1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

গণমাধ্যম ও সামাজিক মাধ্যম

জাহিদুল হক২ আগস্ট ২০১৬

দু’টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা বিবেচনায় নিন৷ রাজন ও ত্বকী হত্যা৷ রাজনের ঘটনা ২০১৫ সালের৷ ত্বকীরটি ২০১৩’র৷ রাজন হত্যায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ফাঁসির রায় হয়েছে৷ আর ত্বকীর ক্ষেত্রে এখনও আদালতে অভিযোগপত্র জমা হয়নি৷

https://p.dw.com/p/1JZ5C
প্রতীকী ছবি
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kahnert

রাজনকে পাশবিকভাবে নির্যাতন করে হত্যার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ায় সারা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল৷ দাবি উঠেছিল হত্যাকারীদের বিচারের৷ ফলে মাত্র কয়েক মাসের মধ্যেই বিচার সম্পন্ন করা গেছে৷ কিন্তু ত্বকীর ক্ষেত্রে তেমনটি হয়নি৷ কারণ এই হত্যাকাণ্ডের হয়ত কোনো ভিডিও নেই৷ কিংবা থাকলেও সেটি সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হয়নি৷

অবশ্য তর্কের খাতিরে কেউ বলতেই পারেন রাজন হত্যার সঙ্গে সমাজের কোনো প্রভাবশালী ব্যক্তি জড়িত না থাকায় আইন প্রয়োগ করা গেছে৷ কিন্তু ত্বকী হত্যার সঙ্গেতো সরকারি দলের সাংসদ শামীম ওসমানের পরিবারের সম্পৃক্ত থাকার অভিযোগ রয়েছে৷

হতে পারে এটি একটি কারণ৷ তবে যদি ত্বকী হত্যার ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত হতো তাহলে হয়ত ঐসব মাধ্যম ব্যবহারকারীরা তা নিয়ে বেশি বেশি আলোচনা করতো৷ ফলে আইনি ব্যবস্থার উপর তার একটি প্রভাব পড়তে পারতো৷

এরপর ধরা যাক তনু হত্যা মামলার বিষয়টি৷ কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া কলেজের ছাত্রী ও নাট্যকর্মী সোহাগী জাহান তনুর হত্যাকাণ্ডটি ঘটেছিল সেনানিবাস এলাকায়, গত ২০ মার্চ৷ সেনানিবাস হওয়ার কারণে এবং হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সেনা পরিবারের লোকজন জড়িত থাকার অভিযোগ থাকায় শুরুতে এই হত্যাকাণ্ডটি ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে৷ কিন্তু তনু হত্যার প্রতিবাদে অনুষ্ঠিত বিক্ষোভ, প্রতিবাদের খবর সামাজিক মাধ্যমের কারণে সারা দেশে ছড়িয়েছে৷ ফলে যাঁরা ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন সেটি সম্ভব হয়নি৷ এই হত্যা মামলার এখনও সুরাহা না হলেও অন্তত পুরো দেশবাসী সেটি সম্পর্কে এখন ওয়াকিবহাল৷

পাঠক, দর্শকের ক্ষমতা বাড়িয়েছে সামাজিক মাধ্যম

তনু হত্যার ঘটনায় সামাজিক মাধ্যমের ভূমিকা এটাই প্রমাণ করছে যে, আগে যেমন পাঠক ও দর্শকদের কোন বিষয় নিয়ে ভাবতে হবে, সেটি ঠিক করে দিত প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়া, এখন সেটি হয়ে গেছে উল্টো৷ অর্থাৎ এখন পাঠক ও দর্শকদের চাহিদাই অনেকক্ষেত্রে গণমাধ্যমকে ঠিক করে দিচ্ছে কোন বিষয় গুরুত্ব দিয়ে ছাপতে হবে কিংবা প্রচার করতে হবে৷

এছাড়া লাইক ও শেয়ারের এই যুগে পাঠক ও দর্শকরা যা পছন্দ করেন, গণমাধ্যমগুলোকে এখন সেরকম খবরই প্রকাশ করতে হচ্ছে৷

সাংবাদিকের সূত্র

সম্প্রতি জার্মানির মিউনিখে এক বন্দুকধারী গুলি চালিয়ে নয়জনকে হত্যা করে৷ ঘটনাটি যখন ঘটছিল তখন প্রায় সব আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে একটি ভিডিও গুরুত্ব দিয়ে প্রচার করা হয়৷ টুইটারে শেয়ার হওয়া ঐ ভিডিওতে হত্যাকারীকে গুলি চালাতে দেখা গেছে৷ এভাবে সাংবাদিকরা সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমের অনেক কন্টেন্টকেই সূত্র হিসাবে ব্যবহার করছেন৷

