1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অপারেশেনের সময় রক্তক্ষরণ কমানোর উদ্যোগ

১৭ জুন ২০১৯

জটিল অস্ত্রোপচারের সময় রক্তক্ষরণের ফলে রোগীর প্রাণসংশয় হতে পারে৷ কিন্তু এমন পরিস্থিতি এড়াতে একাধিক পদক্ষেপ নেওয়া সম্ভব৷ জার্মানিতে এ নিয়ে নানারকম ভাবনাচিন্তা চলছে৷ একটি প্রক্রিয়া বেশ কার্যকর হচ্ছে৷

https://p.dw.com/p/3KZFz
Symbolbild Bluttransfusion
ছবি: picture alliance/ZB

রাল্ফ এয়ারমার্ট বাইপাস অপারেশনের জন্য প্রস্তুত হচ্ছেন৷ এমন অস্ত্রোপচারের সময় অনেক রক্তক্ষরণের ঝুঁকি থাকে৷ তাই এই প্রক্রিয়াকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেন তিনি৷ রোগী হিসেবে রাল্ফ এয়ারমার্ট নিজের ভয়ের কথা লুকোচ্ছেন না৷

অপারেশনের সময় রক্তের প্রয়োজন হলে তার ব্যবস্থা থাকে৷ কিন্তু ফ্রাংকফুর্ট শহরের বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে সেই প্রয়োজনীয়তা দূর করার চেষ্টা চলছে৷ প্রো. পাট্রিক মাইবোম এ বিষয়ে বলেন, ‘‘বিশেষ করে বড় ধরনের অপারেশন ম্যারাথন রেসের মতো৷ আমরা খেলাধুলার মতোই রোগীদের তার জন্য প্রস্তুত করার কথা বলি৷ রক্তক্ষরণের প্রসঙ্গে মনে রাখতে হবে, যে ব্লাড পিগমেন্ট, হিমোগ্লোবিনের মাত্রা বড় ভূমিকা পালন করে৷ অপারেশনের আগে সেই মাত্রা যত বেশি হবে, অপারেশন চলাকালীন রক্তক্ষরণ হলে তার বাফার তত বেশি হবে৷''

রক্তের থলির প্রয়োজন তার উপরেই নির্ভর করে৷ সে কারণে ফ্রাংকফুর্ট ও গ্রাইফসভাল্ড শহরে অপারেশনের আগেই রোগীর শরীর থেকে রক্ত নিয়ে তাতে আয়রন যোগ করা হয় এবং কোয়াগুলেশন ডিসঅর্ডার বা রক্ত জমাট বাঁধার সম্ভাবনার মাত্রা পরিমাপ করা হয়৷ কারণ অন্যের রক্ত শরীরে প্রবেশ করলে সব সময়ে একটা ঝুঁকি থাকে৷ গ্রাইফসভাল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গ্রেগর ইয়েনিশেন বলেন, ‘‘বাইরে থেকে রক্ত গ্রহণ করলে আমাদের শরীরে অন্যের কোষও প্রবেশ করে৷ অঙ্গ প্রতিস্থাপনের সঙ্গে এর তুলনা করা যেতে পারে৷ শরীরের প্রতিরোধ ক্ষমতার উপর তার প্রভাব পড়ে৷'' 

একই ব্লাড গ্রুপ থাকা সত্ত্বেও শরীরের মধ্যে প্রতিরোধের প্রবণতা দেখা দিতে পারে৷ জ্বর, রক্তক্ষরণ অথবা বমি বমি ভাব দেখা দিতে পারে৷ ফ্রাংকফুর্ট বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রো. কাই সাখারভস্কি বলেন, ‘‘আমরা জানি, মানুষ অনেক রক্তদান করলে তার শরীরের সার্কুলেশন বা রক্ত চলাচল প্রক্রিয়ার উপর চাপ পড়ে৷ এমনকি পালমোন্যারি এডেমা হতে পারে৷ সে কারণে অত্যন্ত সতর্ক থাকা জরুরি৷ রোগীর ঠিক যতটা রক্তের প্রয়োজন, তার থেকে বেশি দেওয়া উচিত নয়৷''

