1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

সাংবাদিকের স্বার্থ দেখার কেউ নেই

২৯ আগস্ট ২০১৭

সাংবাদিকরা যে প্রতিনিয়ত সমাজের বেসুমার অন্যায়-অনাচারের খবর তুলে ধরে সকলের উপকার করছেন, সাংবাদিকতার কট্টর সমালোচকও তা অস্বীকার করতে পারবেন না৷ অথচ বাংলাদেশে সাংবাদিকদেরই যেন কোনো ‘বন্ধু' নেই৷

https://p.dw.com/p/2j0Ry
Presse Dhaka
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Stache

কথায় আছে, ‘গরম ভাতে বিড়াল বেজার, উচিত কথায় বন্ধু বেজার৷' সাংবাদিকদের কাজই হলো প্রকৃত খবরটা জানানো৷ তো খবরটি যাঁর বিরুদ্ধে, তিনি বেজার হবেন – এটাই স্বাভাবিক৷ কিন্তু ‘বেজার' ব্যক্তি যত ক্ষমতাশালীই হোক, গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় সাংবাদিকের মর্যাদা এবং অধিকার সুরক্ষার ব্যবস্থা তাঁকে নিরাপদ রাখে৷ স্বাধীনতার ৪৬ বছরেও বাংলাদেশে সেই অবস্থা হয়নি৷ সংবাদমাধ্যম খুব দ্রুত অনেক বেশি বিস্তৃত হয়েছে৷ তা নিয়ে গর্বও করেন অনেকে৷ ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের অনেক নেতাকেই এর কৃতিত্ব নিতে দেখা যায়৷ বিশেষ করে দেশে যে টেলিভিশন চ্যানেল এক থেকে অনেক হয়েছে এবং এর কৃতিত্ব যে শুধু তাঁদেরই প্রাপ্য তা তাঁরা খুব জোর গলায় বলেন৷ কিন্তু সাংবাদিকের বেতন-ভাতা ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার বিষয়ে তাঁরা ‘সময়মতো' একদম নীরব৷ দেশে এখন সেই সময়ই চলছে৷

কারণ সাংবাদিকরা এখন নবম ওয়েজবোর্ডের দাবিতে সোচ্চার৷ এমন সময়ে শুধু সরকার বা সরকারি দলই নয়, বিরোধীদলসহ বলতে গেলে সমাজের প্রায় সব শ্রেণি-পেশার সদাসোচ্চার মানুষও এই একটি ইস্যুতে নীরব থাকে৷ এ প্রসঙ্গে বিএনপিও তাই একদম নীরব৷ এ কারণেই বাংলাদেশে সাংবাদিকদের অধিকার আদায়ের লড়াইটা খুব বেশি কঠিন৷ তবে লড়াইটা বেশি কঠিন এ কারণে যে, সাংবাদিকরাই নানা কারণে নিজেদের দাবিটা সবচেয়ে জোরালোভাবে তুলে ধরতে পারে না৷

প্রধান কারণ অনৈক্য

ঐক্যবদ্ধ হলে যে কোনো পরিবেশ-পরিস্থিতিতেই যৌক্তিক দাবি আদায় সহজ হয়ে যায়৷ কিন্তু বাংলাদেশে সাংবাদিকসমাজ রাজনৈতিক অঙ্গনের মতোই বহুধাবিভক্ত৷ সাগর-রুনি হত্যার বিচার দাবিতে সাংবাদিক সংগঠনগুলো কিছুদিনের জন্য অনৈক্য ভুলেছিল৷ কিন্তু যু্দ্ধাপরাধীদের বিচারের ইস্যুটি নিয়ে দেশের রাজনৈতিক অঙ্গন উত্তপ্ত হয়ে উঠতেই দলীয় লেজুড়বৃত্তির প্রভাবে সাংবাদিক সংগঠনগুলো আবার পরস্পরবিরোধী অবস্থান নেয়৷

অনৈক্যের সুযোগ নেয় সরকার এবং মালিক

অধিকার বঞ্চিতদের মাঝে অনৈক্য থাকলে শাসক, শোসকদেরই সুবিধা৷ এটা চিরন্তন সত্য৷ এই সত্যিকে মূলমন্ত্র মেনে ব্রিটিশরা যেমন ‘ডিভাইড অ্যান্ড রুল' কৌশলে ভারত উপমহাদেশে তাদের ঔপনিবেশিক শাসনকে দীর্ঘস্থায়ী করতে চেয়েছিল, একই কায়দায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশে এখনো শাসকগোষ্ঠী বঞ্চিতের বঞ্চনার যন্ত্রণাকে তাচ্ছিল্য করেও আরামে দিন কাটাতে পারছে৷ বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকারও নানান ইস্যুতে নিজেদের ব্যস্ত রাখছে সাংবাদিকদের নবম ওয়েজ বোর্ড দাবিকে কৌশলে অগ্রাহ্য করে৷ সংসদের বিরোধী দল জাতীয় পার্টি, জাসদ, ওয়ার্কার্স পার্টি এবং বিএনপিসহ সংসদের বাইরের অন্যান্য বিরোধীদলগুলিরও ওয়েজবোর্ড নিয়ে কোনো বক্তব্য নেই৷ এ অবস্থা অনেক মিডিয়ামালিকের জন্যও মেঘ না চাইতেই বৃষ্টির মতো৷ অধিকার আদায়ের প্রশ্নে স্বাভাবিক অবস্থায় সব ক্ষেত্রে কর্মী আর মালিক মুখোমুখি অবস্থান নিলেও, এখানে চিত্রটা ভিন্ন৷ অধিকাংশ মালিকপক্ষই সার্বিক অবস্থার সর্বোচ্চ সুবিধাভোগী এবং কর্মীদের সুযোগ-সুবিধা নিশ্চিত করার প্রশ্নে প্রায় নীরব, নিষ্ক্রিয়৷

