1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভাবনীয় তাণ্ডবের মধ্যে কৃষি বিল পাস রাজ্যসভায়

২১ সেপ্টেম্বর ২০২০

দুই বিতর্কিত কৃষি বিল রাজ্যসভায় ধ্বনিভোটে পাস করালো মোদী সরকার। আর তা নিয়ে রীতিমতো রণক্ষেত্রের চেহারা নিল রাজ্যসভা।

https://p.dw.com/p/3ilq2
ছবি: picture-alliance/dpa/STR

রোববার রাজ্যসভায় বিতর্কিত কৃষি বিল পাস করানো নিয়ে বদ্ধপরিকর ছিল মোদী সরকার। আর বিরোধীরাও তা আটকাতে মরিয়া ছিলেন। লোকসভায় এই বিল পাস করানোর প্রতিবাদে সরকার ছেড়ে বেরিয়ে এসে নরেন্দ্র মোদীর উপর  চাপ আরো বাড়িয়ে দিয়েছিল প্রকাশ সিং বাদলের অকালি দল। বস্তুত, জেডিইউ, এডিএমকে, ওয়াইএসআর কংগ্রেস, বিএসপি ছাড়া আর বিশেষ কোনো দল এই বিল নিয়ে সরকারের পক্ষে ছিল না। আর অন্য বিরোধীদের সঙ্গে এই বিলের বিরোধিতায় সামিল হয়েছিল বিজু জনতা দল, টিআরএস, অকালি। তারপরেও রাজ্যসভায় সরকারের পক্ষে গরিষ্ঠতা ছিল, তবে খুব কম।

এই অবস্থায় সরকার ঝুঁকি নিতে চায়নি। ডেপুটি চেয়ারম্যান হরিবংশ এসে বিলটিকে ধ্বনিভোটে পাস করাতে উদ্যত হন। তখনই প্রথমে ওয়েলে নামেন তৃণমূল কংগ্রেসের দুই সাংসদ। তারপর অন্য বিরোধী দলের সাংসদরাও ওয়েলে নেমে স্লোগান দিতে থাকেন। উত্তেজনা তুঙ্গে ওঠে। তৃণমূল সাংসদ ডেরেক ও ব্রায়েন ভোটাভুটির দাবি করেন। ডেপুটি চেয়ারম্যান ধ্বনিভোটে বিল পাস করাচ্ছেন দেখে ডেরেক রুলবুক হাতে নিয়ে ওয়েলে নেমে পড়েন। তাঁকে বাধা দেন মার্শালরা।

তারপর শুরু হয় প্রবল গন্ডগোল। রুলবুক ছিঁড়ে উড়িয়ে দেয়া হয়। চেয়ারম্যানের আসনের সামনে তিনটি মাইক ভাঙা হয়। নিজের আসনের উপরে দাঁড়িয়ে পড়েন দুই বিরোধী সাংসদ। মার্শালরা তাঁদের জোর করে নামিয়ে দেন। এক সাংসদকে চ্যাংদোলা করে বাইরে নিয়ে যান মার্শালরা। বিরোধী সাংসদরা চিৎকার করছেন। বিজেপি সাংসদরা প্রতিবাদ করছেন। সব মিলিয়ে রাজ্যসভায় বেনজির কাণ্ড। এই গোলমালের ছবি রাজ্যসভা টিভিতে দেখানো হয়নি। তখন সম্প্রচার বন্ধ রাখা হয়। বিরোধী সাংসদরাইমোবাইলে তুলতে থাকেন সেই ছবি।



টুইটদশ মিনিটের বিরতির পর রাজ্যসভা চালু হলে মার্শাল দিয়ে ডেপুটি চেয়ারম্যানের টেবিল ও ওয়েল ঘিরে রাখা হয়। তখন হট্টগোলের মধ্যেই ধ্বনিভোটে বিল পাস হয়। বিরোধীরা ভোটাভুটি চাইলেও ডেপুটি চেয়ারম্যান তাতে কান দেননি বলে তাঁরা অভিযোগ জানান।  বিরোধী সাংসদরা একঘণ্টা রাজ্যসভার ভিতরে ও পরে গান্ধীমূর্তির সামনে বসে প্রতিবাদ জানান। তাঁরা ঠিক করেন ডেপুটি চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে অনাস্থা প্রস্তাব আনবেন। বারোটি বিরোধী দল সেই প্রস্তাবে সই করে।

