরে আপনি ১০ জনের সঙ্গে কথা বললেন, কানেক্ট করলেন, তাতে কিছু যায় আসে না৷ আমরাও কিন্তু ফোনো নিয়ে প্রোগ্রাম করেছি৷ কিন্তু দেখা যায় যে, মূল যাদের কথা শোনার জন্য মানুষ টেলিভিশন সেটের সামনে বসে আছে, তাদের আলোচনাটা শোনা হয় না৷ অনেকে আবার কন্ঠ শোনাবার জন্য প্রশ্ন করেন৷ অথচ সিরিয়াস দর্শকদের অনেকে আবার প্রশ্ন করেন না৷ আমরা সবগুলো ফরমেই এক্সারসাইজ করেছি৷ ভবিষ্যতেও হয়তো করবো৷ দিন শেষে আপনি দর্শকের জন্য কতটা ভালো কথাবার্তা দিতে পারছেন, সেটাই বিবেচ্য বিষয়৷

অনুষ্ঠানের অতিথি নির্বাচনের ক্ষেত্রে আপনি কি স্বাধীন? না-কি কোনো চাপ থাকে?

আমি আসলেই কাজটা স্বাধীনভাবেই করছি৷ যদিও নানারকম চাপ থাকে৷ তারপরও এখানে আমার এক ধরনের স্বাধীনতা আছে৷ যতক্ষণ পর্যন্ত আমি মনে করবো যে আমি স্বাধীনভাবে কাজ করছি, ততদিন পর্যন্ত আমি তৃতীয় মাত্রার উপস্থাপনা করে যাব৷ আর যেদিন আমি দেখবো তৃতীয় মাত্রায় আমি স্বাধীনভাবে করতে পারছি না, তখন আমি নিজেই এখান থেকে সরে যাব৷

আপনি খুব কম কথা বলেন? এই কম কথা বলে এত লম্বা একটা অনুষ্ঠান কীভাবে চালান?

আসলে বাংলাদেশ না, আপনি যেখানেই থাকেন, যত কম কথা বলবেন বিপদ তত কম হবে৷ এটা আপনি পরিবারের মধ্যেও দেখবেন৷ যত বেশি কথা বলবেন তত বেশি বিপদে থাকবেন৷ যদিও এটা আমার বিবেচ্য বিষয় না৷ আসলে আমার কাজ তো কথা বলা নয়, কথা বলানো৷ অনেকে আমাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টাও করেন৷ আমার বিরুদ্ধে অভিযোগটা আছে, আমি কথা কম বলি, ডানে-বামে তাকাই৷ মাঝে মধ্যে হাসি দেই৷ তাঁদের কাছে আমার প্রশ্ন হচ্ছে, এই করে যদি ১৬ বছর পার করা যায়, এই মূকাভিনয় করে যদি একটা অনুষ্ঠান ১৬ বছর চলে এবং সেটা যদি মানুষ দেখে, তাহলে অসুবিধা নেই৷ আর রিয়েলিটি হচ্ছে- আমি যেখানে কথা বলা দরকার সেখানে বলি৷ আমি আসলে আমার গেস্টকে কমফোর্ট দেয়ার চেষ্টা করি৷ আমি তাঁকে কমফোর্ট দিয়েই তাঁর কাছ থেকে কথা বের করার চেষ্টা করি৷ আমি আমার গেস্টদের গেস্ট হিসেবেই দেখি৷ আমি তাঁদের এখানে এনে অপদস্ত করতে চাই না৷ এই প্রবণতাও আমি আমাদের কারও কারও মধ্যে দেখি৷ সেটা আমি করি না৷ সে কারণে আমার গেস্ট আমার অনুষ্ঠানে আসতে খুবই কমফোর্ট ফিল করেন, কথা বলতে চান৷ কথা বলে দর্শকের যেটা চাওয়া সেটা পূরণ করেন৷ তার মানে এই নয় যে, আমি তাদের কোথাও ছাড় দেই, তা কিন্তু না৷

প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য