1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

পুলিশের জালে ভারতীয় জঙ্গি

অনিল চট্টোপাধ্যায় নতুন দিল্লি
২৭ জানুয়ারি ২০১৮

আসল নাম আবদুল শুভান কুরেশি, ওরফে তাউকির৷ ভারতের বিন লাদেন বলে পরিচিত ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের এই সহ-প্রতিষ্ঠাতা আটক হয় গত শনিবার৷ ২০০৮ সালের গুজরাট ধারাবাহিক বিস্ফোরণসহ বেশ কয়েকটি জঙ্গি কার্যকলাপের মূল চক্রী সে৷

https://p.dw.com/p/2rYvt
ছবি: DW/A. Chatterjee

দীর্ঘ ১০ বছর গা ঢাকা দেয়ার পর, ভারতের সাধারণতন্ত্র দিবসের ঠিক আগে দিল্লি ও উত্তর প্রদেশ সীমানার গাজিপুরে ভারতের জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে গুলি বিনিময়ের পর ধরা পড়ে ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ৪৬ বছর বয়সি আবদুল শুভান কুরেশি৷ জঙ্গি দলে তাকে সবাই চেনে ভারতের ওসামা বিন লাদেন বলে৷ গোয়েন্দা ও পুলিশের খাতাতেও ঐ নামের উল্লেখ আছে৷ দিল্লির আদালত তাকে ১৪ দিনের পুলিশ হেফাজতে রাখার নির্দেশ দেয়৷ পুলিশের দাবি, ছত্রভঙ্গ হয়ে যাওয়া ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন (আইএম) সংগঠনকে আবার ঐক্যবদ্ধ করার কাজে বছর দুই আগে নেপাল থেকে কুরেশি গোপনে ঢোকে ভারতে৷ ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে থাকা আইএম-এর স্লিপার সেলগুলিক ফের চাঙ্গা করার কাজ শুরু করে শুভান৷ শুক্রবার গোয়েন্দা-পুলিশের কাছে খবর আসে সুভান দিল্লির কাছে গাজিপুরে আসছে স্টুডেন্টস ইসলামিক মুভমেন্ট অফ ইন্ডিয়া সংক্ষেপে সিমির সমর্থকদের সঙ্গে বৈঠক করতে৷

Indien Gazipur Slum - wo Militär und Polizei aufeinander trafen
দিল্লি পুলিশের সন্দেহ, সংগঠনের কাজে শুভান গাজিপুরে ঘাঁটি গাড়েছবি: DW/A. Chatterjee

সিমি ভারতে নিষিদ্ধ ঘোষিত এক ইসলামিক জঙ্গি সংগঠন৷ শুভম কুরেশি ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন ব আইএম সংগঠনের প্রথম সারিতে উঠে আসে গুজরাটের ধারাবাহিক বিস্ফোরণের সময়৷ আমেদাবাদে একের পর এক ২৩টি বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন ৫৬ জন, আহত হন প্রায় ২০০৷ পাশাপাশি ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত দিল্লি, উত্তর প্রদেশ, মুম্বই ট্রেন বিস্ফোরণ এবং রাজস্থানসহ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে একের পর এক ধারাবাহিক বিস্ফোরণ কাণ্ডের পেছনেও তার হাত ছিল বলে গোয়েন্দা-পুলিশের সন্দেহ৷ গোয়ন্দা-পুলিশ তার পিছু নিয়েছে এই ভয়ে সে পালিয়ে যায় নেপালে ছদ্মপরিচয়ে৷ সেখানে আইএম-এর আরেক জন বড় নেতা রিয়াজ ভটকলের সঙ্গে মিলিত হয় সে৷ কয়েকবার শুভান কুরেশি সৌদি আরবেও যায়৷