কিন্তু সোমবার চেয়ারম্যান সেই প্রস্তাব খারিজ করে দেন। তাঁর যুক্তি, এই প্রস্তাব নিয়ম অনুযায়ী আনা যায় না। তিনি ডেরেক সহ আটজন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করেন।

এরপরই শুরু হয় এই বিলের পক্ষে ও বিপক্ষে সরকার ও বিরোধীদের সওয়াল। রাজনাথ সিংয়ের নেতৃত্বে পাঁচ মন্ত্রী নেমে পড়েন আইন হলে কৃষকদের কতটা উপকার হবে তা বোঝাতে। প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিলটি ঐতিহাসিক। বিরোদীদের দাবি, রাজ্যসভায় গণতন্ত্রকে হত্যা করে বিল পাস করানো হলো। এর ফলে কৃষকদের ভরাডুবি হবে।

এই দুই বিলে বলা হয়েছে, কৃষকরা তাঁদের পণ্য সরাসরি বড় সংস্থা, কর্পোরেটের কাছে বিক্রি করতে পারবেন। তাঁরা সমবায়ের ভিত্তিতে চাষ করতে পারবেন। ফসল হওয়ার আগেই কৃষকদের সঙ্গে পণ্য নিয়ে চুক্তি করে নিতে পারবে কর্পোরেট ও বড় সংস্থাগুলি। সরকারের দাবি, এর ফলে ফসলের দাম অনেক বেশি পাবেন কৃষকরা।

কিন্তু কৃষকদের মনেই এ নিয়ে সংশয় আছে। পাঞ্জাব ও হরিয়ানায় প্রবল ক্ষুব্ধ কৃষকরা। বিশেষজ্ঞদের একাংশের মতে, এর ফলে প্রথম প্রথম কৃষকরা বেশি দাম পেতে পারেন। কিন্তু ক্রমশ একটি বা দুইটি বড় কর্পোরেটের একাধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হবে। তখন আর তাঁরা দাম পাবেন না। তাই প্রথমে দরকার আইন করে এমএসপি রক্ষার ব্যবস্থা। অর্থাৎ, ন্যূনতম সংগ্রহ মূল্যের কমে ফসল কেনা আইনত অপরাধ বলে ঘোষণা করতে হবে। সেটা না হলে কৃষকরা বিপন্ন হতেই পারেন।

প্রশ্ন হলো, বিরোধীরা কেন এই বিল নিয়ে এরকম পর্যায়ে বিরোধ করল? তার সব চেয়ে বড় কারণ, বিহার ও পশ্চিমবঙ্গের আসন্ন ভোট। দুইটিই কৃষিপ্রধান রাজ্য। কৃষক ও গ্রামের মানুষদের ভোট নির্ণায়ক। তাই তৃণমূল কংগ্রেস, কংগ্রেস ও আরজেডি-র মতো দলগুলি বিলের বিরোধিতায় মরিয়া ছিল। বাকিরাও কৃষকদের পাশে থাকার বার্তা দিতে চেয়েছে।

নন্দিগ্রাম পরবর্তী সময়ে কৃষক ও গ্রামের মানুষের ভয় ও আতঙ্ক ছিল ৩৪ বছরের বাম শাসনের পতনের অন্যতম কারণ। ভয় ছিল, বামেরা কৃষির জমি জোর করে নিয়ে শিল্প করবে। তার জেরে মমতা মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ক্ষমতায় এসেছিলেন। বিশেষজ্ঞদের মতে, এখন বিজেপি-র প্রবল চ্যালেঞ্জের সামনে পড়েছেন তিনি। তাই আবার তিনি দেখাতে চাইছেন, তৃমমূল কৃষকদের পাশে আছে।

দুই পক্ষই ধারণা তৈরির প্রতিযোগিতায় নেমেছে। সরকারও মরিয়া হয়ে প্রচার শুরু করেছে, তারা কতটা কৃষক দরদী। বছরে ছয় হাজার টাকা কৃষকদের হাতে দেয়া থেকে শুরু করে আইন করে তাঁদের ফসলের জন্য বেশি দাম পাইয়ে দেয়া সবই করছে। এই প্রতিযোগিতায় যারা জিতবে, তারা দুই রাজ্যের ভোটে জেতার ক্ষেত্রে এগিয়ে থাকবে।

জিএইচ/এসজি(রাজ্যসভা টিভি)