1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান
স্বাস্থ্য

স্বেচ্ছামৃত্যুতে সহায়তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিচ্ছে জার্মানি

১৫ এপ্রিল ২০১৯

মৃত্যুপথযাত্রী রোগীরা স্বেচ্ছায় জীবনাবসান ঘটাতে চাইলে ডাক্তার সহযোগিতা করতে পারবে কিনা তা নিয়ে সিদ্ধান্ত জানাবে জার্মানির উচ্চ আদালত৷ দেশটির বিদ্যমান আইন নিয়ে চলমান বিতর্কের প্রেক্ষিতে এ সপ্তাহে শুনানি শুরু হচ্ছে আদালতে৷

https://p.dw.com/p/3GnCT
Deutsches Grundgesetz und Kreuz, Symbolfoto Sterbehilfe und Gesetz
ছবি: picture alliance/chromorange/C. Ohde

 স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে চাওয়া রোগীদেরকে ডাক্তাররা সহযোগিতা দিতে পারবেন কিনা তা নিয়ে ২০১৫ সাল থেকে বিতর্ক চলছে জার্মানিতে৷ সে বছর দেশটির সংসদ এ বিষয়ক একটি আইন পাস করে৷ আইনটির মাধ্যমে মৃত্যু ঘটাতে পারে এমন ঔষধের পরামর্শ দেয়া বেআইনি ঘোষণা করা হয়৷ ২০১৭ সালের একটি রায়ে শুধু শেষ অবস্থায় থাকা রোগীদের স্বেচ্ছামৃত্যুতে সহযোগিতা দেয়ার আদেশ দেয় ফেডারেল আদালত৷ কিন্তু কর্তৃপক্ষ এই রায়ের যথাযথ প্রয়োগ না করায় রাজনৈতিক দল ও সরকারের বিভিন্ন অঙ্গপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে বিতর্ক তৈরি হয়৷

জার্মানিতে ১৯৯৬ সাল থেকেই অবশ্য স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণে পরোক্ষ সহযোগিতা দেয়ার বৈধতা রয়েছে৷ আইনে বলা হয়েছে, মৃত্যুপথযাত্রী রোগীরা ডাক্তারের পরামর্শে ব্যাথানাশক ঔষধ গ্রহণ করতে পারবেন, যা হয়ত পরবর্তীতে তাঁর জীবনাবসান ঘটাতে পারে৷ তবে এক্ষেত্রে রোগী যেই ডাক্তারের অধীনে থাকবেন, তাঁকে আইনি বা পেশাগত জবাবদিহিতার মুখোমুখিও হতে হবে৷

রোগীদের স্বেচ্ছামৃত্যুতে আরেকটি আইন পাস হয় ২০০৯ সালে৷ সেখানে চিকিৎসার ব্যাপারে রোগীদের নিজেদের সিদ্ধান্ত নিজেদেরই নেয়ার অধিকার দেয়া হয়৷ সে অনুযায়ী কোনো রোগী চাইলে চিকিৎসকের পরামর্শ প্রত্যাখ্যান করতে পারেন, যা হয়তো পরবর্তীতে তাঁকে মৃত্যুর পথে ঠেলে দিতে পারে৷ এটি মূলত রোগীকে ‘লাইফ সাপোর্ট' দেয়া বা কৃত্রিমভাবে বাঁচিয়ে রাখার সিদ্ধান্তের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হয়ে আসছিল৷

তবে জার্মানিতে সরাসরি ‘আত্মহত্যা'য় সহযোগিতা দেয়া বেআইনি৷ ২০১৫ সালের আইনে জীবনাবসান হতে পারে, এমন ঔষধের পরামর্শ দেয়া এবং বিক্রিও নিষিদ্ধ ঘোষণা করা হয়৷ কোনো ডাক্তার, সংগঠন বা ব্যক্তি তা অমান্য করলে তার ৫ বছর পর্যন্ত কারদণ্ড হতে পারে৷ আইনটি নিয়েই মঙ্গল ও বুধবার দেশটির আদালতে শুনানি শুরু হচ্ছে৷ এর মাধ্যমে রোগীদের ব্যক্তিস্বাধীনতার বরখেলাপ হয় কিনা এবং ডাক্তাররা অন্যায্য শাস্তিভোগ করতে পারেন কিনা, তা নিয়ে আদালতে মৌখিক বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে৷ শুনানি শেষে রায় আসতে কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাসও লাগতে পারে৷

