1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অন্তর্জাল থেকে গায়েব হবার অধিকার নিয়ে বিতর্ক

১৭ নভেম্বর ২০১০

গুগল-এ আপনার নিজের নাম লিখে খোঁজ করেছেন কখনো? কিংবা ফেসবুক থেকে অ্যাকাউন্ট মোছার চেষ্টাই বা কখনো করেছেন কি? উত্তর যদি হ্যাঁ হয়, তাহলে নিশ্চয়ই কিছু ব্যাপার অবাক করেছে আপনাকে৷

https://p.dw.com/p/QAzC
ইন্টারনেটের থাবা থেকে রেহাই পাওয়া কঠিনছবি: picture-alliance/ dpa

কেননা, ইন্টারনেট জগত এখন অনেক চতুর৷ কোন না কোনভাবে আপনার তথ্য একান্ত নিজের করে নিচ্ছে গুগল, ফেসবুকের মতো সংস্থাগুলো৷ এই যেমন, গুগল তার তথ্য ভাণ্ডারে জমা রাখে আপনার নাম, পরিচয়, পছন্দ, অপছন্দ থেকে নানা কিছু৷ এরপর নিজের কম্পিউটারে বসে আপনি যখন কিছু খোঁজেন, তখন আপনার পছন্দের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ খোঁজের ফলাফল দেখানোর চেষ্টা করে গুগল৷ সঙ্গে থাকে বিজ্ঞাপনের তালিকা, যাও তৈরি আপনার পছন্দের দিক বিবেচনা করে৷ গুগল প্রধান এরিক স্মিটও কিন্তু স্বীকার করেছেন সে কথা৷ তিনি বলেন, ‘‘আমরা যেটা জানি, সেটি হচ্ছে আপনি ইন্টারনেটে কি খুঁজছেন৷ আপনার খোঁজের বিষয়গুলো আমরা এক থেকে দেড়বছরের মতো জমা রাখি৷ তারপর ভুলে যাই৷''

গুগলের গর্ব

গুগল প্রধান বেশ গর্ব করেই দিনকয়েক আগে বলেন, গুগল জানে আপনি কোথায় আছেন, কি করছেন এবং কি ভাবছেন৷ তাই বর্তমান প্রজন্ম যারা কিনা ইন্টারনেটে বেশি বেশি তথ্য জমা রাখছে, ভবিষ্যতে তারা গুগলের কাছ থেকে আলাদা হতে চাইলে তাদের হয়তো নামটাই বদলাতে হবে৷

আপাতদৃষ্টিতে গুগলের এই তথ্য জমা রাখার বাণিজ্য আপনার কাছে গুরুত্বপূর্ণ নাও হতে পারে৷ কিন্তু তথ্য অধিকার নামক একটি বিষয় কিন্তু পশ্চিমা বিশ্বে বেশ আলোচিত৷ আপনার ব্যক্তিগত তথ্য কোথায় থাকবে, কিভাবে থাকবে, কেনই বা থাকবে তা জানার অধিকার আপনার থাকা উচিত৷ গুগল কিংবা ফেসবুক কিন্তু আপনার এই অধিকারকে তোয়াক্কা করছে না৷ বরং ফেসবুকের অ্যাকাউন্টটা আপনি যখন ডিলিট করে দেন, ফেসবুক তারপরও সেই অ্যাকাউন্টের সব তথ্য জমা রাখে৷ নিয়মিত বিরতিতে ই-মেলে আপনাকে উদ্বুদ্ধ করে ফিরে আসতে৷

হারায় না কিছুই

নিয়ম অনুযায়ী, আপনি যখন ইন্টারনেট থেকে কোন কিছু মুছবেন তখন সেটা পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়াটাইতো উচিত৷ সবুক কিংবা গুগলের মতো সংস্থাগুলো কেন জোর করে আপনার তথ্য জমা করে রাখবে? কেনইবা ইন্টারনেট বিজ্ঞাপন সাজাতে ব্যবহার করা হবে আপনার তথ্য৷

ঠিক এই প্রশ্নটা নিয়েই এখন গরম ইউরোপ৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিচার বিষয়ক প্রধান ভিভিয়ান রেডিং তাই জানিয়েছেন, ইন্টারনেট থেকে পুরোপুরি হারিয়ে যাওয়ার অধিকার মানুষকে দিতে হবে৷ মানে, কেউ যদি চান যে, ইন্টারনেটে তিনি তার নিজের কোন তথ্য রাখবেন না, সেটা যেন তিনি পুরোপুরি করতে পারেন৷

Kombobild Facebook Google Logo
আপনার সম্পর্কে তথ্য রয়েছে তাদের কাছেছবি: Montage DW

পুরনো তথ্য আইন

কিন্তু সমস্যা হচ্ছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের তথ্য অধিকার বিষয়ক আইন খানিকটা পুরনো৷ ১৯৯৫ সালে অনুমোদিত সেই আইন বর্তমান ইন্টারনেট জগতের অনেক কিছুই রুখতে সক্ষম নয়৷ তাই রেডিং তথ্য অধিকার সুরক্ষার এই আইনকে বর্তমান অবস্থার সঙ্গে সঙ্গিতপূর্ণ করার পক্ষে৷ তিনি বলেন, মানুষের অধিকারের নিশ্চয়তা দিতে আমাদের পরিষ্কার এবং দৃঢ় আইনি কাঠামো প্রয়োজন৷ তাছাড়া নতুন প্রযুক্তি আর বিশ্বায়নের ফলে যে চ্যালেঞ্জ তৈরি হয়েছে তার মোকাবিলা করতেও বর্তমান অধিকার আইনের সংস্কার করতে হবে৷

ফেসবুক বিতর্ক

ইউরোপে তথ্য অধিকারের এই বিষয়টি কিন্তু হঠাৎ করে আসেনি৷ বরং ফেসবুকের কারণে মানুষের চাকরি হারানোসহ বিবাহ বিচ্ছেদের নানা ঘটনা ভাবিয়ে তুলেছে মানুষকে৷ তাছাড়া ফেসবুকে আত্মহত্যার পরিমাণও বেড়েছে সাম্প্রতিককালে৷ তাই ফেসবুকের মতো সংস্থা যাতে জোর করে মানুষের তথ্য জমা করে রাখতে না পারে, সেদিকটাই জোর গুরুত্ব দিতে চায় ইইউ৷

Symbolbild Datenschutz
তথ্য অধিকার বিষয়ক আইন আজকের যুগের জন্য অচলছবি: Bilderbox

আইনের সংস্কার

তথ্য অধিকারের কোন কোন দিক সংস্কার প্রয়োজন তা নিয়ে আগামী দু'মাস কাজ করবে ইইউর বিশেষ কমিটি৷ এরপর ২০১১ সাল নাগাদ আধুনিক তথ্য অধিকার আইন পাবে ইউরোপের জনগণ৷

কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায়৷ অনেকেই মনে করেন, বর্তমান অনলাইন কাঠামোতে কোন কিছুই নাকি একেবারে মুছে ফেলা সম্ভব নয়৷ কেননা, কোন না কোন কম্পিউটার সার্ভারে জমা থেকে যায় সেসব তথ্য৷ ফলে যেকারো তথ্য একেবারে মুছে ফেলাতা কতটা সম্ভব তা বিতর্কের বিষয়৷ এখন দেখা যাক, ইউরোপের বিশেষজ্ঞরা কি ধরনের আইনী সমাধান নিয়ে হাজির হন৷

প্রতিবেদন: আরাফাতুল ইসলাম
সম্পাদনা: আব্দুল্লাহ আল-ফারূক