দিল্লি পুলিশের সন্দেহ, সংগঠনের কাজে শুভান গাজিপুরে ঘাঁটি গাড়ে৷ গোপনসূত্রে খবর পেয়েই অভিযান চালায় পুলিশ বাহিনীর বিশেষ শাখা৷ ভারতের বিন লাদেন শুভান কুরেশি ধরা পড়ায় পুলিশের দাবি, এর ফলে সংগঠনের কাজকর্ম বড়সড় ধাক্কা খাবে৷ পাশাপাশি এটাও সত্যি শিক্ষিত মুসলিম যুবকরা যেভাবে জঙ্গি সংগঠনগুলিতে যোগ দিচ্ছে, তাতে সরকারের কপালে রীতিমত দুশ্চিন্তার ছাপ৷ এটা একটা বড় চ্যালেঞ্জ বলেই মনে করছে প্রশাসন৷ জঙ্গি নেতা সুভানের পরিচয় কী? কীভাবে এবং কোথা থেকে উঠে এলো সে? আদতে উত্তর প্রদেশের রামপুরের বাসিন্দা সুভান৷ আপাত নিরীহ শুভন কুরেশি পুনের ভারতীয় বিদ্যাপীঠ থেকে ইলেকট্রনিক্সে ডিপ্লোমা করে৷ পরে সে চাকরি করতো মুম্বই-এর একটি নাম করা তথ্যপ্রযুক্তি সংস্থায়৷ ইন্ডিয়ান মুজাহিদিনের যোগ দাবার জন্য তার মগজ ধোলাই-এর কাজটা করেছিল অবশ্য ঐ সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য সাদিক ইসরা৷

Indien Gazipur Slum - wo Militär und Polizei aufeinander trafen
দিল্লির গাজিপুর পেপার মার্কেটের কাছে এক বস্তিছবি: DW/A. Chatterjee

গুজরাট বিস্ফোরণের পর সুভান যে ঘাঁটি গেড়েছে নেপালে, তা ভারতীয় গোয়েন্দারা জানতে পারে ২০১০ সালে৷ আইএম-এর এক চাঁই হাসিব রাজাকে জেরা করে৷ কিন্তু পুলিশ হানা দেবার আগেই সে চম্পট দেয় নেপালে৷ তারপর থেকে সে কার্যত আত্মগোপন করে থাকে৷ ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থার অভিযোগ, নেপালে গা ঢাকা দিয়ে থাকার জন্য শুভান পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই-এর মদত পেয়েছিল৷ আবদুল রহমান নামে নেপালি পাসপোর্ট, এমনকি ড্রাইভিং লাইসেন্স পর্যন্ত পেয়েছিল৷ এছাডা় মুম্বই-এ মীরা রোডের বাড়িতে সে মায়ের সঙ্গেও যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়৷ গোয়েন্দা সূত্রে বলা হয়, ২০১৭ সালের মাঝামাঝি সুভান কুরেশি আবার ভারতে ঢোকে৷ আইএম সংগঠনগুলিকে পুনরুজ্জীবিত করতে এবং এ বছরের সাধারণতন্ত্র দিবসের আগে পরে যখন আসিয়ান দেশগুলির নেতাদের নতুন দিল্লিতে উপস্থিত থাকার কথা, তখন একটা অন্তর্ঘাতমূলক কাজ করার ছক ছিল তার কাছে৷

দিল্লির গাজিপুর পেপার মার্কেটের কাছে এক বস্তি এলাকায় গোয়েন্দা-পুলিশ এবং ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন জঙ্গি আবদুল শুভান কুরেশির মধ্যে শনিবার রাত ৯টা নাগাদ যে গুলি বিনিময় হয়, সেখানকার বস্তিবাসীদের সেবিষয়ে জিজ্ঞাসা করলে ডয়চে ভেলেকে তাঁরা বলেন, ‘‘আমরা গরিব মানুষ৷ সারাদিন খেটেখুটে এসে সন্ধ্যার মধ্যেই ঘুমিয়ে পড়ি৷ আমরা গুলির কোনো আওয়াজ শুনিনি৷'' আশপাশে খোলা জায়গায় বস্তির ছেলে-মেয়েরা গুলিডাণ্ডা খেলছে৷ তাদেরও একই কথা৷ ‘‘আমরা কোনো আওয়াজ শুনিনি৷''

তবে কি ওরা ইচ্ছা করেই কিছু বলছে না? পাছে পুলিশের ঝামেলায় পড়তে হয়?

আপনার কী মনে হয়? জানান নীচে, মন্তব্যের ঘরে৷