এ ক্ষেত্রে পরিমিত মাত্রাই ভালো৷ ফ্রাংকফুর্টের ডাক্তারদের নতুন এক গবেষণায় এমনটাই দেখা যাচ্ছে৷ তাঁরা প্রায় ২ লক্ষ ৩৫ হাজারেরও বেশি অপারেশন সংক্রান্ত তথ্য বিশ্লেষণ করেছেন৷ তার মধ্যে অর্ধেক ‘পেশেন্ট ব্লাড ম্যানেজমেন্ট' নামের রক্ত সঞ্চয়ের প্রক্রিয়া চালু করার আগে, বাকি অর্ধেক এই প্রক্রিয়া চালু করার পরে হয়েছিল৷ দেখা গেল, নতুন পদ্ধতির কারণে ট্রান্সফিউশনের হার ৩৯ শতাংশ কমে গেছে৷তাছাড়া এর ফলে রোগীরা আগেই হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাচ্ছেন৷ গড়ে আধ দিন আগেই তারা যথেষ্ট সুস্থ বোধ করছেন৷ শারীরিক জটিলতা ২০ শতাংশ কমে গেছে৷ মৃত্যুর হারও ১১ শতাংশ কমে গেছে৷ প্রো. পাট্রিক মাইবোম বলেন, ‘‘এটা সত্যি বিশাল ঘটনা বটে৷ এর ফলে প্রথমবার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, যে সার্বিক পরিকল্পনার ক্ষেত্রে শুধু রক্তের ব্যাগের প্রয়োজনীয়তা কমছে না, রোগীরাও সরাসরি আরও সুবিধা পেতে পারেন৷''

পেশেন্ট ব্লা়ড ম্যানেজমেন্ট-এর মূলমন্ত্র হলো, অপারেশনের আগে, অপারেশন চলাকালীন এবং অপারেশনের পর রক্তক্ষরণ বন্ধ করতে সবরকম চেষ্টা করতে হবে৷

যেমন এই লক্ষ্যে ডাক্তাররা অপারেশন চলাকালীন তথাকথিত ‘সেল সেভার' প্রয়োগ করতে পারেন৷ সেই যন্ত্র রোগীর রক্তক্ষরণের সময়ে রক্ত সংগ্রহ করে সেই রক্ত পরিশুদ্ধ করে আবার তার শরীরে ফিরিয়ে দেয়৷ অথবা তাঁরা রোগীর শরীর কম্বল দিয়ে ঢেকে উষ্ণ রাখার চেষ্টা করেন৷ গ্রাইফসভাল্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ড. গ্রেগর ইয়েনিখেন মনে করেন, ‘‘রোগীর শরীর উষ্ণ রাখার মাধ্যমে রক্ত জমাট বাঁধার মতো পরিস্থিতি এড়ানোর চেষ্টা করা যায়৷ তখন অপারেশনের সময় রোগীর কম রক্তক্ষরণ হয়৷''

কারণ শরীরের তাপমাত্রা ২৬ ডিগ্রির বেশি হলে প্লেটলেট ঠিকমতো কাজ করে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক থাকে৷ ফলে রক্তক্ষরণ প্রতিরোধ করা সম্ভব হয়৷ রক্তক্ষরণ ও অপ্রয়োজনীয় ব্লা়ড ট্রান্সফিউশন এড়াতে পারলে জার্মানির হাসপাতালগুলির সুবিধা হবে৷ ফ্রাংকফুর্ট শহরের বিজ্ঞানীরা ছোট আকারের লাইফ-সাপোর্ট যন্ত্র সৃষ্টি করেছেন, যা প্রয়োগ করলে কম রক্তের প্রয়োজন হয়৷ রক্ত সংরক্ষণের টিউবের আকার ছোট হলে অপারেশনের পরেও রক্তক্ষরণ এড়িয়ে চলা সম্ভব৷

নাদিন বেকার/এসবিউচ্চরক্তচাপ এক নীরব ঘাতক