1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সময়মতো মজুরি চান পাটকল শ্রমিকরা

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১১ মে ২০১৯

বাংলাদেশের সরকারি জুটমিলের শ্রমিকরা তাদের বকেয়া মজুরির দাবিতে লাগাতার ধর্মঘট করছেন৷ দাবি আদায়ে করছেন সড়ক অবরোধ৷ বকেয়া পরিশোধে সরকারের কাছে সাড়ে ৩শ' কোটি টাকা চেয়েছে বিজিএমসি৷

https://p.dw.com/p/3ILa0
Bangladesch Faridpur Juteproduction
ছবি: DW/Muhammad Mostafigur Rahman

বাংলাদেশ জুটমিল কর্পোরেশনের (বিজেএমসি) ২৭টি জুটমিলের প্রায় ৮০ হাজার শ্রমিকের ১৪ সপ্তাহের অর্থাৎ সাড়ে তিন মাসের বেতন বকেয়া পড়ে আছে৷ সেই সাথে কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন বকেয়া আছে চার মাসের৷ বকেয়া মজুরির দাবিতে শ্রমিকরা আগেও কয়েক দফা আন্দোলন করেছিলেন৷ কিন্তু বকেয়া বেতন পাননি তারা৷ তাই ২ মে থেকে জুটমিলগুলোতে অনির্দিষ্টকালের জন্য ধর্মঘট ও সড়ক-মহাসড়ক অবরোধের কর্মসূচি পালন করছেন শ্রমিকরা৷

এ কর্মসূচি পালিত হচ্ছে ঢাকা ও খুলনার জুটমিলগুলোতে৷ জরুরি উৎপাদন বজায় রাখতে চট্টগ্রামের পাটকল শ্রমিকদেরকে দু'সপ্তাহের বকেয়া মজুরি প্রদান করে কারখানা সচল রাখা হয়েছে৷ চট্টগাম অঞ্চলে মোট পাটকল রয়েছে ১১টি মিল৷ সোমবার থেকে চট্টগ্রাম এলাকার জুটমিলগুলোর শ্রমিকরা ধর্মঘটে যোগ দেবেন বলে জানা গেছে৷

‘প্রত্যেকটি পাটকলেই মজুরি বকেয়া আছে’

শ্রমিকদের ৯ দফা দাবির মধ্যে  অন্যতম হলো বকেয়া মজুরি পরিশোধ,  জাতীয় মজুরি কমিশন-২০১৫-এর রোয়েদাদ বাস্তবায়ন, পাটক্রয়ে অর্থবরাদ্দ, অস্থায়ী শ্রমিকদের স্থায়ী করা, অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক, কর্মচারী ও কর্মকর্তাদের বকেয়া পরিশোধ, শ্রমিকদের প্রতি সপ্তাহে মজুরি৷

রাষ্ট্রায়ত্ব পাটকল শ্রমিক (সিবিএ নন-সিবিএ) ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক খলিলুর রহমান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘প্রত্যেকটি পাটকলেই মজুরি বকেয়া আছে৷ গড়ে ১৪ সপ্তাহের মজুরি বকেয়া আছে৷ আর ২০১৫ সালের নতুন মজুরি সবখানে বাস্তবায়ন হলেও আমরা এখনো পাইনি৷''

তিনি জানান, ‘‘রোজার ঈদের বোনাসসহ শ্রমিক-কর্মচারীদের মজুরি, বেতন ভাতা বাবদ প্রায় দু'শ কোটি টাকা বকেয়া পড়েছে৷ এটা আমরা ঈদের আগেই চাই৷ আমাদের দাবি না পর্যন্ত আমাদের এই কর্মসূচি চলবে৷''

খুলনা প্লাটিনাম জুটমিলের সিবিএ সভাপতি শাহানা শারমিন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এর আগেও মোট তিনবার বিজেএমসি ও মন্ত্রণালয় লিখিত চুক্তি করে বকেয়া মজুরি দেয়ার কথা বলেছে৷ বেতন প্রদানের সর্বশেষ তারিখ ছিল ২৫ এপ্রিল৷ সেই তারিখেও দেয়া হয়নি বেতন৷ এরপরও আমারা ধর্মঘটে যেতে চাইনি৷ কিন্তু আমাদের শ্রমিকরা না খেয়ে কাজ করতে পারছেনা৷ স্টার জুটমিলে একজন শ্রমিক না খাওয়ার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েন৷ ফলে আমরা ধর্মঘটে যেতে বাধ্য হই৷''

‘আমারা ধর্মঘটে যেতে চাইনি’

এদিকে শ্রমিকদের বকেয়া মজুরি পরিশোধ করতে সরকারের কাছে প্রায় সাড়ে ৩শ' কোটি টাকা চেয়েছে বিজিএমসি৷ নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর করতে আরো টাকা লাগবে বলে জানিয়েছে তারা৷

