1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

‘ভারতের সেনাপ্রধানের মন্তব্য মনগড়া’

২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

পাকিস্তান ও চীনের পরিকল্পনায় অস্থিতিশীলতা তৈরি করতেই বাংলাদেশ থেকে অবৈধ অভিবাসীরা ভারতে যাচ্ছে বলে সে দেশের সেনাপ্রধান মন্তব্য করেছেন৷ তাঁর এই মন্তব্যের ভিত্তি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ৷

https://p.dw.com/p/2t8fs
ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াতছবি: Imago/ZUMA Press

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আবদুর রশিদ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ ধরনের মন্তব্য দুই দেশের সম্পর্কের গাঁথুনিকে হাল্কা করে দেয়৷’’

এর আগে বুধবার ভারতের সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়াত বলেন, ‘পরিকল্পিতভাবেই’ বাংলাদেশ থেকে অভিবাসীর ঢল নেমেছে ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে৷ এটিকে চীনের সহযোগিতায় পাকিস্তানের দীর্ঘমেয়াদী ষড়যন্ত্রের অংশ বলে মনে করেন তিনি৷ ভারতের নিউজ পোর্টাল এনডিটিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই ঘটনাকে ‘প্রক্সি ওয়ারফেয়ার’ বা ‘ভিন্ন যুদ্ধকৌশল’ বলে মন্তব্য করেন তিনি৷

আসামে মুসলিম জনগোষ্ঠীর সংখ্যা অস্বাভাবিক হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে উল্লেখ করে জেনারেল রাওযাত ঐ অঞ্চলের বদরুদ্দিন আজমলের নেতৃত্বাধীন অল ইন্ডিয়া ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট বা এআইইউডিএফ দলটির উদাহরণ টেনে বলেন, আশির দশকে বিজেপির সমর্থক যেভাবে বৃদ্ধি পেয়েছিল তার চেয়ে অনেক বেশি গতিতে বৃদ্ধি পাচ্ছে এই দলটি৷

‘‘আমাদের পশ্চিমের প্রতিবেশীর কারণে এই পরিকল্পিত অভিবাসন চলছে৷ তারা সবসময়ই চাইবে সেখানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে, এটি এক ধরনের গোপন যুদ্ধকৌশল৷’’ উত্তর-পূর্বের রাজ্যের সীমান্ত নিরাপত্তা নিয়ে এক বৈঠকে এসব মন্তব্য করেন জেনারেল রাওয়াত৷ ‘‘আমি মনে করি, ঐ রাজ্যে অস্থিতিশীলতা তৈরি করতে আমাদের পশ্চিমের প্রতিবেশী খেলাটি খুব ভালো খেলছে, যার সহযোগিতা দিচ্ছে আমাদের উত্তরের প্রতিবেশী (চীন)৷ এই সমস্যার গভীরে গিয়ে সামগ্রিকভাবে এর সমাধান করতে হবে৷’’

আমি মনে করি না, জেনারেল রাওয়াত কোনো রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন: জেনারেল শংকর রায়

বাংলাদেশিদের অবৈধভাবে ঢুকে পড়া আসামে একটি বড় সমস্যা৷ রাজ্য সরকার তাই অবৈধ বাংলাদেশিদের খুঁজে বের করতে একটি খসড়া তালিকাও করেছে৷ অবশ্য সেই তালিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷

এ বিষয়ে ডয়চে ভেলে টেলিফোনে কথা বলেছে ভারতের সাবেক সেনাপ্রধান অবসরপ্রাপ্ত জেনারেল শংকর রায় চৌধুরীর সঙ্গে৷ তিনি জেনারেল রাওয়াতের বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন৷ বলেছেন, ‘‘আমি মনে করি না, জেনারেল রাওয়াত কোনো রাজনৈতিক মন্তব্য করেছেন৷ ভারত একটি প্রক্সি ওয়ারের মুখোমুখি৷ এটি সামরিক যুদ্ধ নয়৷ এটি রাজনৈতিক-সামরিক যুদ্ধ৷’’​​​​​​​

তাঁর মতে, উত্তর-পূর্ব ভারতে দ্বিমুখী পরিস্থিতি বিরাজ করছে৷ ‘‘একদিকে আমাদের উত্তরের প্রতিবেশী চীন আর একদিকে বাংলাদেশ৷ বিশেষ কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের সহযোগিতায় বাংলাদেশ থেকে আসামে অভিবাসী হিসেবে লোক পাঠিয়ে দেয়া এবং এটা সেখানকার নৃতাত্ত্বিক জনগোষ্ঠীর কাঠামো বদলে দেয়া পাকিস্তানের দীর্ঘ দিনের পরিকল্পনা৷’’

