1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিযুক্তদের সাথে নিয়ে এ কেমন সম্প্রীতি উৎসব!

সমীর কুমার দে ঢাকা
২২ ফেব্রুয়ারি ২০১৮

সম্প্রতি দ্য হাঙ্গার প্রজেক্ট ও সুজন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হরিপুরে এক আন্তঃসম্প্রদায় সম্প্রীতি উৎসবের আয়োজন করে৷ কিন্তু মন্দির এবং বাড়িতে হামলার অভিযোগে অভিযুক্তরাও সেখানে থাকায় আয়োজনের উদ্দেশ্যই এখন প্রশ্নবিদ্ধ৷

https://p.dw.com/p/2t9J6
ছবি: bdnews24.com

এমন একটি উদ্যোগ নিয়ে বড় রকমের প্রশ্ন ওঠার কারণ, যাদের বিরুদ্ধে হামলার অভিযোগে পুলিশ অভিযোগপত্র দিয়েছে তারা ছিলেন হাজির থাকলেও হিন্দু সম্প্রদায়ের বাড়িঘর, মন্দিরে হামলার ঘটনায় করা মামলার বাদিদের ওই অনুষ্ঠানে ডাকাই হয়নি৷ ফলে ওই এলাকার হিন্দু সম্প্রদায়ের নেতারা ক্ষুব্ধ৷ স্থানীয়রা বলছেন, অভিযুক্তদের অংশ গ্রহণের সুযোগ দেয়া এবং অভিযোগকারীদের দূরে রাখায় সম্প্রীতির উৎসব কাঙ্খিত পরিবর্তনের সম্ভাবনা জাগাতেও ব্যর্থ হয়েছে৷

নাসিরনগর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে এই অনুষ্ঠানের বিষয়ে জানতে পেরেছি৷ অথচ আমি নিজেই একটি মামলার বাদী৷ আমাকে ওই অনুষ্ঠানে ডাকা হয়নি৷ অথচ হিন্দুদের উপর হামলা ও মন্দির ভাংচুরের মামলার আসামি হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়া এবং ইউনিয়ন বিএনপির উপদেষ্টা, সাবেক চেয়ারম্যান হাজী জামাল মিয়াকে নিয়ে ‘সম্প্রীতির উৎসব’ নামে একটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে৷ কী উদ্দেশ্যে তারা এটা করলো বুঝতে পারছি না৷ আমরা এখন তাদের এই আয়োজন নিয়ে কিছুই ভাবছি না, আমাদের বলারও কিছু নেই৷’’

কী উদ্দেশ্যে তারা এটা করলো বুঝতে পারছি না: কাজল জ্যোতি দত্ত

২০১৬ সালের ৩০ অক্টোবর ফেসবুকে ইসলাম ধর্ম অবমাননার ছবি পোষ্টের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর উপজেলা সদর ও হরিপুরের হিন্দু অধ্যুষিত গ্রামের মন্দির এবং অর্ধশতাধিক ঘর-বাড়িতে ভাংচুর, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে৷ এ ঘটনায় মোট ৮টি মামলা দায়ের করা হয়৷ এসব মামলায় পুলিশ ১২৪ জন আসামিকে গ্রেফতার করে আদালতে পাঠায়৷ পরে সবাই জামিনে মুক্ত হয়ে নিজ নিজ এলাকায় ফিরে আসে৷ গত ১০ ডিসেম্বর ২২৮ জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলার চার্জশিট দিয়েছে পুলিশ৷ ওই চার্জশিটে অভিযুক্তদের মধ্যে হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়া এবং ইউনিয়ন বিএনপির উপদেষ্টা, সাবেক চেয়ারম্যান হাজী জামাল মিয়ার নামও রয়েছে৷ ৮টি মামলার মধ্যে একটি মামলার বাদী নাসিরনগর উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি কাজল জ্যোতি দত্ত৷ 

আমরা কোনও আসামিকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করিনি: বদিউল আলম মজুমদার

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি আয়োজিত ওই সম্প্রীতি উৎসবে প্রধান অতিথি ছিলেন সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)-এর সাধারণ সম্পাদক ও দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের কান্ট্রি ডিরেক্টর বদিউল আলম মজুমদার৷ অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) উম্মে সালমা, বৃটিশ হাইকমিশনের গভর্ন্যান্স টিম লিডার অ্যাশলিন বেকার, পেইভ-এর রূপকার অ্যালিস্টার লেগ, দ্য হাঙ্গার প্রজেক্টের প্রোগ্রাম ম্যানেজার সৈকত শুভ্র আইচ৷

হিন্দু মন্দির ও বাড়ি-ঘরে হামলার অভিযোগে অভিযুক্তরাও উপস্থিত থাকার কারণে বিতর্কিত ওই অনুষ্ঠান সম্পর্কে আয়োজক ড. বদিউল আলম মজুমদার ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এই অনুষ্ঠানের মাধ্যমে আমরা সবাইকে একত্র করার চেষ্টা করেছি৷ কাউকে চিহ্নিত করে অনুষ্ঠানে আনা হয়নি৷’’ অভিযুক্তদের মঞ্চে বসানোর ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘তারা আসামি হতে পারেন৷ আসামি হলেই কেউ দোষী হয়ে যায় না৷ আমরা কোনও আসামিকে পুনর্বাসন করার চেষ্টা করিনি৷ আবার দোষীকে আরও দোষ দিতে চাইনি৷ নাসিরনগরে যে দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে, আমরা এটার ইতি টানার চেষ্টা করেছি৷’’ 

অনুষ্ঠানে দু’জন বিদেশি অতিথি থাকায় পুলিশ নিরাপত্তা দিয়েছে মাত্র: আবু জাফর

সম্প্রীতি উৎসবে হরিপুর স্থানীয় মন্দিরের পুরোহিত সবুজ চক্রবর্তী, আলিয়া মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্টকে কোরান উপহার দেন এবং আলিয়া মাদ্রাসার সুপারিনটেনডেন্ট পুরোহিতকে গীতা উপহার দেন৷ মন্দির ভাংচুর মামলার আসামিদের প্রকাশ্য মঞ্চে অনুষ্ঠান করার ব্যাপারে নাসিরনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আবু জাফর ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা আদালতে তাদের বিরুদ্ধে চার্জশিট দাখিল করেছি৷ আদালত এখনো গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করেনি৷ জারি করা মাত্রই তাদের আইনের আওতায় আনা হবে৷ অনুষ্ঠানে দু'জন বিদেশি অতিথি থাকায় পুলিশ নিরাপত্তা দিয়েছে মাত্র৷ এখানে আমরা উদ্যোক্তা ছিলাম না৷’’ তবে অভিযুক্তদের নিয়ে অনুষ্ঠান করায় অনুষ্ঠানের উদ্দেশ্য যে ম্লান হয়েছে তা স্বীকার করেছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা৷

এদিকে হরিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি ফারুক মিয়া ও ইউনিয়ন বিএনপির উপদেষ্টা জামাল মিয়া স্থানীয় সাংবাদিকদের বলেছেন, হাঙ্গার প্রজেক্টের দাওয়াত পেয়েই তারা অনুষ্ঠানে গেছেন৷ দু'জনেরই দাবি– বিচারের মাধ্যমে প্রমাণ হবে যে, হিন্দুদের মন্দির ও ঘর-বাড়িতে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় তারা জড়িত নন৷