বিতর্ক যে কারণে

কয়েক বছর আগে চরম অসুস্থ এক জার্মান নারী নিজের জীবনাবসান ঘটাতে সুইজারল্যান্ড পাড়ি জমিয়েছিলেন৷ প্রাণঘাতী ‘সোডিয়াম ফেনোবারবিটাল'-এর ডোজ দেয়ার জন্য তার স্বামী আবেদন করলেও জার্মান কর্তৃপক্ষ তা প্রত্যাখ্যান করে৷ এর ভিত্তিতে ২০১৭ সালে লাইপসিশের ফেডারেল অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ কোর্ট একটি রায় দেয়৷ সেখানে বলা হয়, চরম পরিস্থিতিতে সরকার রোগীদেরকে প্রাণঘাতী ঔষধ দেয়ার আবেদন প্রত্যাখ্যান করতে পারবে না৷

‘‘কীভাবে এবং কখন নিজের জীবন শেষ হওয়া উচিত একজন দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত রোগীর সেই সিদ্ধান্ত নেয়ার অধিকার রয়েছে৷'' এমন নির্দেশনা দিয়ে আদালতের রায়ে বলা হয়েছে, ‘‘জার্মানিতে এই অধিকারের প্রয়োগ করতে হবে এবং রোগী স্বাধীনভাবে তাঁর ইচ্ছা প্রকাশ করতে পারবেন এবং সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিতে হবে৷'' 

কিন্তু চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাট দলের অধীনে থাকা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় আদালতের এই রায় বাস্তবায়ন করছে না বলে অভিযোগ রয়েছে৷ দেশটির সংবাদপত্র টাগেস্পিগেল-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৮ সাল পর্যন্ত ১২৩ জন মৃত্যুপথপাত্রী রোগী জীবনবিনাশী ঔষধের আবেদন করেছিলেন, যার একটিও মন্ত্রণালয় অনুমোদন করেনি৷   

এ বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান গত ফেব্রুয়ারিতে দৈনিক ফ্রাঙ্কফুর্টার আলগেমাইনে সাইটুংকে বলেন, ‘‘এর মানে হলো, সরকারি চাকুরিজীবী বা আমার মতো একজন মন্ত্রীকে সিদ্ধান্ত নিতে হবে সরকারের সহযোগিতায় কে মারা যেতে পারবে, কে পারবে না৷ এটা কেউই চাইবে না৷ আর ব্যক্তিগতভাবে এটি আমার জন্য একটি উদ্ভট ব্যাপার৷'' 

এ বিষয়ে এখনো স্পানের মতামতের কোনো পরিবর্তন হয়নি বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রীর একজন মুখপাত্র৷ 

শুনানির কারণ

শুরু হতে যাওয়া মামলার শুনানিটি জার্মানিতে বিশেষ গুরুত্ব পাচ্ছে, কেননা, এর সাথে ডাক্তার, প্রতিষ্ঠান, রোগীসহ মোট ছয়টি পক্ষ জড়িত৷ এই কারণে মৌখিক বিতর্কের জন্য একদিনের পরিবর্তে দুইদিন সময় রাখা হয়েছে৷ রোগীর স্বেচ্ছা-মৃত্যুর অধিকার, নাগরিকদের রক্ষায় সরকারের দায়িত্ব, সেই সঙ্গে চিকিৎসক, রাজনীতিবিদদের অবস্থান সব মিলিয়ে মামলাটির মাধ্যমে নতুন করে বিতর্ক তৈরি হতে যাচ্ছে৷ ‘‘বর্তমান ব্যবস্থাটি চিকিৎসক ও নার্সদের কাছে অগ্রহণযোগ্য৷ ২০১৫ সালের বিধি অনুযায়ী স্বেচ্ছায় মৃত্যুবরণ করতে যাওয়া রোগীর সাথে সংশ্লিষ্টতা থাকলে তাঁরা শাস্তির আওতায় পড়বে,'' বলেন ফ্রি ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা কাটরিন হেলিং-প্লার৷ তাঁর মতে, ‘‘ এটি অযৌক্তিক এবং কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়৷ আমি জীবনসায়াহ্নে নিজের সিদ্ধান্ত নিজে নেয়ার ক্ষমতা এবং চিকিৎসক ও সুশ্রুষাকারীর আইনি সুরক্ষা চাই৷''         

সেচ্ছায় মৃত্যুর এমন বিধান অবশ্য ইউরোপের অনেক দেশেই চালু রয়েছে৷ বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস, লুক্সেমবুর্গে চিকিৎসকরা রোগীকে এমন মৃত্যুতে সহযোগিতা করতে পারে৷ অবশ্য দেশভেদে নিয়মের পার্থক্য রয়েছে৷ সুইজারল্যান্ডে ডাক্তাররা সরাসরি স্বেচ্ছামৃত্যুতে সহায়তা দিতে পারেন না, তবে মৃত্যুপথযাত্রীদের প্রাণনাশক কিছু ঔষধের পরামর্শ দিতে পারেন৷ গত বছর পরিচালিত এক জরিপে ৬৩ ভাগ জার্মানও এমন ব্যবস্থার পক্ষে মতামত দিয়েছেন৷ 

অস্টিন ডেভিস/এফএস