এছাড়া ফেসবুক, টুইটার থাকায় অনেক মামলাই এখন সহজে ও দ্রুত সময়ের মধ্যে সমাধান করা যাচ্ছে৷ অথচ ‘হিলসবোরো দুর্ঘটনার' কথা ধরুন৷ আজ থেকে ২৭ বছর আগে ইংল্যান্ডের হিলসবোরো স্টেডিয়ামে এক দুর্ঘটনায় লিভারপুল ফুটবল ক্লাবের ৯৬ জন সমর্থক প্রাণ হারিয়েছিলেন৷ এতদিন পর্যন্ত পুলিশ এই দুর্ঘটনার জন্য সমর্থকদেরই দায়ী করে আসছিল৷ কিন্তু গার্ডিয়ানের এক সাংবাদিক বিস্তারিত তদন্তের পর সেদিনের ঘটনায় পুলিশের গাফিলতির বিষয়টি তুলে ধরেন৷ এরপর সম্প্রতি আদালত দুর্ঘটনার জন্য পুলিশকে দায়ী করে রায় দেন৷ অথচ একবার ভাবুন, ২৭ বছর আগে যদি আজকের মতো স্মার্টফোন আর সামাজিক মাধ্যম থাকতো তাহলে কি রায়ের জন্য এতদিন অপেক্ষা করতে হত?

আছে নেতিবাচক দিকও

সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যম থাকায় এখন সাংবাদিকতায় যে শুধু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে তা নয়৷ এর কিছু নেতিবাচক দিকও আছে৷ অনেক গণমাধ্যমই এখন শুধু লাইক আর শেয়ারের দিকে ঝুঁকে পড়ায় হালকা খবর প্রকাশ ও প্রচারের দিকে তাদের ক্ষমতার একটি বড় অংশ ব্যয় করছে৷ ফলে অনুসন্ধানী প্রতিবেদন সহ সচেতনতামূলক অনেক বিষয় নিয়ে খবর প্রকাশের হার কমে যাচ্ছে৷

জাহিদুল হক
জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলেছবি: DW/Matthias Müller

এছাড়া সামাজিক মাধ্যমে এখন একটি বিষয়ের উপর নানা ধরণের খবর প্রকাশিত হচ্ছে৷ এর মধ্যে যে কোনটি সত্য আর কোনটি মিথ্যা কিংবা গুজব, তা বের করতে সাংবাদিকদের অনেক সময় ব্যয় করতে হচ্ছে৷ যেমন গত বছর নভেম্বরে ফ্রান্সে সন্ত্রাসী হামলা চলার সময় এক পর্যায়ে গুজব রটেছিল যে, ল্যুভ মিউজিয়ামেও (যেখানে ‘মোনালিসা' আছে) হামলা হয়েছে, আর প্রেসিডেন্ট ফ্রসোয়াঁ ওলঁদ স্ট্রোক করেছেন! গণমাধ্যমগুলোকে সেই সময় এমন গুজব খতিয়ে দেখতে হয়েছে৷

এছাড়া সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে রিপাবলিকান দলের কংগ্রেস অনুষ্ঠানের সময় ডোনাল্ড ট্রাম্পের স্ত্রী মেলানিয়া ট্রাম্পের বিরুদ্ধে বর্তমান ফার্স্ট লেডি মিশেল ওবামার বক্তব্য নকল করার অভিযোগ ওঠে৷ সেদিনই টুইটারে অন্য আরেকটি টুইট ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায়৷ তাতে দেখা যাচ্ছে, বর্তমান প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ২০১২ সালে ডেমোক্রেটিক দলের কনভেনশনে তাঁর স্ত্রীর দেয়া বক্তব্য নিয়ে একটি টুইট করেছেন৷ সেই একইরকম টুইট এবার করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্পও! কিন্তু আসলে বিষয়টি অন্য৷ ট্রাম্পের টুইট ঠিক থাকলেও ওবামা ঐ সময় এরকম টুইট করেননি! ওবামার টুইটটি একটু খেয়াল করলেই দেখা যায়, সেখানে তারিখ হিসাবে ২০১২ সালের ১৯ জুলাইয়ের কথা বলা আছে৷ কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে, ঐ সময় ডেমোক্রেটদের কনভেনশনই অনুষ্ঠিত হয়নি!

খেয়াল করে দেখুন টুইটটি কিন্তু ৪৩২ বার রিটুইট হয়েছে!

শেষ কথা

নতুন কিছু এলে তার ইতিবাচক ও নেতিবাচক দু'টি দিকই থাকে৷ কথাটি নতুন প্রযুক্তির ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য৷ যেমন কম্পিউটার, স্মার্টফোন আসায় যেমন সুবিধা হয়েছে তেমনি এর খারাপ দিকও আছে অনেক৷ আপনি কোন দিকটি নেবেন সেটা পুরোপুরি নির্ভর করছে আপনার উপর৷ একই কথা বলা যায় সাংবাদিকতার ক্ষেত্রেও৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য