বিজেএমসি'র চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ নাছিম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘জুন পর্যন্ত বকেয়া ও পাওনা মেটাতে সরকারের কাছে ৩শ' ৩৮ কোটি টাকা চেয়েছি৷আশা করছি  চলতি সপ্তাহের মধ্যে ভর্তুকির টাকা পেয়ে যাবো৷ ভর্তুকি'র টাকা পেলেইে তাদের বকেয়া মজুরি শোধ করে দেব৷ এটা তাদের জানানো হয়েছে৷ এরপরও তারা কারখানা বন্ধ করে, উৎপাদন বন্ধ করে যে ধর্মঘট করছে তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য নয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘উৎপাদন বন্ধ থাকায় এখন প্রতিদিন আমরাদেড়-দুই কোটি টাকা ক্ষতির মুখে পড়ছি৷ এখন সিরিয়ার অর্ডার ছাড়াও বাংলাদেশ বিমান, খাদ্য বিভাগ ও পরিসংখ্যান ব্যুরোর চাহিদা অনুযায়ী ব্যাগ সরবরাহ করতে পারছি না৷  চট্টগ্রাম এলাকার মিলগুলো আমরা চালু রাখতে সক্ষম হলেও খুলনা ও ঢাকার মিলগুলো বন্ধ রয়েছে৷''

নতুন স্কেল অনুযায়ী বেতন ভাতা বাড়ানোর দাবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘এটা নিয়েও আমরা সরকারের সাথে বসছি৷ নতুন স্কেল অনুযায়ী তাদের বেতন দ্বিগুন হবে৷ এটা কিভাবে ম্যানেজ করা যায় সে বিষয়ে আমরা কাজ করছি৷''

সারাদেশে বিজেএমসি'র মালিকিনিধীন মোট ২৭টি জুটমিল রয়েছে৷ মিলগুলোতে মোট শ্রমিক প্রায় ৮০ হাজার৷ বাকিরা মাস্টার রোলে দেনিক মজুরি ভিতিতে কাজ করেন৷

‘আমরা কিছু নতুন ধরনের পণ্য উৎপাদনের চেষ্টা করছি’

পাটকলগুলোতে শ্রমিকদের বেতন দেয়া হয় সপ্তাহ ভিত্তিতে৷ তবে শ্রমিকরা মাসে গড়ে ১৮ হাজার টাকা মজুরি পান৷ পাটকলগুলোলো অব্যাহত লোকসানের মুখে রয়েছে৷ এ লোকসানের জন্য শ্রমিকরা কর্তৃপক্ষকে দায়ী করছেন৷

শ্রমিক নেতা খলিলুর রহমান বলেন,‘‘পাটের অভাবে কলগুলো উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৪০ ভাগ উৎপাদন করতে পারে৷ আর পুরনো যন্ত্রপাতি মেরামত ও আধুনিকায়ন না করায় উৎপাদন ব্যাহত হয়৷ যদি কলগুলোকে আধুনিকায়ন করা হতো তাহলে উৎপাদন বেড়ানো যেত৷''

সিবিএ নেতা শাহানা শারমিন বলেন,‘‘পাটকলগুলোতে লোকসানের মূল কারণ হলো সঠিক সময়ে পাট না কেনা৷ জুন মাসে পাটের দাম সবচেয়ে কম থাকে, তখন পাট কেনা হয়না৷ আর যখন পাট কেনা হয় তখন পাটের দাম অনেক বেশি থাকে৷''

আধুনিকায়ন না করায় এখনো পাটকলগুলো মূলত চট ও চটের ব্যাগ উৎপাদন করে থাকে৷ যে কারণে, বিশ্ববাজরে আধৃনিক পাটজাত পন্যের যে চাহিদা, তা পূরণ করতে পারছে না এই কলগুলো৷

‘বকেয়া ও পাওনা মেটাতে সরকারের কাছে ৩শ' ৩৮ কোটি টাকা চেয়েছি’

খুলনার খালিশপুর জুট মিলের জেনারেল ম্যানেজার  মোস্তফা কামাল ডয়চে ভেলেকে বলেন,‘‘আমরা কিছু নতুন ধরনের পণ্য উৎপাদনের চেষ্টা করছি৷ এর মধ্যে রয়েছে পরিবেশবান্ধব সোনালী ব্যাগ ও পাট পাতার পানীয়৷ তবে কারখানাগুলো মূলত চট আর ব্যাগই বেশি উৎপাদন করে থাকে৷ আর এই ধর্মঘটের কারণে যেটুকু উৎপদন হতো তাও বন্ধ৷ প্রতিদিন আমার মিলে ২০-২৫ লাখ টাকার উৎপাদন ক্ষতি হচ্ছে৷''

বিজেএমসি চেয়ারম্যান শাহ মোহাম্মদ নাছিম দাবি করেন, ‘‘যত ভর্তুকির কথা শোনা যায় আসলে অত ভতুর্কি দিতে হয়না৷ আমরা এ পর্যন্ত তো বেতন ভাতা দিয়েই আসছিলাম৷ তবে কখনো বিক্রির টাকা পেতে দেরি হয়৷ পাট  কিনতে হয়৷ এ কারণে সংকট তৈরি হয়৷''

তিনি বলেন, ‘‘জুটমিলগুলোকে লাভজনক করা সম্ভব৷ এজন্য আমাদের পরিকল্পনা আছে৷ পাট দিয়ে বৈচিত্রময় পন্য উৎপাদনের পরিকল্পনা করছি আমরা৷ এজন্য আমাদের সময় দিতে হবে৷ শ্রমিকরা শ্রম আইনের বাইরে গিয়ে এভাবে ধর্মঘট করলেতো সম্ভব নয়৷''

 

 

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য