1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অদ্ভুত হোটেল এক

১৯ আগস্ট ২০১০

মাথার ওপরে ছাদ নেই, নেই দরজা-জানালাও৷ বিশ্বাস না হলেও, এমনই একটি হোটেল রয়েছে জার্মানিতে৷ যেখানে ছাদ হলো আকাশ, আর ফসলের মাঠ হলো শয্যা৷

https://p.dw.com/p/OrJ5
খোলা আকাশের নিচে সেই হোটেল, ফসলের মাঠে সেই শয্যাছবি: picture alliance/dpa

গত শতকের ৭০ এর দশকের কথা৷ জার্মান পপতারকা ইয়ুর্গেন দ্রেভস একটি গান শুনিয়েছিলেন, অবারিত সবুজের মাঠে শয্যা পাতার ইচ্ছা নিয়ে, রাতের আকাশের তারাগুলোর সঙ্গী হয়ে৷ গানটি মনে ধরেছিল বাভারিয়ার মনিকা ফ্রিৎসের৷ এই রকমটা করলে কেমন হয় - ভাবতে থাকেন মনিকা৷ শুরুতে নিজের জন্য, পরে মনে হলো, সবার জন্য করলে কেমন হয়৷

দ্রেভস-এর গানটি মনিকা শুনেছিলেন ১০ বছর আগে ৷ শোনার পর কেমন লেগেছিল, তা শোনা যাক মনিকার জবানিতেই, ‘‘তখন ২০০০ সাল৷ গ্রীষ্মের ছুটিতে কোথায় যাব, তাই ভাবছিলাম৷ সেই সময়ই হঠাৎ একদিন রেডিওতে ভেসে আসে দ্রেভস-এর সুর৷ ভালো লাগলো৷ মনে হলো, এই রকমভাবে সবুজের মাঝে রাত কাটাইনি কেন?'' তারপরই একটি হোটেল তৈরির কাজে লেগে গেলেন মনিকা৷ একদম দ্রেভস-এর গানের মতো৷

বাভারিয়ার লোয়ার ফ্রাঙ্কোনিয়া জেলায় গড়ে উঠেছে মনিকার হোটেল, মানে এক ধরনের অবকাশ কেন্দ্র৷ তবে অন্য হোটেলের মতো সেখানে ছাদ নেই৷ সেখানে আকাশই নীল চাঁদোয়া হয়ে আছে৷ হোটেল করার জন্য ফসলি মাঠের প্রয়োজন পড়লো, মনিকা কথা বললেন স্থানীয় কৃষক ওটো ফাঙ্কের সঙ্গে৷ পরিকল্পনা হল, ওটোর যে গম ক্ষেতটি আছে, তাতেই হবে হোটেল৷ ফসল কাটার পর যে খড় থাকবে তাতে হবে শয্যা৷ তাঁদের এই পরিকল্পনার কথা শুনে সবাই হেসেই খুন৷ এটা চলবে না - বলাবলি করছিল মনিকার বন্ধুরা৷ শুরুটা ভাল হয়নি, জানালেন মনিকাই৷ তবে তাতেও হাল ছাড়েননি তিনি৷

Jürgen Drews
জার্মান পপতারকা ইয়ুর্গেন দ্রেভসছবি: picture-alliance/ dpa

এখন অবশ্য সেই হোটেলটিতে যান অনেকেই৷ ২০টি শয্যা আছে, প্রতি রাতের জন্য ভাড়া গুনতে হয় তিন থেকে সাত ইউরো৷ মনিকা জানালেন, এই বছরেই ৪০০টি বুকিং পেয়েছিলেন তিনি৷ বললেন, ‘‘যাঁরা একবার এখানে আসেন, তাঁরা আসতে চান বারবার৷'' নাগরিক জীবনের সুবিধাগুলো নেই এই হোটেলে, আর সে সুবিধাগুলো দেওয়ার কোনো ইচ্ছাও নেই মনিকার৷ বললেন, ‘‘আমাদের এখানে মানুষ আসে প্রকৃতির একদম কাছাকাছি থাকতে৷ তাঁদের সেই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করতে চাই না৷''

এই হোটেলে থাকতে কেমন লাগছে জানালেন রেগিনা হান৷ বললেন, ‘‘ভাল, অনেক ভাল৷'' রেগিনার ছেলের তো খুশির অন্ত নেই৷ ঘরের বাইরে এভাবে ঘুমানোর কথা ভাবতেই পারেনি সে৷ ১১ বছর বয়সি ম্যানুয়েল ম্যুলার বলল, ‘‘জানেন রাতে অনেক রকমের জন্তুর ডাক শুনেছি৷ ভয় পাচ্ছিলাম, আবার এই ভয়ভয় ভাবটাও ভাল লাগছিল৷''

মনিকার এই হোটেলটি খোলা থাকে শুধু গ্রীষ্মকালেই৷ তাও দুই সপ্তাহের জন্য৷ আর সবচেয়ে বড় কথা হল, হোটেলটি খোলা রাখা হবে কি, রাখা হবে না - সে সিদ্ধান্ত মনিকার ওপর নির্ভর করে না৷ এই জন্য চেয়ে থাকতে হয় আকাশ পানে৷ আবহাওয়াই ঠিক করে দেয়, তা কখন খোলা থাকবে৷

প্রতিবেদন: মনিরুল ইসলাম

সম্পাদনা: দেবারতি গুহ