1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অন্যকে বিব্রত করাই যেন আমাদের উৎসব

১ জানুয়ারি ২০২০

ক্যালেন্ডারের পাতা বেয়ে নতুন বছর এসেছে যেমন প্রায়ই ঘড়ির কাঁটা ধরে নতুন ঘণ্টা আসে৷ বছরের আগমন কি উৎসবের উপলক্ষ হতে পারে, ২০১৯ গড়িয়ে ২০২০-এ কি মনে উদযাপনের ঢেউ আসে? আমার আসে না, কিন্তু কারো কারো বা অনেকেরই আসে নিশ্চয়৷

https://p.dw.com/p/3VYxG
London | Feuerwerk Neujahr 2020
ছবি: Reuters/H. Nicholls

কিন্তু সেই বছর ইংরেজি-রোমান-গ্রেগরিয়ান না বাংলা, হালাল-হারাম না বিদাত তা নিয়ে আমাদের তর্ক চলে, চলতেই থাকে৷ আসলে উৎসব করতে আমরা আদৌ জানি কিনা তাই আমি ভালো জানি না৷ কারণ, প্রতি উৎসবের আগেই আমাদের বড় ভাবনা হয়ে দাঁড়ায় আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক থাকবে তো, নানা ছলছুতোয় আমাদের মেয়েদের লাঞ্ছনার মধ্যে দিয়ে যেতে হবে না তো ইত্যাদি ইত্যাদি৷ এবং অতি অবশ্যই উৎসবের আগে কথা ওঠে অমুকটি কি আমাদের সংস্কৃতির সঙ্গে যায়, তমুকটি কি আমাদের ঈমান আর আক্বীদায় পাস করে বা সেই উদযাপন কি সাম্প্রদায়িক বা যথেষ্ট মানবিক?

সব বিষয়ে ৮০-র উপরে না পেলে আমাদের জিপিএ ফাইভ হবে না বলে আমরা সবকিছুতেই সারাক্ষণ ভালো করতে বা প্রপার রাখতে চেষ্টা করি৷ সব মিলিয়ে আমরা সবাই একেকজন নীতিপুলিশ যার কাজ হলো নিজেকে ছাড়া অন্য সবকিছুকে জাজ করা৷

যাক উৎসবের কথায় ফিরে আসি৷ কোনো কিছুই যেহেতু আমরা তর্কের বাইরে রাখতে পারি না, তাই উদযাপনও করি আমরা কিন্তু কিন্তু করে, বিষণ্ণ মনে, অন্তরে ঢেকে রেখে আদিপাপ৷ ঠিক যেন স্কুল বা মসজিদ পালিয়ে এক টিকিটে এক বা দুই ছবি দেখার মতো৷ উৎসব আমাদের জন্য পাপ, তাই আমাদের আনন্দে সরলতা নেই, আছে অন্যকে বিব্রত করার ফাঁদে ফেলার অন্যকে কুপোকাত করার এক সম্মিলিত গোপন ইচ্ছার বহিপ্রকাশ৷ তাই নববর্ষের ভিড় ঘেঁষে মেয়েদের গায়ে হাত দেয়া বা হ্যাপি নিউ ইয়ারে টেনে হিঁচড়ে কারো কাপড় খুলে ফেলার মধ্যেই আমাদের আনন্দ, বীরত্ব, মহত্ত্ব৷

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন, প্রধান, ডয়চে ভেলে বাংলা বিভাগছবি: DW/P. Böll

আর রাষ্ট্রীয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাজ হলো ধরপাকড় করে বা ভয় দেখিয়ে উৎসবকে তালা মেরে ঘরবন্দি করে দেওয়া৷ তা সেটা ধর্মীয়, জাতীয় বা আন্তর্জাতিক যে উৎসবই হোক না কেন৷ তবে প্রতিবারই তারা শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হন, যেমন গত রাতে৷ ঢাকায় এত ফানুস উড়েছে, এত বাজি পুড়েছে যে কেউ কেউ দাবি করছেন এরকমটি তারা সারাজীবনে দেখেননি৷ আমরা আগে পুলিশের বড় কর্তাদের মুখে শুনেছিলাম ওইসব বাজি পটকা নাকি নিষিদ্ধ৷ এর সঙ্গে ইদানীং যোগ হয়েছে বড় বড় মাইকে গান বাজানোর এক অদ্ভুত প্রতিযোগ৷ ইদানীং বলছি এ কারণে যে, আগে মাইকের এত জোর ছিল না৷ শুধু গতকাল রাতে নয় যেকোনো বিয়ে, সব হলুদে গান বাজিয়ে পাড়া-প্রতিবেশীর পিলে চমকে দেওয়া এখন একটি অবশ্যকরণীয় উৎসবের আচার৷

আচ্ছা আমরা কি একটু উৎসবগুলো নিয়ে ভাবতে পারি, মানে থার্টি ফার্স্ট নাইট করতেই হলে রাষ্ট্রীয়ভাবে নদীর পাড় বা মাঠের ধার জাতীয় কোনো জায়গা নির্দিষ্ট করে দেওয়া৷ যেখানে ইচ্ছুক নারী-পুরুষ হাজির হবেন, বাজি/পটকা ফুটাতে চাইলে অনেক দাম দিয়ে কিনে তা করবেন, পুলিশ বাহিনী খুব চেক টেক করে তাদের ঢোকাবেন, দরকার হলে অনেকগুলো ওয়াচ টাওয়ার করে আর ফ্লাড লাইট দিয়ে সবার প্রতি নজর রাখবেন৷ আর ওইখানে গিয়ে যদি কারো ধর্ম চলে যায়, সংস্কৃতি যদি মুখ থুবড়ে পড়ে, আমরা কোনোমতে তাদের যেন মাফ করে দেই বা ভুলে যাই৷ আমরা মনে রাখি, অন্যের বিপত্তির কারণ না হয়ে কিছু করার স্বাধীনতা তার রয়েছে৷ এতে করে ইহকালে সর্দি আর পরকালের গর্মির দায়ও তাকেই নিতে দেওয়া উচিত আমাদের৷ পরম করুণাময় আমাদের বিচারক করে পাঠান নাই বলে বিচারের দায়ও আমাদের নয়৷

Khaled Muhiuddin
খালেদ মুহিউদ্দীন ডয়চে ভেলের বাংলা বিভাগের প্রধান। ২০ বছরেরও বেশি সময় ধরে সাংবাদিকতার সঙ্গে যুক্ত।