আশীষ চক্রবর্ত্তী
আশীষ চক্রবর্ত্তী, ডয়চে ভেলেছবি: DW/P. Henriksen

সাংবাদিক সংগঠনগুলোর প্রতি অনাস্থা

সাংবাদিকদের অনেক সংগঠন৷ তবে কোনো সংগঠনই প্রকৃত অর্থে সাংবাদিকদের আস্থা অর্জন করতে পারেনি৷ নেতারা সব সময় দলীয় এবং ব্যক্তি স্বার্থের ঊর্ধে উঠে কাজ করলে এতটা অনাস্থা বা আস্থাহীনতা তৈরি হতো না৷ সংগঠনগুলো আস্থাশীল হলে অধিকার আদায়ের প্রতিটি আন্দোলনে সর্বস্তরের সংবাদকর্মীকে অনেক বেশি সক্রিয় দেখা যেত৷

সাংবাদিকদের পক্ষে কোনো ‘প্রেসার গ্রুপ' নেই

দাবি আদায়ে ভুক্তভোগীদের বাইরের বিভিন্ন গোষ্ঠীও অনেকসময় সহায়ক ভূমিকা পালন করে৷ সেরকম ‘প্রেসার গ্রুপ' না থাকাও সরকার এবং মালিকপক্ষের জন্য সুবিধাজনক৷

এমনিতে আর সব ক্ষেত্রে সংবাদমাধ্যমও গুরুত্বপূর্ণ ‘প্রেসার গ্রুপ' হিসেবে কাজ করে৷ উদাহরণ হিসেবে পোশাক শিল্পের কথা মনে করা যায়৷ সেখানে এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক চাপের মুখে হলেও সরকারকে কর্মীদের অধিকার আদায়ে ‘আন্তরিক' হতে হয়েছে৷ আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধিতে খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে মিডিয়া৷ মিডিয়ার ভূমিকা, আন্তর্জাতিক চাপ এবং সেই চাপের প্রভাবে পোশাক কারখানার মালিকদের ওপর সরকারের চাপ– এ সবই ছিল পোশাক শ্রমিকদের আন্দোলনের অনুকুল স্রোত৷ কিন্তু সাংবাদিকদের পক্ষে কথা বলার মতো সক্রিয় কোনো ‘প্রেসার গ্রুপ' নেই৷ এমনকি সাংবাদিক সংগঠনগুলোও এই ভূমিকা পালনে অনেকাংশে ব্যর্থ৷

 এবং একটি ‘দুর্বলতা'

গুরুত্ব অনুযায়ী সংবাদ পরিবেশন সাংবাদিকতার প্রাথমিক শর্তগুলোর অন্যতম৷ অথচ সাংবাদিকদের দুরবস্থার চিত্র তুলে ধরা এবং অধিকার আদায়ের আন্দোলন-কর্মসূচির সংবাদ পরিবেশনের বিষয়টির দিকে দৃষ্টি দিলেই সাংবাদিকতায় অধুনা যোগ হওয়া একটি দুর্বলতা সম্পর্কে পরিষ্কার ধারণা পাওয়া যায়৷ আর সব খবরের মতো সাংবাদিক বা সাংবাদিক সংগঠনগুলোর খবরও সংবাদমাধ্যমে সবসময় উপযুক্ত গুরুত্ব পায় না৷ ‘ফলোআপ' বিষয়টি সাংবাদিকতায় বিলুপ্ত প্রায়৷ সাংবাদিকরাও এখন সাংবাদিকতার এই ‘দুর্বলতার' শিকার৷

শেষ আক্ষেপ

এমনিতে দেশের প্রতিটি ক্ষেত্রের মতো সাংবাদিকতা এবং সংবাদমাধ্যমেরও সমালোচনা আছে৷ অস্বাভাবিক অল্প সময়ে চোখে পড়ার মতো বিস্তার লাভ করা এই মাধ্যমের দুর্বলতাও অনেক৷ অনেক ক্ষেত্রে পুঁজি বিনিয়োগকারীর পরিচয় এবং উদ্দেশ্য, সংবাদ মাধ্যমের পরিসর অনুপাতে প্রশিক্ষিত বা যোগ্য সংবাদকর্মীর অভাব, সংবাদ মাধ্যমের সার্বিক বিশৃঙ্খলাসহ অনেক বিষয়ই উঠে আসে সমালোচনায়৷ বলা বাহুল্য, এ সব সমালোচনাযোগ্য কোনো বিষয়ের জন্যই সাংবাদিক সমাজকে এককভাবে দায়ী করা যাবে না৷ কোনোক্ষেত্রেই পুঁজি বিনিয়োগকারী এবং সরকার দায় এড়াতে পারে না৷ অথচ ওয়েজবোর্ডসহ সাংবাদিকদের যে কোনো অধিকারের প্রশ্নেই সরকার এবং মালিকপক্ষ প্রায় সমান নিষ্ক্রিয়৷

আশীষ চক্রবর্ত্তীর লেখা আপনাদের কেমন লাগলো? জানান আমাদের, লিখুন নীচের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য