1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অভিষেকের বাড়িতে সিবিআই, অমিত শাহের বিরুদ্ধে মামলা

২২ ফেব্রুয়ারি ২০২১

ভোটের আগে পশ্চিমবঙ্গে আবার সক্রিয় সিবিআই, ইডি এবং পুলিশ। দুই শিবিরের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের বিরুদ্ধে।

https://p.dw.com/p/3pguq
অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে সিবিআই গিয়েছিল তাঁর স্ত্রীকে নোটিশ দিতে। ছবি: Central Bureau of Investigation

রোববার সিবিআই অফিসাররা গিয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ভাইপো অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাড়িতে। তাঁর স্ত্রী রুজিরাকে কয়লা-কাণ্ডে নোটিস দেয়ার জন্য। সোমবার তাঁরা যান রুজিরার বোন ও অভিষেকের শ্যালিকা মেনকা গম্ভীরের বাড়িতে, তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদ করতে। রুজিরা সোমবার লিখিতভাবে সিবিআই-কে জানিয়ে দিয়েছেন, মঙ্গলবার সিবিআই অফিসাররা যেন তাঁর বাড়িতে আসেন। তিনি বেলা এগারোটা থেকে দুপুর তিনটে পর্যন্ত সময় খালি রেখেছেন কথা বলার জন্য।

সোমবারই এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট বা ইডির অফিসাররা রাজ্যের পুরমন্ত্রী ও কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের মেয়ে প্রিয়দর্শিনীকে নোটিস দিয়ে ডেকে পাঠিয়েছেন বলে খবর রটেছে। ফিরহাদ হাকিম অবশ্য জানিয়েছেন, তিনি এই বিষয়ে কিছুই জানেন না। তাঁর ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকে বলা হচ্ছে, এরকম কোনো খবর তাঁরা সত্যিই জানেন না।

দিন তিনেক আগেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের করা মামলা নিয়ে আদালত দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহকে কোর্টে হাজির থাকার নির্দেশ দিয়েছিল। রাজ্যের সাংসদ-বিধায়কদের জন্য বিশেষ আদালতে তাঁকে ডাকা হয়েছিল। সোমবার আদালতে অমিত শাহ ছিলেন না, ছিলেন তাঁর আইনজীবী ব্রজেশ ঝা। তিনি জানিয়েছেন, অমিত শাহের ঠিকানা ভুল ছিল। তাই এমপি-এমএলএ-দের জন্য গঠিত বিশেষ আদালত মামলাটি আবার ফেরত পাঠিয়ে দিয়েছে ব্যাঙ্কশাল কোর্টে।

ঘটনা হলো, পশ্চিমবঙ্গে বিধানসভা নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, ততই সিবিআই, ইডি, পুলিশের তৎপরতা বাড়ছে। কয়লা কেলেঙ্কারির যে অভিযোগ নিয়ে অভিষেকের স্ত্রী ও শ্যালিকাকে জেরা করা হচ্ছে ও হবে, সেই অভিযোগও গত নভেম্বরের। এর আগে রুজিরার বিরুদ্ধে বেআইনিভাবে সোনা নিয়ে আসার অভিযোগ ছিল। কিন্তু সেটা নিয়ে এখনো তদন্ত বেশিদূর এগিয়েছে বলে জানা নেই। অভিষেকও যে অভিযোগে মানহানির মামলা করেছেন, সেটাও নভেম্বরে অমিত শাহের ভাষণে তাঁর বিরুদ্ধে করা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে।

এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে আরো একটি ঘটনা। কয়েকদিন আগে বিজেপি-তে যোগ দেয়া অভিনেত্রী পামেলার কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকার কোকেন পাওয়া গেছে। তাঁর বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ। তৃণমূল নেতারা অভিযোগ করেছেন, ভোটের আগে এটা করাই হতো, এখন পামেলার জন্য বিজেপি অস্বস্তি এড়াবার জন্য সিবিআই, ইডি-কে সক্রিয় করে দিয়েছে।

কিন্তু ভোট বিশেষজ্ঞ বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ডিডাব্লিউকে বলেছেন, ''আজ নয়তো কাল এই সব মামলা নিয়ে সিবিআই, ইডিকে সক্রিয় হতেই হতো। কারণ, নানা ধরনের অভিযোগ ছিল। ফলে এই তদন্ত এড়ানো যেত না। যে সময়ে এটা হচ্ছে, তাতে স্বাভাবিকভাবে রাজনীতির প্রশ্ন উঠে যাচ্ছে। অতীতে সুপ্রিম কোর্টও সিবিআইকে খাঁচাবন্দি তোতাপাখি বলে বর্ণনা করেছে। এই সব এজেন্সির পিছনে যে রাজনীতির ইন্ধন থাকে, এটাও যথেষ্ট আলোচিত বিষয়।'' তাই বিশ্বনাথ মনে করেন, এখন এই তদন্তের সঙ্গে রাজনীতির জড়িত থাকার অভিযোগ উঠতেই পারে।

প্রবীণ সাংবাদিক জয়ন্ত ভট্টাচার্য মনে করেন, ''টিট ফর ট্যাটের মতো ব্যাপার চলে। ভোট না হওয়া পর্যন্ত আমি ভালো, ও খারাপ, এই বিষয়টি দেখানোর চেষ্টা চলে। আর রাজনৈতিক দলগুলি যে অভিযোগ করছে, সেগুলি কতটা বিশ্বাসযোগ্য সেটাও মানুষের মনের ভিতর ঢোকানোর চেষ্টা থাকে।''

কিন্তু যদি ভোটের মুখে এই ধরনের তদন্ত হয়, তা হলে তার প্রভাব ভোটদাতাদের মধ্যে কতটা পড়ে? বিশ্বনাথ মনে করেন, ভোটদাতাদের মনে একটা বদ্ধমূল ধারণা আছে, অধিকাংশ নেতাই টাকার নয়ছয় করেন। ফলে এ সব বিষয়ে তাঁদের মনে খুব বেশি প্রভাব পড়ে, তা বলা যায় না। তবে নেতাদের দুর্নীতির ফলে ভোটদাতারা যখন নিজেদের প্রাপ্য অর্থ পান না, তখন তদন্তের প্রভাব তাঁদের মনে পড়ে।

আর জয়ন্তের মতে, ''সারদা, নারদের কোনো প্রভাব পশ্চিমবঙ্গের ভোটে পড়েনি। তবে বিজেপি এবার বলবে, অভিষেক নিয়ে তারা যা বলছিল, সেটা যে ঠিক তা প্রমাণ হচ্ছে। তার প্রভাব সামান্য হলেও ভোটদাতার মনে পড়তে পারে।'' 

ফলে আগামী দিনগুলিতে এই ধরনের তদন্ত ও তার খবর সংবাদমাধ্যমে আরো বেশি করে দেখা যেতে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন।

জিএইচ/এসজি(পিটিআই, এএনআই)