তবে দুই জেনারেলের বক্তব্য সাম্প্রতিককালে ভারতের উত্তরাঞ্চলে নিরাপত্তা নিশ্চিত বিষয়ে বাংলাদেশের অবস্থানের সঙ্গে মেলে না৷

ক'দিন আগেই ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং আগরতলায় বিজেপির একটি সমাবেশে বাংলাদেশের প্রশংসা করে বলেছেন, বাংলাদেশের কারণেই উত্তর-পূর্বে জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাস দমনে সক্ষম হয়েছে ভারত৷ ‘‘বাংলাদেশে অনেক ভারতীয় সন্ত্রাসী লুকিয়ে ছিল৷ তাদের ধরতে বাংলাদেশ সরকার সর্বাত্মক ভুমিকা রেখেছে৷’’ বলেন রাজনাথ৷বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও অনেকবার বলেছেন, বাংলাদেশের মাটি ব্যবহার করে কেউ জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে পারবে না৷

সেখানে ভারতের সেনাপ্রধানের এই বক্তব্যকে মানতে পারছেন না নিরাপত্তা বিশ্লেষক আবদুর রশিদ৷ তিনি বলেন, ইতিহাস দেখলেই বোঝা যায়, শুধু ভারত নয়, বাংলাদেশ, বিশেষ করে বর্তমান সরকারের আমলে, এ অঞ্চলে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করে এমন কোনো ঘটনা রুখতে বদ্ধপরিকর৷ ‘‘কয়েকদিন আগেও ঢাকা-দিল্লি একটি নিরাপত্তা বৈঠক হলো৷ সেখানে ভারতের নিরাপত্তা বিশ্লেষক ও কর্মকর্তারা যেসব কথা বলেছেন তার সঙ্গে ভারতের সেনাপ্রধানের বক্তব্য মিলছে না৷’’

তবে তিনি মনে করেন, ভারত বা চীনের ভূরাজনৈতিক স্বার্থের শিকার হয়েছে বাংলাদেশ৷ ‘‘যেমন রোহিঙ্গা ইস্যু৷ বন্ধু রাষ্ট্র হওয়া বা উন্নয়ন সম্পর্ক থাকার পরও তারা বাংলাদেশের পক্ষ নেয়নি৷ কিন্তু এর ফলে বাংলাদেশের দক্ষিণে যে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হয়েছে, তা এই অঞ্চলের জন্যই ঝুঁকি৷ সেটির প্রভাব ভারত বা চীনেও পড়বে৷ কিন্তু বাংলাদেশ বা এ দেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যতটা সম্ভব এ ঝুঁকি কমিয়ে আনতে কাজ করে যাচ্ছে৷ তাই জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাস দমনে বাংলাদেশ আঞ্চলিক পর্যায়ে ভুমিকা রাখছে৷ সেখানে এমন প্রশ্ন তোলা ঠিক নয়৷’’ টেলিফোনে ডয়চে ভেলেকে বলছিলেন তিনি৷

এ ধরনের মন্তব্য দুই দেশের সম্পর্কের গাঁথুনিকে হাল্কা করে দেয়: আবদুর রশিদ

তাহলে চীন ও ভারতের চলমান দ্বন্দ্বের শিকারই কি হচ্ছে বাংলাদেশ? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘‘প্রথমত বাংলাদেশ চীন বা ভারতের ভূ-রাজনৈতিক দ্বন্দ্বে কোনো পক্ষ নিচ্ছে না৷ আমরা ডোকলাম ইস্যুতেও দেখেছি৷ আর এটাও সত্য যে, তাদের ভূ-রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে বাংলাদেশ ক্ষতিগ্রস্ত৷’’

সাবেক এই সেনা কর্মকর্তা মনে করেন, জেনারেল রাওয়াত যে বক্তব্য দিয়েছেন তার স্বপক্ষে তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরা উচিত ছিল৷ সেটি না করে তিনি যে ঢালাও মন্তব্য করে গেছেন সেটি দুই দেশের সম্পর্কের ক্ষেত্রে ভালো নয়৷

জেনারেল রাওয়াতের বক্তব্য ভারতে প্রায়ই রাজনৈতিক ও সামাজিক বিতর্ক তৈরি করছে৷ ভারতের কোনো কোনো মহলে এ নিয়ে বেশ সমালোচনা হচ্ছে৷ সর্বশেষ কাশ্মীরে সেনাবাহিনীর একটি গাড়ির সামনে একজন সাধারণ নাগরিককে ঢাল হিসেবে বেঁধে রাখা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার মুখে কেউ মন্তব্য না করলেও জেনারেল রাওয়াত বলেছিলেন যে, আর্মি যা করেছে ঠিকই করেছে৷